নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একজন শৌখিন লেখক আমি, আবার কবিও বলা যেতে পারে । যখন যা ভালো লাগে তাই লিখি ।
[
আজ বেশ গরম পড়েছে । এমনটা অবশ্য আগে থেকেই আন্দাজ ছিল সকলের । দিন দিন প্রকৃতি যেন খেপে যাচ্ছে । সূর্য সর্বশক্তি দিয়ে যে উত্তাপ পৃথিবীতে দিয়ে যাচ্ছে তা দেহের থেকে নিঃশেষ করে দিচ্ছে সকল প্রকার শক্তি । শুধু মানুষ নয়, রাস্তায় থাকা পশু-পাখিগুলোকেও দেখলে মনে হচ্ছে তারা যেন হারিয়ে ফেলেছে তাদের কিছু করার ইচ্ছাশক্তি । বাইরের কড়া রোদের কারণে শিশুগুলোও আজ ঘরের ভিতর বন্দী । কোথাও নেই প্রানের কোন উচ্ছ্বাস । যেন মিইয়ে পড়েছে কোন জনপদ । আসলেই বেশ চিন্তার বিষয় । দিন দিন তাপমাত্রা বেড়েই চলেছে । এর কি কোন সমাধান আছে নাকি শুধু শুধু আমরা পরিবেশ সম্মেলন ইত্যাদি ইত্যাদি করে সময় এবং অর্থের অপচয় করছি ? এই প্রশ্ন দেশের আপামর জনতার মনের প্রশ্ন । এই প্রশ্ন এমন যে এর উত্তর দেয়ার মতও আজ কেউ নেই ।
মিসির আলী বিয়ে থা করেননি । তাই এই বয়সেও তাকে একা একা থাকতে হচ্ছে । আসলে মানুষের বয়সের একটা সময়ে তাকে কারো না কারো সাহায্যের প্রয়োজন পড়েই, এটা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই কারো । মিসির আলীরও নেই । মিসির আলী এখন যে বাড়ীতে আছেন, এটি নতুন ভাড়া নেয়া । একা মানুষ তাই যেখানেই রাত সেখানেই কাত । মাঝে মাঝে খারাপ লাগলেও যেহেতু এটা অভ্যাসের ব্যাপার তাই মিসির আলীর একা থাকতে খারাপ লাগে না । একা থাকা মানুষের সাইকোলজিকে অনেক প্রভাবিত করে । একা থাকলে মানুষের মনে অনেক ধরনের চিন্তা আসে । এর কোনটা ভালো আবার কোনটা খারাপ । যদিও ডাক্তারের নির্দেশ বেশি চিন্তা না করতে কিন্তু স্বভাব তো আর এত সহজে পরিবর্তন করা যায় না ।
হঠাৎ কি মনে করে শার্ট-প্যান্ট পড়ে নিলেন । বাইরে যাবেন তিনি । অনেকদিন ধরেই যাওয়া হয় না ভার্সিটির দিকে । একা একা না থেকে ওদিকটাতে একটু ঘুরে এলে মন্দ হত না, ভেবে নিলেন মিসির আলী । দরজা খুলে বাইরে বের হলেন, এরপর দরজার তালা যখন লাগাতে যাবেন ঠিক তখনই পিছন থেকে কে যেন বলে উঠলো, 'কোথাও যাচ্ছেন নাকি স্যার ?'
হঠাৎ-ই পিছন দিক থেকে "স্যার" সম্বোধন শুনে চমকে উঠলেন মিসির আলী । পিছন ফিরে দেখলেন প্রায় ৩২ টা দাঁত বের করে হাসছে হিমু । অন্য কেউ কাঠফাটা গরম উপেক্ষা করে এই সময় এলে বেশ অবাক হত মিসির আলী কিন্তু হিমু এসেছে দেখে অবাক হলেন না তিনি । কারন তিনি জানেন হিমু কেমন ।
হিমু ভেবেছিল এ সময়টাতে আসলে মিসির আলীকে পাওয়া যাবে না । তবুও সে হাঁটতে হাঁটতে চলে এসেছে । কিন্তু মিসির আলীকে পাওয়া গেল দেখে ভালই হল। হিমু এসেছে সেই ময়লা হলুদ পাঞ্জাবী পড়ে আর খালি পায়ে । মিসির আলী ভাবলো এই গরমে পিচঢালা রাস্তা দিয়ে কেউ খালি পায়ে হাঁটে কিভাবে ? এও কি সম্ভব ?
