নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একজন শৌখিন লেখক আমি, আবার কবিও বলা যেতে পারে । যখন যা ভালো লাগে তাই লিখি ।
" অবেলার দ্বিপ্রহরে দ্বীপ জ্বালিয়ে
তুমি খুঁজোনা আমার ছায়ামূর্তি
আমি তো সেই ঠায় দাড়িয়ে আছি
কামনায় তোমার মনের হর্ষ পূর্তির "
মাত্র চার লাইনের এমন কবিতা লিখে নীরব বাইরে থেকে আসমাদের বাড়ির উঠোনের দিকে চেলে দিলো । ওর অবশ্য উদ্দেশ্য ছিল কবিতাটা সরাসরি আসমার হাতে দেওয়া কিন্তু সে উপায় নেই !!
আসমা মেয়েটি এখন গৃহবন্দী । তার বাবা আসলাম সাহেব মেয়ের পায়ে যেন বেড়ী পড়িয়েছেন । সামনে এসএসসি পরীক্ষা অথচ একমাত্র মেয়ের মন এখন উড়ুউড়ু । শুধু গৃহবন্দী করেই ক্ষান্ত হননি তিনি, মেয়ের ব্যবহৃত মোবাইলটিও নিয়ে নিয়েছেন । আসমা অবশ্য গৃহবন্দী হওয়ার বিষয়টা চুপচাপ মেনে নিলেও মোবাইল নিয়ে নেওয়ার সময় সে কি কান্না !! এমনকি মেয়ের কান্না শুনে মিসেস জাহানারা মানে আসমার মা তার বাবার কাছে গিয়ে অনুরোধ করতে বাধ্য হয়, অথচ স্বামীকে ভয় পান তিনিও । কিন্তু অনুরোধে একটুও মন গলেনি আসলাম সাহেবের । কঠিন মনের এই মানুষটাই উল্টো জোরেশোরে ঘোষণা দিয়েছেন, এসএসসিতে এ+ পেলে শুধু এই মোবাইলই না, নতুন একটা ভালো মোবাইল আর সাথে একটি ল্যাপটপও কিনে দেবেন মেয়েকে । এটা শুনেই আসমার কান্নার বেগ একটু একটু করে কমতে কমতে এখন প্রায় শূন্যের কোটায় এসে ঠেকেছে ।
বাংলায় একটা কথা আছে, "পড়বি তো পড় মালির ঘাড়ে" অর্থাৎ যেখানেই বাঘের ভয় সেখানেই রাত হয় । নীরবের চিঠিটা ঠিক এসে পড়েছে আসলাম সাহেবের পায়ের কাছে । তিনি উঠোনে দাড়িয়ে কুলি করছিলেন, এমন সময়ই ঘটে ঘটনাটা । আসলাম সাহেব একটু ঝুঁকে গিয়ে কাগজটা উঠিয়ে খুললেন । আসমার শুভচিন্তক এখন অত্যাধিক আকারেই বেড়ে গেছে । তিনি আশা করছিলেন হয়তো কোন প্রেমপত্র টাইপের কিছু একটা হবে । এর আগেও বেশ কয়েকটা চিঠি পড়ে তিনি রান্না করার চুলায় দিয়েছিলেন । এই কাগজটা হাতে নিয়েও প্রথম চিন্তা এটাই এসেছিল কিন্তু কাগজ খুলে অবাক হয়ে লক্ষ্য করলেন শুধু চার লাইনের একটা কবিতা আর কিছুই লেখা নেই । লেখাটা যে সরাসরি আসমাকে নিয়ে লেখা এটা বলারও সুযোগ নেই । কবিতাটা পরপর চার-পাঁচবার পড়ে ফেললেন তিনি । প্রথম দুইবার যা একটু বুঝেছিলেন, পরের তিন-চারবার পড়ার পর সব গুলিয়ে ফেলেছেন । শেষে নিরুপায় হয়ে আসমার কাছেই নিয়ে যেতে হলো তাকে । হাজার হলেও এই চিঠির রহস্য তিনি উদ্ধার করবেনই ।
আসমা প্রথমে একটু ইতস্তত করলেও পরবর্তীতে চিঠির কবিতাটা পড়ে ফেললো । আসলাম সাহেব খুব খেয়াল করে আসমার মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলেন এতক্ষণ । চিঠিটা পড়ার সময় মুখের মুখের অভিব্যক্তি পরিবর্তন হয় কিনা, এটা বুঝার জন্য । কিন্তু না !! মেয়ে তো তার খুবই স্বাভাবিক । অত্যন্ত অবাক হয়ে আসলাম সাহেব চিঠিটা আবার মেয়ের হাত থেকে নিয়ে পড়লেন । ধুর, বারবার, গুলিয়ে যাচ্ছে । আসমা ভেবেছিল হয়তো তার বাবা তার কাছে এই কবিতার অর্থ জানতে চাবেন কিন্তু তাকে অবাক করে দিয়ে আসলাম সাহেব সেই কাজটি করলেন না । শেষে মেয়েকে পড়তে বসতে বলে, বেরিয়ে গেলেন মেয়ের রুম থেকে । অন্য চিঠিগুলোর পরিণতি হয়তো চুলার আগুনের রসদ হয়েছিল কিন্তু এই চিঠি হয়েছে আসলাম সাহেবের চিন্তার রসদ । ভালোই জমেছে এইবার !!!
©somewhere in net ltd.