নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একজন শৌখিন লেখক আমি, আবার কবিও বলা যেতে পারে । যখন যা ভালো লাগে তাই লিখি ।
আজ জায়েদ আর শ্রাবন্তীর বিয়ে - ১ম পর্বটি পড়ুন নিচের লিংকে গিয়ে -
আজ জায়েদ আর শ্রাবন্তীর বিয়ে - ।। পর্ব -১ ।।
ফোন দেওয়ার দশ মিনিট পর অরুণ বিল্ডিং-এর নিচে নেমে আসলো । এরপর জায়েদকে সাথে নিয়ে তার বসের রুমে গেল । বস বললো জায়েদের চাকরি প্রায় নিশ্চিত হবে । কারণ সে অরুণের বন্ধু আর অরুণ বলেছে জায়েদের কোয়ালিফিকেশন নাকি অরুণের চেয়েও ভালো । তবে অফিস আশুলিয়াতে । মোট চারজনকে নেওয়া হবে । এর মধ্যে জায়েদের চাকরি প্রায় নিশ্চিত, কিন্তু জায়েদকে অফিসের গাড়িতে করে এখনই সাইটে যেতে হবে মানে আশুলিয়াতে যেতে হবে । জায়েদ কিছুক্ষণ ভাবলো, এরপর অফিসের গাড়িতে উঠে পড়লো । অরুণের কাজ আছে তাই সে জায়েদের সাথে যেতে পারবে না । অফিসের একজন এমপ্লয়ি এবং ড্রাইভার মাইক্রোবাস দিয়ে নতুন চাকরি পাওয়া মোট চারজনকে নিয়ে আশুলিয়ার দিকে রওনা দিল কিছুক্ষণ পরেই । মাইক্রোবাসে বসেই জায়েদের মোবাইলে ফোন আসতে লাগলো । জায়েদ অবশ্য মোবাইল আগেই সাইলেন্ট করে দিয়েছে, তাই ফোন আসার ব্যাপারটি আর কেউই ধরতে পারলো না । এত মানুষের মাঝে ফোন ধরা ঠিক হবে না ভেবেই জায়েদ ফোন ধরলো না । এমনকি পকেট থেকে বেরও করলো না । তবে সে স্পষ্টই বুঝতে পারছে, ফোন শ্রাবন্তীই করছে ।
যখন মাইক্রোবাসটি কল্যাণপুর এসে জ্যামে আটকালো, তখন জায়েদ মাইক্রোবাসে বসা তার সাথের লোকগুলোকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো । নতুন চাকরি পাওয়া প্রত্যেকেই সুন্দর ইস্ত্রি করা শার্ট আর প্যান্ট পড়েছে, তাও আবার ইন করে । সাথে পায়ে সু তো আছেই । এমনকি অফিসের এমপ্লয়ি যিনি তার বেশভূষাও অফিস অফিসের মতই লাগছে । কিন্তু জায়েদ নিজে একটি পাঞ্জাবী পরে এসেছে তাও আবার ইস্ত্রি ছাড়া । অবশ্য সে এই পাঞ্জাবী সকাল থেকেই পড়ে আছে, তার আজকে বিয়ে তো এই জন্য । জ্যাম ঠেলতে ঠেলতে গাড়ি প্রায় গড়িয়ে গড়িয়ে গাবতলী পাড় হল । এরপর থেকেই জ্যামশুন্য ভাবে চলতে লাগলো । মোট দুই ঘণ্টা পর জায়েদ ও অন্যান্যরা আশুলিয়া পৌছালো । জায়েদের অফিস ও সাইট দেখে বেশ পছন্দ হল । তার নতুন চাকরীর কাজ মূলত বিদেশী কোম্পানির সাথে মিলে প্রজেক্ট বেসিস কাজ করা । প্রজেক্টগুলো টেম্পোরারি কিন্তু চাকরি পার্মানেন্ট । যাক, একটা গতি তো হল । এমনি নিজের জীবন চালানো কষ্ট হয়ে যেত, এরপর আবার নিজের জীবনের সাথে আরেকজনকে জড়ানো । এটা নির্ঘাত আল্লাহ্র অশেষ মেহেরবানী যে ইনি সময়মতই জায়েদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন । জায়েদ ভাবছে, শ্রাবন্তী চাকরীর খবর পেলে কতটা খুশি হবে । এই মেয়েটি তো বিয়ের আগেই জায়েদের সৌভাগ্য বয়ে আনলো । শ্রাবন্তীকে নিজের জীবনে যুক্ত করতে পারছে এটা আসলেই জায়েদের সারা জীবনের ভাগ্য ।
সকল কিছু ঘুরে দেখে গাড়িতে উঠতে উঠতে প্রায় ছয়টা বাজলো । এখন গরমের সময় । সন্ধ্যা হয় সাতটার একটু আগে । তাই তারা প্রায় এক ঘণ্টা সময় পাবে দিনের আলোতেই ঢাকা ফিরে আসার । তবে গাড়িতে উঠার আগে জায়েদ শ্রাবন্তীকে ফোন করলো । একবার রিং হতেই শ্রাবন্তী ফোনটা রিসিভ করলো । যেন এতক্ষণ সে ফোনের কাছেই ছিল ।
- কোথায় তুমি ? ফোন ধরো না কেন ? কোন সমস্যা ? সমস্যা হলে আমাকে ফোন দিলে না কেন ? বিয়েটা আজকেই করবে তো ?
