নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একজন শৌখিন লেখক আমি, আবার কবিও বলা যেতে পারে । যখন যা ভালো লাগে তাই লিখি ।
গৌধুলির সময়টাতেই মন সবচেয়ে খারাপ হয় । একা একা থাকলে তো কথাই নেই, হাজারটা উল্টাপাল্টা ভাবনা মনের জানালা দিয়ে উঁকি দেয় । আর কারও সাথে থাকলেও দুইজনের মনের ভাবনার মিল হয় না ।
কেউ কেউ তো এই গৌধুলি সময়টাকে অভিশপ্ত বলে থাকে । সমুদ্র সৈকতে থেকে সূর্যাস্ত দেখার মধ্যে আলাদা একটা ফিলিংস আছে । অনেকে বলে সূর্য নাকি সারা দিনের দুঃখগুলো নিয়ে ডুব দেয় । তবে তারা যেটা জানে না, সেটি হচ্ছে সূর্য কিছু দুঃখগুলো বহন করার শক্তি পায় না, সেই দুঃখগুলো আসলেই অনেক ভারী হয়, তখন সূর্য সেই দুঃখগুলোকে ফেলেই চলে যায় । সেগুলোই একসময় জমতে জমতে অনেক বড় পাহাড় তৈরি করে । পাহাড়ের কারণেই একসময় সেই সূর্যটাও ঢাকা পড়ে যায়, দৃষ্টিতেও আর পড়ে না ।
মেয়েটার দিকে দৃষ্টি নিবন্ধিত করে সোজা দিকে হাঁটতে লাগলো দিয়া । একমাত্র মেয়ে তাশফি মায়ের কাছে বলেই হাঁটতে হাঁটতে একা সমুদ্রের অনেকটা কাছে চলে গেছে । নাহ, মেয়েটা সাঁতার পারে না, থামতে বলতে হবে । অনেকবার চিৎকার করেও তাশফির কাছ পর্যন্ত আওয়াজটুকু পৌঁছানো গেলো না । অগত্যা দ্রুত বেগে পা চালালো দিয়া । অল্প সময়ের মধ্যেই তাশফির লাগাল পেয়ে গেলো দিয়া । মেয়েটা আসলে সমুদ্রের খুব কাছে গিয়ে দাড়িয়ে পড়েছে । পিছন থেকে কাধে হাত দিতেই অনেকটা অবাক হয়ে কেঁপে উঠলো যেন তাশফি । মায়ের চোখ থেকে আড়াল করতেই হয়তো একটু অন্য দিকে ঘুরে চোখের পানি নিলো মুছে নিলো সে । কিছুই চোখ এড়ালো না দিয়ার । কি বলবে সে !! নিজেই তো একটু আগে ভালো করে চোখ মুছে এসেছে । অথচ এমন কিছুই হওয়ার কথা ছিল না ।
আবিরের সবচেয়ে বড় গুণ বা দোষ যেটাই বলা হোক না কেন, সেটি হচ্ছে হঠাৎ কোন পরিস্থিতিতে মানিয়ে নেওয়া । সেই অবস্থায় নতুন হয়ে এমনভাবে নিজেকে মানিয়ে নেবে যে পুরনো যারা ঐ অবস্থার মধ্যে ছিল, তারাও কনফিউশনে পড়ে যেতে বাধ্য । বিয়ের দিনও দেখা গেলো শেরওয়ানি, পাগড়ি ইত্যাদি কিছুই ম্যানেজ করা হয়নি আবিরের । ওদিকে দিয়াদের বাড়ি থেকে বারবার ফোন, আবিরের আব্বা তো চিৎকার-চেঁচামিচি করে সারা বাড়ি মাথায় । বিয়ের দিনও এমন খামখেয়ালী, করা লাগবে না বিয়ে, সারাজীবন ব্যাচেলর থাকবি । আবির কিছুই না বলে চুপচাপ দাড়িয়ে আছে, ভাব এমন যেন বিয়ের মোটেও ইচ্ছা নেই অথচ পাঁচ বছর প্রেম করে বাড়িতে বিয়ের কথা প্রথম আবিরের মুখ থেকেই বেরিয়েছিল । আবির একমাত্র সন্তান বলে কেউই না করেনি । আবিরের আম্মা যখন আবিরের আব্বাকে শান্ত করতে ব্যস্ত, ঠিক তখনই আবির একটা আধোয়া, ইস্ত্রিহীণ পাঞ্জাবী পড়ে একা একাই দিয়াদের বাড়িতে হাজির । নতুন বরকে এই অবস্থায় দেখে বিয়ে বাড়ির সবার আক্কেলগুড়ুম, তারপর আবার বড় এসেছে বরযাত্রী কাউকে না নিয়ে । বিয়ের আনন্দ ওখানেই মাটি হয়ে যাওয়ার কথা, ঠিক তখনই আবির ফোন দিলো তার এক বন্ধুকে যে নাকি আবার ডিজে । বেচারা আরেকটি শো ছেড়ে দৌড়ে এলো । এরপর যা হলো সেটি কারোরই মাথায় ছিল না । বিয়ে বাড়ির আনন্দটাই দ্বিগুণ হয়ে গেলো । এমনই ছিল আবির । সেই আবিরই কিনা হঠাৎ ব্রেন ক্যান্সারে আক্রান্ত হলো । এত কি ছিল মাথায় ওর ? কি ভাবতো এত ও ? দিয়ার কাছে কোন প্রশ্নের উত্তর নেই ।
