নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বেলাশেষে ক্লান্ত-তৃষ্ণার্ত পথিকের ন্যায় আসলাম সামুর তীরে, রেখে যেতে চাই কিছু অবিস্মরণীয় কীর্তি । পারি না আর না পারি, চেষ্ঠার ত্রুটি রাখবো না, এই ওয়াদা করছি ।

মোশারফ হোসেন ০০৭

একজন শৌখিন লেখক আমি, আবার কবিও বলা যেতে পারে । যখন যা ভালো লাগে তাই লিখি ।

মোশারফ হোসেন ০০৭ › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প - জীবন, মায়া সবশেষে পরিহাস - পর্ব - ০১

৩০ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১২:৫৬

সাবিনার চোখে পানি ছলছল করছে । সে কাঁদতেও পারছে না, আবার কান্না থামাতেও পারছে না । তার সামনেই তার বাড়ির লোকজন অনেক আনন্দ-ফুর্তি করছে । তার ছোট ভাই-বোন দুইটি আলোচনা করছে সামনে কি করবে এটা নিয়ে, সাবিনা শুনতে পাচ্ছে ।

- ওহ, ভাইয়া, কও না, দুলাভাই কেমন দেখতে ?
- ও মা, আমি ক্যামনে কমু ?
- না, তুমি তো আমার চেয়ে বড় । আব্বা-আম্মা আর সাবিনাপুর পরই তুমিই ভালো কইতে পারবা । কও না কিরাম সে ?
- হুম, উনার ইয়া লম্বা লম্বা দাঁত হবে । মুখের দাঁতগুলো হইবো একেকটা করাতের ন্যায় । সেই দাঁত দিয়া আস্ত বেগুন, মূলা, গাজর, শসা কাইটা ফালি ফালি কইরা ফালাইবো । উনার মোচ হবে ইয়া বড় । মোচের দুই পাশে দুইটা বাচ্চা ঝুলাইয়া দিলেও তারা দিব্যি দোল খাইতে পারবো । পেট হবে ইয়া ফুলা (হাত দিয়ে ইশারা করে দেখিয়ে), ১৪-১৫ পদের খাবার খাইতে দিলেও দিব্যি খাইয়া ফালাইবো সে । একটা ঢেঁকুরও দিবো না । আর চেহারা মাশাল্লাহ্‌, কি আর কমু !! মানুষ না কইয়া, দৈত্য কইলেই মনে হয় বেশি ভালো হইবো ।

- (ছোট বোনটি এতক্ষণ ভাইয়ের কথাগুলো মনে মনে শুনছিল । ওর গায়ে কাঁটা দিয়েছে) ধুর, কি যে বলো না তুমি !! আব্বা-আম্মা কি দেইখা-শুইনা সাবিনাপু রে এমন ব্যাটার লগে বিয়া দিবো ? আমি ঐদিন স্কুলে আছিলাম দেইখা, আমি দুলাভাইরে দেখতে পারি নাই । তাই বইলা তুমি আমার লগে এমন মশকরা করতাছো ভাইয়া ? যাও, তুমার লগে কোন কথা নেই ।

এই বলেই ছোট বোনটি অর্থাৎ রুবিনা উঠে চলে যায় দুই বোনের একমাত্র ভাই অর্থাৎ রুবেলের কাছ থেকে । এত কষ্টের মাঝেও সাবিনা ফিক করে হেসে দিলো তার ছোট ভাইটির কথাগুলো শুনে । সাবিনা এই বাড়ির বড় মেয়ে । এরপর রুবেল আর সবশেষে রুবিনা । অবশ্য রুবেল ও রুবিনার বয়সের ব্যবধান মাত্র দেড় বছর, তাই তার পিঠাপিঠি বললেই ভালো হয় । একজন আরেকজনকে ছাড়া থাকতে পারে না । সারাদিন খাওয়া-দাওয়া, খেলাধুলা, বাঁদরামি-দুষ্টামি ইত্যাদি এক সাথেই করে ওরা ।

সাবিনার এই বিয়েতে মত নেই । কিন্তু অমত করার মত সাহস বা পরিস্থিতি কোনটাই তার নেই । সাবিনার বাবা দিনমজুর । মা গৃহিণী । এই সংসারে আরও একজন আছে, সে হচ্ছে সাবিনার দাদু । সাবিনা বড় হওয়ার পর তার দাদিকে জীবিত দেখতে পায়নি । তার বয়স যখন দুই অথবা তিন তখন তার দাদি মারা গিয়েছেন । এই ছয়জনের সংসার চলে একমাত্র সাবিনার বাবা মোঃ আব্দুস সাত্তারের আয় দিয়েই ।

সাবিনারা যে গ্রামে বাস করে সেই গ্রামের নাম "গাববুনিয়া" । বাগেরহাট জেলার মংলা উপজেলার চিলা ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের অধীনে এই গ্রামের অধিকাংশ মানুষই দিনমজুর অথবা খেঁটে খাওয়া মানুষ । এই গ্রামটির মানুষ ২০০৭ সালে সংঘটিত ঘূর্ণিঝড় "সিডর" এবং ২০০৯ সালে সংঘটিত ঘূর্ণিঝড় "আইলা" উভয় দুর্যোগ দ্বারাই ক্ষতিগ্রস্থ । তবে বেশি ক্ষতি হয়েছে "আইলা"-এর সময় । গ্রামটির দক্ষিণ পাশ দিয়ে যে নদীটা চলে গেছে গ্রামের মানুষ এই নদীটাকে একেকজন একেক নামে ডাকে । কেউ ডাকে সর্বনাশী, কেউ ডাকে সর্বগ্রাসী, আবার কেউবা ডাকে পশুর নদী বলে । হ্যাঁ, নদীটির কাগজ-কলমে হয়তো নাম "পশুর" । গ্রামের পাশ থেকে বয়ে যাওয়া নদীটি থেকে ট্রলার ধরে কেউ যদি দক্ষিণ দিকে চলতে থাকে তাহলে ২-৩ ঘণ্টার মধ্যে সাগরে যাওয়া যায় । নৌকায় গেলে অবশ্য সাগরে পৌঁছাতে ৫-৬ ঘণ্টার মত লাগে । তবে গ্রামের মানুষের এত সময় নষ্ট করার সুযোগ নেই ।

(চলবে)

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১:৩৬

কাওসার চৌধুরী বলেছেন: লেখাটি ভাল হয়েছে। আশা করি সামনের পর্বগুলো আরো আকর্ষনীয় হবে। শুভ কামনা আপনার জন্য।

২| ৩০ শে এপ্রিল, ২০১৮ ভোর ৫:৩৩

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: সুন্দর।

৩| ৩০ শে এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ৯:৫৫

রাজীব নুর বলেছেন: কাউকে জোর করে বিয়ে দেওয়া উচিত না।
বাগের হাটের অনেক গ্রামে আমি গিয়েছি। গাববুনিয়া গ্রামে যাইনি।
পশুর নদীতে করে আমি সুন্দরবন গিয়েছি।

পরের পর্বের অপেক্ষায়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.