নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একজন শৌখিন লেখক আমি, আবার কবিও বলা যেতে পারে । যখন যা ভালো লাগে তাই লিখি ।
লেখাটির ১ম পর্বের লিংকঃ Sustainability Reporting কি, কেন করে, কে করে, কিভাবে করে ইত্যাদি আদ্যোপান্ত নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা - পর্ব - ১
গত পর্বের পর একজন কমেন্ট করে বলেছেন "লেখাটা আরও সহজ আর বোধগম্য করতে" এবং আরেকজন কমেন্ট করে বলেছেন "বাংলাদশে টেকসই প্রতিবেদন বলতে কিছু নেই, টুকটাক যে সকল প্রতিবেদন হয় তার সবই মনগড়া এবং উদ্দেশ্য প্রণীত" ।
আমার বিরুদ্ধে আনা অনেকগুলো যৌক্তিক অভিযোগের মধ্যে প্রধান একটি অভিযোগ হচ্ছে, আমি ব্লগে আমার অনেক লেখাতে যে কমেন্ট আসে, সেগুলোর কোন রিপ্লাই দেই না । তবে আমি মন থেকে ১ম পর্বের কমেন্টকারীদের ধন্যবাদ দিতে চাই । আর সাথে এও বলতে চাই, কর্মসূত্রে এই লাইনে আছি বেশ কয়েকদিন, তাই আমি যা লিখেছি বাস্তবতা থেকেই । তাই অনেকেই দূর থেকে যেটা মনে হয়, আসলে বাস্তবতাটা একটু ভিন্ন । অর্থাৎ এই রিপোর্টিং টা অধিকাংশ কোম্পানি সঠিকভাবেই করে । আমি এত নিশ্চিতভাবে এটা কিভাবে বলতে পারলাম, সেটা বলছি ।
তবে এই লেখাটির ২য় অংশ শুরু করার আগে, আমি আমার অনেক আগে লেখা একটি লেখার সাথে এই সামগ্রিক লেখার একটি যোগসূত্র তৈরি করতে চাই, কারণ আমার কাছে মনে হচ্ছে আমার লেখাটা অধিকাংশ পাঠকের মাথার উপর দিয়ে গেছে ।
সেই আগের লেখাটির লিংকঃ Sustainable Development (টেকসই উন্নয়ন) কি? আসুন নিজ মাতৃভাষায় (কিছুটা বিদেশী ভাষার সাহায্য নিবো যদিও) এটা নিয়ে কিছুটা আলোচনা করি
যারা আমার লেখাটির কন্টেক্সট খুঁজে পেতে একটু বেগ পাচ্ছেন, তারা উপরে দেওয়া লিংকটা থেকে আগে ঘুরে আসুন, এরপর ১ম পর্ব, ২য় পর্ব, ৩য় পর্ব ইত্যাদি লেখাগুলো পড়লে তবেই পুরো বিষয়টা সহজে বুঝতে পারবেন ।
যাই হোক, যে কোন Sustainability Report অর্থাৎ টেকসই প্রতিবেদন কিন্তু বিভিন্ন অডিট বা নিরীক্ষণের মত করে তৃতীয় কোন পক্ষ দ্বারা মূল্যায়ন হতে পারে ।
যারা অডিট বা নিরীক্ষণ বলতে শুধু অর্থনৈতিক অডিট বুঝেন, তাদেরকে একটু বলি, যে কোন প্রতিষ্ঠানে লিগ্যাল বিষয়সমূহ ঠিকমত মেইনটেইন হচ্ছে কিনা, কাস্টমার বা ক্লায়েন্ট যেভাবে আপনার কাছ থেকে পণ্য বা সেবা চাচ্ছে, ঠিক সেভাবেই পাচ্ছে কিনা আর আপনার প্রতিষ্ঠানে শুরু থেকেই সেট করা কর্মপ্রতিজ্ঞাগুলো কোম্পানির অভ্যন্তরে ঠিকভাবে সবার দ্বারা মানা হচ্ছে কিনা এই বিষয়গুলো যাচাই করার জন্য বিভিন্নরকম অডিট (অভ্যন্তরীণ কিংবা বাহ্যিক বা তৃতীয় কোন কোম্পানির মাধ্যমে) হয় । এই অডিট যেহেতু যথেষ্ট নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ ভাবে হয়, তাই অডিটে বাস্তবতা ভিন্ন অন্য কোন বিষয় দেখানো হলে সেটা অডিটে ধরা পড়ে যায় (কিংবা ধরা পড়ার সমূহ সম্ভাবনা দেখা যায়) ।
