নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বেলাশেষে ক্লান্ত-তৃষ্ণার্ত পথিকের ন্যায় আসলাম সামুর তীরে, রেখে যেতে চাই কিছু অবিস্মরণীয় কীর্তি । পারি না আর না পারি, চেষ্ঠার ত্রুটি রাখবো না, এই ওয়াদা করছি ।

মোশারফ হোসেন ০০৭

একজন শৌখিন লেখক আমি, আবার কবিও বলা যেতে পারে । যখন যা ভালো লাগে তাই লিখি ।

মোশারফ হোসেন ০০৭ › বিস্তারিত পোস্টঃ

নিষ্ঠুর দুনিয়ার সত্য আর কতকগুলো প্রশ্নের উত্তর :| :||

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:১১

- এই শোনো, কাল যে ছেলেটা এসেছিল সে আজকেও এসেছিল ।
- আজও ? ধুর, ওকে তো আমি আর আসতে না করে দিয়েছিলাম ।
- না করে দিলে আবার আসবেই বা করে !! কেমন না করেছিলে শুনি ?
- এই তুমি সকাল সকাল শুরু হয়ে যেয়ো না তো...
- কি শুরু হয়ে যাবো ?
- সকাল সকাল তোমার সাথে ঝগড়া করতে আমার ভালো লাগে না । এখন অফিসে যাবো । শুধুশুধু মুডটা নষ্ট করে দিও না ।
- বাহ, দুনিয়ায় তুমিই একমাত্র মানুষ যার অফিসে যাওয়ার আগে মুড লাগে, তাই না ?
- ধুর তোমার সাথে কথা বলাই বৃথা । আমি যাচ্ছি থাকো ।
- এই শোনো, শোনো নাস্তা তো করে যাও...... আচ্ছা বাবা, আমি থামছি ।

সবুর সাহেব তবু বেরিয়ে গেলেন, পিছন থেকে তার স্ত্রী রোকসানা কামাল ডাকছেন কিন্তু সবুর সাহেব ভ্রূক্ষেপ করলেন না । দাম্পত্য জীবনের দ্বন্দ্ব সামলানোর মত ধৈর্য্য সময়সময় সবার থাকে না । আচ্ছা সে না হয় গেলো । কিন্তু ছেলেটা, কি যেন নাম, ওহ হ্যাঁ, আশফাক । সে আবার কি করতে এসেছিল বাড়িতে ? পিতৃপরিচয় আদায় করতে ? কিন্তু সেটা কি সবুর সাহেবের দেওয়ার ক্ষমতা আছে ?

সবকিছুই ঠিক ছিল যদি সাতবছর আগে আবেগের বশে এক্সিডেন্ট টা না ঘটে যেতো । অফিসেরই এক বিধবা কলিগ শামীম আরাই এই ঘটনার মূলে । হাসিখুশি ঐ মহিলাটির প্রতি কি যেন এক অবৈধ আকর্ষণ বোধ করতেন সবুর সাহেব । কাজের ছলে বারবার তার ডেক্সের সামনে চলে যাওয়া, ঘুরে ফিরেই একসাথে কফি খাওয়ার আবদার, লাঞ্চ খাওয়ার আবদার সবকিছুতেই অতিরিক্ত আদিখ্যেতা ছিল । প্রথম প্রথম শামীম আরা এসবে না করে দিতেন কিন্তু বারংবার সবুর সাহেবের অনুরোধ ভদ্রতার খাতিরেই আর না করে থাকতে পারলেন না মহিলা । স্বামী মারা যাওয়ার পর এক মেয়েকে নিয়েই যে সংসার পেতেছিলেন মহিলা, সেখানে আর কোন পুরুষকে অধিকার দেবেন না ভেবে নিয়েছিলেন । সবুর সাহেবের কাছে একদিন গল্পের ফাঁকে এই কথা বলার পরেই সবুর সাহেব কেমন জানি মনে মনে এক ধরনের চ্যালেঞ্জ অনুভব করলেন । যে করেই হোক এই মহিলার মনে নিজের জায়গা করে নিতেই হবে । তখন সবে একবছরের মত বিয়ে হয়েছে সবুর সাহেবেরও । স্ত্রী রোকসানা কামাল সুন্দরী, আকর্ষণীয়া, শিক্ষিতা, একটি হাই স্কুলের শিক্ষিকা, ভালো পরিবারের মেয়ে - কোনকিছুতেই অপূর্ণতা ছিল না সংসারে তবু ঐ যে একটা কথা আছে না যে মানুষ নিষিদ্ধ ব্যাপারেই বেশি আকর্ষিত হয় । সবুর সাহেবের সাথেও তা-ই হয়েছিল ।