এতগুল প্রশ্ন শুনেই বোঝা যাচ্ছে, আসলে সে কতটুকু বিচলিত হয়েছে জায়েদ ফোন না ধরায় ।
- একটু কাজে আটকে গিয়েছিলাম । বিয়ে তো অবশ্যই হবে আজকে । তোমার জন্য একটা বড় সারপ্রাইজের আয়োজন করলাম শুধু ।
- কি সারপ্রাইজ ?
- সেটা তো এখন বলা যাবে না। দেখা হলে বলবো ।
- তাহলে কখন দেখা হচ্ছে ?
- ধরে নাও, আর দেড় থেকে দুই ঘণ্টা পর ।
- এখনও এত সময় ? সত্যি করে বলো তো, কোথায় তুমি ?
- হুম, বলবো । সবই বলবো । আগে দেখা হোক ।
- আচ্ছা, ঠিক আছে । আচ্ছা, বিয়ের সময়টাতে তুমি কি পড়বা, বলো তো ?
- কি আর পড়বো, একটাই তো পাঞ্জাবী আছে আমার সাদার মধ্যে কালো । তুমি তো জানোই ।
- হুম, জানি, কিন্তু আজকে তুমি একটা লাল পাঞ্জাবী পড়বে ।
- লাল পাঞ্জাবী ? সেটা কোথা থেকে পাবো আবার ?
- কোথা থেকে পাবা মানে ? কিনবে দোকান থেকে ।
- এ্যা, আবার নতুন কেনাকিনির ঝামেলা । এত ঝামেলা করতে কি ভালো লাগে নাকি ? ধুর, বাদ দাও তো ।
- না, তুমি একটা লাল পাঞ্জাবীই পড়বে । দরকার হলে, তোমাকে আমি বিয়ের আগে দোকানে নিয়ে গিয়ে একটা লাল পাঞ্জাবী কিনে দেবো ।
- আচ্ছা, ঠিক আছে । তোমার কিনে দেওয়া লাগবে না । জীবনে তো একটাই বিয়ে করবো । তাই নিজের এই বিশেষ দিনে অনেক দিন পর কিছু কিনবো ।
- অনেক ধন্যবাদ আপনাকে ।
- এ কি, আবার আপনি কেন ?
- এমনি, আমার ইচ্ছে হয়েছে তাই । তোমার কোন সমস্যা ?
- না, আমার আবার কি সমস্যা ? আচ্ছা, ঠিক আছে, এখন রাখি । পরে কথা বলবো নে, বাই ।
- কি, রাখি মানে ?
- আরে, না রাখলে, তোমার কাছে আসবো কি করে ?
