নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বেলাশেষে ক্লান্ত-তৃষ্ণার্ত পথিকের ন্যায় আসলাম সামুর তীরে, রেখে যেতে চাই কিছু অবিস্মরণীয় কীর্তি । পারি না আর না পারি, চেষ্ঠার ত্রুটি রাখবো না, এই ওয়াদা করছি ।

মোশারফ হোসেন ০০৭

একজন শৌখিন লেখক আমি, আবার কবিও বলা যেতে পারে । যখন যা ভালো লাগে তাই লিখি ।

মোশারফ হোসেন ০০৭ › বিস্তারিত পোস্টঃ

লেখক নামা (পর্ব ০৫ থেকে পর্ব ০৮) :| :-P

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ দুপুর ১:২৫



১ম থেকে ৪র্থ পর্বের লিংকঃ লেখক নামা - পর্ব ০১ থেকে পর্ব ০৪

পর্ব - ০৫

- দে...খু...ন
- দেখাদেখি পরে হইবে । বললাম তো আমার সময় নাই ।

মেয়েটির কথা শুনে আমি প্রায় স্তব্ধ হয়ে গেছি । চেয়ারে বসা থেকে কখন যে দাঁড়িয়ে গেছি নিজেই টের পাইনি । এর মধ্যে আবার খেয়াল করলাম বিন্দু বিন্দু করে ঘামছি । কপালে সেই ঘামের বিন্দুগুলো আরও পরিস্কার ভাবে দেখা যাচ্ছে কিন্তু মেয়েটা মনে হয় আমার এই অসহায় অবস্থাটুকু দেখার মুডে নেই । তার শরীরী ভাষাতেও বেশ চাঞ্চল্য বিদ্যমান ।

সময়টাই যেন কিছুক্ষণের জন্য থেমে গেছে । আমার মধ্যে এই ভাবনাও আসছে যে 'এক কাজ করলে কেমন হয় মেয়েটিকে ঘরে রেখে আমি দৌড়ে বাইরে চলে যাই । এরপর ছুট দিয়ে অনেক দূর । মেয়েটির যেমন তাড়াহুড়া, আমার জন্য বেশিক্ষণ অপেক্ষা করবে না । সে চলে যেতেই কিছুক্ষণ সময় নিয়ে আমিও ফিরে আসবো । ঘরে তেমন কিছু নেই যে কেউ নিয়ে যেতে পারে ।' চিন্তা করছি ঠিকই কিন্তু আশ্চর্য্য হয়ে পরক্ষনেই খেয়াল করলাম, আমার পা দু'খানা আমার চিন্তা অনুযায়ী কর্ম করতে ইচ্ছুক নয় । তাই তো, চেষ্টা করেও পা'দুটো নাড়াতে পারলাম না ।

আমার এই কালক্ষেপনের সুযোগে মেয়েটি খাটে বসে পা দুলাচ্ছে আর মাথা নাড়িয়ে ঘরের চারপাশটা দেখছে । ব্যাচেলর ও ভবঘুরে ধরনের মানুষের ঘর এরকম অগোছালোই হয় - মেয়েটির মুখের ভাবলেশহীন মনোভাব দেখে নিজে নিজেই ঠাউর করে নিলাম । বেশ খানিকক্ষণ নীরব পরিবেশের সমাপ্তি আমিই ঘটালাম ।

- আমি পারবো না
- কেন? পারবেন না কেন? আমাকে আপনের পছন্দ হয় নাই ?
- পছন্দ অপছন্দের বিষয় নয়, আমি আসলে সেরকম মানসিকতার মানুষ নই । তাছাড়া আপনার ভাষায় এই লাইনের লোকও নই
- তাইলে সেদিনের সেই টেকাটা ?