রিপোর্ট বা প্রতিবেদন প্রকাশ করার মত রিপোর্ট অডিট করাটাও বাধ্যতামূলক নয় কিন্তু কোন কোম্পানি যদি মনে করে সে যে তথ্য তার রিপোর্টের মাধ্যমে প্রকাশ করেছে সেটা ১০০% খাঁটি ও সত্য, তাহলে সে তো তার রিপোর্ট অডিটের মাধ্যমে যাচাই করে জনসম্মুখে সেটা উন্মুক্ত করতে পারে । তবে যারা রিপোর্ট অডিট করে না (বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত প্রকাশিত প্রায় ৬০% এর অধিক টেকসই প্রতিবেদনগুলো অডিটের আওতায় আসেনি বিধায় এই রিপোর্টগুলো নিয়ে পরবর্তীতে প্রতিবেদন পাঠকের মন্তব্য পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হয় । আর কোন বছরের প্রতিবেদনের যে কোন বিষয় নিয়ে মন্তব্য পাওয়ার পর পরবর্তী বছর প্রকাশিত প্রতিবেদনে সে বিষয়টা ঠিক করে দেওয়া হয়) । আশা করি, কমেন্টের উত্তর পেয়ে গেছেন ।
এবার পরবর্তী গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশ্নের উত্তর করা যাক, এই Sustainability Report বা টেকসই প্রতিবেদন লেখা হয় কিভাবে, প্রকাশ করা হয় কিভাবে, এখানে কি কোন গাইডলাইন বা নির্দেশিকা অনুসরণ করা হয়? ইত্যাদি ।
এক কথায় বললে আপনি কিন্তু আপনার কোম্পানির অবস্থা জানান দিচ্ছেন এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে । তো স্বভাবতই অনেকে ভাবে, আমার কথা আমি আমার মত লিখবো । এটা নিঃসন্দেহে কোন ভুল ধারনা নয় । কিন্তু আমরা যখন কোন স্ক্রিপ্ট বা আগে থেকে লেখা কোন কিছু না দেখে দীর্ঘক্ষণ কিছু বলতে চাই বা লিখতে চাই, তখন অজান্তেই আমরা অনেক কিছু মিস করি বা ভুলে যাই । এইজন্য আপনি যদি একটি গাইডলাইন বা নির্দেশিকা অনুসরণ করে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেন, তবে নির্দেশিকায় বর্ণিত পয়েন্টগুলোতে আপনি শুধু আপনার কোম্পানির কথাগুলো বসিয়ে, সেটা সাজিয়ে প্রতিবেদন লেখা শেষ করতে পারেন ।
বাজারে এই প্রতিবেদন প্রকাশের জন্য বেশ কয়েকটি ষ্ট্যাণ্ডার্ড পাওয়া যায় । আমি প্রধান কয়েকটি ষ্ট্যাণ্ডার্ডের নাম বলবো আজকে ।
১) EU Corporate Sustainability Reporting Directive (CSRD) or ESRS Standards - যে কোন কোম্পানির অর্থনীতিক ব্যতীত অন্যান্য বিষয়গুলো নিয়ে টেকসই প্রতিবেদন প্রকাশ করার সহায়ক গাইডলাইন যেটি কিনা ২০২৩ সালে কার্যকর হয় এবং বেশিরভাগ কোম্পানির জন্য বাধ্যতামূলকভাবে (ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর কোম্পানিগুলোর জন্য) টেকসই প্রতিবেদনের মানকে এই গাইডলাইন অনুসরণ করে বাড়াতে বলা হয়।
