নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একজন শৌখিন লেখক আমি, আবার কবিও বলা যেতে পারে । যখন যা ভালো লাগে তাই লিখি ।
আবিরঃ বাবা, বাবা, মানুষ কেন পঙ্গু হয় ?
আনিস সাহেবঃ হুম
আবিরঃ বলো না, বাবা !! ও, বাবা, বলো না
ছেলেটা কেমন জানি হয়ে গেছে । দেরি করে কথা ফুটেছিল মুখে । সবাই কথা শোনার জন্য একরকম অতিষ্ঠ হয়ে গেছিল । বিশেষ করে ছেলের মা আর বাবা । সেই ছেলেটা প্রথম কথা বললো সাড়ে তিন বছরের মাথায় । আর এখন ? তার কথা এত বেশি চলে যে বলতে গেলে একেবারে ননস্টপ । এখন এই ছয় বছর বয়সে আবির স্কুলে যায় ঠিকই কিন্তু ওর বন্ধুসংখ্যা অনেক কম । স্কুলের সহপাঠীরা ওর প্রতি যথেষ্ট বিরক্তই । তবে আনিস সাহেবের কাছে সবচেয়ে বেশি বিরক্ত লাগে যখন আবির যখন তখন যে কোন বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করে বসে । দেখা গেলো, যে প্রশ্নগুলো স্বাভাবিকভাবে কারও মাথায় আসে না, এই ছেলের মাথায় সেটাও চলে আসে । আর উত্তর না দেওয়া পর্যন্ত ঘ্যান ঘ্যান করতেই থাকবে । সেটা আরেক বিপদ ।
আবিরঃ কি হলো বাবা, বলো না
আনিস সাহেবঃ জন্ম থেকে হতে পারে বাবা কিংবা এক্সিডেন্ট থেকে ।
আবিরঃ এক্সিডেন্ট কি বাবা ?
আনিস সাহেবঃ হুম
আবিরঃ ও বাবা, বলো না ।
আনিস সাহেবঃ কোন একটি কিছুর সাথে আরেকটা কিছুর সংঘর্ষই হচ্ছে এক্সিডেন্ট
আবিরঃ সংঘর্ষ কি বাবা ?
আনিস সাহেবঃ আবির, চুপ করে থাকো । চুপ করে থাকলে তোমাকে একটা ক্যাডবেরী চকলেট কিনে দেবো ।
আবিরঃ ক্যাডবেরী চকলেট কি দিয়ে বানায় বাবা ?
আবিরের প্রশ্নের মাত্রা মাঝে মাঝে মাত্রা ঝাড়িয়ে বিরক্তকর পর্যায়ে উপনিত হয় । তার এই প্রশ্নের বাণ ছুটে যায় মা আর বাবার দিকেই । আর কাউকে ও তেমন প্রশ্ন করে না । বাচ্চারা এটা করতেই পারে । বাবা-মা কে আপন মনে করে এটা তারা করে কিন্তু বাবা-মা যে সব প্রশ্নের উত্তর ওকে ঠিকঠাক দিতে পারবে না, তখন ওকে বঞ্চিত করা হবে না ? ঠকানো হবে না ? আনিস সাহেবের মনে এই ভয়টাই কাজ করে ।
আজকে আনিস সাহেবের অফিস ছুটি । সামান্য তৃতীয় শ্রেণীর সরকারী চাকুরিতে সৎ ভাবে থাকতে গেলে ছুটি নেওয়া যায় না তেমন । প্রায় মাস ছয়েক পর দুইদিনের জন্য ছুটি নিয়েছেন তিনি । অসুস্থ তাই । একদিন বিছানায় কাটিয়ে একটু সুস্থ বোধ করছেন তাই পরদিন সকাল সকাল ছেলেকে নিয়ে পার্কে বেড়াতে এসেছেন । ছেলেকেও আজকে স্কুলে পাঠাননি । আবির অবশ্য এই নিয়ে কোন প্রশ্ন করেনি । স্কুলে না যেতে হলে তার বেশিই খুশি লাগে ।
আবিরঃ আচ্ছা বাবা, তুমি এত ঘামাচ্ছ কেন ?
আনিস সাহেবঃ মনে হয়, আমার জ্বর ছেড়েছে তাই ।
আবিরঃ তাই ? জ্বর ছাড়ালে এরকম ঘামায় মানুষ ?
আনিস সাহেবঃ হ্যাঁ, বাবা
আবিরঃ আচ্ছা, বাবা, ভেজা কাপড় সূর্যের তাপে শুকিয়ে যায় কিন্তু শুকনা কাপড় তো ভেজে না । তাহলে মানুষ কেন সূর্যের তাপে আরও ভিজে যায় ?
বাচ্চা ছেলের মুখে এরকম প্রশ্ন শুনে আনিস সাহেব বেশ অবাক হলো । এত গভীর পর্যবেক্ষণ কিভাবে করতে শিখলো সে ?
আনিস সাহেবঃ আমাদের শরীরে লবণ থাকে তাই ?
আবিরঃ কি বলো বাবা, লবণ তো আমরা খাই
আনিস সাহেবঃ হ্যাঁ কিন্তু এই লবণ আমরা খেতে পারি না বাবা ।
হঠাৎ কি হলো কে জানে, আবির আর কোন ফিরতি প্রশ্ন না করে সামনের দিকে তাকিয়ে রইলো । বাবার হাত ধরে হাঁটতে হাঁটতে তার চোখ নিবিষ্ট হয়েছে একটা টোকাই বাচ্চা ছেলের দিকে । আনিস সাহেবকে অবাক করে দিয়ে আবিরের চোখে পানি চলে এলো । আনিস সাহেব আবিরকে কোলে তুলে নিলেন । বাবার ঘাড়ে মাথা দিয়ে আবির অঝোরে কান্না করতে লাগলো । এতটুকু বাচ্চার মনেও কষ্ট ঢুকে গেছে তার মত বয়সী একজনের কষ্ট দেখে । অথচ আমাদের যে কি হয়েছে, কিছুতেই আরেকজনের কষ্ট দেখে আমাদের খারাপ লাগে না ।
২| ১২ ই মে, ২০১৮ সকাল ১০:২৫
রাজীব নুর বলেছেন: বাস্তব বড় কঠিন।
©somewhere in net ltd.
১| ১১ ই মে, ২০১৮ বিকাল ৪:৩২
অর্থনীতিবিদ বলেছেন: আস্তে আস্তে অবস্থা আরো খারাপ হবে। মানুষ আবেগ অনুভূতিহীন রক্ত মাংসের যন্ত্রে পরিণত হবে।