ওহ, এতক্ষণ পর আমার মাথায় আসলো । এক প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে পাওয়া তিনটি কড়কড়ে এক হাজার টাকার নোটের মধ্যে সেদিন মেয়েটিকে দুইটি নোট দিয়েছিলাম, সে ভেবেছে আমি তাকে পছদ করে তার সাথে উল্টাপাল্টা কর্ম করার ইচ্ছায় এই কাজ করেছি । বিষয়টা এখন আমার কাছে দিনের আলোর মতই পরিস্কার । আমি এবার স্থির হয়ে চেয়ারে বসলাম । মেয়েটির কৌতূহলের ঘোর এখনও কাটেনি । মনে হচ্ছে তার মনে অনেক প্রশ্ন । তাকে প্রথমে সুযোগ না দিয়ে আমিই জিজ্ঞেস করলাম,

- কি নাম আপনার ?
- শেফালী

কি করেন, প্রশ্নটা আর করতে ইচ্ছে হচ্ছে না । এরকম পার্টিদের বা খদ্দেরদের সাথেই যে তার সকল কর্মকাণ্ড জড়িত, সেটাও বুঝেছি এতক্ষনে......

পর্ব - ০৬

আমার কালক্ষেপন মেয়েটিকে আর দমিয়ে রাখা গেলো না । শত প্রশ্নের কৌতূহলী মনোভাব যেন জোয়ারের স্রোতের মত বাড়ি খেতে লাগলো তার মন মনান্তরে । তাই তো এবার কথার ফুলঝুড়ি ছুটিয়ে মেয়েটিই প্রশ্ন করতে লাগলো একের পর এক,

- আপনে কি করেন ?
- আশ্চর্য কারও সাথে পরিচয় হলে প্রথমে নাম জিজ্ঞাসা করতে হয়, এটা জানেন না ?
- আমি যে লাইনে কাম করি, এহানে নাম লাগে না
- তবুও আমি নিজে থেকেই বলতে চাই, আমার নাম "স্বাধীন" । আর আমি লিখালিখি করি
- লেখালিখি করেন ভালো কথা, খাওন আসে কোন কামে ?
- এই কাজ দিয়েই টুকটাক চলে যায়
- আপনের বউ বাচ্চা ?
- নাহ, কেউ নেই । ছিল না কোনদিন । আমি একাই, বলতে পারেন ভালোই আছি ।
- আমারে আপনার এত সম্মান দেওনের কাম নেই । লোকে আমাগোরে তুই তুই করে ডাকে । আপনি করে কথা ভালা লাগে না । আপনেও তুই তুই করে বলেন
- ঠিক "তুই" সম্বোধনটা আমার মুখে আসবে না, তার চেয়ে "তুমি" করে বলতে পারি
- জী আচ্ছা বলেন
- আর কোন প্রশ্ন আছে তোমার ?
- আপনে আমার লগে শুইবেন না, তয় টেকা দিলেন কেন ?
- তোমাকে দেখে আমার ছোট বোনের কথা মনে হয়েছিল সেদিন ।
- হেই কি মইরা গেছে ?
- জানি না, অনেক বছর হলো বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছি, আর কারও খোঁজ নেওয়া হয়নি
- আপনে আসলেই স্বাধীন, ঠিক আপনের নামের মত, তাই না ?
- খুব একটা খারাপ বলোনি কিন্তু এই স্বাধীন হতে গিয়ে যে বড্ড একা হয়ে গেছি
- থাক, থাক, আর কষ্ট পাইয়া লাভ নেই । আপনে তো এই শেফালীরে বইন বানাই দিলেন । আমাগো রে কেউ বইন বানায় না।
- হুম, সত্য হয়তো একটু তিতাই হয় । যাই হোক তোমার সেদিনের টিউমারটার কথা শুনে কি করবো, বুঝতে পারছিলাম না । তোমাকে যে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়েছিলাম, উনি আমার পরিচিতই । তোমাকে তো এর মধ্যে আর খুঁজে পাইনি কিন্তু ঐ ডাক্তার ভদ্রলোক কিন্তু বলেছেন, খুব জলদি তোমার ঐ জরায়ুর টিউমারটা কিন্তু ক্যান্সারে পরিণত হতে পারে, এই জন্য একটা জরুরী অপারেশন তোমাকে করতেই হবে
- আমাগোর মধ্যে কেউ এইসব অপারেশন করে না । আমরা খাই রাস্তায়, আমরা শুই রাস্তায় আবার আমরা মরিও রাস্তায় , এইডাই আমাগো কপাল......

