নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একজন শৌখিন লেখক আমি, আবার কবিও বলা যেতে পারে । যখন যা ভালো লাগে তাই লিখি ।
১ম পর্বটা যারা পড়েননি তাদের জন্য লিংক দিলামঃ ।। ।। পর্বভিত্তিক গল্প ।। ।। প্রসন্ন বাতায়ন - ১ম পর্ব
১ম পর্ব শেষে -
রাফিয়ার থেকে সৌহার্দ্য ২ বছরের মত বড় । রাফিয়া ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে আর সৌহার্দ্য অনার্স ফাস্ট ইয়ারে । পড়াশুনা সত্যি শিকেয় উঠেছে ছেলের । সেটাই স্বাভাবিক, সারাদিন নাওয়া-খাওয়া ভুলে রাফিয়ার বাড়ির সামনে এসে পড়ে থাকলে কারও ঠেকা পড়েনি যে ওর পরালেখার উন্নতি করাবে । সৌহার্দ্য বিষয়টা বুঝতে পারে, সে নিজেও চায় এমনটা না করতে । একটা মেয়ের কাছে কতদিন উপেক্ষিত থাকা যায়, বাবা-মায়ের রোজকার গালমন্দ খেয়েও ভালোবাসাটুকু মলিন রাখা যায় কিংবা বন্ধুদের কাছে হাসির পাত্র হয়ে বেঁচে থাকা যায় ? সৌহার্দ্য তাই এগুলো সবই বোঝে কিন্তু কি এক আশ্চর্য মায়ার টানে সে স্থির থাকতে পারে না, তার ভাবনার জগতের সিদ্ধান্তে অবিচল থাকতে পারে না কিংবা রাফিয়া নামের মেয়েতিকের চিরদিনের মত ভুলে থাকতেও পারে না । তার কি অধঃপতন আসন্ন !!
রাফিয়া পড়াশুনায় বেশ ভালো । একেবারেই কলেজের সেলেব্রিটি টাইপের একজন । বেশিরভাগ কলেজের স্যাররা তো রাফিয়া বলতে একরকম অজ্ঞান । কোনরকম একাডেমিক ফাংশনের আয়োজন করতে হলে রাফিয়া, কালচারাল প্রোগ্রাম হলে রাফিয়া, স্পোর্টস আয়োজন করতে হলে রাফিয়া - এক কথায় কলেজের যে কোন আয়োজনেই রাফিয়ার নাম সবার প্রথমেই উচ্চারিত হয় । সেই সুবাদেই তো তার বিতর্ক প্রতিযোগিতায় কলেজের প্রতিনিধিত্ব করা আর সেখান থেকেই তো সৌহার্দ্যের নজরে পড়া । ঐ প্রথম দিনই যে ছেলেটা কথা বলার চেষ্ঠা করছে সেটা রাফিয়ার দৃষ্টি এড়ায়নি কিন্তু রাফিয়া নিজে থেকেই কথা বলার সুযোগ তৈরি হতে দেয়নি । তখন অবশ্য হঠাৎ দুর্বলতা থেকে নয়, নিজের নিরাপত্তার খাতিরেই কাজটা করেছিল রাফিয়া কিন্তু এখন মনে হচ্ছে সৌহার্দ্য ছেলেটার সাথে রাফিয়াকে কথা বলতেই হবে ।
আচ্ছা, কথা বলতে তো হবে কিন্তু জায়গা নিয়েই তো কনফিউশন । ঠিক কোন জায়গায় দাড়িয়ে কিংবা বসে কথা বলা যায় !!? রাফিয়া এই বিষয়টা নিয়ে বেশ টেনশনেই পড়ে গেলো । অনেকক্ষণ ভেবে কোন উপায় না পেয়ে ফোন করলো জারা কে । জারা রাফিয়ার বেস্ট ফ্রেন্ড । এমন কোন কথা নেই যেটা রাফিয়া জারার সাথে শেয়ার করে না । সৌহার্দ্যের এই বিষয়টাও জারার সাথে শেয়ার করেছে সে । এখন জারাই ভরসা, একটা ভালো সাজেশন পেলেই চিন্তামুক্ত হতে পারবে রাফিয়া । অনেকক্ষণ ধরে রিং হওয়ার পর ফোন কেটে গেলো । জারা মেয়েটাই এমন, কখনও একবারে ফোন ধরে না ও । ভাগ্য বেশ ভালো হলেই কেবল ওকে দ্বিতীয়বার ফোন করে পাওয়া যায় । অনেকসময় তৃতীয় কিংবা চতুর্থবারে গিয়ে ধরে সে । অবশ্য কেন প্রথমবার ফোন করলে ফোন ধরে না, এটা অনেকবার ওর কাছে জিজ্ঞাসা করেও উত্তর পায়নি রাফিয়া । আজকে রাফিয়ার ভাগ্য মনে হয় ভালো, দ্বিতীয়বার ফোন দিতেই ফোন ধরলো জারা,
- হ্যালো, রাফিয়া, কি রে, খবর কি তোর ?
