নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একজন শৌখিন লেখক আমি, আবার কবিও বলা যেতে পারে । যখন যা ভালো লাগে তাই লিখি ।
আরে আরে, নিয়া গেলো তো, এই ধর ধর ওরে, এই আপা, এই যে, আরে, কি ঘুমান নাকি ?
আশেপাশে মানুষের জটলা বেঁধে গেছে । সীমা ঘুমাচ্ছিল না কিন্তু গভীর চিন্তায় ডুবে ছিল । আচমকা চিৎকার-চেঁচামিচিতে তার হুশ ফিরে এলো । হ্যাঁ, কি হয়েছে !!
আরে, বেকুব নাকি !! মানুষ এমনে ঘুমায় !! আরেকটু হইলেই তো গলার থেকে চেইন টা টান দিয়া নিয়া যাইতো আপনার । সে তো ভাগ্য ভালো, এই ভাইটা আগেই দেইখা ফালাইছিল হারামিটারে আপনার গলায় হাত দেওয়ার আগে ।
আসলে বাসটিতে অনেক মানুষ । সীমা ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলো ঐ লোকটির দিকে, যে লোকটি তার গলার সোনার চেইনটিকে হারিয়ে যাওয়ার হাত থেকে বাচিয়েছে । লোকটি না বলে ছেলেটি বলাই ভালো হবে । ২৪-২৫ বছরের একটি ছেলে, চোখে হাই পাওয়ারের চশমা, ফোকলা দাঁত নিয়ে হাসি দিয়ে সীমার দিকে তাকিয়ে আছে । মনে হচ্ছে, বেশ বীরত্বপূর্ণ একটা কাজ করে ফেলেছে । সীমা শুকনোভাবেই ছেলেটিকে একটি ধন্যবাদ দিয়ে আবার সোজা হয়ে বসলো । এই শুকনো ধন্যবাদের কারণেই হয়তো কিন্তু ফোকলা দাঁতের ছেলেটির হাসি বন্ধ হয়ে গেলো হঠাৎ-ই ।
সীমা মোহাম্মদপুর থেকে উঠেছে বাসে । গন্তব্য সায়েদাবাদ । বর্তমান ঘটনাস্থল ঠিক প্রেসক্লাবের সামনে । বেশ অনেকক্ষণ ধরেই জ্যাম বেঁধে বাসটি আটকে আছে । কিন্তু সীমার মনে চলছিল গভীর চিন্তা । সে কি আসলেই ঠিক দেখেছে ? হিরণ কি সত্যি সত্যি ঐ মেয়েটির সাথে হেসে হেসে কফি খাচ্ছিল ? হিরণ আগে কোনদিন তো বলেনি যে তার কোন মেয়ে বন্ধু আছে !! বলাই বাহুল্য হিরণ সীমার বাগদত্তা । দুই পরিবার থেকেই ঠিক হয়েছে এই সম্পর্ক । সীমা কেবল জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স শেষ করেছে আর হিরণ একটি বেসরকারি কোম্পানিতে ইঞ্জিনিয়ার । আজ শনিবার, স্বভাবতই হিরণের অফিস ছুটি । সীমা হিরণকে সারপ্রাইজই দিতে চেয়েছিল, তাই তো কুমিল্লা থেকে অনেকটা না বলেই চলে এসেছিল মোহাম্মদপুর । ভেবেছিল হিরণের বাড়ির সামনে এসেই হিরণকে ফোন দিয়ে সারপ্রাইজ দেবে সে । কিন্তু এ কি !! এ কি দেখলো সে !! পথের মধ্যেই এই ভর দুপুরে, আরেকটা মেয়ের সাথে হেসে হেসে কফি পর্ব, নাহ, সীমার কোনরকমেই মাথাই ঢুকছে না বিষয়টা ।