মেয়েটির মুখ থেকে বলা এই সত্য কথাটি আমাকে আবার ক্ষণিকের জন্য স্তব্ধ করে দিলো...

পর্ব - ০৭

শেফালী চলে গেছে কিছুক্ষণ হলো । অনেক বার জিজ্ঞেস করেছি কিন্তু ও কোথায় থাকে, কার সাথে থাকে কিছুই বলতে রাজী হয় নি । অবশ্য যাওয়ার সময় বলে গেছে, হুট করে একদিন চলে আসবে আবার । যে মায়ার সম্পর্কগুলো ফেলে দূরে চলে এসেছি সত্যিকার অর্থে স্বাধীন হতে, সেই দূরে এসে আবার কোন মায়ার বাঁধনে পড়ে যাওয়া কি ঠিক হচ্ছে? এই প্রশ্নের উত্তর আমার কাছে নেই ।

নাহ, অনেক হয়েছে, শেফালীর চিন্তা বাদ দিয়ে এবার নিজের জন্য ভাবতে হবে । একটা বই লিখে শেষ করেছি, নাম দিয়েছি "অবেলার মাঝি" । বইটা নিয়ে কয়েকটা প্রকাশনীর দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি এই কয়েকদিন । এই শহরের নতুন লেখক বলে কেউ ভরসা করতে পারছে না । সামনেই বইমেলা । খাটাখাটনি, দৌড়াদৌড়ি মূলত এই কারণেই । আজ যাবো বেশ জনপ্রিয় একটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান "স্বপ্নিল প্রকাশনী" তে । শুনেছি সেই প্রকাশনীর সিইও জনাব আনিসুর রহাম, বেশ একজন সজ্জন ব্যক্তি । প্রতি বছর তার প্রকাশনী প্রতিষ্ঠান থেকে জনপ্রিয় লেখকদের লেখা বই যেমন বের হয়, ঠিক তেমনি নতুন লেখকদের লেখা বইও বের হয় । অন্য এক প্রকাশনী প্রতিষ্ঠান থেকে পরামর্শ দিয়েছিল, তাই যাচ্ছি ।

প্রতিষ্ঠানটা আমার বাসা থেকে বেশ দূরে । কিছুটা পথ বাসে আবার কিছুটা পথ হেঁটে এসে অবশেষে প্রায় ঘণ্টা দুয়েক লাগলো বাসা থেকে এখানে আসতে । এখানে এসে সরাসরি আনিসুর রহমান সাহেবের অফিসেই চলে গেলাম, দরজায় বড় করে লেখা "দয়া করে ভিতরে আসতে নক করুন" । একজন প্রতিষ্ঠানের সিইও হয়েও যে তিনি সরাসরি একজন নতুন লেখকের সাথে দেখা করতে রাজি হলেন, বিষয়টা আমাকে মুগ্ধ করেছে । আমি নক করলাম,

- আসুন আসুন
- আসসালামু আলাইকুম, স্যার আমি একজন নতুন লেখক
- স্যার না, ভাই বলবেন । লিখালিখির মর সৃজনশীল কর্মে নিয়োজিত মানুষদের মুখে ঠিক "স্যার" শব্দটা শুনতে অস্বস্তি হয় আমার । তা যাই হোক, আপনার নাম ?
- জী, আমার নাম স্বাধীন ।
- আগে পরে কিছু নেই?
- আমার লেখনীর মতই আমি শুধুই স্বাধীন ।
- ওহ আচ্ছা । আপনার সাথে আপনার লেখার কোন বই আছে ?
- জী আছে কিন্তু সেটা ঠিক মানসম্মত মনে হবে না আপনার কাছে ।
- তো নতুন কোন লেখা ?
- একটা পাণ্ডুলিপি পুরোটা লিখে শেষ করেছি । মূলত এইটা প্রকাশের জন্যই আসা
- কই দেখি, দেখি

আমি আমার কাঁধের ঝোলা থেকে একটি খসড়া পাণ্ডুলিপি বের করে আনিস সাহেবের হাতে দিলাম । আনিস সাহেব পাণ্ডুলিপিটা হাতে নিয়েই প্রথম পেজ উল্টালেন । প্রথম কয়েকটি লাইন পড়েই ভদ্রলোকের চোখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো......