- ভালো আবার ভালো না ।
- (মুচকি হেসে) পাগল হলি নাকি রে ?
- ঠিক পাগল না, তবে কনফিউজড ।
- তা ম্যাডামের কনফিউশন কি নিয়ে, একটু শুনি তো
- তোকে সৌহার্দ্য নামে একটা ছেলের কথা বলেছিলাম, মনে আছে ?
- হুম, খুব আছে, থাকবে না কেন, ঐ যে রোমিও-টা না যে লাল গোলাপের তোড়া নিয়ে তোর বাড়ির সামনে দাড়িয়ে থাকে ?
- হ্যাঁ, ঠিক ধরেছিস, ওর একটা ব্যাপার নিয়ে কনফিউশন
- দাড়া, দাড়া, ঐ বজ্জাতটা কি শেষমেশ তোকে প্রপোজ করে দিয়েছে ?
- আজব তো !! প্রপোজ করেছে সেটা আমি কখন বললাম ?
- না, তুই অবশ্য বলিসনি, আমি অনুমান করলাম ।
- উদ্ভট কথা রাখ তো । কাজের কথা শোন আগে
- হ্যাঁ বল শুনি
- মা দুপুরের দিকে রুমে এসে বলছিল ছেলেটার সামনাসামনি দাড়িয়ে যেন ওকে বলি যে ও যেই কাজগুলো করছে তার জন্য সামাজিকভাবে আমরা দৃষ্টিকটু বিষয়ে পরিণত হচ্ছি, ছেলেটা যেন এসব বন্ধ করে ।
- হ্যাঁ, অ্যান্টি তো ভালো কথাই বলেছে, বল তাইলে
- কিন্তু ঝামেলা আছে তো
- ওহ আমার সোনা, গুলুগুলু বাবু, রোমিও আর বাড়ির সামনে আসবে না, এটা ভেবে কষ্ট হচ্ছে এখন থেকেই ?
- ঐ ইয়ার্কি রাখ তো, ইয়ার্কি ভালো লাগছে না এখন । আমি কনফিউশনে আছি ওর সাথে কোথায় দাড়িয়ে কিংবা বসে কথা বলবো ? বাড়ির সামনে দাড়িয়ে তো কথা বলা যায় না, তাই না ?
- তাইলে কি রেস্টুরেন্টে বসার চিন্তা করছিস ? আমাকেও বলিস রে । তোরা কথা বলবি আর আমি খাবো
- নাহ, তোর সবকিছুতেই ইয়ার্কি, ধুর !! এই আমি রাখছি বাই ।
- নাহ, এই শোন, শোন...
জারার কথা উপেক্ষা করেও রাফিয়া ফোন রেখে দিলো । রেস্টুরেন্টের বিষয়টা একেবারে মন্দ না । কাউকে দিয়ে খবর পাঠিয়ে সৌহার্দ্যকে জায়গাটা বলে দিতে হবে, ও আসলে একজায়গায় বসে ঠাণ্ডা মাথায় ওকে বুঝিয়ে বলা যাবে । ও ভালো ছেলে, নিশ্চয় শুনবে । কিন্তু জারা কিন্তু একেবারে মিথ্যা বলেনি । সৌহার্দ্য আর ওদের বাড়ির সামনে এসে দাঁড়াবে না, এটা ভাবতেই কেমন কেমন জানি একটু কষ্ট হচ্ছে রাফিয়ার । তবু এই অনুভূতিটুকু কাউকে বুঝতে দেওয়া যাবে না । এই অনুভূতিটুকু রাফিয়ার একার ব্যাপার, এর ভাগ সে কাউকে দেবে না, কাউকে না ।
©somewhere in net ltd.