নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একজন শৌখিন লেখক আমি, আবার কবিও বলা যেতে পারে । যখন যা ভালো লাগে তাই লিখি ।
পর্ব - ০১
বাড়ি থেকে যখন পুলিশ আমাকে ধরে নিয়ে এলো আমি তখন ভালো করে জামাটাও পড়ার টাইম পাইনি । নাইট ড্রেসটা পড়ে ছিলাম, একটু পরই ঘুমাবো বলে । এর আগে ব্যস্তভাবে ডিনারটা সেরে নিচ্ছিলাম । আমার স্ত্রী নূপুর আমার সাথেই বসে খাচ্ছিল । সারাদিন ব্যস্ততা শেষে এই ডিনার টাইমেই দুইজন একসাথে বসে খাবার টাইমটুকু পাই । অবশ্য ডিনার করতে করতে কখনও ১২ টা আবার কখনও ১টা বেজে যায় । পাগলিটা কেমন যেন, আমাকে ছেড়ে কখনই রাতের সময়টাতে খায় না । অনেক বলেছি ওকে কিন্তু কথাই শোনে না । তাই তো রাতে যদি কখনও খেয়েও আসি তবুও ওর সাথে বসে হালকা হলেও খেতে চেষ্ঠা করি । অবশ্য এই সময়ে এসে কখনই বাচ্চাগুলোকে জাগ্রত অবস্থায় পাই না ।
যাই হোক, ঘড়িতে ঠিক তখন ১২টা বেজে ১৯ মিনিট, দরজায় নক । এত রাতে প্রতিবেশী যে এসে নক করবে না, এটাই স্বাভাবিক, এটাই সামাজিকতা । যাই হোক, একটু পর নকের তীব্রতা বাড়তে লাগলো । আমি ধৈর্য্যহারা হয়ে গেলাম । রাগ তখন চরমে । দরজা খুললাম, কিন্তু খুলেই পুলিশ দেখেই রাগ আমার কনফিউশনে পরিণত হলো । এত রাতে পুলিশ !!! কিন্তু পুলিশই কেন !!!
মিঃ কালাম, আপনাকে আমাদের সাথে একটু পুলিশ স্টেশনে যেতে হবে । আমরা আপনার এরেস্ট ওয়ারেন্ট নিয়ে এসেছি । আপনি দ্রুত ড্রেসটা চেঞ্জ করে নিন । This night will be so long for you । পুলিশের মধ্যে যে এতক্ষণ আমার মধ্যে কথা বলছিল সে যে উচ্চশিক্ষিত, বুঝতে পারলাম । আমি কথার প্রতত্ত্যুরে কিছুই বললাম না । নীরবেই ড্রেসটা চেঞ্জ করে পুলিশের সাথে চললাম । নূপুর এতক্ষণ ঘটনার আকস্মিকতায় বিমূঢ় হয়ে ছিল । শুধু যাবার সময় বললো, আমি আসবো ? আমি শুধু বললাম, না থাক, বাচ্চারা তো ঘুমাচ্ছে । হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেলে ওরা তোমাকে খুঁজতে পারে । তুমি বরং সালামকে বলে কাল সকালে একবার আসতে পারো ওখানে । আগে বলে নিই, সালাম আমার ছোট ভাই । নূপুর আর কিছু না বলেই আমার কথা মেনে নিলো । আর আমি চললাম পুলিশের সাথে ।
