নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একজন শৌখিন লেখক আমি, আবার কবিও বলা যেতে পারে । যখন যা ভালো লাগে তাই লিখি ।
চা-শ্রমিকদের মজুরি ১৪৫ টাকা! ধন্যবাদ মাননীয় সাংসদ! ধন্যবাদ মমতাময়ী!
খবরে দেখলাম চা-শ্রমিকদের মজুরি ১৪৫ টাকা পুনঃনির্ধারণ করেছে সরকার। এই সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছে চা শ্রমিক নেতারা। কিন্তু সাধারণ শ্রমিকরা এই সিদ্ধান্ত মেনে নেয় নি।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়ার ব্যপারটি যে চা শ্রমিক নেতাদের, সাধারণ শ্রমিকদের না এই ব্যপারটি স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম জানে। কিন্তু বাংলাদেশে গণমাধ্যম ও মানবধিকারের মুখপাত্র প্রথম আলো জানে না। তাদের করা এই বৈঠক বিষয়ে করা রিপোর্ট পড়ে মনে হলো যে তারাও এইসব তথাকথিত শ্রমিক নেতাদের নেওয়া সিদ্ধান্তগুলি শ্রমিকদের সিদ্ধান্ত বলে চালিয়ে দিচ্ছেন। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষায় তাদের এই পদক্ষেপ হয়তো! প্রথম আলোর রিপোর্টের লিংক কমেন্টে দিয়ে দিলাম।
কৌতূহল বশত দেখার চেষ্টা করলাম যে এই মজুরি পুনঃ নির্ধারণ সভায় কারা কারা উপস্থিত ছিলেন। খবর পড়ে যা জানলাম সেখানে ছিলেন চা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা, শ্রম অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা, স্থানীয় প্রশাসনের প্রতিনিধি, এবং মালিকপক্ষ।
বৈঠকে আরও ছিলেন মৌলভীবাজার-৪ আসনের সংসদ সদস্য মো. আবদুস শহীদ।
আর বৈঠকের পর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) নিপেন পাল ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন।
তো এই জনৈক নিপেন পালের পরিচয় জানি না। কিন্তু মাননীয় সংসদ সদস্যের আরেকটা মানবিক পরিচয় আছে! শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধিতে তার এই অতি মানবীয় (!) ও যুগান্তকারী অবদানের ব্যাপারে গুগলে খোঁজখবর নিতে গিয়ে তার এই অতি মানবিক পরিচয় জানলাম। আর সেটা হচ্ছে তিনি মৌলভীবাজারের একটি চা বাগানের মালিক। তাই তিনি গরীব চা বাগান মালিকদের দুঃখ ঠিকই বুঝেছেন। শ্রমিকদের এই মালিকপক্ষের উপর তিনগুণ (!) মজুরী বৃদ্ধির এই মানবিক জুলুমি দাবীর মর্মার্থ বুঝেছেন এবং যৌক্তিকভাবে ১২০ টাকার মজুরী ২৫ টাকা বাড়িয়ে ১৪৫ টাকা করেছেন। এ এক যুগান্তকারী অবদান।
তার আরও একটা অবদানের কথা জানেন এবার। এই মানবিক স্থানীয় সংসদ সদস্য বাগান করার নামে দখল করছেন লাওউয়াছড়া সংরক্ষিত বনের জমি। যমুনা টিভির এক অনুসন্ধানী রিপোর্টে এই অনিয়মের কথা বের হয়ে আসে।
‘সাবারি ট্রি প্লানটেশন’ বাগানের জমি কতটুকু এই প্রশ্নের জবাবে বাগানের মালিক ও মৌলভীবাজার-৪ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুস শহীদ বলেন, সাত নয়, দশ একরের মতো জমি আছে সেখানে। তিনি একজনের কাছ থেকে সেই জমি কিনেছেন বলে জানান।
