নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একজন শৌখিন লেখক আমি, আবার কবিও বলা যেতে পারে । যখন যা ভালো লাগে তাই লিখি ।
মেয়েটি রোজ সন্ধ্যা থেকে রাত্রি নয়টা পর্যন্ত বারান্দাতেই দাড়িয়ে থাকে । শত বলেও, বকেও তাকে ওখান থেকে সরানো যায় না । মেয়েটির নামটিও রাত্রির সাথে মিল রেখে “নিশি” । মনমোহনা তাবাসসুম নিশি । মেয়েটি কাউকে না বললেও সে আসলে বারান্দায় দাড়িয়ে থাকে অখিলের জন্য । অখিল, পুরো নাম রিয়াজুত তৌহিদ অখিল একটি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃতীয় বর্ষে পড়ছে ফিন্যান্সে । অখিল শুধুমাত্র দুর্ভাগ্যবশত ভালো একটি সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পায়নি, এমনিতে সে ভীষণ পড়ুয়া । প্রতিদিন নিয়ম করে সন্ধ্যা থেকে রাত্রি দশটা পর্যন্ত পড়ে সে । নিশির বারান্দায় দাড়িয়ে থাকার কারণও এইটাই । নিশি ছোটবেলা থেকেই অখিলকে পছন্দ করে । কিন্তু ছোটবেলা থেকেই একসাথে বেড়ে উঠার পরও অখিল এটা কোনদিন টেরই পায়নি । নিশি পড়াশুনা করে না । ছোটবেলা থেকেই পড়াশুনার প্রতি দারুণ অনীহা সত্ত্বেও টেনেটুনে ম্যাট্রিকটা পাশ করেছে সে, তাও আজ থেকে প্রায় পাঁচ বছর আগে । এরপর আর পড়াশুনার আগ্রহ করে উঠতে পারেনি সে । ওর বাবা-মা দুইজনই বুদ্ধি দিয়েছিল উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার । এখন সেখানেই ভর্তি রয়েছে সে, তবে ইন্টার পরীক্ষা দেয়নি একবারও ।
অখিল আবার ভালোবাসে কথাকে । পুরো নাম মাশিয়াত খন্দকার কথা । কথা অবশ্য সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে, সেকেন্ড ইয়ারে । বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাডমিশন কোচিং করতে যেয়ে অখিলের পরিচয় হয় কথার সাথে । এরপর থেকে আজ পর্যন্ত অখিল নিজ আগ্রহে যোগাযোগ টিকিয়ে রেখেছে, যদিও কথাকে সাহস করে ভালোলাগার অনুভূতিটুকু প্রকাশ করা হয়নি । এভাবেই চলছিল লাভ ট্রায়াঙ্গ্যাল ।
হঠাৎ একদিন ক্যাম্পাস থেকে আসতে যেয়ে বাইক এক্সিডেন্ট করলো অখিল । এই কথা শুনে হাসপাতালে ছুটে গেলো নিশি । সকলকে বুঝতে না দিয়ে যথাসাধ্য সেবা করে অখিলকে সুস্থ করে তুললো, বলতে গেলে নিশি একাই । অখিল সুস্থ হতেই নিশিকে শুধু একটি ধন্যবাদ দিয়েই দায়িত্ব শেষ করলো । ওদিকে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার রাতেই হঠাৎ করে কথার বিয়ের কার্ড হাতে পেলো অখিল । পুরো আকাশটাই যেন ভেঙ্গে পড়লো তার মাথায় । কি করবে সে এখন ? নিজেকে ভেঙ্গে যেতে দিবে, নাকি নিজের ভালোবাসার জন্য কিছু করবে সে, কোন প্রশ্নেরই উত্তর ছিল না অখিলের কাছে । সারারাত কান্নাকাটি করে সেই রাত্রি পার করলো অখিল ।
সকাল বেলা নিশি এই খবরটি জানতে পারলো । সে খুব ভোরে গিয়ে তাজা গলাপের এক তোড়া কিনে নিয়ে অখিলের সাথে দেখা করতে চললো । দিনের বেলাতেও নিজেকে অন্ধকারে লুকিয়ে ফেলানো অখিলের হাতে ফুলের তোড়াটি দিলো নিশি । অখিল প্রথমে নিশির হাতে ফুলের তোড়া দেখে থতমত খেয়ে গেলো । নিশি হাসতেই হাসতেই অখিলকে বলে উঠলো, “এই পাগল ছেলে, জানো, আজকে কি দিন ? আজকে ভ্যালেন্টাইন ডে ।” নিশির এই কথাগুলো স্বপ্নের মতই লাগলো অখিলের কাছে । কথাগুলো কি নিশিই বলছে ? অখিল নিশ্চিত হওয়ার জন্য নিজের চোখ দুইটি বন্ধ করলো । চোখ করতেই নিশির হাসিমাখা মুখখানা দেখতে পেলো সে, কথা যেন কোথায় হারিয়ে গেছে নিমিষেই । অখিল চোখ খুললো । সে নিশির হাত দুইটি ধরলো আর বললো, হবে নাকি আমার ভ্যালেন্টাইন ডে এর ভ্যালেন্টাইন ? নিশি লজ্জা পেয়ে অখিলের কাছ থেকে হাত ছাড়িয়ে দৌড় দিলো ।
©somewhere in net ltd.