নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একজন শৌখিন লেখক আমি, আবার কবিও বলা যেতে পারে । যখন যা ভালো লাগে তাই লিখি ।
আগের পর্বগুলোর লিংকঃ তমাল আর সুমির পরিণয় - ।। ১ম পর্ব ।।, তমাল আর সুমির পরিণয় - ।। ২য় পর্ব ।।, তমাল আর সুমির পরিণয় - ।। ৩য় পর্ব ।।
১০০০০ টাকা !! ইয়া আল্লাহ্, সে তো অনেক টাকা । এতিমখানায় দিতেই হবে, কোন উপায় নেই । হঠাৎ স্বপ্নের জগৎ থেকে বাস্তব জগতে এসে আছড়ে পড়লো তমাল । ১০০০০ টাকার বাজী তো নিজের লাভেই ধরেছিল সে । নিজের প্রতি নিজের অনিয়ম, সেটার জন্যও শরীরের অনুমতি আবশ্যক । সেই অনুমতি সহজে পাওয়ার জন্য বাজী । কিন্তু সে যে বাজীতে হেরে যাবে, আর ওরকম একটা সুন্দরী মেয়েই যে তার ভাগ্যে থাকতে পারে, সেটা কি বাপের জনমেও ভেবেছিল !!? এখন তো মনে হচ্ছে ১০০০০ টাকার বদলে ১০০০ টাকা বললে ভালো হতো । সারা মাসের বেতনের এক চতুর্থাংশই তো চলে যাবে তাহলে । যাই হোক, মুসলমানের এক জবান, এখন দিতে তো হবেই । ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে রুমে আসতেই হঠাৎ এই ভাবনা চেপে ধরল তমালকে । ভাবতে ভাবতেই সুমির চেহারাটা চোখের সামনে ভেসে উঠলো তার । ভেসে উঠতেই আবার মনটা চাঙ্গা হয়ে গেলো । আচ্ছা, এখন পর্যন্ত যা হয়েছে, সত্যি তো ? স্বপ্নের জগতে নেই তো সে ? হঠাৎ তমালের মনে হলো, ধুর, মেয়েটির সাথে যোগাযোগের কোন রাস্তাই তো সে করে আসেনি । না মোবাইল নাম্বার, না ফেসবুক আইডি । তাহলে এখন কি করবে সে ? অবশ্য মেয়েটির সাথে তো এক মিনিটের জন্যও আলাদা করে কিছুই বলা হয়নি তার । তাহলে মোবাইল নাম্বার কিংবা ফেসবুক আইডিই বা নেবে কিভাবে সে !!
দরজা খুলে রুম থেকে বেরুতে বেরুতেই ২টা বেজে গেলো । ইতিমধ্যে বাবা আর ছোট ভাইটা বাইরে থেকে জুম্মার নামাজ পড়ে চলেও এসেছে । তমালদের বাসায় একটা নিয়ম চলে, আর সেটি হচ্ছে সপ্তাহের কোনদিন সম্ভব না হলেও, কমপক্ষে শুক্রবার দিনটা বাড়ির সকলে একসাথে খাবার খায় । সকালে, দুপুরে এবং রাতে - তিনবেলাতেই । দেরী করে ঘুম থেকে ওঠার কারণে সকালের খাবার তো মিস হয়েই গেছে তমালের । বাবা না জানি কি বলে, সেটা নিয়ে ভাবতে ভাবতেই উপর থেকে নিচে নামলো তমাল । কনট্রাক্টর বাবার বড় ছেলে তমালের রুম ২ তলায় । বাসাটা ২ তলা । এমন ভাবে তৈরি যে, সিঁড়ি একেবারে বিল্ডিঙয়ের ঠিক মাঝে । ২য় তলায় মোট ৪ রুম । এক রুমে তমাল থাকে, এক রুমে তাদের বাবা-মা, এক রুমে তমালের ছোট ভাই তাসিন আর একটা গেস্ট রুম । নিচ তলায় ডাইনিং । খাবার টেবিলটা ডাইনিং - এ । তমাল নিচে নেমে দেখল ইতিমধ্যে তার বাবা আর তাসিন খাবার টেবিলে বসে আছে । তমালকে লক্ষ্য করে তাসিন দুষ্টু হাসি দিলো । অনার্সে নতুন ভর্তি হওয়া এই ছোটভাইটা বেশ দুষ্টু হয়েছে, তমাল মনে মনে বলতে লাগলো । তমাল টেবিলে বসা মাত্রই বাবার দিকে দৃষ্টি গেলো । বাবাকে দেখে মনে হলো, তিনি যেন রেগে আছেন । তমালের মা হাই স্কুলের বাংলার শিক্ষিকা । সপ্তাহের এই একটা দিন তিনিও সময় পান পরিবারের সবার সাথে একসাথে খাওয়ার কিন্তু তিনি খান সবার পরে । খাবার পরিবেশন করার পর । অবশ্য খেতে খেতে পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো নিতে তিনিও সাহায্য করেন সেসময় । তমাল টেবিলে বসেই লক্ষ্য করলো, মা রান্নাঘর থেকে খাবারগুলো টেবিলে নিয়ে আসছেন । তমাল বাবার দিকে লক্ষ্য করলো, আনমনে মোবাইল টিপছেন তিনি । হঠাৎ মোবাইল রেখে দিয়ে দুইবার কাশি দিলেন আনোয়ার সাহেব, মানে তমালের বাবা । এই দুইবার কাশি দেওয়ার অর্থ হচ্ছে, তিনি এইবার কথা শুরু করবেন । প্রায় সময়ই তিনি এই কাজটা করেন, তাই পরিবারের সবাই এই ব্যাপারটা জানে ।
তমালের দিকে লক্ষ্য করে আনোয়ার সাহেব জিজ্ঞেস করলেন...
- মেয়ে কেমন দেখলি ?
- কেন, মা কিছু বলেনি ?
- তোর মা কিছু বলেছে কি বলেনি, সেটা বাদ দে । তুই নিজে মেয়ে কেমন দেখলি ?
- ভালো তো ।
- কেমন ভালো ?
- কেমন ভালো মানে ?
- তুই ১০ এর মধ্যে কত নাম্বার দিবি মেয়েটিকে ?
- ৭ ।
- মাত্র ?
- কেন, বাবা, তুমি কি আশা করেছিলে ,আমি আরও বেশি দেবো ?
- হুম, সেটাই আশা করেছিলাম । তোর মা তো বললো, তুই নাকি মেয়ে দেখে লাফালাফি শুরু করে দিয়েছিলি সেখানে ?
বাবার মুখ থেকে এই কথা শোনা মাত্র তমাল তার মায়ের দিলে তাকালো । মিসেস আসমা আনোয়ার মুখে তখন হাসি । বাবা-ছেলের কথোপকথন তিনি খুব উপভোগ করছেন, বুঝাই যাচ্ছে ।
(চলবে)
©somewhere in net ltd.