নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একজন শৌখিন লেখক আমি, আবার কবিও বলা যেতে পারে । যখন যা ভালো লাগে তাই লিখি ।
- তাহলে ভাই...
- না, আপনি যেটাই বলেন, এসব ঠিক না, উচিৎ না...
- না, না, ভাই, মানে, আমার প্রশ্ন এখন আপনার কাছে যে তাহলে কোন কাজটাকে আপনি ঠিক বলছেন ?
- এভাবে গাড়ি কারও উপর উঠিয়ে দেবেন, মানুষ মারবেন, কৈফিয়ত দেবেন না, আইনের ফাক গলে বেরিয়ে যাবেন, মানুষ জিজ্ঞাসা করলে কিংবা আঙ্গুল উঁচিয়ে দেখালে আঙ্গুল ভেঙ্গে ফেলবেন, এসব স্বৈরাচারী মনোভাবকে ঠিক বললে ঠিক ব্যাপারটাকেই তো অপমান করা হবে, তাই না ?
- আসলে আমরা প্রশ্নের বদলে প্রশ্ন নয় । উত্তর আশা করছিলাম । আমরা তো কারণ বা বিশ্লেষণ নয়, সমাধান চাইছি, আপনি এর সমাধান কি মনে করেন ?
- ঠিক এই বিষয়টার সমাধান জানতে চাইলে আপনাকে কিছুটা পিছনে ফিরে যেতে হবে...
ঘড়িতে রাত বেজে ২:১৫ । টক শো চলছে । বাংলাদেশের একটি স্বনামধন্য টিভি চ্যানেলে । আজকের টক শো এর বিষয়, "নিরাপত্তার অধিকার সবার চাই, আইন কারও বাপের নয়" । যদিও অদ্ভুত শিরোনাম কিন্তু প্রায় সোয়া ২ ঘণ্টা আলোচনা যে প্রায় জমে ক্ষীর, সেটা আর না বললেই চলে । টক শোর প্রধান বক্তা "নিরাপদ সড়ক চাই" সংগঠনের উদ্যোক্তা জনাব মোসাদ্দেক আলী এবং জিপিসিএ এনজিও থেকে আশরাফিয়া খন্দকার এবং "নাগরিকের বাঁচার অধিকার" সংগঠন থেকে আমি অর্থাৎ সৈয়দ ইকরামুল তালেব ।
টক শোর ব্যাপারটা প্রথমে আলোচনা, এরপর সমালোচনা আর এখন উত্তপ্ত ময়দানের মত বিতর্কে এসে ঠেকেছে । আমি সামান্য কথা বলে চুপ হয়ে গেছি, বেশিরভাগ কথা বলছেন মোসাদ্দেক ভাই, এমনকি আশরাফিয়া আপাকেও তেমন সুযোগ দিচ্ছেন না । যদিও উপস্থাপক অনেকবার আমাকে কিংবা আশরাফিয়া আপাকে নাম ধরে প্রশ্ন করেছেন কিন্তু মোসাদ্দেক ভাই একাই নিজের মতামত ব্যক্ত করে চলেছেন । ৩ টার দিকে টক শো শেষ হলো । আমাদের কিছু সম্মানীর টাকা দিয়ে বিদায় জানালো অনুষ্ঠান কর্তৃপক্ষ ।
রাত অনেক হয়েছে । ঢাকা শহরের মত একটা শহরে এত রাতে আগে থেকে ব্যাবস্থা করা ছাড়া কোথাও যাতায়াত মারাত্তক ঝুঁকির । আশরাফিয়া আপা নিজের গাড়ি নিয়েই এসেছেন, মোসাদ্দেক ভাইও তাই । কিন্তু বিধিবাম, আমাকে একাই যেতে হবে । কারণ কাউকে দেওয়ার মত একটা পরিচয় থাকলেও এত প্রতিপত্তি নেই, যে একটা গাড়ি কিনবো, এমনিতে ভাড়া বাসা ছাড়াও তো গতি করতে পারছি না । যাই হোক, এত রাতে আমার এমন অবস্থা বুঝতে পেরে মোসাদ্দেক ভাই নিজেই আমাকে প্রস্তাব করলেন তার গাড়িতে উঠার জন্য । আমার বাড়ি পার হয়েই মোসাদ্দেক ভাইকে বাড়িতে যেতে হবে এখান থেকে । তাই একসাথে আমার উপকার করেই তিনি বাড়ি যেতে চাইছেন, ভালোই । আশরাফিয়া আপার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে, প্রথমে কিছুক্ষণ ইতস্তত করে শেষমেশ উঠেই পড়লাম ।
