নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একজন শৌখিন লেখক আমি, আবার কবিও বলা যেতে পারে । যখন যা ভালো লাগে তাই লিখি ।
- এই যে শুনুন, এই যে......
ঘড়িতে ৩টা নাগাদ বাজে, ভরদুপুর যাকে বলে । যদিও শীতকালে দিনের এই সময়টুকু বড্ড আরামের । রোদ পোহাতে ছাদে বা বাইরে যেমন মজা লাগে, ঠিক তেমনি কম্বল বা কাঁথা মুড়ি দিয়ে এই সময়টাতে নাক ডেকে ঘুমাতেও আলাদা শান্তি লাগে । কিন্তু ঠিক এই সময়টাতে টিউশনি করতে যাওয়া আমার মত বলদেরা কোনরকম শান্তিই পায় না । তবু গতকাল স্টুডেন্ট এর মা বলেছিল দুপুরে তাদের বাসায় দুপুরের খাবার খেতে আর হতভাগা আমার আজকেই দেরী করতে হলো । একে তো আজ যেতে দেরী হয়েছে, তারপর আবার মনে হলো পিছন থেকে মেয়ে গলায় কেউ একজন ডাকছে । আমি তবু হেঁটেই চলেছি । ফরেভার সিংগেল কমিউনিটির একনিষ্ঠ একজন সদস্য আমি, মেয়েরা আমাকে ডাকবে, এটা হতেই পারে না । দৃঢ় এই বিশ্বাস নিয়ে আরও কিছুটা পথ সামনে যেতেই আবারও শুনলাম, হুম, মেয়ে গলায় কে যেন ডাকছে...
- কি ব্যাপার, বয়রা নাকি? শুনেন না ? এই যে সামনে দিয়ে হনহন করে হেঁটে যাওয়া ব্যক্তি......
নাহ, এবার মনে হচ্ছে আমাকেই ডাকা হচ্ছে । কবি বলেছেন, "যেখানেই শুনিবে নারীর গলা, হে বৎস, আপন প্রাণ নিয়ে পালা" (এই কবিও আমাদের ফরেভার সিংগেল কমিউনিটির জনপ্রিয় কবি মোখলেসুর রহমান ভাই) । আমিও পালাবো কি পালাবো না, সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কনফিউশনে পিছনে ফিরে তাকালাম
রিকশা তে বসা নীল সালোয়ার কামিজ পড়া ১৯ থেকে ২১ বছরের মধ্যে বয়সের মেয়েটির দিকে চোখে চোখ পড়লো আমার । রিকশা দাঁড়ানো, মেয়েটি সুন্দরই কিন্তু মনে হচ্ছে এই মুহূর্তে কোন কারণে খুব রেগে আছে । মেয়েটির চোখে মুখে সেই রাগের ভাব স্পষ্ট । আমিই এবার মেয়েটিকে জিজ্ঞাসা করলাম...
- জী, আমাকে বলছেন?
- (আশেপাশে কিছুটা চোখ ঘুরিয়ে দেখে) তা জনাব, আপনি ছাড়া আর কাউকে কি আশেপাশে আপনি দেখতে পাচ্ছেন?
আমি নিশ্চিত হওয়ার জন্য আশেপাশে চোখ ঘুরাতে লাগলাম । মানুষজন নেই, এই সুযোগে দুইটি কুকুর অন্তরঙ্গ অবস্থায় নিজেরা ব্যস্ত । আমি তাড়াতাড়ি সে দিক থেকে চোখ ঘুরিয়ে মেয়েটির প্রশ্নের উত্তর দিলাম...
