নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একজন শৌখিন লেখক আমি, আবার কবিও বলা যেতে পারে । যখন যা ভালো লাগে তাই লিখি ।
গৌধুলি সময়টাই কেমন জানি, খালি মন খারাপ করে দেয় । একা থাকলেও মন খারাপ, প্রিয়জনের ছাড়া মন খারাপ আর কত কত কারণে মনটা খারাপ হয়েই যায় । এই সময় যারা জানালা ধরে বাইরের সূর্য ডোবার দিকে তাকিয়ে থাকে, তারা কখনও কখনও ভাবে, ইশ, এভাবে যদি দুঃখগুলোও ডুবে যেতো !! তাহলে যে কত ভালো হতো । এরকম বিলাসিতা আর যাই হোক, খেটে খাওয়া মানুষগুলোর মনে ক্ষুনাক্ষরেও আসে না । নুন আনতে যাদের পান্তা ফুরায়, তাদের আবার কিসের দুঃখ । বড়লোকদের দুঃখ থাকে মনে আর গরীবের থাকে পেটে ।
সুরাইয়া জামিলের ছোটবোন । জামিলের বয়স ১২ আর সুরাইয়ার বয়স ৬ । এই দুইভাইবোন ছাড়া তাদের আর দুনিয়ায় কেউ নেই । এক বছর আগে তাদের রিকশাচালক বাবা নিজের রিকশায় তাদের মা কে নিয়ে ঘুরতে বেরোয় । পথে ঘাতক একটি ট্রাক তাদের রাস্তার সাথে পিষে চলে যায় । সেই থেকে দুনিয়ায় সুরাইয়াকে দেখার মত এখন খালি জামিলই আছে । কিন্তু জামিলও তো ছোট । এই বয়সে সে সুরাইয়াকেই বা দেখবে কিভাবে । গরীবের আবার সমস্যা হচ্ছে, এরা আত্মীয়তার বন্ধন ভালোভাবে রক্ষা করে না । অন্য কারও সমস্যা কেউ নিজের ঘাড়ে নিতে চায় না । তাই চাচা-মামা-খালা থাকতেও জামিলদের কেউ আশ্রয় দেয়নি । জামিল অবশ্য প্রথম প্রথম কষ্ট হলেও গত আট মাসে নিজেকে বেশ সামলে নিয়েছে । এলাকার করিম চাচার কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়েছে সে, এইতো হাজার চারেক । এরপর ছোটখাট একটা ফুলের দোকান দিয়েছে । এলাকারই আবুল, বারেক, জব্বর, সৌম্য, হিমেল - এরা সবাই জামিলের বন্ধু । জামিলের বাবা-মা মারা যাওয়ার পর এরা জামিলকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে এসেছে । বিভিন্ন জায়গা থেকে ফুল কুড়িয়ে এনে তা দিয়ে মালা বানায় এরা, আর জামিল ঘরোয়া ফুলের মালা বলে সেগুলো তার দোকানে বিক্রি করে । এভাবেই প্রতিদিন যে ৫০-১০০ টাকা উঠে, তা থেকেই দুইভাইবোনের জোগাড় হয়ে যায় ।
দুইমাস আগে করিম চাচার টাকাও শোধ দিয়ে দিয়েছে সে । এমনকি বন্ধুদের সবাইকে প্রতিদিন ১০-২০ টাকাও দিতে পারে সে এখন । তবে একদিন ঘটলো হঠাৎ একটি অনাকাঙ্খিত ঘটনা । বড়লোকের একটি গাড়ি এসে থামলো তার দোকানের সামনে । ফুলের মালাগুলো দেখে নাক সিটকালো গাড়ি থেকে নেমে আসা ড্রাইভার । তবু সঠিক দামের চেয়ে অনেক কম দামে অনেকটা জোর করেই বেশ কয়েকটা মালা কিনে নিলো সে । জামিল প্রথমে কমদামে দেবে না বলতেই, ঠাস করে চড় । ছোট একটা বাপ-মা মরা বাচ্চাকে চড় মারলো অমানুষটা !! অনেকটা কাঁদতে কাঁদতেই না চাইতেও বেশ কয়েকটা মালা দিয়ে দিলো জামিল । এরপর ড্রাইভার মালাগুলো নিয়ে আগেরমতই নাক সিটকাতে সিটকাতে গাড়িতে উঠে গাড়ি চালিয়ে চলে গেলো । পিছনে কেউ ছিল কিনা, সেটা পিছনের অতিরিক্ত কালো কাঁচের কারণে বুঝাই গেলো না ।
আজ রাতে না খেয়ে থাকতে হবে জামিলকে । সুরাইয়াকে খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিলো জামিল । বয়স কম হলেও এই ছোট বয়সে জীবনকে অনেকটাই চিনেছে জামিল । অনেক মানুষও চিনেছে । চিনেছে চাঁদের আলো । আজ সেই চাঁদের আলো দিয়েই পেট ভরাবে সে । হয়তো ঘুম আসবে না অভুক্ত অবস্থায় । তবু কি !! হঠাৎ খেয়াল করলো ছোটবোনটির ঘুমন্ত মুখটির দিকে । ছোটবোনটির তৃপ্তিভরা মুখটা দেখে তৃপ্তির হাসি চলে এলো জামিলের মুখেও । জীবনটা অতটা খারাপও না, যতটা মাঝে মাঝে মনে হয় ।
©somewhere in net ltd.