নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বেলাশেষে ক্লান্ত-তৃষ্ণার্ত পথিকের ন্যায় আসলাম সামুর তীরে, রেখে যেতে চাই কিছু অবিস্মরণীয় কীর্তি । পারি না আর না পারি, চেষ্ঠার ত্রুটি রাখবো না, এই ওয়াদা করছি ।

মোশারফ হোসেন ০০৭

একজন শৌখিন লেখক আমি, আবার কবিও বলা যেতে পারে । যখন যা ভালো লাগে তাই লিখি ।

মোশারফ হোসেন ০০৭ › বিস্তারিত পোস্টঃ

জ্বালানী তেলের মূল্যবৃদ্ধি এবং জানা অজানা বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা 8-| 8-|

১১ ই আগস্ট, ২০২২ রাত ১১:৩১



সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে আলোচিত ও সমালোচিত বিষয় এখন জ্বালানী তেলের মূল্য বৃদ্ধি প্রসংগ। পেট্রলের নতুন দাম ১৩০ টাকা, যা এত দিন ৮৬ টাকা ছিল, ডিজেলের দাম ১১৪ টাকা লিটার, যা এত দিন ৮০ টাকা ছিল আর অকটেনের দাম বাড়ানো হয়েছে লিটারে ৪৬ টাকা। এত দিন অকটেন ৮৯ টাকা লিটার বিক্রি হতো। অর্থাৎ পেট্রলের, ডিজেলের এবং অকটেনের দাম বেড়েছে লিটারে যথাক্রমে ৪৪ টাকা, ৩৪ টাকা এবং ৪৬ টাকা ।

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি মন্ত্রণালয়ের প্রণিত কোন আইনের তোয়াক্কা না করে, একেবারে রাতারাতি। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) আইনের ২২ ও ৩৪ ধারামতে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির একক এখতিয়ার বিইআরসির। ৩৪ (৬) ধারামতে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব অবশ্যই বিইআরসির কাছে পেশ করতে হবে। ৩৪ (৪) ধারামতে স্বার্থসংশ্লিষ্ট পক্ষদের শুনানি দেওয়ার পর বিইআরসি মূল্য নির্ধারণ করবে। এই যে কোন আইনের তোয়াক্কা না করে যে একেবারে রাতারাতি মুল্যবৃদ্ধির মত মারাত্মক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এতে হতবিহবল এ জাতি পড়ে গেছে পুরাই বিপদে।

আসুন জানা অজানা কয়েকটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করে নেওয়া যাক আজকে

ইস্যু ১ - আসলেই কি মূল্য বৃদ্ধি অস্বাভাবিক, তা নিয়ে কিছুটা আলোচনা করা যাক।

তর্কের খাতিরেই কিনা স্বীকার করেই নিতে হচ্ছে যে নন রিনিউয়েবল এনার্জি তথা অনবায়নযোগ্য শক্তি যেমন তেল, গ্যাস, কয়লা ইত্যাদি সময়ের সাথে সাথে নি:শেষ হতে থাকবে, এটা বিজ্ঞানীদের শত বর্ষেরও আগের প্রেডিকশন। এর বিকল্প হিসেবে নবায়নযোগ্য শক্তি তথা সোলার এনার্জি, উইন্ড এনার্জি, ওয়াটার অয়েভ দ্বারা সৃষ্ট এনার্জি ইত্যাদি বহু আগে থেকেই প্রস্তাবিত। তবু মানুষের স্বভাব বরাবরই যেন "যতদিন আছে চলুক, শেষ হয়ে গেলে অন্য চিন্তা করবো নে"। যদিও এই শক্তির উৎসসমূহ থেকে শক্তির আধার পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলোতে বাড়াবাড়ি রকমের অপচয় হয়, তবে শক্তি যদি সত্যি নিঃশেষ হওয়ার পথে থাকে, এর ফল শুধু পশ্চিমা দেশগুলোই না, পুরো পৃথিবীর সব দেশের সকল নাগরিক উপলব্ধি করবে । তবে আমাদের দেশে মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত ধীরে ধীরে বাড়ানো যেতো কিন্তু রাতারাতি করাটা নি:সন্দেহে সমার্থনযোগ্য নয়। (উপরের কথাগুলো শুনে প্লিজ ভাববেন না এই অস্বাভাবিক এবং রাতারাতি জ্বালানী তেলের মূল্য বৃদ্ধি কে কোনভাবে আমি জাস্টিফাই করছি)

ইস্যু ২- আইএমএফ এর শর্ত মেনে কি এই মূল্যবৃদ্ধি?

