নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একজন শৌখিন লেখক আমি, আবার কবিও বলা যেতে পারে । যখন যা ভালো লাগে তাই লিখি ।
- আব্বু, আব্বু, ধর্ষণ কি ?
অফিসের জন্য রেডি হচ্ছি এমন সময় আমার ক্লাস ওয়ানে পড়া ছেলের মুখ থেকে এমন প্রশ্ন শুনবো এটা তো স্বপ্নাতীত । অন্য সময় হলে না হয় বলতাম, "যাও বিরক্ত করো না, তোমার আম্মুকে জিজ্ঞেস করো" কিন্তু এখন তো সেটাও বলতে পারছি না ।
বিষয়টা কেমন জানি শাখের করাতের মত ব্যাপার হয়ে গেছে । ছেলের এই প্রশ্ন যদি এখন আমি ইচ্ছা করে এড়িয়ে যাই তাহলে আমি সেই পিতাদের দলভুক্ত হবো যারা অজ্ঞতার অজুহাতে এই ঘটনাকে উৎসাহ দেয় আবার আমি যদি তার প্রশ্নের উত্তর দেই, তাহলে তার অবচেতন মনে এই প্রশ্নের উত্তর একটা দাগ কেটে যাবে, আমি নিশ্চিত । আবার এদিকে আমার অফিসে যেতেও লেট হবে, সেই বিষয়টা তো আছেই । তবে আমার ছোট্ট ছেলেটার মাথায় যেহেতু এই শব্দটা ঢুকে গেছে, ওকে তো আমি চিনি, এই শব্দের অর্থ না জানা পর্যন্ত শান্ত হবে না সে । তাই অফিসে যাওয়া লেট হবে এই চিন্তাটুকু বাদ দিয়ে আমি ওকে নিয়ে একটু বসলাম । এইসব শিক্ষা একেবারে ঘর থেকেই হওয়া উচিৎ ।
- কোথায় পেলে এই শব্দটা আব্বু ?
- কাল আম্মু আপুকে বলছিল পেপারে আজকাল এত ধর্ষণের খবর বের হই, কেমন জানি সবসময় ভয়ে থাকি আমি । কিন্তু বাবা এই ধর্ষণ কি, আম্মু এটা নিয়ে ভয় পায় কেন ? ধর্ষণ কি কোন গুন্ডার নাম ?
- উম, না আব্বু ধর্ষণ কোন গুন্ডার নাম নয় ।
- তাহলে ?
- এটা গুন্ডার কাজ । খুব খারাপ কাজ ।
- কি ধরনের কাজ আব্বু ?
- ধরো, তুমি কোন একটা কাজ করতে চাও না, কেউ যদি জোর করে তোমাকে দিয়ে কাজটা করায়, তোমার কেমন লাগবে আব্বু ?
- অনেক খারাপ লাগবে । রাগও লাগবে । সেটা যদি আম্মু, আপু কিংবা তুমি হও, তাহলে আমি রাগ করে ভাত খাবো না ।
- হ্যাঁ, আব্বু তবে এই ধর্ষণ ব্যাপারটা এর চেয়েও অনেক খারাপ কাজ ।
- কেমন ?
- ধরো, প্রতিটি মানুষের লজ্জাস্থান আছে, সেটা আল্লাহ্ আমাদের তৈরি করার সময়ই বানিয়ে দিয়েছেন । সেই অঙ্গ পুরুষ বা মহিলা জাতির সবার আছে । বিষয়টা যেহেতু আল্লাহ্ দিয়েছেন, তাই এই অঙ্গ কিন্তু অনেক পবিত্র । এখন একজন যদি জোর করে আরেকজনের এই পবিত্র অঙ্গকে অপবিত্র করার চেষ্ঠা করে তখন বিষয়টাকে ধর্ষণ বলা হয় ।
- ছিঃ, এটা তো আসলেই অনেক খারাপ কাজ । আচ্ছা আব্বু এমন করলে আল্লাহ্ অনেক গুনাহ দেয় না ?
- হ্যাঁ সে তো দেয় কিন্তু ঐ গুন্ডা বা খারাপ লোকদের আল্লাহ্র ভয় থাকে না । তারা গুনাহর শাস্তির ভয় না পেয়েই গুনাহ করে নিজের ইচ্ছাতে ।
- কত খারাপ ওরা !!