দুইজন নিজে থেকে ভেবে চলেছে কিন্তু অনেকক্ষণ ধরে কেউ কারো সাথে কিছুই বললো না ।
'রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে কথা হবে নাকি আপনার ঘরের ভিতর বসবেন?' হিমু প্রশ্ন করলো মিসির আলীকে । মিসির আলী হিমুর কোন কথার জবাব না দিয়ে এখনও তাকিয়ে আছেন হিমুর দিকে । হিমুর চোখ চকচক করছে । মনে হচ্ছে সে মজার কিছু বলবে ।
মিসির আলী বাইরে যাবার পরিকল্পনা মনে মনে বাতিল করলেন । কারণ তিনি জানেন যেহেতু হিমু এসেছে তাই আজ তার আর বাইরে যাওয়া হবে না । হিমুকে নিয়ে তিনি বাসার ভিতরে ঢুকলেন । 'স্যার, আপনাকে একটা মজার ক্যারেক্টার দেখাবো বলে সাথে করে নিয়ে এসেছি । তবে আপনাকে আজকে বাসায় পাবো বলে ভাবিনি ।' মিসির আলীর চোখের দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বলে গেল হিমু ।
'না, আমি তো সবসময় বাসাতেই থাকি । বাইরে তেমন বের হই না । তা হঠাৎ তোমার কেন মনে হল যে আমি তোমার সেই মজার ক্যারেক্টার দেখতে আগ্রহী হবো ?' মিসির আলী একটু অবাক হয়েছেন বটে । কারণ তিনি এই নতুন বাসাতে উঠেছেন মাত্র পাচ-ছয় দিনের মত । আবার তার হিমুর সাথে সর্বশেষ দেখা হয়েছিল প্রায় তিন মাস আগে । তাহলে হিমু তার এই নতুন ঠিকানা বের করলো কিভাবে ? তবে তিনি হিমুকে এই ব্যাপারে কিছুই জিজ্ঞেস করলেন না । 'স্যার, তাকে আমি বাইরে দাড় করিয়ে রেখেছি । আপনি যদি অনুমতি দেন তাহলে তাকে ভিতরে ডাকি ?' হিমু মিসির আলীকে প্রশ্ন করলো ঠিকই কিন্তু জবাবের অপেক্ষা না করেই বাইরে চলে গেলো ।
প্রায় পাঁচ মিনিট সময় লাগিয়ে একজনকে সাথে নিয়ে ভিতরে ঢুকল । এই পাঁচ মিনিটে মিসির আলী দুইটা সিগারেট শেষ করলো । ডাক্তারের নির্দেশ অমান্য করাই যেন রোগীদের কাজ । মিসির আলী এই বিষয় নিয়ে আগেই ভেবেছেন । কোন রোগী যদি ডাক্তারের সব নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করে তাহলে ঐসব ডাক্তারের উপার্জন তো কম হয়ে যাবে ।
হিমুর সাথে হালকা-পাতলা গড়নের একজন লোক ভিতরে ঢুকল । লোকটার বয়স আনুমানিক ২৮ থাকে ৩২ বছরের মত । নাকের নিচে খুবই হালকা পুরুত্বের গোঁফ লোকটাকে বেশ মানিয়েছে । লোকটার গায়ের রঙ উজ্জ্বল শ্যামলা । লোকটার আরেকটি বেশ লক্ষনীয় ব্যাপার এই যে লোকটি একটু পর পরই জিব দিয়ে তার ঠোঁট দুইটিকে ভিজিয়ে যাচ্ছে । যাকে ইংরেজীতে বলা চলে "Regular Interval" সময়ে । লোকটা হিমুর সাথে ভিতরে ঢুকেই হিমুর গা ঘেষে সোফায় বসে পড়লো । এরপর ঘরের এদিক ওদিক মাথা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখতে লাগলো । এবং সাথে সাথে অভ্যাসমত জিব দিয়ে তার ঠোঁট দুইটিকে ভিজাতে লাগলো । মিসির আলী লোকটিকে প্রায় দুইমিনিট লাগিয়ে খুটিয়ে খুটিয়ে পর্যবেক্ষণ করলেন । এদের দুইজনের একসাথে পাঁচ মিনিট পর ঘরে ঢুকার কারণও তার কাছে পরিস্কার নয় । তবে পর্যবেক্ষণের পরপরই প্রথম মুখ খুললেন ।