- আচ্ছা, ঠিক আছে, রাখো, বাই । জলদি আসো । আমার প্রস্তুতি সকল কিছুই শেষ । এখন শুধু বিয়ের অপেক্ষা ।
- হুম, বাই ।
মেয়েটা সত্যিই পাগলি । তাকে যে কি করে এতটা ভালোবাসে মেয়েটা ভাবতেই অবাক লাগে জায়েদের কাছে । অবশ্য জায়েদও শ্রাবন্তীকে প্রাণের চেয়েও বেশি ভালোবাসে । মেয়েটার একটু হাসির জন্য সে সব কিছু করতে পারে, আর একটা তো মাত্র লাল পাঞ্জাবীর আবদার করেছে মাত্র । পকেটে এখন টাকা নাই সত্যি, কিন্তু ফিরেই অরুণের কাছ থেকে ধার নিয়ে কিনে ফেলবে । অরুণকে তো সাথে করে নিয়েই যেতে হবে তার আর শ্রাবন্তীর বিয়েতে । ভাবতেই ভাবতেই গাড়িতে উঠলো জায়েদ । ওর জন্যই শুধু দেরি হচ্ছিল । জায়েদ গাড়িতে উঠতেই গাড়ি ছেড়ে দিল । নতুন চাকরি পাওয়া তিনজন সকলেই জায়েদের দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাঁসতে লাগলো । জায়েদ এটা বুঝতে পেরে লজ্জা পেয়ে গেল ।
গাড়ি চলতে লাগলো । আর মৃদুমন্দ বাতাস দোলা দিতে লাগলো জায়েদকে । শ্রাবন্তীর সাথে সম্পর্কের দিনগুলোর কথাই ভাবছে জায়েদ এখন । মেয়েটার সাথে প্রথম দেখা, প্রথম কথা, প্রথম কোথাও খেতে যাওয়া, মেয়ে হয়েও শ্রাবন্তীরই প্রথম আই লাভ ইউ বলা, নিজের টাকা খরচ করে জায়েদকে রেস্টুরেন্টে খেতে নিয়ে যাওয়া, নতুন শার্ট কিনে দেওয়া, গার্জিয়ানের মত খেয়েছে কিনা, ঘুমিয়েছে কিনা, খারাপ কোন অভ্যাসের দিকে ঝুকে না যাওয়া ইত্যাদি সবসময় খোঁজ-খবর নেওয়া । আসলেই মেয়েটা অনেক কেয়ারিং । জায়েদের দশ জনমের ভাগ্য যে এমন একজনকে নিজের জীবনের সাথে জড়াতে পারছে । ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ গাড়ির ড্রাইভার জোরে হর্ন দিয়ে কষে ব্রেক চাপলো । যে যার মত ছিটকে পড়লো গাড়ির ভিতরেই । কোনরকমে সোজা হয়ে সবাই ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করলো, আসলে হয়েছে কি । ড্রাইভার উত্তর করলো, সামনে একটা ট্রাক হঠাৎ স্লো হয়ে যাওয়ার এই সমস্যা হয়েছে । সবাই দেখতে পেল সামনে একটি ট্রাক চলছে । ট্রাকে কিছু একটা মাল রয়েছে । তার উপরে কয়েকজন দিনমজুর বসে আছে । দেখতে দেখতে ট্রাকটি চোখের আড়ালে উধাও হয়ে গেল ।
সকলে ঠিকঠাক ভাবে বসার পর ড্রাইভার আবারও মাইক্রোবাসটি স্টার্ট দিলো । কিছুদূর যাওয়ার পর আবারও সেই ট্রাকটি । জায়েদ খেয়াল করলো, ট্রাকের উপরে বসে থাকা দিনমজুরগুলো আসলে তাদের দিকে তাকিয়ে হাসছে । ড্রাইভার একটার পর একটা হর্ন দিয়েই যাচ্ছে কিন্তু ট্রাক ড্রাইভার মোটেও সাইড দিচ্ছে না । এমনকি দুই একবার রং সিগন্যালও দিচ্ছে । জায়েদ যে গাড়িতে বসে ছিল সেই গাড়ির ড্রাইভার ভেবে পাচ্ছিল না আসলে তার কি করা দরকার । ট্রাকটি ঠিক হাইওয়ের মাঝখান দিয়ে চলছে । শুধুমাত্র বিপরীত পাশ থেকে কোন গাড়ি আসলেই মাত্র এক কোণায় চলে যাচ্ছে নতুবা নয় । এবার মাইক্রোবাসের ড্রাইভারটি হঠাৎ ট্রাক ড্রাইভারের এই কাণ্ড দেখে রাগ হয়ে গেল । বিপরীত পাশ থেকে আসা একটি গাড়ির জন্য যেই ট্রাকটি রাস্তার কোণায় চলে আসলো । তখনই ঐ গাড়িটি পাশ কাটিয়ে যাওয়ার প্রায় সাথে সাথেই মাইক্রোবাসের ড্রাইভার ঐ পাশ থেকে গাড়ি নিয়ে ট্রাকটিকে ওভারটেক করতে চাইলো । কিন্তু বিপরীত পাশ থেকে যে আরেকটি ট্রাক আসছিল সেটা সে আর খেয়াল করেনি । ফলশ্রুতিতে দুর্ঘটনা ঘটলো । ঐ ট্রাকের সাথে ধাক্কা লেগে মাইক্রোবাসটি দুমড়ে মুচড়ে গেল । কেউই বাঁচতে পারলো না আর । এমনকি জায়েদ ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করলো ।