নি:সন্দেহে। আসুন আপনাদের কাছে হিসাবটা একেবারে পরিস্কার করে দেই । এখানে প্রথম প্রশ্ন হচ্ছে, আইএমএফ এমন একটা শর্ত (জ্বালানী তেলের মূল্যবৃদ্ধি করতে হবে) দিল কেন? উত্তর: সরকার ভর্তুকি দেয় জনগণের ট্যাক্সের টাকা থেকে। সকল শ্রেণির মানুষ যারা কিনা তেল ব্যবহার কম করে তারাও টাকা দিয়ে এই ভর্তুকি দেয়। অন্যদিকে জ্বালানি তেলের দাম কম থাকায় যারা বেশি পরিমান তেল খরচ করে তারা খরচের পরিমান কমাচ্ছে না, সুতরাং সরকারের ভর্তুকির পরিমান বাড়ছে, আর সকল জনগন মিলে ভর্তুকির টাকা পে করছে। সুতরাং এখন থেকে কোন ভর্তুকি নয়, যার যার ভর্তুকি সে সে দিবে। Pay as you go (যত ব্যবহার তত ব্যয়) নিশ্চিত করতেই এই শর্ত। তাহলে তো আরেকটা প্রশ্ন জাগাটাই স্বাভাবিক, সব জনগণ ভর্তুকি দিতে চাইলে আইএমএফ এর সমস্যা হল কেন? এটার উত্তরঃ আইএমএফ যখন ঋণ দিবে তখন ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা আছে কি না, তাও দেখবে। আবার কি করলে ঐ দেশ ঋণ পরিশোধ করতে পারবে তাও শর্ত হিসেবে দিবে। তো আইএমএফ এর হিসেব মতে বাংলাদেশের অর্থনীতি শুধু জনগণের তেল ব্যবহারের জেরেই ভেঙে পড়তে পারে, কারণ এখানে দীর্ঘদিন ধরে অযৌক্তিক ভর্তুকি দিয়ে দিয়ে তেলের ব্যবহার বৃদ্ধিকে উৎসাহিত করা হয়েছে। আগে ভর্তুকির পরিমান কম ছিল সরকার সহজেই বহন করতে পারছে কিন্তু এখন বহন করতে রিজার্ভে হাত দিতে হচ্ছে। সরকার অধিক পরিমানে ভর্তুকি দিতে থাকলে দেশের রিজার্ভের পরিমান কমতে থাকবে। আর রিজার্ভের পরিমান কমতে থাকলে টাকার মান কমতে থাকবে, সম্পত্তির মূল্য কমতে থাকবে, দেশ দেউলিয়ার পথে হাটতে থাকবে। আইএমএফ এর ঋণ পরিশোধ করতে পারবে না!

ইস্যু ৩ - জ্বালানী তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে সুবিধা ও অসুবিধাসমূহ কি কি?

হয়তো অবাক হচ্ছেন, এখানে আবার সুবিধা কি হতে পারে। জ্বী, হ্যা, অবশ্যই পারে। যেমন:

ক) জ্বালানী তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে মানুষ ব্যক্তিগত যান কম ব্যবহার করে গণপরিবহনমূখি হলে রাস্তায় যানজট কমবে
খ) অনেকে আবার সাইকেল চালানো কিংবা হাটা শুরু করবেন। এতে স্বাস্থ্যের মংগলের কথা নতুন করে আর কই বলবো
গ) তেলবাজ একটি জাতির এবার যদি তেলবাজিটা কিছুটা হলে কমে
ঘ) মানুষের মধ্যে মিতব্যয়ীতা (কিপ্টেমি ভেবে বসবেন না) বাড়বে ইত্যাদি

এই সুবিধার ৪টি পয়েন্টই আমার ব্যক্তিগত ধারনা থেকে বলছি আর অসুবিধা, সে আমি আর নতুন করে না বলি, এগুলা সবার জানা । তবে একটা ব্যাপার নিশ্চিত করতে পারি, সকল গনপরিবহনের ভাড়া আবারও লাগামছাড়া হতে যাচ্ছে বা অলরেডি হয়ে গেছে । আর ঢাকা শহরে ভিক্ষুকের পরিমাণ আগের চেয়ে বাড়বে ।

ইস্যু ৪ – বিশ্ববাজারে তেলের দাম বৃদ্ধি কি আমাদের দেশে জ্বালানী তেলের মূল্য বৃদ্ধির পিছনে অন্যতম কারণ?

