নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একজন শৌখিন লেখক আমি, আবার কবিও বলা যেতে পারে । যখন যা ভালো লাগে তাই লিখি ।
২০১৯ সালের একেবারে প্রান্তিক লগ্নে সারপ্রাইজের মত হাজির হয়ে বিশ্বের সকল খবরাখবরের প্রথম সারিতে অবস্থান নেয় একটি ভাইরাস । জী, হ্যা, একটি আণুবীক্ষণিক জীব বা সংক্ষেপে অণুজীব । ২০১৯ এ এর ভয়াবহতা কিছুটা আঁচ করা গেলেও এর সামগ্রিক ক্ষয়ক্ষতির ভয়াবহ চিত্র পুরোটুকুই ফুটে ওঠে ২০২০ সালের প্রায় পুরোটা সময় জুড়ে । ভাইরাসটি করোনা গণবিশিস্ট ও ২০১৯ সালে প্রথম আবিষ্কৃত হওয়ায় বিজ্ঞানীরা একমত হয়ে এই ভাইরাসের নামকরণ করেন কোভিড – ১৯ বা করোনা ভাইরাস ২০১৯ ।
ধারণা করা হয় চীনের উহান অঙ্গরাজ্যের একটি ল্যাবরেটরী থেকে দুর্ঘটনাক্রমে এই ভাইরাস উন্মুক্ত হয়ে যায় । সাধারণত মানুষের মত উন্নত প্রাণীই এই ভাইরাসের জন্য উপযুক্ত পোষক । তাই তো উন্মুক্ত হয়েই হু হু করে রীতিমত ছড়িয়ে পড়ে পোষকদেহ থেকে পোষক দেহে । ভাইরাসটি মানুষের ফুসফুসে সংক্রমণ ঘটায় এবং শ্বাসের মাধ্যমেই এটি একজনের দেহ থেকে আরেকজনের দেহে । করোনা ভাইরাস সংক্রমণের প্রধান লক্ষণ হলো, শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া, জ্বর এবং কাশি। প্রথম লক্ষণ হচ্ছে জ্বর। তারপর দেখা দেয় শুকনো কাশি । এক সপ্তাহের মধ্যে শ্বাসকষ্ট দেখা দেয় এবং তখনই কোনও কোনও রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় । হাসপাতালে ভর্তি হয়েও কাউকে কাউকে এই ভাইরাস কাবু করেই ফেলে । বিজ্ঞানীদের প্রাথমিকভাবে ধারণা ছিল সাধারণত যাদের ৫০ বছর বা তার ঊর্ধে বয়স এবং সব্বয়সীদের মধ্যে যারা হার্ট, কিডনি, ক্যান্সার ইত্যাদি জটিল রোগে ভুগছে তারাই এই ভাইরাসের সংক্রমণের ঝুঁকিতে সবচেয়ে বেশি কিন্তু পরবর্তীতে সকল বয়সীদের মধ্যে এই ভাইরাসের অবাধ সংক্রমণ আবার সংক্রমণ পরবর্তী সময়ে সুস্থ হওয়ার পর আবারও নানান ধরনের জটিলতা পরিলক্ষিত হওয়ায় বিজ্ঞানীদের চিন্তায় কিছুটা ছেদ ঘটে ।
চীনে প্রথম দেখা গেলেও ধীরে ধীরে বিশ্বায়নের যুগে এক দেশ থেকে অন্য দেশে ছড়িয়ে যায় এই ভাইরাস । সাথে সাথে এর কারণে মৃত্যুর মিছিলে ভারী হতে থাকে সংখ্যা । অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশেও ছড়িয়ে পড়ে এই ভাইরাস । সর্বপ্রথম ৮ই মার্চ বাংলাদেশে ধরা পড়ে কোভিড – ১৯ আক্রান্ত একজন রোগী । সে-ই কেবল শুরু । ৮ই মার্চ, ২০২০ থেকে ১ই ফেব্রুয়ারী, ২০২১ এই এক বছরে বাংলাদেশে কোভিড – ১৯ আক্রান্ত মোট ৫ লক্ষ ৩৬ হাজার জন, এর মধ্যে চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়েছেন প্রায় ৪ লক্ষ ৮০ হাজার জন এবং মারা গেছেন ৮ হাজার ১ শত ৩৭ জন । এই সংখ্যাগুলো পুরোটুকু অফিসিয়াল । আনফিসিয়াল ভাবে সংখ্যাটা আরও অনেক বেশি ।
কোভিড – ১৯ কারণে যে ক্ষয়ক্ষতি শিকার হয়েছে বাংলাদেশ, সেটি শুধু স্বাস্থ্য সূচকে পরিমাপ করলেই হবে না । যেহেতু একজন থেকে সহজেই এই ভাইরাস অন্যকে আক্রান্ত করতে পারে শুধুমাত্র হাঁচি, কাশি, থুথুর মাধ্যমে, তাই জনকোলাহল বন্ধ করার জন্য পুরো বিশ্বেই কার্যত একটি পদক্ষেপ নেওয়া হয় – লকডডাউন । করোনা ভাইরাসের বিস্তার রোধে বাংলাদেশের সরকার প্রথম দফায় ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি (আদতে লকডডাউন) ঘোষণা করে৷পরবর্তীতে দফায় দফায় বাড়ানো হয় এই লকডডাউন তথা অচলাবস্থা । লকডডাউনে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশেও সকল সরকারী – বেসরকারী, বাণিজ্যিক – অর্থনৈতিক (ক্ষুদ্র থেকে বৃহৎ)– সামাজিক প্রতিষ্ঠান, সকল ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যানবাহন ইত্যাদি বন্ধ ঘোষণা করা হয় । এখান থেকেই শুরু হয় কার্যত অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতির যাত্রা । লকডডাউনের কারণে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি থেকে শুরু করে মাথাপিছু বার্ষিক আয় তথা জিডিপি কমে যায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ।
তবে লকডডাউনের কারণে কার্যত গৃহবন্দী হয়ে পড়ে সকল পেশাশ্রেণীর মানুষ । এর আরও প্রভাব পড়ে উচ্চবিত্ত থেকে শুরু করে নিন্মবিত্ত সকলের জীবনে । একেবারে প্রান্তিক আয়ের মানুষ যেমন দিনমজুর, রিকশাওয়ালা, ভ্যানওয়ালা, ঠেলাগাড়ি চালক, ছোট ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কর্মী, শ্রমিক ইত্যাদি নানান পেশার মানুষ যারা মূলত দৈনিক ভিত্তিতে টাকা আয় করেন, এক কথায়, “দিন আনে দিন খায়”, তাদের জীবনে এই লকডডাউনের একইসাথে মুখ্য ও গৌণ প্রভাব পরিলক্ষিত হয় । এই প্রান্তিক আয়ের মানুষগুলো সমাজে প্রায় সবাই নিন্মবিত্ত শ্রেণীর ।
মুখ্য প্রভাবগুলোর মধ্যে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে চাকুরী বা রোজগারের উপায় থেকে ছাটাই, প্রতিদিনের টিপ বা ভাড়া বন্ধ হওয়া, অল্পশিক্ষিত বা অশিক্ষিত হওয়ায় কোভিড – ১৯ এ অসাবধানতার জের ধরে অতিরিক্ত সংক্রমিত হওয়া, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হওয়ায় স্কুল - কলেজ পড়ুয়া অপ্রাপ্ত বয়স্কদের পড়াশুনা ছুটে যাওয়া, বাল্যবিবাহ ইত্যাদি । মুখ্য বিষয়গুলো মোটামুটি আমাদের সকলেরই দৃষ্টিগোচর হয়েছে কিন্তু মুখ্য প্রভাবগুলোর পাশাপাশি গৌণ প্রভাবগুলোও ছিল উল্লেখযোগ্য । এই লেখায় সেই গৌণ প্রভাবগুলো নিয়েই মূলত আলোচনা করতে চাই ।
উল্লেখযোগ্য গৌণ প্রভাবগুলোর মধ্যে মানসিক অশান্তি, পারিবারিক কলহ, সামাজিক বিশৃঙ্খলা ইত্যাদিই বেশি পরিলক্ষিত হয়েছে । নিচে এই গৌণ প্রভাবগুলো নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হলো -
মানসিক অশান্তিঃ নিন্মবিত্ত শ্রেণীর পরিবারগুলোতে প্রায়ই দেখা যায় ৫/৬ জনের সদস্যের পরিবারে কর্মক্ষম ব্যক্তি শুধু একজনই । বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তিনিই পরিবারের কর্তা । সেই কর্তাদের বেশিরভাগ জন এই সময়ে চাকুরী হারিয়েছেন বা রোজকারের উপায় হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন । এর দরুন কর্তার বা পরিবারের বাকি সদস্যদের মানসিক অশান্তি দেখা দেওয়াটা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার । নিদারুণ খাদ্যকষ্ট, খাদ্য জোগাড় করার উপায়, ভবিষ্যতের ভাবনা, পড়াশুনা মাঝ পথেই বন্ধ হওয়া, বাল্যবিবাহ ইত্যাদিও এই মানসিক অশান্তির কারণ ।
পারিবারিক কলহঃ পরিবারের সদস্যদের মানসিক অশান্তির জের ধরেই পরিবারে শুরু হয় পারিবারিক কলহ । হয়তো বাবা – মায়ের মধ্যে কিংবা বাবা – মায়ের সাথে সন্তানদের কিংবা সন্তানদের নিজেদের মধ্যে ছোটখাট বিষয় নিয়ে কলহ লেগেই থাকাটা এই করোনা পরিস্থিতির নিয়মিত চিত্র । এর জের ধরে দাম্পত্য কলহ, ডিভোর্স, সম্পর্কচ্ছেদ, অসৎ পথে রোজগারের চিন্তা ও কর্ম ইত্যাদি নিয়মিত ঘটনা এই শ্রেণীতে ।