'নাম কি আপনার?' মুখ খুলেই সরাসরি লোকটিকে জিজ্ঞেস করলেন । 'জি, মতিন শেখ ।' লোকটি তোতলাতে তোতলাতে নাম বললো । মিসির আলীর মনে খটকা লাগলো । এই লোকটি কি আসলেই তোতলা, নাকি তোতলা হওয়ার ভান করছে, নাকি অপ্রস্তুত অবস্থায় উত্তর দিতে যেয়েই তোতলালো বুঝা যাচ্ছে না । আবার এই শেখ কি আসল শেখ নাকি ডিজিটাল শেখ তাও বুঝা যাচ্ছে না? আজকাল বাংলাদেশে অনেকে নিজের আখের গোছানোর জন্য নামের আগে কিংবা পরে "শেখ" শব্দটি ব্যবহার করে । তাতে অনেক লাভও হয় । সবই পরীক্ষিত । আচ্ছা, এই লোকটাকে জিজ্ঞেস করলে কেমন হয় তার নামের শেষে এই শেখ কি আসল নাকি ডিজিটাল ? থাক, তাহলে সে আরও অপ্রস্তুত হয়ে যাবে । তখন হয়তো মুখ দিয়ে আর কথা বলানো যাবে না । সবচেয়ে ভাল হয় যদি লোকটার সাথে আর কোন কথা না বলে শুধুই হিমুর সাথে কথা বলা যায় ।
'তা হিমু, তুমি জানি কি বলছিলে ? তাহলে দেখাও এই লোকটার ক্যারেক্টারের মজার অংশটুকু ।' 'স্যার, মতিন তার হাতের প্রত্যেকটি আঙ্গুল পিছনের দিকে বাকিয়ে হাতের তালুর উল্টো পাশে লাগাতে পারে । অনেকটা ১৮০ ডিগ্রি স্টাইলে ।' হিমুর কথা শেষ হওয়ার আগেই মতিন তার হাতের প্রত্যেকটি আঙ্গুল একে একে বাঁকিয়ে দেখালো । আসলেই বেশ মজার এবং অবাক করার মত । তবে একবার মিসির আলীর মনে হল হয়তো এই লোকের আঙ্গুলের হাড়গুলো ভাঙ্গা । কিন্তু মতিন প্রায় কিরা-কসম কেটে বললো তার হাতের আঙ্গুলের কোন হাড়ই ভাঙ্গা বা বাঁকা বা অন্য কোন সমস্যায় আক্রান্ত নয় । এই কথা শুনে মিসির আলীর ভ্রু কিঞ্চিৎ কুঞ্চিত হল কিন্তু পরক্ষনেই তিনি স্বাভাবিক হলেন । মনে মনে আবার এমন ভাবনাও এল যে তার পায়ের আঙ্গুলগুলোও কি এমন ! কিন্তু আঙ্গুলের কোন হাড়ই ভাঙ্গা বা বাঁকা বা অন্য কোন সমস্যায় আক্রান্ত না হলে লজিকালি এমনটা হওয়া বেশ কঠিন বটে । তবে মিসির আলী এর মধ্যে মজার কিছুই খুজে পেলেন না । কিন্তু তিনি লক্ষ্য করলেন হিমু হাসছে । যেন তাকে এমন মজার একটি ক্যারেক্টার দেখাতে পেরে হিমু অনেকটা গৌরবান্বিত হয়েছে । হাসি সেই কারণেই ।
মিসির আলী তবু হিমুর এই হাসি অগ্রায্য করে তার রকিং চেয়ারে হেলান দিয়ে বসলেন এবং যেন শূন্যেই বলছেন এমনভাবে বেশ জোরেই বলে উঠলেন 'না, আজকাল মাথাটা বেশ ধরছে । না জানি, কবে এই কারণে মাথাটা কেটেই ফেলতে হয় ।' পরিস্কার ইঙ্গিত তিনি আর কথা বলতে ইচ্ছুক নন । আর তার সামনের দুইজনকেও বাসা থেকে বেরিয়ে যেতে বলছেন । এমন পরিস্কার ইঙ্গিতের পর যে কেউই বাসা থেকে বেরিয়ে যাবে, এটাই স্বাভাবিক । কিন্তু হিমু তো স্বাভাবিক কেউ নয়, সে তো মহাপুরুষ গোছের কেউ একজন । তবুও হিমু মতিনকে নিয়ে মিসির আলীর বাসা থেকে বেরিয়ে এলো । সে স্বাভাবিক কেউ না হলেও মতিন তো স্বাভাবিক একজন মানুষ । কমপক্ষে তার কথা ভেবেই হিমু এই কাজটি করেছে । না হলে মানুষকে রাগাতে তার বেশ ভালোই লাগে । এ ব্যাপারে অবশ্য তার বাবার একটি বিখ্যাত উক্তি আছে -