কিন্তু সাংবাদিকের অনুসন্ধানে সাব রেজিস্ট্রি অফিসের দলিলের তথ্যে দেখা যায়, সাংসদ জমি কেনেন মাত্র ৪ একরের কিছু বেশি। কিন্তু তিনি নিজেই বলেন তার বাগানে জমি আছে ১০ একরের মতো। এই বাড়তি ৬ একর জমি যে দখলকৃত সেটা বুঝতে বিশেষ জ্ঞান দরকার নেই। স্যটেলাইটের ছবিতেও সেটা বোঝা যায়।
শুধু এই সাংসদই না। বনের পাশে কৌশলে একাশিয়া গাছের বাগান আর রিসোর্ট করে জমি দখল করেছেন শ্রীমঙ্গল পৌরসভার মেয়র মহসিন মিয়ার চাচাতো ভাই সফেদ মিয়া। এই রিসোর্টের নাম লেমন গার্ডেন। অনেকেই হয়তো এই রিসোর্টে রাত্রিযাপন করেছেন।
কিন্তু সাংসদের জবানীতে এই রিসোর্টের অর্ধেক জায়গা বনের। সাংসদ উক্ত প্রতিবেদককে এটা নিয়ে রিপোর্ট করতেও বলেন। কিন্তু মহামতি নিজের দখল সম্পর্কে কিছুই জানেন না! যমুনা টিভির সেই রিপোর্টের লিঙ্ক কমেন্ট সেকশনে দিলাম।
চা শ্রমিকদের উচিৎ তাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া এই হাস্যকর মজুরী বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া। যেসব দালাল শ্রমিক নেতারা তাদের উপর এসব অন্যায্য মজুরী বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিচ্ছে তাদেরকে সংগঠনে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা এবং নিজেদের সিদ্ধান্ত নিজেদের নেওয়া।
সবশেষে মমতাময়ী যে ২৫ টাকার যুগান্তকারী মমতা দেখালেন চা শ্রমিকদের জন্যে, সেই বিশাল অঙ্কের অর্থ মমতাময়ীর ত্রাণ তহবিলে দান করা। যাতে করে মমতাময়ী সাংসদদের মত গরীব চা বাগানের মালিকদের জন্যে আরও শত কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করতে পারেন এই বৈশ্বিক মন্দার সময়ে।
পুনশ্চঃ নিউজফিডে কয়েকটা ভিডিও দেখলাম। নিপেন পাল যে ঘোষণা দিয়েছেন সেটা তার ব্যাক্তিগত মতামত ছিল না। তাকে জোরপূর্বক এই কথা বলানো হয়েছে হুমকি ধামকি দিয়ে। তার জান বাঁচানোর জন্যে এটা বলেন। এই ভিডিও দেখুন তাহলেই বুঝতে পারবেনঃ
view this link
সর্বশেষ নিপেন পাল জানান যে ১৪৫ টাকার সিদ্ধান্ত উনি মানেন না। উনি এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন নি। আন্দোলন চালিয়ে যাবেন সেই কথাও জানিয়েছেন।
view this link
দাবী না মানা পর্যন্ত আন্দোলন চলুক। আর মিডিয়ার সাংবাদিক ভাইয়েরা শ্রমিকদের এই ন্যায্য দাবীর জন্যে সঠিক তথ্যগুলি সামনে দিয়েন। প্রেসক্রাইবড তথ্য দিয়েন না।
এই গুরুত্বপূর্ণ পোস্টটি মাহাবুবুর রহমান অপু ভাইয়ের ফেসবুক টাইমলাইন থেকে কপি করা । আমাকে ক্ষমা করবেন, আমি হয়তো এই পোস্ট টা ফেসবুক থেকে শেয়ার করেছি এখানে । কিন্তু এটা বাস্তব সত্য যেটা আপনাকে দেশীয় মিডিয়া মোটেও দেখাবে না । তাই কখনও কখনও এরকম দুই একটা দায়িত্ব নিজ ঘাড়েই তুলে নিতে হয় ।
ব্যক্তিগত ভাবে আমি নিজেও এই অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে। যেখানে এক হালি ডিম কিনতে লাগে ৫৫ টাকা আর সবচেয়ে মোটা মুশুরির ডালের কেজিও প্রায় ১১৫ টাকা, সেখানে কিভাবে দৈনিক মজুরি ১৪৫ টাকায় এক জনের চলে ? মজুরি বাড়িয়ে দৈনিক ৩০০ টাকাই করা হোক, এর চেয়ে কম ১ টাকাও না..
©somewhere in net ltd.
১| ২০ শে আগস্ট, ২০২২ রাত ১১:৪২
মোহাম্মদ গোফরান বলেছেন: চমৎকার লেখা।