সামাজিক বিশৃঙ্খলাঃ মানসিক অশান্তি ও পারিবারিক কলহ থেকে এই সামাজিক বিশৃঙ্খলার সূত্রপাত হয় । নিয়মিত রোজকারের উৎস হারিয়ে অসৎ পথে আয় করা, বখাটেপনা, বাল্যবিবাহ ইত্যাদি এই সামাজিক বিশৃঙ্খলার স্বরূপ । ইত্যাদি ।
এবার আসি রাজধানী ঢাকাতে নিন্মবিত্ত শ্রেণীর মানুষগুলোর চিত্র ন্নিয়ে । দেশের অন্যান্য জেলার চেয়ে রাজধানী ঢাকা শহরে এই চিত্র ছিল আরও ভয়াবহ । ২০১১ সালে সর্বশেষ আদমশুমারি অনুযায়ী ঢাকা শহরের জনসংখ্যা এক কোটি ২৫ লাখের মতো । তবে ২০১৭ সালে বিশ্বব্যাংক অনুযায়ী জনসংখ্যা এক কোটি আশি লাখ । ঢাকা শহরে নিন্মবিত্তদের অবস্থাটা কমবেশি সবারই জানা । ফুটপাত, বস্তি, রেলস্টেশন, বাসস্টেশন ইত্যাদি জায়গায় স্বল্প পরিসরে গাদাগাদি করে এদের বসবাস করতে দেখা যায় । যেখানে কোভিড – ১৯ থেকে সতর্ক থাকতে বিজ্ঞানী থেকে শুরু করে নাগরিক সমাজ “সামাজিক দূরত্ব” বজায় রাখার পরামর্শ দিয়ে থাকে, সেখানে ঢাকা শহরে নিন্মবিত্তশ্রেণীর মানুষদের অসহায়ভাবে এই সামাজিক দূরত্ব না মেনেই থাকতে হয় । ঘিঞ্জি, কোলাহলপূর্ণ, অস্বাস্থ্যকর ওইসব স্থানগুলোতে বাস করা মানুষগুলো যে সহজেই ভাইরাসের বাহকে পরিণত হয়, তা অনুমিতই ।
তবে স্বস্তির বিষয় যে একেবারেই ছিল না, তা নয় । বিভিন্ন সামাজিক ও মানবিক সংগঠন এবং কিছু দরদী ব্যক্তিবর্গের উদ্যোগে বিভিন্ন ধরনের সাহায্য - সহযোগিতা, প্রণোদনা, কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা ইত্যাদি ছিল সত্যিই এ দেশীয় নাগরিকদের প্রাণবন্ততার জলজ্যান্ত উদাহারন । তবে এই সামাজিক সংগঠন ও ব্যক্তিদের মদ্ধে হাতে গোণা কিছুর উদ্দেশ্য ছিল শুধুই লোকদেখানো এবং নিজেদের প্রচার । যদিও এই সংখ্যাটা এতই নগণ্য তাই তাদের হিসাব থেকে বাদ দেওয়াই যায় । তাই আশা করা যায় এই সম্মিলিত প্রচেষ্টা, পিছন থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর মিলিত প্রয়াস, সাবধানতা, সচেতনতাই পারে এই মহামারী পরিস্থিতি থেকে সমগ্র বাংলাদেশের সকলকে রক্ষা করতে ।
পরিশেষে বলতে চাই, যে জাতি শত্রুপক্ষের সাথে হার না মেনে ৯ মাস স্থায়ী রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে জয়লাভ করে, তারা আর যাই হোক, কোনভাবেই হারতে পারে না এত সহজে । সমগ্র বিশ্বের বিজ্ঞানীদের নানান প্রচেষ্টার ফসল কোভিড ভ্যাকসিন এখন আমাদের দোরগোড়ায়, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ট্রায়ালে চূড়ান্ত হওয়া কোভ্যাক্সিন নামক ভ্যাক্সিন ভারতের সিরাম ইন্সটিটিউটের মাধ্যমে আমাদের দেশে এসেছে, তবু সংখ্যাটি বিশাল জনগোষ্ঠীর হিসেবে পর্যাপ্ত নয় তবে সরকারীভাবে ধীরে ধীরে এই ভ্যাক্সিন আমদানির সংখ্যাটা বাড়ানো হবে বলে আশ্বাস শোনা গেছে । তবু ১৮ কোটি জনগোষ্ঠীর সবার জন্য এই ভ্যাকসিন পর্যাপ্ত হয়তো হবে না কিন্তু আমরা হার মানবো না । হার্ড ইমিউনিটির মাধ্যমে হোক কিংবা যেভাবেই হোক যে কোন মূল্যেই এই করোনা ভাইরাসের যুদ্ধে আমরা জয়লাভ করবোই ।
তথ্যসূত্র
১) বিবিসি নিউজ
২) বাংলাপিডিয়া ডট কম
৩) বাংলা ট্রিবিউন
৪) উইকিপিডিয়া ডট কম
©somewhere in net ltd.
১| ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০২১ দুপুর ১:৩৬
রাজীব নুর বলেছেন: আমি বিশ্বাস করি না করোনা ভাইরাস ল্যাবে তৈরি হয়েছে।
চীন দেশটা খুব খারাপ না। ওরা পরিশ্রমী জাতি। বাঙ্গালীদের মতোন ফাঁকিবাজ না।