২) TCFD (The Task Force on Climate-related Financial Disclosures) - টেকসই প্রতিবেদন প্রকাশের জন্য যে কোন কোম্পানির জন্য তার বিনিয়োগকারী, ঋণদাতা, বীমাকারী এবং অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের কাছে জলবায়ু-সম্পর্কিত আর্থিক ঝুঁকিগুলি প্রকাশ করার বিষয়ে এটা অত্যন্ত সহায়ক গাইডলাইন হিসেবে কাজ করে।
৩) ISSB (IFRS) - ২০২২ সালে প্রতিষ্ঠিত এই ষ্ট্যাণ্ডার্ড যে কোন কোম্পানির জন্য জলবায়ু সংক্রান্ত বিষয়সমূহ প্রতিবেদনের জন্য একটি বৈশ্বিক কাঠামোরূপে কাজ করে যা এই কোম্পানির অর্থনৈতিক বিষয়গুলোর সর্বোচ্চ সিদ্ধান্তদাতার এবং বিনিয়োগকারীদের চাহিদা পূরণ করে।
৪) CDP (the Carbon Disclosure Project) - যে কোন কোম্পানি জলবায়ু পরিবর্তন, বন, এবং জল সুরক্ষার তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করার জন্য এই গাইডলাইন ফলো করতে পারে ।
৫) GRI (Global Reporting Initiative) - ১৯৯৭ সালে প্রথম প্রতিষ্ঠা হওয়া এই কোম্পানি সর্বপ্রথম ২০১৬ সালে এই নামেই এখন পর্যন্ত পৃথিবীব্যপী সবচেয়ে বহুল ব্যবহৃত ষ্ট্যাণ্ডার্ড প্রকাশ করে। এটি অর্থনৈতিক, পরিবেশগত এবং সামাজিক ক্ষেত্রে কোম্পানিগুলিকে রিপোর্ট করতে সহায়তা করে।
৬) SASB (Value Reporting Foundation) - এই ষ্ট্যাণ্ডার্ডের মাধ্যমে কোম্পানিগুলোর আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশের সাথে টেকসই প্রতিবেদনকে সংযুক্ত করার জন্য একটি সমন্বিত প্রতিবেদন প্রকাশের কাঠামো দাড় করানো হয়েছে ।
৭) B Corp - এটি কর্পোরেট সামাজিক এবং পরিবেশগত কর্মক্ষমতার জন্য প্রতিষ্ঠিত একটি ষ্ট্যাণ্ডার্ড।
ইত্যাদি ।
এই ৭টি ছাড়াও পৃথিবীব্যপী আরও অনেক ষ্ট্যাণ্ডার্ড রয়েছে যার মাধ্যমে এই টেকসই প্রতিবেদন তৈরি করা যায় । তবে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় জিআরআই ষ্ট্যাণ্ডার্ড ।
জিআরআই একটি সমন্বিত ষ্ট্যাণ্ডার্ড যেটি কিনা কোম্পানিকে গাইডলাইন দেয় (পৃথক পৃথকভাবে) যে কোম্পানিগুলো কিভাবে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও পরিবেশগত বিষয়গুলোকে নিয়ে রিপোর্ট করবে । এটি ফ্রি ষ্ট্যাণ্ডার্ড । আপনি চাইলে গুগল থেকে ডাউনলোড করতে পারেন । আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে কথা এখনও বলাই হয়নি, সেটি হচ্ছে এই টেকসই প্রতিবেদনগুলো কিন্তু সব গুগলে ঐ কোম্পানির প্রতিবেদন ও সাল দিয়ে খুঁজলেই পাওয়া যায় ।
(বাকিটা পড়তে চোখ রাখুন এই লেখার তৃতীয় পর্বে)
©somewhere in net ltd.
১| ১৭ ই মে, ২০২৩ দুপুর ১:৪১
রাজীব নুর বলেছেন: আপনি লিখুন। সাথেই আছি।