পুলিশ স্টেশনে বসে আছি আধা ঘণ্টার বেশি হয়ে গেছে । আমাকে একটি ছোটখাট বেঞ্চে বসিয়ে রেখেছে তারা । আবার বেঞ্চের হাতলের সাথে আমার হাত হ্যান্ডকাফ দিয়ে আটকানো । এর মধ্যে আর আমার সাথে কেউ কথা বলছে না । এমনকি আমার দিকে কেউ তাকাচ্ছেও না । মনে হচ্ছে আমি অদৃশ্য কেউ একজন । তাই আমি বাধ্য হলাম চোখ বুলানোর জন্য । বেঞ্চে আমি একা না, আরও দুইজন বসে আছে । এদের মধ্যে একজন মহিলা আর একজন পুরুষ । মহিলাটি আমার পাশে আর পুরুষটি আরেক কোনায় । ঐ পুরুষটিকেও আমার মত হ্যান্ডকাফ দিয়ে হাত আটকিয়ে রেখেছে বেঞ্চের হাতলের সাথে । মহিলাটির মুখে অতিরিক্ত মেক-আপ । বুঝলাম, রাস্তা থেকে ধরে এনেছে, হয়তো টাকা নিয়ে বনিবনা হয়নি । পুরুষটিকে দেখে মনে হচ্ছে টাল হয়ে আছে । যে কোন মুহূর্তে বেঞ্চ থেকে পড়ে যেতে পারে । আবার রুমটির এক কোনায় একটি বাচ্চা অবিরত কেঁদেই চলেছে । কিন্তু সবাই যে রকম ভাবে ছোটাছুটি করছে, মনে হচ্ছে কেউ এই বাচ্চাটির কান্না শুনতেই পাচ্ছে না । আমি আশেপাশে তাকিয়ে বাচাটির মা কিংবা অভিভাবককে খুঁজার চেষ্ঠা করলাম কিন্তু না, কেউই নেই আশেপাশে । আবার সেখানে বসেই শুনতে পেলাম পুলিশ পেট্রলের গাড়িগুলো একটা স্টেশন ছাড়ছে তো আরেকটা এসে ভিরছে । তাই একটু পর পর সাইরেনের আওয়াজ একবার বাড়ছিল আবার একবার কমছিল ।
পর্ব - ০২
হঠাৎ তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিলাম । ঘড়িতে যখন প্রায় ৩ টা বেজে ৪০ মিনিট, তখন পুলিশেরই একজন এসে আমাকে ঘুম থেকে ডেকে তুললো । "আপনাকে স্যার ডাকছে, চলুন ।" হঠাৎ কাঁচা ঘুম ভেঙ্গে যাওয়াতে আমি একটু অস্বস্তিতে ভুগছি । আর তাছাড়া বসে বসে ঘুমানোর অভ্যাস নেই বলেও হয়তো এই অস্বস্তিটা আসতে পারে । তবু ঘুম ঘুম অবস্থাতেই চোখ কচলাতে কচলাতে আমি শুধু এই কথাটি বললাম, একটু পানি হবে ? পুলিশের ঐ লোকটি মনে হয় ভালোই । আমার হ্যান্ডকাফ খুলে দিয়ে আমার হাতে একটি পানির জগ এনে দিলো । আমি চোখেমুখে পানি ছিটালাম আবার কিছুটা খেলামও । ঐ পুলিশটি এরপর আমাকে তার স্যারের কাছে নিয়ে গেলো । আমি স্যারের কাছে পৌঁছেই সরাসরি তার নেমপ্লেটের দিকে খেয়াল করলাম । জনাব বদরুল । লোকটির মুখ পানে লাল । সামনে ছোটখাট একটি পানবাটা । মনে হচ্ছে একটির পর আরেকটি পান খাওয়া অভ্যাস তার । "স্যার, আমাকে এখানে কেন আনা হয়েছে ?" আমি আর অপেক্ষা না করেই জিজ্ঞেস করে বসলাম । জনাব বদরুল এতক্ষণ কোন একটি ফাইলের দিকে মনোনিবেশ করে ছিলেন, আমার প্রশ্ন শুনে মুখ উঁচু করে আমার দিকে তাকালেন । কিছুক্ষণ আমার দিকে হা করে তাকিয়ে থাকলেন, এই সময়টুকুতে পান চিবানোর কথাও ভুলে গেছেন যেন । আমি আবারও বললাম, "স্যার, আমাকে এখানে কেন আনা হয়েছে ?", এই ভেবে যে উনি হয়তো শুনতে পাননি । লোকটির ভ্রূ ধীরে ধীরে কুঞ্চিত হলো । লোকটি এরপর রেগে গিয়ে বলে উঠলো, "কেন, এক রাত আমাদের সাথে থাকলে কি আপনার জাত যাবে ? আমরা কি মানুষ না আপনাদের কাছে ?" বুঝলাম, লোকটি ভিতরে ভিতরে অনেক ক্ষোভ পুষিয়ে রেখেছে । আমি আর কিছু না বলে চুপ হয়ে গেলাম । একটু পর জনাব বদরুলের নির্দেশে আমাকে হাজতে নিয়ে যাওয়া হলো ।
হাজতে আমার প্রথম রাত্রি । জীবনে যে কতরকম অভিজ্ঞতা হলো, তবে এরকম ভয়ংকর অভিজ্ঞতা হয়েছে কিনা, এই মুহূর্তে তা মনে করতে পারছি না । তবে সত্য হলো, জীবনে এরকম ভয়ংকর অভিজ্ঞতাগুলো সহজে ভোলা সম্ভব না । হাজতে অবশ্য আমি একা না । দেখলাম আরও অনেকেই আছে । হাজতে সবচেয়ে বড় যে সমস্যা সেটি হচ্ছে, খাওয়া আর টয়লেটের জায়গা কাছাকাছি । ঐ গন্ধের মধ্যে বসেই খাওয়া, ঘুম সব । আমি ভাবছি আমাকে কেন গ্রেফতার করে আনা হয়েছে । আমি ভেবে কোন কূল কিনারা পাচ্ছি না । আবার মনের এক কোনায় এই ভাবনাও আসছে যে আমি হয়তো এই হাজত থেকে আর কোনদিন ছাড়া পাবো না । আর কোনদিন নূপুরের মায়াবী মুখটা দেখতে পাবো না । দুই ছেলে-মেয়ে আফনান আর জারিনকেও মিস করবো । হয়তো এখানেই আমার মৃত্যু হবে ।
আশেপাশের লোকগুলোর চোখের দিকে তাকানো যায় না । সবার চোখেমুখে এক ধরনের আতংক । একজনের সাথে কথা বলে বুঝলাম, লোকটিকে ধরে আনা হয়েছে ছিনতাই এর কথা বলে । অথচ লোকটি নাকি ছিনতাই-এর ঐ ঘটনার সময় নিজের বাসায় ঘুমাচ্ছিল । সন্দেহবশত ধরে আনা হয়েছে আরও চারদিন আগে । বাসার লোকজন প্রতিদিন ধরনা দিলেও মোটা অংকের টাকা চাওয়া হয়েছে ঘুষ হিসেবে । সেই টাকা জোগাড় করতে বিলম্বিত হচ্ছে বলেই লোকটি এখনও হাজতেই আছে । আমার ক্ষেত্রেও কি এমন কিছু হবে ? নূপুর বেশি চিন্তাগ্রস্থ হয়ে পরবে না তো ? এত রাতে আবার সালামকে ঘুম থেকে জাগিয়ে বসবে না তো ? বাচ্চাগুলোকে দেখবে কে ? আমার চিন্তাগুলো ক্রমশ বাড়ছে । চিন্তা বাড়ার সাথে সাথে শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো ক্রমশ চিন চিন করে ব্যাথা শুরু হয়েছে । মনে হলো, প্রেশার বাড়ছে ।