- জী না, কাউকে তো দেখছি না
- তাহলে অবশ্যই... আপনাকেই বলছি
- ওহ আচ্ছা
আমি "ওহ আচ্ছা" বলে মাথা নিচু করে ভাবতে শুরু করলাম, এই ভরদুপুরে একটা মেয়ে রিকশা থামিয়ে আমার কাছে কি চায়? মেয়েটিকে এই এলাকায় আগে কোনদিন দেখেছি বলে তো মনে হয় না । তবে কি আমার মত একটি ছেলেকে এই ভরদুপুরে রিকশায় করে কিডন্যাপ করা হবে? রাজধানী ঢাকার অবস্থা কি এখন এতই খারাপ? এরকম নারীগ্যাং এর কথা তো শুনিনি । আমার চিন্তার মধ্যে ছেদ পড়লো মেয়েটির গলা শুনে...
- একটা হেল্প করতে পারবেন?
- দেখুন, আমি কিন্তু এই রিকশায় উঠবো না
- কি আশ্চর্য !! আপনাকে রিকশায় উঠতে কে বলেছে? আর আপনি ভাবলেনই বা কিভাবে যে আমি আপনাকে আমার সাথে রিকশায় উঠতে বলবো?
- (মেয়েটির কথায় কিছুটা আশ্বস্ত হলাম, তবু কি ধরনের হেল্প চাচ্ছে এই মেয়েটি, সেই ব্যাপারে কৌতূহলী হলাম) তাহলে কি হেল্প লাগবে আপনার?
- আপনার কাছে ১২০ টাকা আছে ?
মেয়েটির প্রশ্ন শুনে আমি আবার আমার ভাবনার জগতে চলে গেলাম । ১২০ টাকা !! এর অর্থ কি ? মেয়েটি কি আসলেই এত বাজে মেয়ে? টাকার পরিমাণটা কি তার রেট? ভাবতেই আমার গা শিউরে উঠলো । এত সস্তা? রিকশায় করে কাজ করছে, তার মানে ভ্রাম্যমাণ !! তো আমাকে দেখে কি তার খদ্দের মনে হলো, তাও আবার পিছন দিক থেকে দেখে? ছিঃ, জ্যাকেট আর প্যান্টটা এই শীতে দীর্ঘদিন না ধুয়ে পড়লে যা হয় । আজ রাতেই ধুতে হবে, হোক পানি বরফের মত ঠাণ্ডা । আমার চিন্তায় আবারও ছেদ পড়লো মেয়েটির গলা শুনে...
- কি ব্যাপার, একটু পর পর কি চিন্তা করেন এত? হবে ১২০ টাকা ?
- কেন?
- আরে ভাই, আমার বাসা এখানেই, একটু সামনে । বাসা থেকে তাড়াহুড়া করে বের হয়েছি, খেয়ালও করিনি যে ব্যাগে কোন খুচরা টাকা নেই, ৫০০ আর হাজার টাকার নোট । এখন রিকশা ভাড়া দিতে গিয়ে দেখি এই অবস্থা । আপনি খুচরা ১২০ টাকা দিন, আমি না হয় আপনাকে বিকাশে পাঠিয়ে দিচ্ছি, আপনার বিকাশ নাম্বারটা বলেন
এমন কথায় আমি আবারও আমার চিন্তার জগতে না গিয়ে পারলাম না । আচ্ছা, বিকাশের কথা বলে মেয়েটি আমার পারসোনাল নাম্বার চাচ্ছে, আসলে এই মেয়ের মতলবটা কি !! বিকাশের কথা মনে হতেই আবার আমার বিকাশের নাহিদের কথা মনে হলো । এই মেয়ে আবার আমার বিকাশ একাউন্ট হ্যাক করবে না তো ?! যদিও বর্তমানে আমার বিকাশ একাউন্টে ১৭ টাকা আছে, তবুও তো । আচ্ছা পারসোনাল নাম্বার নিয়ে পরে যদি কোনভাবে ব্লাকমেইল করে, তাহলে? নাহ, কিছুতেই নাম্বার দেওয়া যাবে না । পরক্ষনেই মেয়েটির ডাকে আমার চিন্তার ছেদ পড়লো,
- আরে কি মুশকিলে পড়লাম, আজব একটা লোকের কাছে হেল্প চাইছি যে কিনা একটু পর পর ভাবের জগতে হারিয়ে যায় । ভাই, প্লিজ, আল্লাহ্র দোহাই লাগে, এবার ভাবের জগতে হারানোর আগে আমাকে এই ছোটখাট বিপদ থেকে উদ্ধার করেন
- কিন্তু আমার তো বিকাশ একাউন্ট নেই
- তাহলে নগদ? রকেট?
