নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একজন শৌখিন লেখক আমি, আবার কবিও বলা যেতে পারে । যখন যা ভালো লাগে তাই লিখি ।
প্রতিদিনের মত আজও বাবার কথামত বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলাম । রোজ রোজ ঐ একই কথা, "তোমাকে আর বসিয়ে বসিয়ে খাওয়াতে পারবো না । এত বড় ডাঙ্গর ছেলে, আর কিনা বাপের ঘাড়ে চেপে ভাত খায় । একদিনও তো দেখলাম না চক্ষুলজ্জায় কম খাচ্ছো কিংবা কোনকিছুর দাবি কম করছো !! ছোট ছোট ভাইবোনগুলোর দিকে তাকিয়েও তো কিছু করতে পারো । আসলেই কি একটুও লজ্জা নেই তোমার ? এর থেকে তুমি বাড়ি থেকে চলে গেলেই হয়তো আমার ভালো হতো" ।
মা বাবাকে থামাতে অনেক চেষ্ঠা করেন কিন্তু পারেননা । কিছু মানুষকে তাদের আবেগের বহিঃপ্রকাশ করতে দিতে হয়, না হলে তারা ভিতরে ভিতরে গুমরে মরে । আমি তাই মাঝে মাঝে মা কে বারণ করি বাবাকে থামাতে কিন্তু সবাই যেন চিরাচরিত কাজ করতেই পছন্দ করে । প্রতিদিনের মত কথা গিয়ে শেষ হয় ঐ একটি জায়গায়, আমি বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলেই নাকি বাবা খুশি হন । আমিও তাই বাড়ির বাইরে চলে যাই । ঘণ্টা দুই-তিনেক থাকার পর শুরু হয় ফোনের পর ফোন । এই মোবাইলটাও বাবার দেওয়া । ব্যবহার করতে ইচ্ছে হয় না তখন, কিন্তু মায়ের ফোন তো, তাই উপেক্ষা করা কঠিন । এরপর ফোন ধরলে শুরু হয় মায়ের চিরাচরিত কান্না আর বারবার অনুরোধের পর আমার বাধ্য হয়ে আবারও বাড়ি ফিরে যাওয়া ।
তবে বাড়ির বাইরের সময়টা আমার কাছে বেশ উপভোগ্য । হাঁটতে হাঁটতে পার্কে চলে যাই । এরপর সেখানে একটা ফাঁকা বসার জায়গা পেয়ে একাকী বসে যাই, কখনও ফাঁকা না পেলে ঘাসে বসে যাই । সেখানে বসে বিভিন্ন মানুষের বিভিন্নরকম কর্মকাণ্ড দেখি । অনেক অদ্ভুত আর স্বাভাবিক কাজ । মনে হতে পারে, হয়তো পার্কটি আমার বাড়ির পাশে কিন্তু না । বাড়ি থেকে প্রায় ঘণ্টা খানেকের হাঁটা পথ । আমি বাবার টাকা বাচিয়ে হেঁটেই চলে যাই পার্কে ।
আজকে বাইরে বেরুতেই ঝুম বৃষ্টি । একবারে কাকভেজা যাকে বলে সেই ভেজা ভিজে যাচ্ছি, বুঝছি কিন্তু কি করার !! আজকে হয়তো ঘণ্টা দুয়েকের আগেই মায়ের ফোন চলে আসবে কিন্তু এত তাড়াতাড়ি ফিরে যাবো কি !! অন্য কিছু না ভেবে ভিজে ভিজেই হাঁটতে হাঁটতে পার্কে চলে গেলাম । অন্য দিনের তুলনায় বৃষ্টিস্নাত দিনটাতে পার্কে লোকসংখ্যা অনেক কম, এটাই তো স্বাভাবিক । গুটিকতক পথশিশুদের দেখলাম মনের আনন্দে একসাথে ফুটবল খেলছে । বিশ্বকাপের মৌসুম বলে কথা । আজকে অনেক ফাঁকা বেঞ্চ পাওয়ার পরও কি মনে হলো আমি ঘাসে গিয়ে বসলাম । বৃষ্টির দিনে এই ঘাসে অনেক পোকা, সাপ, কেঁচো ইত্যাদি থাকতে পারে, থাকুক, এইখানেই বসবো আমি ।