আমি হাজতের শিক ধরে এক কোণার দিকে বসে ছিলাম । হাজতে কেউ কারও বন্ধু হয় না । তবে শুভাকাঙ্ক্ষী অনেকেই থাকে । যদি আপনার কোন আত্মীয় এক প্যাকেট সিগারেট ধরিয়ে দিতে পারে আপনার আশেপাশের হাজতিদের, তাহলে তো আর কোন কথাই নেই... আপনি তখন তাদের কাছে বস । আপনার আদেশ তাদের ক্ষেত্রে শিরোধার্য । আপনার হাত-পা টিপে দেবে তারা । আপনার মাথাও টিপে দেবে আর হাত দিয়ে ডলে শরীর মালিশ করা তো আছেই । আমি বসে বসে দেখছিলাম এমন একজনকে তিন-চারজন ঘিরে সেবা করছে । পাশে বসা একজনকে জিজ্ঞেস করলাম, "ঐ লোকটি কে ?" সে উত্তর করলো, "আপনি তাকে চেনেন না ? ধুর, মিয়া, আপনি তো তাইলে এই শহরে থাকেনই না !!! ও হইলো কালা মজিদ । প্রতি মাসের দুই-তিনদিন হাজতে এসে হাজতবাসীদের খোঁজখবর নিয়ে যায় । শহরে বিরাট ত্রাস ওর । আমি তো এমনও শুনেছি, মাসে একটা মার্ডার না করলে নাকি ওর ভাব আসে না......" । আমি আর ভাব আনার তালে থাকলাম না । এই কথা শুনে আরও জড়সড় হয়ে বসলাম । কালা মজিদ মনে হয় আমার পাশে বসে থাকা লোকটির মুখে নিজের প্রশংসা শুনতে পেয়েছে আর আমাকেও খেয়াল করেছে । কালা মজিদ আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো, "কি কেস ? ছিনতাই ? নাকি মার্ডার ? নাকি দুই নম্বরি ? কোনটা ?" আমি একটু ভয়ে ভয়েই উত্তর করলাম, "একটাও না । আমার মনে হয় এরা ভুল করেছে । আমাকে অন্য কারও সাথে গুলিয়ে ফেলেছে ।" কালা মজিদ মনে হয় আমার উত্তরে খুশি হলো না । আবার বেশ রাগও হয়েছে । রাগের ব্যাপারটা আমি বুঝলাম, এর পরপরই তার কথা শুনে । "ভুল করে মানে ? ঐ মিয়া, মশকরা করেন ? এখানে কেউ কাউকে ভুল করে আনে নাকি ? জলদি জলদি হাছা কথা কইয়া ফালান । নাইলে কিন্তু হাছা কথা বলানোর অনেক উপায় আমার জানা আছে ।" কালা মজিদের মুখে এই কথা শুনে আমি ঢোক গিললাম । ভালো বিপদে পড়েছি, মনে হচ্ছে ।
পর্ব - ০৩
আমাকে হুমকি দেওয়ার পর কালা মজিদের সাগরেদদের তার গা মালিশ করার গতি অনেকাংশে বেড়ে গেলো । বুঝলাম না, সে কি তাহলে ঝি কে মেরে বউকে শেখালো ? একটু পর দেখি কালা মজিদ বসা অবস্থা থেকে আবার শুয়ে পড়লো । আরামে তার চোখ বুজে আসছে । মনে হয় সে ঘুমিয়ে পড়বে । আমার কথা এখন আর তার মাথায় নেই । একটু পরই বলা যায় মাত্র কয়েক সেকেন্ড পরই তার নাক ডাকার আওয়াজ আসতে লাগলো । তার ঘুমের ভাব দেখে আমি বেশ অবাক হলাম । এরকম প্রচণ্ড গরমের মধ্যে, গন্ধের মধ্যে, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে সে মাত্র কয়েক সেকেন্ডেই ঘুমিয়ে গেলো !!! অথচ আমাদের ঘুম প্রচণ্ড গতির ফ্যান কিংবা এসি ছাড়া তো হয়ই না । হায় রে মানুষ, কতটা আরামপ্রিয় !! এবার প্রকৃত অর্থে প্রমাণ পেলাম, শরীরের নাম আসলেই মহাসয়, যত সহানো হবে ততই সইবে । আমি এবার এই চিন্তা থেকে সরে এসে আবার বাড়ির লোকদের চিন্তায় মশগুল হলাম । এখন বাড়ির কি অবস্থা কে জানে !! নূপুর যে এখন কি করে !! ঘুমায় নাকি জেগে আছে ? নাকি কাঁদছে অবিরত ? আবার আমাকে ভুল বুঝবে না তো ? আমি তো সত্যি অপরাধী নয় ।