মোসাদ্দেক ভাই আমার প্রায় ৪-৫ বছরের সিনিয়র । একই ভার্সিটি থেকে দুইজনই পাশ করেছি ঠিকই কিন্তু আমি যখন ভার্সিটিতে ভর্তি হই, ভাই তখন বেরিয়ে যান । এরপর ঘটনাচক্রে এসব সামাজিক সংগঠনের কাজ করতে গিয়েই দুইজনের পরিচয় । এরপর বিভিন্ন সভা, সেমিনার, টক শো ইত্যাদি সব করতে গিয়ে সখ্যতা । বয়সে বড় বলে আমার নাম ধরে ডাকেন তিনি, তবে সম্বোধন করেন "তুমি" বলেই । আমরা এখন আছি গুলশান । আমার বাড়িটা হচ্ছে উত্তর বাড্ডা । মোসাদ্দেক ভাই থাকেন খিলক্ষেত । লিংক রোড থেকে আমার বাড়ি ১০ মিনিটের পথ হেঁটে । গুলশান থেকে গাড়ি ছুটে চলছে লিংক রোডের দিকে । গভীর রাত, তাই চারিদিকে নির্জনতা । তবে বেশ কিছু যানবাহন মানে বাস - ট্রাক চলছে । ভিতরে যাত্রী প্রায় নেই বললেই চলে । গাড়িতে গান ছেড়ে দিলেন মোসাদ্দেক ভাই । কিশোর কুমারের "চাল মেরে সাথী" চলছে । আমি অত ভালো হিন্দি বুঝি না । খালি বুঝতেছি কেউ একজন সাথীকে কোথাও যেতে বলছে । সোজা রোড ধরে গেলে ৫ মিনিট পরই লিংক রোড আসবে । বেশ খানিকক্ষণ নীরবতার পর প্রথমে মোসাদ্দেক ভাই-ই কথা বলে উঠলেন ।
- তা ইকরাম, কেমন চলছে সব আজকাল ?
- এই তো ভাই আলহামদুলিল্লাহ্
- তা এরপর প্ল্যান কি ?
- কিসের ভাই ?
- না, মানে বড় কিছু করতেছো না ?
- প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে একটা সেমিনার আছে আগামীকাল । সেখানে মূসা ভাইও যাবেন সাথে । সেখানে আল-আমিন ভাইয়ের সাথে কথা বলে পরবর্তী প্রজেক্টের কাজটা শুরু করার প্ল্যান আছে ।
- ওহ, ঐ কাজটা নাকি ? যেটা গত মাসে শুরু করবে বলেছিল তোমাদের সংগঠন ? মূসাও তো আমাকে একই কথা বলেছিল ।
কথার তালে তালে হঠাৎ যেন খই হারিয়ে ফেললেন মোসাদ্দেক ভাই । আচমকা গাড়ির সামনে একজন মানুষ...এরপর......এরপর... গাড়ির ব্যালেন্স নষ্ট হয়ে পাশের ফুটপাতের সাথে ধাক্কা, সামনের অংশ থেকে ধোঁয়া বের হওয়া, আর সামনে দিয়ে রক্তের ফোয়ারা, একেবারে তাজা রক্ত । গাড়ির ব্যালেন্স হারিয়ে গেলেও আমরা দুইজনেই ঠিক আছি । বুঝা যাচ্ছে গাড়ির সাথে ধাক্কা লেগে কেউ একজন স্পটডেড ।
