নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একজন শৌখিন লেখক আমি, আবার কবিও বলা যেতে পারে । যখন যা ভালো লাগে তাই লিখি ।
উপরের ছবিতে যাকে বক্তব্য দিতে দেখছেন, তাকে বাংলাদেশে যারা বসবাস করেন, তাদের সবারই চেনার কথা । তবে যারা চেনেন না, তাদের জন্য বলি, ইনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু । যারা এই লোকটাকে ব্যক্তিগতভাবে চেনেন, তারা জানেন, এই লোকটির রাজনীতিক ব্যাকগ্রাউন্ড আওয়ামী লীগের নয় ।
আমরা সবাই কমবেশি জানি যে বিশ্বে বাঘের সংখ্যা দিন দিন কমছে । সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার সারা বিশ্বের মধ্যে শুধুমাত্র বাংলাদেশ ও ভারতেই পাওয়া যায়, তাও শুধু সুন্দরবনে । কিন্তু বাংলাদেশের এই ঊর্ধ্বতন পর্যায়ের ব্যক্তি বলে ফেললেন একেবারেই অদ্ভুত রকমের একটি কথা । যাই হোক, আসলেই লোকটি একটা বিরাট কাজ করে ফেলেছেন । যেই ঘটনাটি বলছি সেটি অবশ্য নতুন নয় । ২০১৫ সালের জুলাই মাসের দিকের ঘটনা । বিশ্ব বাঘ দিবস-২০১৫ উপলক্ষ্যে ২৩শে জুলাই, ২০১৫ রোজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে মাননীয় মন্ত্রী বক্তব্য দিতে দিতে এক পর্যায়ে বলে ফেলেন, কে বলেছে বাঘ কমে গেছে? বাঘ পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবনে বেড়াতে গেছে । বেড়ানো শেষে আবার চলে আসবে । আমি এই কথা শোনার পর পর তৎক্ষণাৎ সেখানে উপস্থিত শিক্ষিত লোকদের রি-অ্যাকশনের কথা ভাবছি ।
এখন আপনার মনে প্রশ্ন আসাটাই স্বাভাবিক, এতদিন পর এই ঘটনা কেন তোলা হলো ? কারণ যারা সুন্দরবনের কাছাকাছি রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি নিয়ে সরকারের সব ধরনের চেষ্ঠা-তদবির সম্পর্কে ওয়াকিবহাল, তাদের এটাও বুঝার কথা সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য নিয়ে বললেই প্রথমেই আসে বাঘের কথা, বিশেষ করে রয়েল বেঙ্গল বাঘ । এই বাঘ সম্পর্কেই একজন মাননীয় মন্ত্রীর এরকম গদর্ভ কথাবার্তা শুনলেই বুঝা যায় সরকার বিশেষ করে বর্তমান এই সরকার সুন্দরবনের বাঁচা-মরা নিয়ে কতটা সিরিয়াস ।
বেড়াতে গেছে !!! সিরিয়াসলি ? এরকম গাধার মত কথাবার্তা মন্ত্রীমশাই যখন বলে ফেললেন সকলের সামনে, তখন উনার কি নিজের মুখ নিজের চেপে ধরতে ইচ্ছা করলো না একবারও ? যারা জানেন না, তাদেরকে জানাই, সুন্দরবনের ভিতর বাংলাদেশ-ভারতের বর্ডার তৈরি করা হয়েছে একমুখী করে । অনেকটা এমন যে, কোন বন্য প্রাণী যদি বর্ডারের কাছে গিয়ে সামান্য ধাক্কা দেয় তাহলে বর্ডারের দরজা দিয়ে তারা সহজেই ঢুকতে পারবে, তবে বিপরীত পথে যতই ধাক্কা-ধাক্কি করুক, দরজা আর খুলবে না । তাই যে যে বন্য প্রাণী ইতিমধ্যেই বাংলাদেশ থেকে ভারত চলে গেছে, তারা আর কোনদিন বাংলাদেশে এই উপায়ে ফেরত আসতে পারবে না, চাইলেও । এখন যদি মন্ত্রী মশাই দাদাদের পা ধরে কান্নাকাটি করে বন্য প্রাণীগুলোকে ফিরিয়ে আনতে পারেন, সেটা অবশ্য অন্য কথা ।
আবার ঐ সম্মেলনে মন্ত্রী মশাইয়ের কাছ থেকে এক মুখে দুই রকম কথা শোনা গিয়েছে । তিনি একবার বলেছেন, সুন্দরবনের বাঘ কোনোদিনই বিলুপ্ত হবে না আবার অন্য আরেক সময় বলেছেন সম্প্রতি প্রকাশিত বাঘের পরিসংখ্যানটি সঠিক নয়। পরিসংখ্যান যারা দেয় তারাও সত্যবাদি নন। আমার আত্মীয়স্বজনরা সুন্দরবনে বেড়ানো শেষে বলে বাঘ দেখে এসেছি। তখন পরিসংখ্যানকারীদের জিজ্ঞেস করলে বলে বাঘের পায়ের ছাপ দেখে এসেছি। এই হলো বাঘ দেখার পরিস্থিতি। পায়ের ছাপ দেখে ও ক্যামেরার মাধ্যমে বাঘের সংখ্যা নির্ধারণ কখনই সম্ভব নয় । দ্বিতীয় কথার মাধ্যমে কিন্তু পরিস্কার বাঘের সংখ্যা আগের চেয়ে অনেক কম অথচ প্রথম কথাতেই তিনি ঠিক উল্টোটা বলেছেন । আসলে মন্ত্রী মশাই মাইক পেয়ে উল্টাপাল্টা যে বলে ফেলছেন, তা তখন পর্যন্ত হয়তো বুঝতেই পারেননি ।
আগেও দেখা গেছে, আওয়ামী লীগের ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে আসেনি কিন্তু জোট করার বদৌলতে মন্ত্রী হয়েছে, এরা এরকম পাগল-ছাগলের মত কাজ করেই চলেছে যত্রতত্র । এর উদাহারন আর পরিস্কার করে দিতে চাচ্ছি না, আপনারাই ভালো বুঝেন । বর্তমান সরকারের মন্ত্রী এমন অধমের মত কথাবার্তা বলে ভারতপ্রীতিকে জনসম্মুখে দেখাতে পারেন, তা হয়তো চিন্তারও বাইরে । এমন মন্ত্রীদের কারণেই দেশের এমন বেহাল অবস্থা । আর তাছাড়া ভারতকে খুশি করার জন্য রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রও তো তৈরি করা হচ্ছে । তাই আর যাই হোক, সুন্দরবন মুড়ি খাক, দাদা রা খুশি থাকলেই সব ঠিক । কেন জানি মনে হচ্ছে, বাঘের যদি সত্যি সত্যি শুনার আর বুঝার ক্ষমতা থাকতো, তাহলে এই কথা শুনে রাগে-ক্ষোভে হলেও বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে চলে যেতো আর কোনদিন ভুলেও ফিরে আসতো না ।
©somewhere in net ltd.
১| ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:৫১
রায়হানুল এফ রাজ বলেছেন: মাথায় কিছু থাকলে সে কি আর মন্ত্রী হয়???