নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একজন শৌখিন লেখক আমি, আবার কবিও বলা যেতে পারে । যখন যা ভালো লাগে তাই লিখি ।
যারা আগের পর্বগুলো পড়েননি, শুধুমাত্র তাদের জন্য রইলো ১ম তমাল আর সুমির পরিণয় - ।। ১ম পর্ব ।। ও ২য় পর্ব তমাল আর সুমির পরিণয় - ।। ২য় পর্ব ।। এর লিংক ।
সুমিকে কাঁদতে দেখা নিঃসন্দেহে তমালের জন্য খুব কষ্টসাধ্য ব্যাপার আর সাথে সাথে লজ্জাজনকও । আশেপাশে কেউ আবার দেখছে কিনা এটা দেখার জন্য তমাল আশেপাশে তাকাতেই দেখলো, তাদের ঠিক ডান পাশে মায়ের সাথে এক চার-পাঁচ বছরের একটা ছোট্ট মেয়ে বসে আছে । মা ঘুমিয়ে আছে আর মেয়ে তাকিয়ে আছে তাদের দিকে । তমাল ছোট্ট মেয়েটির দিকে তাকিয়ে একটু খানি শুকনো হাসি দিলো কিন্তু মেয়েটির কোন ভাবলেশ হলো না । ওদিকে সুমির চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি গড়িয়ে পড়ছে তো পড়ছেই । তমাল কিছু বুঝে উঠতে না পেরে পকেটে হাত দিয়ে রুমাল বের করলো । কোন বিখ্যাত একটা উক্তি নাকি এরকম যে, ছেলেদের পকেটে রুমাল থাকেই মেয়েদের চোখের পানি মুছে দেওয়ার জন্য । তমাল হাত বাড়িয়ে রুমাল সুমির দিকে এগিয়ে দিলো । সুমি সেটা দেখেও না দেখার ভান করলো । তমাল বুঝে গেছে, সুমি শুধু কষ্টই পাইনি, একটু রাগও হয়েছে । এই সেরেছে !! নতুন বউয়ের রাগ, সে তো সাংঘাতিক ব্যাপার । তমাল অনেকক্ষণ ধরে রুমাল ধরে থাকার পর সুমির নেওয়ার আগ্রহ না দেখে আবার সেটা ভাজ করে পকেটে রেখে দিলো ।
হ্যাঁ, ট্রেন ছেড়ে দিয়েছে, সাথে সুমির চোখ দিয়ে পানি পড়াও বন্ধ হয়েছে । চোখ দিয়ে পানি পড়া শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত সুমি একটা কথাও বলেনি, এমনকি তমালের দিকে তাকায়নি পর্যন্ত । তমাল বেশ অস্বস্তিতে পড়ে গেছে । সামান্য একটু অভিনয়, একটু আনন্দের জন্য যে এরকম খেসারত দিতে হবে, সেটা আগে বুঝতে পারলে, কখনই সে অভিনয়টুকু করতো না । ওদিকে ট্রেন ছাড়ার মিনিট পাঁচেক পর তাদের পাশে বসে থাকা লোক দুইজন আবার নিজেদের সিটে এসে বসলো । একজন তমালের পাশে আর একজন সুমির পাশে, মুখোমুখি । ঠিক যেমনটা তমাল আর সুমি মুখোমুখি বসে আছে । এই দুইজন লোক চলে আসায়, আদতে তমালের সুমির সাথে কথা বলার চেষ্ঠাটুকু দমে গেলো । উপয়ান্তর না দেখে তমালও নিজের সিটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললো । তাহলে আবার ফ্ল্যাশব্যাকে যাওয়া যাক...
সুমির বাবার কাছ থেকে সম্মতিসুচক উত্তর পাওয়ার পর মা আর ছোট মামার সাথে বাড়ি চলে এলো তমাল । বাড়িতে এসেই নিজের রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিলো সে । এরপর সোজা মোবাইলে হেডফোন লাগিয়ে হাই সাউন্ড দিয়ে কানে দিয়েই নাচ শুরু তমালের । সে এমন নাচ, যার কোন নির্দিষ্ট মুভমেন্ট নেই । যেমনটা ইচ্ছা, অনেকটা জংলীদের মত । প্রায় আধাঘণ্টা নাচার পর ক্লান্ত হয়েই বিছানায় শুয়েই ঘুমিয়ে গেলো তমাল । সকালে ঘুম থেকে উঠেই হাতের কাছে মোবাইল খুঁজতে লাগলো তমাল । অনেকক্ষণ হাতড়ানোর পর মোবাইল পেয়ে গেলো সে । মোবাইল হাতে নিয়ে সময় দেখেই তড়াক করে লাফ দিয়ে একেবারে খাটে বসে গেলো সে । ও মা, ঘড়িতে তো দুপুর দেড়টার মত বাজে । গতকাল ছিল বৃহস্পতিবার । গতকাল যেহেতু সন্ধ্যার দিকে সুমিদের বাসায় গিয়েছিল তারা, সেখান থেকে খাওয়া-দাওয়া করে আসায় রাতে কিছু খাওয়ার প্রয়োজন পড়েনি আর । কিন্তু আজ তো শুক্রবার !! তার মানে জুম্মার দিন । শিট !! এই ঘোড়ার ডিমের ঘুমের কারণে তো জুম্মার নামাজই মিস হয়ে গেলো তার । ধুর !! যাই হোক, আফসোস নিয়েই ফ্রেশ হওয়ার জন্য ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো তমাল ।
দরজা লাগিয়েই ঘুমিয়ে গিয়েছিল তমাল, সকালের দিকে তমালের মা অনেকক্ষণ দরজা ধাক্কা দিয়েও ছেলের ঘুম ভাঙ্গাতে পারেনি । তার উদ্দেশ্য ছিল, সুমিকে নিয়ে তমালের সাথে কথা বলা । মায়ের উপদেশ, আর কি । বলা নেই, কওয়া নেই, হঠাৎ সুন্দরী মতন একটা মেয়েকে দেখে এত লাফানোর কিছুই নেই । এমনও তো হতে পারে, সেই মেয়েই হয়ে গেলো এ বাড়িতে অশান্তি সৃষ্টি করার কারণ । কিন্তু ছেলের ঘুম না ভাঙ্গায় এমন গুরুত্বপূর্ণ কথাগুলো পরেই বলা লাগবে, ভেবেই আবার নিজের ঘরে চলে গিয়েছিল মিসেস আসমা আনোয়ার, মানে তমালের মা ।
(চলবে)
©somewhere in net ltd.