- হ্যাঁ আব্বু অনেক খারাপ । একটা কথা সবসময় মনে রাখবা, ভুল করেও কখনও এমন খারাপ কাজ করার চিন্তাও করবা না । কখনও না ।
- কি বলো আব্বু ? আমি এমন চিন্তা করবো কেন ? আমি কি গুন্ডা ? আমি তো অনেক ভালো
- হ্যাঁ আব্বু তুমি অনেক ভালো । তবে আরেকটা কথা প্রমিস করো
- কি কথা আব্বু ?
- আমার আর তোমার মধ্যে যে কথাগুলো হলো সেগুলো তুমি আর কাউকে বলবা না । তোমার আম্মু, আপু, তোমার কোন বন্ধু ইত্যাদি কারও সাথে বলবা না । প্রমিস করো
- প্রমিস আব্বু
- এই তো আমার লক্ষ্মী বাবাটা । আচ্ছা তুমি তো রেডি হওনি এখনও । স্কুলে যাবা না আজকে ?
- আমার শরীর মনে হয় খারাপ, আজকে যাবো না
- না, আব্বু, এমন করলে তো হবে না । তুমি না অনেক ভালো, ভালো ছেলেরা এমন করে না । তুমি জলদি করে রেডি হয়ে নাও, আজকে তোমাকে স্কুলে পৌঁছে দিয়ে আমি অফিসে যাবো
- আচ্ছা আব্বু, তুমি দাড়াও একটু, আমি জলদি করে রেডি হয়ে নিচ্ছি ।
টিভি খুললে কিংবা পত্রিকার পাতা উল্টালেই ধর্ষণের খবর, গত তিন বছরে এই ধর্ষণের হার উল্লেখযোগ্য আকারে বেড়ে গেছে । সত্যি এমন খবর নিত্য আমাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলাতে যথেষ্ট । অনেকেই ভেবে কূল পান না, এই ঘটনার সমাধান নিয়ে । তবে যত যাই হোক, ঘটনার পিছনে যেহেতু একটি অসৎ ছেলের হাত থাকে, তাই প্রতিটি ছেলের পরিবারের দায়িত্ব এখানে অনেক বেশি । আপনার ছেলেকে প্রয়োজনীয় শিক্ষা দিন । মেয়েদের সম্মান করতে শিখান, এই খারাপ কাজের কুফল সম্পর্কে শিক্ষা দিন, দরকার হলে হার্ড স্টেপ নিন । কোন একটি ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর হা-হুতাশ কিংবা আফসোস করে সত্যিই লাভ হবে না
২| ১৬ ই জুলাই, ২০১৯ বিকাল ৪:৩৩
রাজীব নুর বলেছেন: আসলেই বাচ্চারা এমন সব প্রশ্ন মাঝে মাঝে করে যা উত্তর দেওয়া অনেক কষ্ট।
৩| ১৬ ই জুলাই, ২০১৯ বিকাল ৪:৫৭
নতুন বলেছেন: পরিবার থেকে ছেলেদের শিক্ষা না দেওয়া আর এলাকার রাজনিতিক ক্ষমতার ফলে অনেকেই অন্যায় করতে সাহস পায়।
৪| ১৮ ই জুলাই, ২০১৯ রাত ১২:০৫
অনেক কথা বলতে চাই বলেছেন: এই যুগে শুধু ছেলেরাই ওটা করে এমন ধরে নিলে ব্যাপারটার সরলীকরণ হয়ে যায়। হয়তো বেশির ভাগ সময় ছেলেরাই করে। মেয়েদের উদাহরণ যে নেই তা কিন্তু না!
©somewhere in net ltd.
১| ১৬ ই জুলাই, ২০১৯ দুপুর ১:৫১
অর্থনীতিবিদ বলেছেন: ধর্ষণ যেভাবে মহামারীর মতো ছড়িয়ে পড়েছে সেখানে এই শব্দটা শিশুদের মনে কৌতুহল জাগাবে সেটাই স্বাভাবিক। জাতি হিসেবে এটা মনে হয় আমাদের জন্য সর্বোচ্চ কলঙ্কময় একটা অধ্যায়। ছেলেরাই ধর্ষণ করে যারা কোনো না কোনো পরিবারের সদস্য। এক্ষেত্রে আপনার শেষের কথাগুলোই আমি আবার পুনরাবৃত্তি করতে চাই, আপনার সন্তানকে প্রয়োজনীয় শিক্ষা দিন, মেয়েদের সম্মান করতে শিখান। খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকার নৈতিক শিক্ষা দিন।