- নাহ, কিচ্ছু নেই
- আচ্ছা আপনি ১২০ টাকা দিন, আমি এই ১২০ টাকা আপনাকে ফ্লেক্সি করে দিচ্ছি
- ওহ শিট!!
- কি সমস্যা আবার?
- গত দুইদিন আগে মোবাইল বাস থেকে নামতে গিয়ে পকেটমারিং হয়ে গেছে, এখনও তো সিম উঠাইনি
- কি যা তা বলছেন?
- বিশ্বাস করা, না করা একান্তই আপনার ব্যাপার
- তার মানে আপনার থেকে ১২০ টাকা নিলে এখন কোনভাবে আপনাকে ফেরত দেওয়ার উপায় নেই ? যদি আমি আপনার পরিচিত কারো নাম্বারে ফ্লেক্সি করি?
- না, এখানেও একটা সমস্যা
- থাক, আপনাকে আর বলতে হবে না । এই ভরদুপুরে একটি অসহায় মেয়েকে সাহায্য করবেন না, সেটাই আসল কথা । বাকি সব অজুহাত
আমাদের কথোপকথনের মাঝে এতক্ষণ নিরীহ রিকশাওয়ালা ছিল দর্শক ও শ্রোতা কিন্তু আমাদের কথোপকথনের অমীমাংসিত ফলাফল দেখে এবার রিকশাওয়ালা মেয়েটির উদ্দেশ্যে বলে উঠলো,
- থাক, আপা, রাস্তাঘাটে চিনন নাই, জানন নাই, এমন মাইনষের কাছ থেইকা টেকা পয়সা না নেওয়াই ভালো
রিকশাওয়ালার কথাটি আমার আত্ম-অহংকারে লেগে গেলো, আর কিছু না ভেবে পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করে ১০০ আর ৫০ টাকার দুইটা নোট বের করে রিকশাওয়ালার উদ্দেশ্যে বলে উঠলাম,
- এইটার খুচরা দিতে পারবা? নাকি আরও ছোট নোট দিতে হবে?
আমার প্রশ্ন শুনে রিকশাওয়ালা দেখি আমার দিকে কটমট করে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে নিজের শার্টের বুকপকেট থেকে ২০ টাকার আর ১০ টাকার একটি নোট বের করে আমার দিকে বাড়িয়ে দিলো, আমি কিছুটা যুদ্ধে জয়ী হবার মত মুখ করে ২০ আর ১০ টাকার নোট দুইটি মানিব্যাগে ঢুকিয়ে মানিব্যাগটি পিছনের পকেটে চালান করে দিলাম। এতক্ষণ মেয়েটির দিকে আর খেয়াল করিনি, খেয়াল করতেই দেখি চোখে মুখে কৃতজ্ঞ ভাব । আমি আর সাতপাঁচ না ভেবে মেয়েটির উদ্দেশ্যে বললাম,
- আচ্ছা, আমরা যেহেতু একই এলাকায় থাকি, ভেবে নিন প্রতিবেশীকে না হয় সাহায্য করলাম । এক এলাকায় থাকার দরুন দেখা তো অবশ্যই হবে । তখন পাওনা টাকাটা ফিরিয়ে দিয়েন আর যদি তাও না হয়, আপনিও না হয় কোন একদিন অন্য কোন প্রতিবেশীকে সাহায্য করে ঋণ চুকিয়ে দিয়েন । আচ্ছা আসি, আল্লাহ হাফেজ
নাটক সিনেমার হিরোদের মত ডায়ালগ ডেলিভারি দিয়েই হনহন করে নিজ গন্তব্য পানে হেঁটে যেতে লাগলাম, খালি মনে হচ্ছিল মেয়েটি ইমপ্রেস হয়ে আমার চলার পথের দিকে তাকিয়েছিল...
