নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একজন শৌখিন লেখক আমি, আবার কবিও বলা যেতে পারে । যখন যা ভালো লাগে তাই লিখি ।
ভরদুপুরে দরজায় নক । বেশ খানিকক্ষণ ধরে ।
- (একনাগাড়ে টিভির দিকে তাকিয়ে) এই যাও না, দরজাটা খুলো না...
- (পেপার পড়তে পড়তে হঠাৎ বিরক্ত হয়ে) ধুর, ছুটির দিনটাতেও আমাকে কাজ করতে হয়...
- (এবার টিভির দিক থেকে স্বামীর দিকে তাকিয়ে) ও মা, ছুটির দিনে কি মানুষ মরে যায় ? নাকি শীতনিদ্রায় চলে যায় ?
- (এবার পেপারটা মুখের সামনের থেকে সামনের টেবিলে রেখে) না, তা তো বলিনি আমি । কিন্তু তুমি খুললেও তো পারো দরজাটা ।
- (আবারও টিভির দিকে মনোযোগ) এই না, না, দেখছো না, আমি টিভি দেখছি । পার্বতী মনে হয় এখনই বাপের বাড়ি চলে যাবে ।
- (অবাক হয়ে) এ্যা, পার্বতী কে ?
- ধুর, ডিস্টার্ব করো না তো, দেখতে দাও...
- পার্বতী কে, এটা তো আগে বলো
- এই যে সিরিয়াল "প্যায়ার তো এ্যাসিই হোতে হ্যায়" এর নায়িকা ।
- মানে, ভালোবাসা এভাবেই হয়ে যায় ? বাহ, বাক্যটা তো বেশ সুন্দর ।
তাদের কথোপকথনের মধ্যে দরজায় আবার নক ।
- (অনেকটাই কাকুতির মনোভাব নিয়ে) এই যাও না, প্লিজ, দরজাটা খুলে দেখো না যে কে এসেছে !!
- (কিঞ্চিৎ মশকরা করে) কিন্তু পার্বতী বাপের বাড়িই বা কেন যাচ্ছে, সেটা আমি জানবো না ?
- আচ্ছা, বাবা, আমিই তোমাকে বলছি, ওর স্বামী ওকে চড় মেরেছে তাই ।
- কি !!! ও রে, ব্যাটা তো দেখছি পুরাই হারকিউলিস । এত সাহসও হয় মানুষের ?
- মানে ?
- ঘরের বউয়ের গায়ে হাত তুলা আর যুদ্ধ তো এখন একই জিনিস ।
- (ঢং করে রাগ দেখিয়ে) এই যাও তো ।
থাক, বউকে আর বিরক্ত করে লাভ নেই, মনে মনে ভাবলো সামসুর সাহেব । দরজা খুলে দেখলো এক ভিক্ষুক । ৪০-৪৫ বছর বয়সী মধ্যবয়সী এক শারীরিক প্রতিবন্ধী, প্রায় হাড্ডিসার দাড়িওয়ালা মানুষটির চাওয়ার মধ্যে কেমন জানি একটা মায়া কাজ করলো । সামসুর রহমান তৎক্ষণাৎ পকেট থেকে ১০ টাকার একটা নোট বের করে লোকটির হাতে দিলো ।
- স্যার, কিছু মনে না করলে, একটু খাইতে দিবেন ?