আসলে আমার কাপড়ের ব্যবসা । জেলার মেইন শহরে যেখানে বড় বাজারটি বসে, সেটির রাস্তার ধার ধরে আমার মোট চারটি দোকান । আব্বা মারা যাওয়ার আগেই আমার ভাগে এই চারটি দোকানই পড়ে । এর মধ্যে তিনটি ভাড়া দিয়ে দিয়েছি আর একটিতে নিজেই ব্যবসা করি । আসলে দোকানটি মূলত পাইকারি বা হোলসেলের । ঢাকা থেকে লট এনে পরিচিতদের সাথেই মূলত আমার ব্যবসা । আমার আব্বাও এই কাপড়ের ব্যবসা করতেন । ছোট ভাইটিও অবশ্য ব্যবসা করে কিন্তু ও কাপড়ের ব্যবসায় আসেনি । ও জুতার ব্যবসা করে । আমি বেশ কয়েকটি নামকরা কোম্পানির লোকাল ডিলার আর তাছাড়া ঢাকার কয়েকটি নামকরা গার্মেন্টসের সাথেও আমার যোগাযোগ আছে । ওদের রিজেক্টেড মালগুলো মূলত আমার কাছেই আসে, সেগুলো আবার আমার সাথে কন্ট্রাক্ট থাকা লোকাল পাইকারি দোকানগুলো নিয়ে যায় । আমার ব্যবসা আল্লাহ্ দিলে মাশাল্লাহ্ । দোকানে কর্মচারির সংখ্যা অনেক । ম্যানেজার আছে একজন আর ঘুরে ঘুরে অর্ডার নেওয়ার জন্য আছে পাঁচ জন আর দোকানের ভিতরে আছে আটজন । এতজনের মধ্যে আমার দেশী মানুষই আছে প্রায় দশ জনের মত । বুঝতে পারছি যে ঘাপলা যা হইছে তা দোকানেরই কোন কর্মচারি করেছে কিন্তু কাকে অবিশ্বাস করবো ? এর দায়ভার যে আমার ঘাড়ে আসবে, এতে আর সন্দেহ কিসের ? আচ্ছা, এই ব্যাপারটির তদন্ত হবে তো ? নাকি বিনা দোষেই শাস্তি পেয়ে যাবো ?
ভাবতেই ভাবতেই কখন যে চোখ লেগে গিয়েছিল, বুঝতে পারিনি । একটু পর হঠাৎ-ই চোখ খুলে গেলো, হয়তো পাখির কিচিরমিচির ডাক শুনে । ভোর হয়ে গেছে অনেক আগেই, প্রকৃতিও যেন ঘুম থেকে আড়মোড়া দিয়ে জেগে উঠছে । পাখিগুলো তো পাল্লা দিয়ে একজন আরেকজনের চেয়ে জোরে ডেকে চলেছে । এতক্ষণ পুলিশ স্টেশনে কোন চাঞ্চল্য ছিল না । সবাই যে যার মত হয় ঢুলছিল, না হয় বসে বসে ঝিমাচ্ছিল আবার কারও কারও তো নাক ডাকারও আওয়াজ আসছিল । এখন পুলিশ স্টেশনও জেগে উঠেছে । ছোটাছুটি আরম্ভ হয়ে গেছে । আমি যেখানে বসে আছি, সেখান থেকে খুব কষ্ট করে স্টেশনের ঘড়িটা দেখা যায় । আমি চেষ্ঠা করলাম, কয়টা বাজে এটা দেখার জন্য । ঠিক ৮ টা বেজে ১৩ মিনিট । তার মানে ভালোই সকাল হয়ে গেছে । হঠাৎ খেয়াল করলাম, পিছন