ওদিকে, ঢাকার লোকাল বাসের বিষয়গুলো একটু অন্যরকম । লোকাল বাসগুলোতে উঠলেই কেমন জানি যাত্রীরা একে অন্যের আত্মার সম্পর্কিত হয়ে যায় । বাসের কন্টাক্টর-হেল্পার-ড্রাইভারের সাথে কোন একজন যাত্রীর ঝামেলা বেঁধে গেলেই এর প্রমাণ ভালোভাবেই পাওয়া যায় । তাছাড়া কতশত সুখ-দুঃখের গল্প ফেদে বসে তারা । এছাড়া দেশ কিংবা বিশ্ব নিয়ে জ্ঞানগর্ভ আলোচনা ও বিবিধ সাজেশন তো আছেই । আবার অনেকে তো এও করে যে আরেকজনের পারিবারিক কিংবা ব্যক্তিগত সমস্যা কিভাবে কাটানো যায়, সে সম্পর্কেও গুরুত্বপূর্ণ সাজেশন প্রদান করে, তাও একেবারে ফ্রিতে ।
সীমার মনোযোগ বাসের ভিতরে একেবারেই নেই, তাই সে খেয়াল করেনি বাসটিতে ঐ ঘটনার পর এখন হট টপিকস হয়ে আছে যে, সত্যি সত্যি চেইনটি ছিনিয়ে নিয়ে গেলে মেয়েটি কি করতো । কেউ কেউ বলছে, হয়তো বুক চাপড়িয়ে কাঁদতো । কেউ কেউ বলছে, বাড়িতে ফোন করে হাউমাউ করে কাঁদতো । আবার কেউ কেউ বলছে, ছিনতাইকারীর পিছন পিছন দৌড় দিতো । হঠাৎ বাসের পরিবেশ গুরুগম্ভীর হয়ে গেলো কিন্তু সীমার সেদিকে ভ্রূক্ষেপ নেই একেবারেই ।
নাহ, হিরণকে নিয়ে আর ভাববে না সে । আচ্ছা, হিরণ যদি সত্যি সত্যি দোষী না হয় !! সে যদি পরিস্থিতি এক্সপ্লেইন করতে পারে !! কিন্তু কিভাবে ? সীমা সিদ্ধান্ত নিলো সে আর চিন্তা করবে না । তখনই তার মনে পড়লো, তাই তো !! ঐ লোকটিকেই তো ধন্যবাদ দেওয়া হলো না, যে তাকে ডেকে তার হুশ ফিরিয়ে এনেছিল আর সবার হয়ে তার সাথে কথা বলার প্রতিনিধিত্ব করছিল । সীমা ঘাড় ঘুরিয়ে বাসের পিছনের দিকে লোকটিকে খুঁজার চেষ্ঠা করলো কিন্তু পেলো না । তাহলে কি লোকটি নেমে গেলো !! ধুর, এই ধন্যবাদ না দেওয়ার আফসোসটা তো থেকেই যাবে !! আসলে মানুষ অনেক কিছুর গুরুত্ব সময়ে বুঝে না, অসময়ে ঠিকই সেটা নিয়ে আফসোস করে ।
একটু পরই জ্যাম ছেড়ে গেলো । বাসটি গুলিস্তান হয়ে সায়েদাবাদ পৌছালো । সায়েদাবাদ পৌঁছেই সীমা বাস থেকে নেমে গেলো । কুমিল্লাগামী বাসের টিকিট কেটে বাসে উঠতে যাবে সে এমন সময় খেয়াল করলো, হিরণ ফোন করেছে । আচ্ছা, সে কি ফোন ধরবে !! হঠাৎ ফোন ধরা আর না ধরার দোলাচলে নিজেকে বেশ অসহায় মনে হতে লাগলো তার ।
১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১২:২৩
মোশারফ হোসেন ০০৭ বলেছেন: ধন্যবাদ লেখাটি পড়ার জন্য ।
২| ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:২২
আরণ্যক রাখাল বলেছেন: বলাই বাহুল্য হিরণ সীমার বাগদত্তা!!!!!
কেন বাহুল্য মনে হলো? এটা তো পাঠক জানে না। তবে?
ভাল লাগে নাই
১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১২:২৪
মোশারফ হোসেন ০০৭ বলেছেন: স্বীকার না করে উপায় নেই যে, শব্দচয়নে ভুল হয়েছে । যাই হোক, আগে থেকে বিষয়গুলো খেয়াল রাখার চেষ্ঠা করবো ।
ধন্যবাদ লেখাটি পড়ার জন্য ।
©somewhere in net ltd.
১| ২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ দুপুর ২:৫৫
গোফরান চ.বি বলেছেন: ভালো লাগল।