সামসুর রহমানের কাছে মধ্যবয়সী লোকটির খাওয়ার কথা বলতেই সামসুর রহমানের কেমন জানি কান্না পেয়ে গেলো । আজ প্রায় ২ বছর হলো বাবাকে হারিয়েছেন তিনি । হঠাৎ কোন মধ্যবয়সী কিংবা বৃদ্ধ লোক দেখলেই নিজের বাবার কথা মনে পরে তার । বাবার জন্য তেমন কিছুই করতে পারেননি জীবনে । বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তানই ছিলেন তিনি । অনেক কষ্টে পোস্টঅফিসের দপ্তরী বাবা তাকে মানুষ করেছেন, ইঞ্জিনিয়ার বানিয়েছেন । যখন বাবা-মাকে দেখার সময় আসলো তার নিজের উপার্জনের টাকা দিয়ে তখন আত্মসম্মানী বাবা পুত্রের উপর নির্ভরশীল থাকতে আপত্তি জানালো, সেই থেকে বুড়া-বুড়ি গ্রামের বাড়িতেই থাকতো । সামসুর রহমান অনেক অনুরোধ করেছেন কিন্তু কোনভাবেই নিজের বাবা-মাকে নিজের বাড়িতে আনতে পারেননি । মা কে হারান আরও প্রায় ৬ বছর আগেই । এরপর থেকে বাবা ধীরে ধীরে আরও ভেঙে পড়তে থাকেন । এরপর তো ৩ বছর আগে থেকেই শয্যাশায়ী হন, হাসপাতালে প্রায় ১ বছরের চিকিৎসা শেষে অবশেষে ঠিক ২ বছর আগেই চলে যান পৃথিবী ছেড়ে । কেন নিজের ছেলেকে নিজের বাবা-মায়ের সেবাটুকু করার সুযোগ পর্যন্ত দেননি তার বাবা, সেটা আজ পর্যন্ত পরিস্কার না সামসুর রহমান সাহেবের কাছে । ভাবতে ভাবতেই চোখের কোণে পানি চলে এলো তার ।
- স্যার, কাঁদছেন ? থাক, স্যার, খাবার লাগবে না । মনিবের মন অসন্তুষ্ট রেখে সেই খাবার পেটে দি-ই বা কি করে ?
- (চোখ মুছতে মুছতে) আরে না, না, বসেন । এই সাবিনা, এদিকে এসো ।
স্ত্রী সাবিনাকে ডেকে অবশেষে নিজেদের দুপুরের খাবার থেকে কিছু অংশ মধ্যবয়সী লোকটিকে দিলেন । লোকটিও বেশ তৃপ্তভাবেই খেলো আর যাবার সময় বেশ দোয়া করে গেলো । সামসুর রহমান লোকটিকে যখন ইচ্ছা তখন এসেই খেয়ে যাওয়ার দাওয়াত দিয়ে দিলেন ।
মোরাল অব দ্যা স্টোরিঃ আমাদের আশেপাশে ভালো মানুষের অভাব নেই । অভাব খালি তাদের খুঁজে বের করা । আমরা ১০১ টা খারাপ লোককে খুঁজে বের করে আমাদের সমাজকে, দেশকে, পৃথিবীকে খারাপ বলতেই পারি কিন্তু ১০১টা ভালো লোককে কষ্ট করে খুঁজে বের করার দায়িত্ব নিতে রাজী হই না । ভালো হওয়াটা এখন যেন বড় অন্যায় । এই জন্যই ভালো মানুষগুলো খারাপ মানুষ হওয়ার মুখোশ পরে থাকে । আরও ভালো করে ভেবে দেখলে আমরা কেউই জন্মগতভাবে খারাপ নই, আমরা খারাপ পরিস্থিতির জন্য, সম্পর্কের জন্য, নিয়তের জন্য । আমাদের ভিতরের খারাপির বিরুদ্ধে মোকাবিলা, যুদ্ধ করার দায়িত্ব আমাদেরই । আর এটার জন্য কারও বলে দেওয়ারও দরকার হয় না । দরকার হয় শুধু সঠিক সময় আর সুযোগের ।
১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:২০
মোশারফ হোসেন ০০৭ বলেছেন: সর্বনাশ !!! কবিতা কই পাইলেন ভাই ??
©somewhere in net ltd.
১| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১০:৪৩
আহা রুবন বলেছেন: আপনার কবিতাটি সুন্দর হয়েছে।