গল্পটা এভাবেই রোমান্টিকভাবেই শেষ হতে পারতো কিন্তু না । সব গল্পের হ্যাপি এন্ডিং হয় না । ঘটনার প্রায় মাস খানেক পরের কথা, ঐ মেয়েটির সাথে আমার আর দেখা হয়নি কিন্তু গত দুই সপ্তাহ আগে এক বন্ধুর কাছ থেকে শুনলাম, ও নাকি তার কয়েকদিন আগে, ভরদুপুরের সময় এক অচেনা মেয়েকে ভাংতি টাকা দিয়ে রিকশা ভাড়া দিতে সাহায্য করেছে, তার এক সপ্তাহ পর এক ছোট ভাইও একই কথা জানালো ।
আমার রোমান্টিক ফানুশ ধপ করে নিভে গেলো । মাত্র অল্প কয়টা টাকার জন্য মানুষ এমন করতে পারে !! কি যুগ আসলো !! ভাবছিলাম, নিজেকে একটু আপগ্রেড করবো । মিংগেল কমিউনিটির সদস্যপদের জন্য আবেদন করবো কিন্তু হায়, সেই আমি এখন ফরেভার সিংগেল কমিউনিটির সামনের নির্বাচনে নেতা হতে দাঁড়িয়েছি । দোয়া করবেন, যেন নির্বাচনে জিততে পারি
৩০ শে জানুয়ারি, ২০২১ দুপুর ২:১৩
মোশারফ হোসেন ০০৭ বলেছেন: ধন্যবাদ, আপনার মন্তব্যের জন্য
২| ২৯ শে জানুয়ারি, ২০২১ সকাল ৯:২৮
খায়রুল আহসান বলেছেন: কিছুটা রম্য ধাঁচে লেখা গল্পটি ভাল লেগেছে। + +
৩০ শে জানুয়ারি, ২০২১ দুপুর ২:১৩
মোশারফ হোসেন ০০৭ বলেছেন: ধন্যবাদ, আপনার মন্তব্যের জন্য
৩| ২৯ শে জানুয়ারি, ২০২১ সকাল ১১:০৩
মেহেদি_হাসান. বলেছেন: গল্পটি ভালো লেগেছে।
আপনার আর মিংগেল কমিউনিটির সদস্যপদের জন্য আবেদন করা হলোনা! ফরেভার সিংগেল কমিউনিটির সামনের নির্বাচনে আমি আপনাকে ভোট দেবো আপনি আবার রাতের আধারে ব্যালট বাক্স ভর্তি কইরেন্না
৩০ শে জানুয়ারি, ২০২১ দুপুর ২:১৪
মোশারফ হোসেন ০০৭ বলেছেন: হা হা হা, স্বতন্ত্র প্রার্থী আমি, রাতের আধারে কিছু যে করবো সেই ক্ষমতাটুকুও নেই
ধন্যবাদ, আপনার মন্তব্যের জন্য
৪| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১:১৪
রাজীব নুর বলেছেন: খুব হাসি পেলো না।
৩০ শে জানুয়ারি, ২০২১ দুপুর ২:১৫
মোশারফ হোসেন ০০৭ বলেছেন: তাহলে দেখছি লেখার সফলতা ১০০% এর কাছাকাছিও হলো না
ধন্যবাদ, আপনার মন্তব্যের জন্য
©somewhere in net ltd.
১| ২৯ শে জানুয়ারি, ২০২১ সকাল ৮:৫৪
কবিতা ক্থ্য বলেছেন: সাবলীল লিখা।
ভালো লাগা।