পর্ব - ০৮

- স্বাধীন সাহেব......
- আমাকে স্বাধীন ভাই বলবেন দয়া করে
- ওহ আচ্ছা, স্বাধীন ভাই, লেখাটার প্রথম প্যারাটা পড়লাম। বেশ ইন্টারেস্টিং । এখন পুরো বইটা পড়তে হবে, তার আগে আপনাকে কোন কথা দিতে পারছি না
- জী, অবশ্যই । আপনি পুরোটুকু পড়ুন, আমার আপত্তি নেই
- দেখুন এক বসাতেই তো পড়তে পারবো না, আমার আরও ব্যস্ততা আছে । তাছাড়া আমি এসব লেখার কি বুঝি বলেন ?
এত বড় প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান চালানো ব্যক্তি যখন নিজেকে ছোট করে উপস্থাপন করেন, তখন আমার মত লেখকের সেই কথায় হ্যাঁ তে হ্যাঁ মিলাতে হয়
- স্বাধীন ভাই, আপনার এই লেখাটা মোটামুটি ভালো মনে হলে আরেকজন জনপ্রিয় কোন লেখকের মূল্যায়নও নেবো তাকে বইটা স্মারক হিসেবে পাঠিয়ে । একটু সময় তো লাগবেই
- না, না, আমার কোন তাড়াহুড়া নেই । আপনি সময় নেন
- আচ্ছা, পাণ্ডুলিপির উপরে যে নাম "অবেলার মাঝি", এই নামটা কোন কারণে পরিবর্তন করতে আপনার আপত্তি নেই তো ?
- না, আপনারা এত বছর ধরে বিভিন্ন লেখকের বই বের করছেন, আপনারা তো অবশ্যই এইটা ভালো বুঝবেন

আনিস সাহেব হো হো করে হেসে দিলেন এবার । তার হাসা দেখে আমি খানিকটা অবাক হলাম । আমি তো হাসির কোন কথা বলিনি, তাহলে ভদ্রলোক হাসছেন কেন ?

- স্বাধীন ভাই, সত্যি কথা বলতে গেলে, আপনি তো জানেনই সামনেই বইমেলা । আমাদের স্বপ্নিল প্রকাশনীর প্রতিবছরের ঐতিহ্য বইমেলায় নতুন লেখকদের বই প্রকাশ । কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই বছর নতুন লেখকদের ভালো পাণ্ডুলিপি পাইনি । তাই আপনার লেখাটা নিয়ে অতিরিক্ত আগ্রহ প্রকাশ করছি । আমার মনে হলো আপনি ভিতরে ভিতরে খুব আশ্চর্য হচ্ছে, তাই হঠাৎ হাসি পেয়ে গেলো

ভদ্রলোক চমৎকার করে গুছিয়ে কথাও বলতে পারেন । আমি এতক্ষণ কোন কিছুতে আশ্চর্য না হলেও, গুছিয়ে তার এই কথা বলাতে বেশ আশ্চর্যই হলাম......

(বাকিটা পরবর্তী পর্ব গুলোতে)

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৩:২৪

রাজীব নুর বলেছেন: এখন কিন্তু কেউ কাগজে কলমে লিখে না। সবাই কম্পিউটারে লিখে। পান্ডূলিপি থাকে না। প্রকাশকের কাছে মানুষ পেনড্রাইভ দেয়।

২| ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ১০:০২

শায়মা বলেছেন: ভালো হয়েছে ভাইয়া।

গল্পটা পড়ে সবারই ভালো লাগবে মনে হচ্ছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.