উত্তরঃ নীতিনির্ধারক মহল থেকে বলা হচ্ছে বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারনে দাম বাড়ানো হয়েছে। অথচ সাম্প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। তিনদিন আগে রয়টার্সের রিপোর্টে বলা হয়, ‘বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমেছে। গত জুলাই মাসে বৃহৎ অর্থনীতির দেশ চীন ও জাপানে শিল্পোৎপাদন কম হওয়ায় বাজারে তেলের চাহিদা কমেছে।’ বাজারসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং ইকোনমিকসের হিসাবে গত ১লা আগষ্ট যুক্তরাষ্ট্রের ডাব্লিউটিআই অপরিশোধিত (ক্রুড) তেলের দাম প্রায় ৫ শতাংশ কমে প্রতি ব্যারেল হয় ৯৩.৩০ ডলার। এর পাশাপাশি লন্ডনের ব্রেন্ট অপরিশোধিত তেলের দাম প্রায় ৪ শতাংশ কমে প্রতি ব্যারেল হয় ১০০.১৫ ডলার। তাহলে বিশ্ববাজারে তো তেলের দাম কমছে । এক্ষেত্রে হিসাব তো মিলছে না ।

দেশের বর্তমান অবস্থা অনেক রাজনৈতিক বোদ্ধার অনেক আগের প্রেডিকশন। ক্ষমতা নিয়ে কিছু বলবো না। সেই ইস্যু নিয়ে বহু আগেই প্রিয়জনদের অনুরোধে মুখে কলুপ এটেছি।

এই জাতির শিকড়ে পচন ধরেছে, আমার মত অধিকাংশই মুখে কলুপ আটতে পছন্দ করে কারণ আমাদেরকে পলিটিকালি সেইফ পজিশনে থাকা দরকার বলে আমরা বোধ করছি । এখানে চোখের সামনে অন্যায় করেও অনেকে পার পেয়ে যায় । আমরা শুরু থেকে চুপ থেকেই ধাপে ধাপে অন্যায়সমূহকে প্রশ্রয় দিয়ে অন্য অন্যায়সমূহের জন্ম দিয়েছি বা দিচ্ছি ।

আমি মনে করি কানাডার বেগমপাড়ার গর্বিত মালিকসমূহ এবং সুইস ব্যাংকের একাউন্ট ধারী বাংলাদেশীদের সাথে সাথে এ দেশে জন্ম নিতে পেরেছি, এটা ভেবেই আমাদের অহংকার করে যাওয়া উচিত, এসব জ্বালানী তেলের দাম বেড়ে যাওয়াটাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে এড়িয়ে গেলেই কেবল আমাদের মত তেলবাজ জাতির উন্নতির ধারা অব্যাহত থাকবে...

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই আগস্ট, ২০২২ রাত ১২:১০

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
বিপিসি এতদিন কোটি কোটি টাকা
লাভ করেছে; দুঃসময় তার থেকে
কিছুটা ভর্তুকি দিলেইতো পারতো!
আনার গাড়ি নাই তাই অত টেনশন
নাই। তবে তেলের সাথে অন্য দ্রব্যের
দাম সমন্বয় করতে হিমশিম খাচ্ছি,
নাস্তানাবুদও হচ্ছি!

২| ১২ ই আগস্ট, ২০২২ রাত ১:৫৬

শার্দূল ২২ বলেছেন: আমি নিজে তৈল ব্যবসার সাথে জড়িত বলে একটা অনর্থক পোস্টে অর্থহীন মন্তব্য না করে পারছিনা। কিভাবে তেল জন্মায় কিভাবে তেলায় ,কিভাবে তেলের দাম বাড়ে তাতে কারো ঘাম ঝরে কি ঝরেনা সেসব নিয়ে আলোচনা করে লাভ নেই। কারণ আমাদের দেশের মানুষ জানেনা তৈল আসলে জিনিসটা কি। এরা খনিজ কি জানেনা ওরা মনে করে দুই হাতে ঘষে ঘষে তেলানো থেকে তেল বের হয় তাই ফর নাথিং সরকারের বিরোধ আর একটা গোষ্ঠিকে তেলানোই যাদের অভ্যাস।