থেকে কালা মজিদ আড়মোড়া ভেঙ্গে ঘুম থেকে জেগে উঠেছে । সে জেগে উঠায় হাজতের মধ্যে নিরবতা এসেছে । কারণ তার নাক ডাকার শব্দটা থেমে গেছে । সেই নিরবতার কারণেই মনে হলো অনেকেই এক সাথে ঘুম থেকে জেগে উঠেছে । ঠিক যেন কোন ঘরের শব্দ করে ঘুড়া ফ্যানের মত । ফ্যানটি যখন শব্দ করে ঘুরতে শুরু করে, প্রথম প্রথম কষ্ট হলেও এক সময় ঘুম কিন্তু চলেই আসে । তখন ফ্যানের ঐ অবিরত শব্দের সাথে মানিয়ে নিয়ে ঘুমও ধীরে ধীরে গভীর হয় । কিন্তু কারেন্ট চলে যাওয়া বা অন্য কোন কারণে যদি ফ্যানটি থেমে যায়, তাহলে আবার ঘুম ভেঙ্গে যায় । কালা মজিদের ঘুম ভাঙ্গার সাথে সাথে ঠিক এমনটাই হয়েছে হাজতে । এত কষ্টের মাঝেও এটা দেখে আমার হাসি পেয়ে গেলো । আমি অনেক কষ্ট করে হাসি চাপার চেষ্ঠা করলাম কিন্তু কালা মজিদের চোখে সেটি এড়ালো না । সে দেখি আমার দিকে চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে আছে আবার তার ভ্রূও বেশ কুঞ্চিত । আমি আবার জড়সড় হয়ে বসলাম ।
পর্ব - ০৪
তবে এ যাত্রায় আর কালা মজিদ আমাকে ঘাঁটলো না, নিজের আশেপাশে থাকা দুই সাগরেদকে পাশে ডেকে আবার হাত-পা মালিশ করতে বললো । কেন জানি মনে হচ্ছে, এই লোকটার শরীরে সবসময় এক ধরনের জড়তা লেগেই থাকে । যখনই বসে আছে তখনই কাউকে না কাউকে দিয়ে নিজের শরীরের জড়তা ভাঙ্গানোর কাজে লাগিয়ে রেখেছে । যাই হোক, কালা মজিদের কর্মকাণ্ড দেখে বাকি সময়টুকু কাটানোর ইচ্ছা নেই আমার । হাজতে পুরো একটা রাত কাটিয়ে ফেললাম আমি । কি সাংঘাতিক ব্যাপার !! আমার বাপ-দাদা চৌদ্দ-গুষ্ঠির মধ্যে কেউ কোনদিন পুলিশের হাতে ধরা খায়নি । আমিই এক প্রকার রেকর্ড করে ফেললাম । তবে এটা এমনই একটা রেকর্ড, যা নিয়ে গর্ব করা যায় না । আমারও গর্ব করতে ইচ্ছা করছে না মোটেও । যদিও আমি অপরাধী নই, তবুও নিজেকে কেন জানি খুব ছোট মনে হচ্ছে । কেন জানি মনে হচ্ছে দুনিয়ার চোখে সেই আগের সম্মানটুকু আর দেখতে পাবো না । লোকে আমাকে দেখে মশকরা করবে । বলবে ঐ দেখ সন্ত্রাসী কালাম যাইতেছে । আমার কাপড়ের ব্যবসায় লালবাতি জ্বলবে । নাকি ইতিমধ্যেই জ্বলে গেছে, কে জানে । আমার ছেলেটার স্কুলে ওর বন্ধু-বান্ধবীর অভিভাবকরাও এটা নিয়ে বলতে ছাড়বে না, আমি জানি । মেয়েটাকে তো এখনও স্কুলেই দেইনি, যদি দিতাম, তাহলে হয়তো ওর সাথেও...... থাক, আমার ভাবনাগুলো গুলিয়ে যাচ্ছে । আমি নিজেকে হারাচ্ছি খুবই ধীরে ধীরে । এটাই কি আসল আমি ?