"বাবা, হিমালয়, মানুষের মধ্যে হাসি, কান্না, রাগ ইত্যাদি যত প্রকার অনুভূতির প্রকাশ আছে তার মধ্যে রাগ হল মানুষের মনের সত্য আয়নাস্বরূপ । রাগী মানুষ সবসময় সত্য কথাটি মুখ ফসকে বলে ফেলে । তাই যদি তুমি কোন রাগী মানুষকে দেখ তাহলে তার আশেপাশে থাকবে । তাহলে সেই মানুষটি সম্পর্কে তুমি অনেক অজানা কিন্তু সত্য ঘটনা সহজেই জানতে পারবে ।"
মতিনের সাথে তার পরিচয় হয়েছে প্রায় দশদিন হয়েছে । পরিচয়ের স্থানটিও অদ্ভুত । পুলিশ স্টেশন । একদিন রাতে রাস্তায় হাঁটার সময় টহল পুলিশ হিমুকে ধরে থানায় পাঠায় । হিমুকে তারা ধরতো না কিন্তু তাদের সাথে হিমুর উল্টাপাল্টা কথোপকপনের কারণেই তারা হিমুকে বাধ্য হয় থানায় পাঠাতে । সেই কথোপকথনের চুম্বক কিছু অংশ আপনাদের জন্য তুলে দিচ্ছি -
'আপনার নাম?'
'জি,হিমু ।'
'শুধু হিমু নাকি আগে পরে কিছু আছে?'
'জি না, আমার পুরোনাম হিমালয় ওরফে হিমু । হিমালয়ের ইংরেজী তো জানেন? মাউন্ট এভারেস্ট । পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্ঘ । পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২৮০০ ফুট উঁচু এই শৃঙ্ঘ । মানব ইতিহাসে সর্বপ্রথম নিউজিল্যান্ডের এডমণ্ড হিলারী এবং নেপালী শেরপা তেনজিং নোরগে মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেন । বাংলাদেশের সর্বপ্রথম মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেন মূসা ইব্রাহীম ।'
'থামুন, থামুন । আপনি আমাদের সাথে ঠাট্টা করছেন? আপনাকে এত কথা বলতে কে বলেছে ? আপনি কি আমাদের অশিক্ষিত মনে করছেন নাকি ? এত রাতে এখানে দাঁড়িয়ে জ্ঞানগর্ভ কথাবার্তা বলতে নিশ্চয় আপনি বাইরে বের হননি । সত্যি কথা বলুন এত রাতে বাইরে আপনি বাইরে কি করছেন ? চুরি করতে বের হয়েছেন? দয়া করে ঝেড়ে কাশুন ।'
'না, স্যার । আমার তো সর্দি-কাশি কিছুই হয়নি । তাহলে কাশবো কিভাবে? ইচ্ছাপূর্বক কাশা কি ঠিক হবে ? ব্যাপারটা অনেকটা নাটকীয় হয়ে যাবে না ? আর স্যার আপনার এতগুলো প্রশ্নের মধ্যে আমি একটি প্রশ্নেরই উত্তর দিচ্ছি, আমি অনেক বড় একটি খারাপ কাজ করতে আজ রাস্তায় বেরিয়েছি যেটা আপনাদের বলা এই মুহূর্তে আমার সম্ভব নয় ।'
হিমুর এমন রসিকতাপূর্ণ কথা এই রসকষহীন টহল পুলিশদের বুঝার কথা নয় এটাই স্বাভাবিক । আর এরপর হিমুকে থানায় পাঠানো নিয়ে আর কোন সন্দেহ নিশ্চয়ই নেই কারও । তবে থানায় গিয়ে হিমুর মোট দুইটি লাভ হয়েছে । এক, নতুন ওসি মোঃ জালাল উদ্দীন ঐ একদিনেই হিমুর কিছু অলৌকিক ক্ষমতার পরিচয় পেয়ে মুগ্ধ । দুই, হাজতে মজার ক্যারেক্টার হাজতী মোঃ মতিন শেখের সাথে পরিচয় । বরাবরের মত হিমুকে সেই রাতেই ছেড়ে দেয়া হয়েছে । তবে মতিনকে হিমুর সাথে ছাড়া হয়নি । মতিন মুক্তি পেয়েছে আরও মাস দুয়েক পরে । মুক্তি পেয়েই মতিন হিমুর কাছে চলে এসেছে আর এখন হিমুর সাথেই হিমুর মেসে থাকে ।