হ্যাঁ, এখন জায়েদের নিথর শরীর পরে আছে বাকী কয়েকটা নিথর শরীরের পাশে । ঘটনার প্রায় এক ঘণ্টা পাড় হয়েছে । লোকজনের ভিড় আর পুলিশি তৎপরতার মাঝেও জায়েদের মোবাইল থেকে সর্বশেষ ডায়ালকৃত শ্রাবন্তীর নাম্বারে ফোন করে এই খবরটি দেওয়া হয়েছে । শ্রাবন্তী এই খবর শুনে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছে । এখনও লাশ নিতে তাই কেউ আসেনি ।
হুম, শ্রাবন্তীর আবদার শেষঅবধি পুরন করেছে জায়েদ । এখন তার পরনে একটি লাল পাঞ্জাবী । সাদা-কাল পাঞ্জাবিটাই রক্তে রঞ্জিত হয়ে লাল হয়ে গিয়েছে । হ্যাঁ, জায়েদ শেষ পর্যন্ত কথা রেখেছে । ভালোবাসার মানুষটির আবদার না রাখলে কি হয় । হ্যাঁ, আজ জায়েদ আর শ্রাবন্তীর বিয়ে ছিল । দুইটি মানুষের সুখের সাগরে ভেসে যাওয়ার একটি উপলক্ষ্য ছিল । কিন্তু এখন আর সেই সুযোগ নেই । শ্রাবন্তীর আবদার মেটাতে গিয়ে বিধাতার অমোঘ আবদার আর অগ্রায্য করতে পারেনি জায়েদ । সে আজ শুধুই একটি স্মৃতি ।
১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১২:০৮
মোশারফ হোসেন ০০৭ বলেছেন: হুম, করা হয়েছে ।
ধন্যবাদ লেখাটি পড়ার জন্য ।
২| ১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ২:৩১
একজন সত্যিকার হিমু বলেছেন: হুমায়ূন আহমেদের কৃষ্ণপক্ষের মতো লাগতেছে ।কপি করবেন একটু দেখে শুনে তো করতে পারেন ।অন্তত আইডিয়াটা একটু ভিন্ন থাকা উচিত ছিল ।
ভাল লাগেনি কারন কৃষ্ণপক্ষ আমার পড়া আছে,ছবিও দেখেছি ।
১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১২:১১
মোশারফ হোসেন ০০৭ বলেছেন: জি, সত্য কথা বলতে গেলে কৃষ্ণপক্ষ গল্পটা পড়ার পরই এই লেখাটা লিখেছিলাম আজ থেকে প্রায় দুই বছর আগে । স্যারের লেখাগুলো আমার ভীষণ ভালো লাগে । আমি হুমায়ূন স্যারের প্রায় ২০০ এর বেশি গল্পও পড়েছি । লেখাটা যখন প্রথম প্রকাশ করেছিলাম, সেই দুই বছর আগে, তখন হুমায়ূন স্যারের লেখা থেকে সংগৃহীত, সেটা দিয়েই দিয়েছিলাম । যাই হোক, স্যারের মত তো মোটেও না, তবু স্যারকে অনুসরণ করে লেখালিখি করার ইচ্ছা প্রবল । হাজার হলেও ঐ লোকটার আর নতুন কোন লেখা তো পাওয়া যাবে না ভবিষ্যতে, তাই না ?
ধন্যবাদ লেখাটি পড়ার জন্য ।
৩| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৮:০২
কালীদাস বলেছেন: চাকরী পাওয়ার ব্যাপারটা বাদ দিলে আগাগোড়া পুরাটাই হুমায়ূন আহমেদের কৃষ্ণপক্ষ।
১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১২:১২
মোশারফ হোসেন ০০৭ বলেছেন: অস্বীকার করবো না । লেখাটি হুমায়ূন স্যারের লেখা থেকেই আইডিয়া নিয়ে লেখা ।
ধন্যবাদ লেখাটি পড়ার জন্য ।
©somewhere in net ltd.
১| ১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১:৪৩
মোটা ফ্রেমের চশমা বলেছেন: পোস্টের টাইটেল থেকে ইমো দুটি উঠিয়ে দিন। পাঠক হালকা ভাবে নেবে পড়ার আগেই।