বৃষ্টির পানি চোখে লাগলো বলে কিনা জানি না, হঠাৎ মনে হলো আমি কাঁদছি । আমার ভিতর থেকে অবশ্য এই অনুভূতি এতটা প্রখর হলো না, তাই আমি নিজেই শিউর না । না চাইতেও পুরনো ফ্ল্যাশব্যাকে চলে গেলাম । বাবা-মায়ের তিন সন্তানের মধ্যে বড় সন্তান আমি । অনেক আদরের ছোটবেলা থেকেই । পড়াশুনাতেও মেধাবী, অন্তত রেজাল্ট তো তাই বলে । এসএসসি, এইচএসসি দুটোতেই এ+ আর অনার্সে ফাস্ট ক্লাশ ফোর্থ হলাম । অন্য আরও ৮-১০ জন সাধারণ ছাত্রের মত আমার চোখেও স্বপ্ন তখন বিসিএস দিয়ে সরকারী চাকুরী করবো । কিন্তু সোনার হরিণ কি এত সহজে ধরা দেয় !! মাস্টার্সের রেজাল্টও একরকম খারাপ হলো এই বিসিএসের চক্করে । অনেক পড়লাম কিন্তু ৩-৪ বছরেও ভাগ্যে শিকে ছিঁড়ল না । জানি না কেন কিন্তু হতাশ হয়ে পড়লাম । মূলত যারা সবচেয়ে বেশি আশা দেওয়ার কথা সেই বাবা-মাও যেন আমার উপর ভরসা হারিয়ে ফেললেন । ফলস্বরূপ, পরিণতি তো প্রথমেই বললাম ।
ভাইয়া, বলটা দেন তো । হঠাৎ করে একটা কণ্ঠ আমাকে ফ্ল্যাশব্যাক থেকে টেনে সোজাসুজি বর্তমানে নিয়ে এলো । ফ্ল্যাশব্যাক থেকে ফিরে এসেই দেখি আমার দুই পায়ের ফাঁকে ঐ বলটা, যেটা নিয়ে এতক্ষণ পথশিশুগুলো খেলছিল । কিভাবে চলে এসেছে কে জানে !! আমি বললাম, "দিতে পারি এক শর্তে । আমাকেও খেলায় নিতে হবে ।" দুই জন এসেছিল আমার কাছে, আমার কথা শুনে দেখলাম তারা চোখাচোখি করছে । অবশেষে ওদের কাছ থেকে একটা অপ্রত্যাশিত প্রশ্ন পেলাম, "ভাইয়া আপনি বেরাজিল না আর্জেন্টিনা ?" কি !! ওদের প্রশ্ন শুনে আমার প্রচণ্ড হাসি চলে এলো । হো হো হো হা হা হা ।
আমার এরকম পাগলের মত হাসি হাসতে দেখে ওরা দুইজনেই যেন ভয় পেয়ে গেলো । কিন্তু আমি যেন হাসি থামাতেই পারছি না । অজান্তেই একটা ভাবনা মনে এলো, তাই তো !! আমি তো ব্রাজিল অথবা আর্জেন্টিনাই । বাংলাদেশ কি আদৌ আমি কখনও ছিলাম ??
২| ০৪ ঠা জুলাই, ২০১৮ রাত ৯:০১
নাহিদ০৯ বলেছেন: আমিও পড়া শেষ আর চাকুরি শুরুর মধ্যখানে অবস্থান করছি। কিছুটা রিলেট করতে পারছি।
বাবা’র কাছ থেকে গত ৬ বছর যাবত টাকা নিতে হয় না। নিজের টা, ভাই বোনের টা একাউ উপার্জন করতে পারি। টাকা’র জন্য কথা শুনতে হয় না। কিন্তু একটা ক্যাজুয়্যাল চাকুরির জন্য অপেক্ষা করছি। দোয়া রইলো আপনার জন্য ও ।
৩| ০৫ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ১:২৫
জগতারন বলেছেন:
(১) প্রতিদিনের মত আজও বাবার কথামত বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলাম।
(২) রোজ রোজ ঐ একই কথা, "তোমাকে আর বসিয়ে বসিয়ে খাওয়াতে পারবো না।
(৩) এত বড় ডাঙ্গর ছেলে, আর কিনা বাপের ঘাড়ে চেপে ভাত খায়।
(৪) একদিনও তো দেখলাম না চক্ষুলজ্জায় কম খাচ্ছো কিংবা কোনকিছুর দাবি কম করছো !!
(৫) ছোট ছোট ভাইবোনগুলোর দিকে তাকিয়েও তো কিছু করতে পারো।
(৬) আসলেই কি একটুও লজ্জা নেই তোমার ? এর থেকে তুমি বাড়ি থেকে চলে গেলেই হয়তো আমার ভালো হতো"।
এ সমস্ত কথা যা একটি শিক্ষিত যুবক ছেলের আত্মমরদায় আঘাত হানতে পারে।
এ সমস্ত কটু কথা পরিত্যাজ্য হওয়া বাঞ্চনীয়।
লেখকের প্রতি আমার আন্তরীক সমবেদনা রহিল।
দয়া করে যে কোন ছোট খাটো একটা কিছু নিয়ে উদ্যোগত্যা হয়ে যেতে পারেন।
৪| ০৫ ই জুলাই, ২০১৮ সকাল ১১:১৫
রাজীব নুর বলেছেন: আমার দল হেরে গেছে।
©somewhere in net ltd.
১| ০৪ ঠা জুলাই, ২০১৮ রাত ৮:৫৭
চাঁদগাজী বলেছেন:
পড়তে ভালো লেগেছে, পড়ে কষ্ট লেগেছে