মিসির আলীর বাসা থেকে বেরিয়ে হিমু এবং মতিন সরাসরি রাস্তায় এসে উঠলো । রাস্তায় এসেই হিমু একপলক মতিনের দিকে তাকিয়ে দেখলো মতিনের মুখে হাসি । অথচ এতক্ষণ তার মুখ ছিল শুকনা । মনে হচ্ছে স্থান পরিবর্তন করায় সে স্বস্তি পেয়েছে । মানে এতক্ষন মিসির আলীর বাসায় সে স্বস্তি পাচ্ছিল না ।
যাক, রাস্তায় এসেই হিমু এবং মতিনের দুইজনেরই পেটে টান পড়লো । দুপুরে খাওয়া হয়নি । হিমু মতিনকে নিয়ে বাদলদের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হল । বাদল দুইদিন আগে হিমুর মেসে এসেছিল হিমুর খোঁজে কিন্তু সে হিমুর দেখা পায়নি । কারণ ঐদিন সারাদিন হিমু বাইরে ছিল । মেসে ফিরেছে গভীর রাতে । রাতেই মতিন তাকে বাদলের আসার কথা জানিয়েছে । ঐ রাতে ক্লান্ত হয়ে হিমু ঘুমিয়ে পড়ে । পরের দুইদিন বাদলের কথা মনে না আসলেও আজ এসেছে । তাছাড়া এক ঢিলে দুই পাখিও মারা হয়ে যাবে । মাজেদা খালার হাতের রান্নাও খাওয়া হবে ।
হিমু মনে মনে ভাবলো এই দুনিয়ায় আজ পর্যন্ত দুইজনের হাতের রান্না খেয়ে সে ভুলতে পারিনি । একজন হল এই মাজেদা খালা আরেকজন হল 'নিউ বাবুর্চি এন্ড ব্রাদার্স' রেস্টুরেন্টের হেড বাবুর্চি আশফাক উদ্দীন । অবশ্য এই দুইজনের হাতের রান্নাও অনেকদিন পর পরই খাওয়া হয় । এর কারণ মাজেদা খালার বাসায় হিমুর এখনও নো এন্ট্রি মানে প্রবেশ নিষেধ আর 'নিউ বাবুর্চি এন্ড ব্রাদার্স' রেস্টুরেন্টে হিমুর প্রায় পাঁচ হাজার টাকা বাকী রয়েছে । হিমু ইচ্ছা করলে সেই টাকা অনেক আগেই শোধ করতে পারত কিন্তু ঐ রেস্টুরেন্টের মালিক জনাব তারেকুজ্জামান যখন হিমুকে দেখে ভেংচি কাটার মত মুখ বানায় তখন হিমুর বেশ মজাই লাগে ।
তবে হিমু ঠিক করে রেখেছে খুব শীঘ্রই ঐ রেস্টুরেন্টের বাকী টাকা সে শোধ করবে ।
(শেষ)
(মিসির আলী, হিমু ও জনৈক কবি - রম্য সাহিত্য থেকে কিয়দাংশ দেওয়া হলো)
(হুমায়ূন আহমেদ স্যারের কালজয়ী দুইটি চরিত্র "মিসির আলী" ও "হিমু")
৩০ শে জানুয়ারি, ২০২১ দুপুর ১:৫৮
মোশারফ হোসেন ০০৭ বলেছেন: সত্যিই তাই, মিসির আলী সবকিছু দেখেন আর কোন কিছু ঘটার পিছনে ঘটনার যুক্তি খুঁজে বের করেন আর হিমু ওসব যুক্তির ধার ধারে না । তার কাছে জগতটা খুব স্বাভাবিক । অস্বাভাবিকতা তার অভিধানে নেই ।
ধন্যবাদ, আপনার মন্তব্যের জন্য
২| ২৯ শে জানুয়ারি, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:৩৩
মাসুদুর রহমান (শাওন) বলেছেন: আরেকটু ছোট পোস্ট করবেন...