মেয়েটা সবে মাত্র ক্লাশ সিক্সে উঠেছে, বাবার কাছে শখ করে নতুন ব্যাগ, পানির পট, টিফিন বাটি ইত্যাদির আবদার করতে দৌড়ে কাছে যেতেই হঠাৎ মাথা চেপে ধরে অজ্ঞান হয়ে যায় আবির । দিয়া তখন সকালের নাস্তা বানাতে রান্নাঘরে । তাশফি হঠাৎ চিৎকার করে কান্না করে উঠতেই দৌড়ে আসে দিয়া । এরপর হাসপাতাল, অপারেশন ইত্যাদি আরও কত ঝামেলা । হাসপাতালেই ভর্তি ছিল ১৩ দিনের মত । বাড়িতেও আর আসা হয়নি, সেখান থেকেই চলে গেছে ঈশ্বরের ডাকে সাড়া দিয়ে । যাবার আগেও হাসতে হাসতে দিয়াকে বলে গেছে আরেকটা বিয়ে করে নিতে । আর তাশফিকে খুব খুব আদর করতে । পাগল একটা !! কখনও নিজের জন্য কিছুই চাওয়ার ছিল না ওর । দিয়ার হাজারবার বারণ সত্ত্বেও একটা ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছিল আবির, সেখানেই টোনাটুনি আর ছোট্ট একটা টুনটুনি নিয়ে সুখের সংসার । সব এখন লণ্ডভণ্ড । তাশফি ভীষণ দুষ্টু ছিল, এখন ভালোভাবে কথাও বলে না । মা-মেয়ে দুইজনেই নীরবে খুব করে কাঁদে কিন্তু কেউ কারও সামনে না । দুইজনেই ভাবে হয়তো এভাবে নীরবে কাঁদলে কেউই জানবে না তখন একজন আরেকজনের শক্তি হবে কিন্তু বিষয়টা আসলেই উল্টো । মা যে কাঁদে, এটা তাশফি জানে আর তাশফির ব্যাপারটা তো দিয়ার কাছে লুকোনোর কথাই না । দুই বছর পরেও বাড়ির অত্যাবশ্যকীয় সদস্যটির কথা কেউই ভুলতে পারেনি । আত্মীয় স্বজন বিশেষ করে তাশফির দাদাদাদি আর নানানানি জোর করে দিয়া আর তাশফিকে কক্সবাজারে ঘুরতে পাঠিয়েছে । প্রথমে রাজী না হলেও পরে সকলের জোরাজুরিতে ঠিকই এসেছে ।
সূর্য যতই শক্তিশালি হোক না কেন, এরকম দুঃখগুলোকে কখনই তার পক্ষে বহন করা সম্ভব হবে না । এমন ভার বহন করার দায়িত্ব হয়তো ঈশ্বর একমাত্র মানুষকেই দিয়েছেন, অন্য কোন প্রাণীকে নয় ।
২| ২৬ শে আগস্ট, ২০১৭ দুপুর ১:০৬
বিজন রয় বলেছেন: সূর্য যতই শক্তিশালি হোক না কেন, এরকম দুঃখগুলোকে কখনই তার পক্ষে বহন করা সম্ভব হবে না । এমন ভার বহন করার দায়িত্ব হয়তো ঈশ্বর একমাত্র মানুষকেই দিয়েছেন, অন্য কোন প্রাণীকে নয় ।
কঠিন ও ভাল কতাবার্তা।
++++
৩| ২৬ শে আগস্ট, ২০১৭ দুপুর ১:১৪
আখেনাটেন বলেছেন: শেষের লাইনদুটোর জন্য লাইক।
গল্প পড়ে ভালোই লাগল। কিন্তু শিরোনামের বানানে ভুল থাকলে মানুষ তো ভিতরেই ঢুকতে চাইবে না।
*গোধূলি < গৌধুলি
©somewhere in net ltd.
১| ২৬ শে আগস্ট, ২০১৭ সকাল ১১:৫৪
কানিজ রিনা বলেছেন: সুন্দর গল্প, এমন কষ্টগুল ইশ্বর মানুষকে
বহন করতে দিয়েছেন অত্যান্ত দামী কথা।
অসংখ্য ধন্যবাদ।