হঠাৎ আমাকে ভীষণ অবাক করে দিয়ে গাড়ির স্টিয়ারিং ঘুরিয়ে সোজা টান দিলেন মোসাদ্দেক ভাই । আমি নির্বাক, অনেক চেষ্ঠা করেও মুখ থেকে কোন কথা বের করতে পারছি না । সোজা টেনে এসে লিংক রোড দিয়ে ঘুরেই হাতের বাম পাশে এসে মোসাদ্দেক ভাইয়ের সাদা টয়োটা এসে থামলো । হ্যাঁ, এটা আমার স্টেশন । আমাকে নামতে হবে । সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে একটু আগে টক শোতে কথার ফুলকি উড়ানো মানুষটা একটু আগে একটা জলজ্যান্ত মানুষকেই তার গাড়ি দিয়ে উড়িয়ে দিয়েছে, আমি তার একমাত্র সাক্ষী । আমাকে এই চুপ থাকার বোঝা সইতে হবে, কিছু না বলার শাস্তি পেতে হবে, গাড়ি থেকে নেমে গিয়ে কিছু না করার অপরাধে দণ্ডিত হতে হবে । আমি গাড়ির দরজা খুলে দ্রুতই নেমে গেলাম, এরপর দরজা ফের লাগিয়ে দিলাম । দরজা লাগাতেই মোসাদ্দেক ভাই গাড়িটা নিয়ে টান দিয়ে চোখের নিমিষে গায়েব হয়ে গেলেন । মাত্র ২ মিনিটের সবকিছু আমার কাছে স্বপ্নের মত লাগছে । আমি হতভম্ব, নির্বাক, অসহায়, পাপী, পাষণ্ড, পুতুল - একা রাত ৪টার দিকে লিংক রোডের গা ঘেঁষে দাড়িয়ে আছি । আমাকে ধাতস্থ হতে হবে, কিছু একটা করতে হবে ।
না, আমি আর দাড়িয়ে থাকলাম না । হাঁটতে হাঁটতে বাড়ি ফিরে এলাম । এরপর আর কিছু জানি না । পরদিন পেপার খুলে দেখলাম পেপারের শেষদিকে সামান্য একটা কলামে লেখা এসেছে এক্সিডেন্টের ব্যাপারটা । অজ্ঞাত ব্যক্তির লাশটাকে এখনও নাকি তার পরিচিত কেউ সনাক্ত করে নিয়ে যেতে আসেনি তাই ঢাকা মেডিকেলের মর্গে রাখা আছে লাশটা । একবার মনে ভাবনা এলো, দেখে আসবো নাকি ? ভাবতে ভাবতেই আয়নার দিকে চোখ পড়লো । মুহূর্তেই আৎকে উঠলাম । বীভৎস, ভয়ংকর, পাপিষ্ঠ আমার প্রতিচ্ছবি আমার দিকে তাকিয়ে আছে কুৎসিত এক হাসি দিয়ে । হ্যাঁ, এটাই আসল আমি । আমার আসল আমিত্বের মাঝে লুকিয়ে থাকা ভয়ংকর পশুটিকে আমি তাহলে এতদিন পরে চিনতে পারলাম !!!
২| ৩১ শে জুলাই, ২০১৮ সকাল ৯:৩১
রাজীব নুর বলেছেন: সব চেনা রাস্তায় কি ঘরে ফেরা যায়?
৩| ৩১ শে জুলাই, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৩৮
কিশোর মাইনু বলেছেন: কিছু কমুনা।।।
আসলে বলার কিছুই নেই।
©somewhere in net ltd.
১| ৩১ শে জুলাই, ২০১৮ ভোর ৪:৪৩
নাঈম জাহাঙ্গীর নয়ন বলেছেন: সবাই যদি আপনার মতো ঘৃণা করতে পারতাম নিজের ভিতর লুকিয়ে থাকা হিংস্র জানোয়ারটাকে!! তাহলে পৃথিবীটা কত সুন্দর হতো।।
সুন্দর লিখেছেন ভাই, ভালো লাগলো আপনার কথামালা।
শুভ রাত্রি