আমেরিকাতে সাধারনত তেল এর দাম গ্যালন প্রতি ২ ডলার ৫০ সেনটস এর মধ্যে থাকতো । কিন্তু রাশিয়া যুদ্ধের পরে সেই তেল উঠে গিয়ে দাড়ালো ৭ ডলার এর মত। তার মানে তিন গুনের বেশি। যদি বাংলাদেশের ৮০ টাকা তেল তিন গুন হয় তাহলে হবে ২৪০ টাকা। এটা কি সম্ভব? হাসিনা চেয়ার নিয়ে থাকতে পারবে? কোনদিন না। এখন বলেবন আমেরিাকা ধনি দেশ । আমেরিকা ধনি দেশে হলেও তেল নিয়ে যারা বেশি নাড়াচারা করেন তারা কিন্তু বাংলাদেশির চেয়ে গরিব। ৬৫ ভাগ আমরিকানদের ব্যাংক একাউন্টে ৫০০ ডলার এর বেশি থাকেনা। এরা এতটাি গরিব যে যদি কোন কারোনে মাসের খরচের খাটায় ৫০০ ডলারের ব্যয় হয় তাহলে ওরা পরের মাসে বাসা ছেড়ে রাস্তায় তাবু লাগিয়ে থাকে, তিন মাস ওরা আবার কাজ করে একটু একটু করে জমিয়ে ওরা আবার বাসা নেয়। এই দেশের মানুষ এমন ভাবে জীবন যাপন করে যে যদি এক গ্যলন দুধ এর দাম ১ ডলার বাড়ে তাহলে তারা সেই মাসে দুধ খাবেনা। এমন এখটা দেশের তিন গুন বড়ে যাওয়ার ফলে আমি দেখিনি মানুষ এতটা লাফালাফি করতে। হুম একটা সমালোচনা হয়তো করে তাও তা গাছ তলায় কিংবা বিছানায় শুয়ে, আমাদের দেশের মত কোমড়ে গামছা পেছিয়ে নামেনা। আমাদের দেশের মানুষ আমেরিকানদের মত এতাটা গরিব না। যারা সীমানার বাইরে তারা কোনদিন সিমানায় আসেনা আর তারা এসব বলেওনা।

যেই জাতি পানি বুঝেনা সেই জাতিকে তৈল বুঝাতে হলে মাথায় যে কি পরিমান তেল মাখতে হয়।

৩| ১২ ই আগস্ট, ২০২২ রাত ৩:১৮

ককচক বলেছেন: তেলের দাম ৩ গুন বাড়লেও সমস্যা ছিলো না, যদি মানুষের মাসিক আয়ের সাথে ব্যয়ের সামঞ্জস্য থাকতো। বাংলাদেশের মেক্সিমাম মানুষের পৈত্রিক সূত্রে বা উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া একটা বাড়ি থাকলে শিক্ষা, চিকিৎসা ও চাকুরীর নিশ্চয়তা নাই। হোম লোন পাওয়ার আশাও নাই। ঘরবাড়ির ইন্সুইরেন্স নাই।
মানুষের চাকুরী থাকলে হঠাৎ করে পণ্যের মূল্য বেড়ে গেলে, খরচ বেড়ে গেলে মানুষ ম্যানেজ করে নেওয়ার চেষ্টা করত। মানুষের চাকুরী নাই, সরকারের উপর ভরসা নাই.... ফলে মানুষ প্যানিক হচ্ছে।

উন্নত রাস্ট্র তার নাগরিকদের যোগ্যতা অনুযায়ী চাকুরী ম্যানেজ করে দেওয়াকে চেষ্টা করে। বেকারদের ভাতা দেওয়ার চেষ্টা করে। বাংলাদেশের বাঙ্গালীরা উন্নত রাস্ট্রে গিয়ে এইসব সুযোগ সুবিধা ভোগ করেন; সুন্দরভাবে জীবনযাপন করেন। এবং 'দেশের মানুষদের নিয়ে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেন'
আজকাল এটা উন্নত রাস্ট্রে স্যাটেল হওয়া তথাকথিত শিক্ষিত, উন্নত মস্তিষ্কের বাংগালীদের একটা ট্রেন্ড হয়ে দাড়িয়েছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.