ধীরে ধীরে একদিন দুইদিন করে কলিগ শামীম আরার মনের মোম গলিয়েই ফেললেন সবুর সাহেব । এরপর ধীরে ধীরে সবার অগোচরে প্রেমিক-প্রেমিকা আর এর কয়েক মাস পরেই স্বামী-স্ত্রীর মত ব্যবহার করতে লাগলো দুইজনে । অবশ্য এই ব্যবহার লোকসম্মুখে না, নিজেদের একে অন্যের প্রতি । শহরের অখ্যাত আবাসিক হোটেলগুলোতে রাতের পর রাত কাটিয়ে দিতেন দুইজনই । নিজের মেয়েকে তখন নিজের মায়ের বাসায় দিয়ে আসতো শামীম আরা । একবার তো সবুর সাহেব এও ভেবেছিলেন স্ত্রী রোকসানা কামালকে ডিভোর্স দিয়েই শামীম আরাকে বিয়ে করা যায় কিনা । আজ এতদিন পর বুঝতে পারেন যে আবেগের বশে সেই সিদ্ধান্ত নিলে হয়তো অনেক বড় ভুল হয়ে যেতে পারতো । তবে সেই সময়ই একদিন শামীম আরা সবুর সাহবেকে জিজ্ঞেস করেছিল, "আমাকে বিয়ে করবে ?" সবুর সাহবে একটা শুকনা হাসি দিয়েছিল শামীম আরার দিকে তাকিয়ে কিন্তু কোন উত্তর দিতে পারেনি । মেয়েরা ছেলেদের চেয়ে একটু বেশিই বুঝবান হয় আর বুদ্ধিমানদের জন্য তো ইশারাই যথেষ্ট হয় । ফলস্বরূপ যা বুঝার তা বুঝে নিয়েছিল শামীম আরা ।

একদিন হঠাৎ করে হারিয়ে যায় শামীম আরা । চাকরী, ভাড়া ফ্ল্যাট, মোবাইল নাম্বার সবকিছু ছেড়ে-ছুঁড়ে হারিয়ে যায় সে । সবুর সাহেব কখনও শামীম আরার কাছে তার মায়ের ঠিকানা জানতে চায়নি, অফিসের ফাইলেও তেমন কোন ব্যাক-আপ ঠিকানা দেওয়া না থাকায়, সত্যি সত্যি হারিয়ে ফেলে সে তার ভালোবাসার মানুষটিকে । এতবছর পর যখন এই আশফাক ছেলেটা তিনদিন আগে তার বাড়িতে এসে বলে "সবুর সাহেব আছেন কি ?" স্বভাবতই একটু অবাক হয়ে যেতে হয় বাড়ির সবাইকে । সবুর সাহেবকে বাইরে ডেকে নিয়েই কথাগুলো বলে ছয় বছরের ছোট্ট আশফাক ।

আশফাকের মাধ্যমেই সবুর সাহেব জানতে পেরেছে প্রেগনেন্ট হয়ে যাওয়ার পর সামাজিক নিরাপত্তার অভাবেই পালিয়ে যায় শামীম আরা । আর ছেলে জন্ম দিতে গিয়ে হারিয়েই যায় একেবারে দুনিয়া থেকে । নানা-নানির কাছে মানুষ হওয়া আশফাক নিজের বাবার পরিচয় জানতে পেরেছে মাত্র কয়েকদিন আগেই । মা নেই, বাবা থেকেও নেই । এমন একজন দুনিয়াকেই বা আপন কিভাবে ভাবতে পারবে ? তাই সে উত্তর খুঁজতে এসেছে তার বাবার কাছে । এতটুকু ছেলে, তবু কিভাবে জানি দুনিয়ার নিষ্ঠুর সত্যগুলো জেনে গিয়েছে । আচ্ছা, আশফাকের প্রশ্নের উত্তরগুলো কি সবুর সাহেবের কাছেও আছে ?

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.