৩০ শে জানুয়ারি, ২০২১ দুপুর ২:০৫
মোশারফ হোসেন ০০৭ বলেছেন: আসলে হয়েছে কি শাওন ভাই, এমন অনেকবার হয়েছে আমার, একজন পাঠক হিসেবে কোন লেখা পড়তে পড়তে মনে হয়েছে, ইশঃ লেখাটা যদি শেষ না হতো, লেখায় যে মজাটুকু পেয়েছি, সেটা যদি আরও কিছুক্ষণ পেতাম । এটা কেন হয় জানেন? কারণ কিছু কিছু লেখা আমাদের মন্ত্রমুগ্ধ করে আবার কিছু কিছু লেখা ভালো - খারাপের মাঝামাঝি অনুভূতি দেয় । মন্ত্রমুগ্ধ করা লেখাটা যত বড়ই হোক, পাঠকের এতে কিছুই যায় আসে না, বরং লেখাটি শেষ হওয়ার পরও একটি তৃষ্ণা থেকেই যায় । তাই সত্যি এটাই যে আমার লেখাটি আপনাকে মন্ত্রমুগ্ধ করতে পারেনি, যদি পারতো তাহলে লেখাটি কখন শেষ হয়ে গেছে বুঝতেও পারতেন না । তবে সকল লেখাই পাঠক ভেদে ভিন্ন হয় । একেক ধরনের পাঠক একেক ধরনের লেখায় মন্ত্রমুগ্ধ হয় । আমার লেখাটির মন্ত্রমুগ্ধ পাঠক কেউ আছে কিনা জানি না, তবে তার/তাদের জন্য লেখাটি বরং অনেক ছোটই হয়েছে ।
ধন্যবাদ, আপনার মন্তব্যের জন্য
৩| ২৯ শে জানুয়ারি, ২০২১ রাত ৯:৪৬
রাজীব নুর বলেছেন: পোস্ট টি খুব ভালো লাগছে।
৩০ শে জানুয়ারি, ২০২১ দুপুর ২:০৭
মোশারফ হোসেন ০০৭ বলেছেন: পাঠকের মুগ্ধতাই লেখকের লেখার স্বার্থকতা
ধন্যবাদ, আপনার মন্তব্যের জন্য
৪| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১২:৫৯
রাজীব নুর বলেছেন: কারন হিমু এবং মিসির আলী আমার খুব প্রিয়।
৩০ শে জানুয়ারি, ২০২১ দুপুর ২:১১
মোশারফ হোসেন ০০৭ বলেছেন: পোস্টের নিচের লেখা "মিসির আলী, হিমু ও জনৈক কবি" রম্য সাহিত্যটি মূলত আমারই লেখা একটি রম্য সাহিত্য । ৪/৫ বছর আগে লেখাটির ৬ খন্ড লিখে আর বাকিটুকু লেখা হয়ে ওঠেনি । প্রথমে ভেবেছিলাম ১৪/১৫ খন্ডের মধ্যে পুরো লেখাটা শেষ করবো । "জনৈক কবি" চরিত্রটিও হিমু ও মিসির আলী চরিত্র দুইটির মতই কাল্পনিক ও সম্পূর্ণ আমার সৃষ্টি । হয়তো লেখাটা পুরোটুকু শেষ করে পাঠক যাচাইয়ের লক্ষ্যে বাজারে প্রকাশ করতে পারবো দোয়া রাখবেন
ধন্যবাদ, আপনার মন্তব্যের জন্য
©somewhere in net ltd.
১| ২৯ শে জানুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৩:২৯
রানার ব্লগ বলেছেন: দুই জনই চারিত্রিক ভাবে ভিন্ন মানুষ!!