একটু পর দেখতে পেলাম নূপুর প্রায় হন্তদন্ত হয়ে থানায় ঢুকলো । আমার হাজত থেকে আমি ওকে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি । সাথে সালাম । ওরা দুইজনই জনাব বদরুলের সাথে কি যেন বললো, একটু পর ওরা দুইজনই আমার কাছে আসলো । নূপুর বেচারীর চোখ দুটোর নিচে হালকা কালি পড়েছে, ঠিক যেমনটা এক রাত না ঘুমালে কারও চোখে পড়ে । বুঝলাম, চিন্তায় ঘুমাইনি বেচারী । বেশ কিছুক্ষণের নিরবতা ভেঙ্গে প্রথমে সালামই কথা শুরু করলো । "কি হয়েছে ভাইয়া ? তোমাকে এখানে ধরে এনেছে কেন, বলতে পারো ?" আমি উত্তরে বললাম, "মনে হয় গত মাসে যে তিনটা লট এসেছে সেখানে কোন ঘাপলা থাকতে পারে । আমাকে ম্যানেজার সাহেব রিপোর্ট করেছিলেন যে তিনি হিসাব মেলাতে পারছিলেন না । আমি অবশ্য আরেকটি কন্ট্রাক্টে ব্যস্ত ছিলাম, তাই ঐ ঝামেলায় মন দিতে পারিনি । কিন্তু ম্যানেজার সাহেবের তো ঐ সমস্যা সমাধান করে ফেলার কথা... আমি তো উনাকেই এই দায়িত্ব দিয়েছিলাম । আচ্ছা, দোকানের কেউ জানে আমার থানায় থাকার কথা ?" সালাম আবার বললো, "হ্যাঁ, জানে, জানবে না কেন !! তবে সবচেয়ে চিন্তার বিষয় হচ্ছে আজকে সকালেই ম্যানেজার সাহেব ফোনে জানিয়েছেন তোমার দোকানের দুইজন কর্মচারী নাকি আচমকা ছুটি নিয়ে বাড়ির দিকে গেছে আর যাবার সময় বলে গেছে, ফিরতে দেরিও হতে পারে ।" আমার দুইয়ে দুইয়ে চার মেলাতে সময় লাগলো না । তবে আমি সালামকে আর কিছুই বললাম না এই ব্যাপারে ।
"আচ্ছা, তুমি কি গো ? এত বড় ঝামেলাকে এভাবে কেউ ছোট করে দেখে !! এখন এখানে বড় কোন ঝামেলা হলে আমার কি হবে, একবার ভেবেছো ?" নূপুর আহ্লাদী ছোট মেয়ের মত আমার কাছে একটার পর একটা নালিশ করতে লাগলো । এই মেয়েটার সাথে বিয়ে হয়েছে আজ প্রায় আট বছর হলো । গ্রামের মেয়ে, বেশি উচ্চশিক্ষিতও না, মাত্র এইট পাশ । দেখতে মুখশ্রী সুন্দর, ফর্সা, গোলগাল চেহারা, স্লিম দেহের গঠন । মেয়েটার সাথে থাকার এই আট বছরে প্রতিটি দিন আমি নতুনভাবে প্রায় প্রতিদিনই ওর প্রেমে পড়েছি । অথচ এরেঞ্জ মেরেজ, আব্বা যখন প্রথম ওর ছবি দেখান, তার আগেই নাকি তিনি মেয়ের বাড়িতে হ্যাঁ করে দিয়ে এসেছিলেন । আমাকে ছবি দেখানো ছিল শুধুই আনুষ্ঠানিকতা । আমি রাগ করে ছবিটা ভালো করে দেখিনি, কারণ আমি সেই সময় বিয়ের জন্য মোটেও রেডি ছিলাম না । একটা বেকার ছেলে, যে কিনা নতুন ব্যবসা করার চিন্তা করছে, তার কপালে কি আদৌ কোন রাজরানী জুটবে !! ভেবেছিলাম, আব্বা হয়তো কোন গেয়ো ভূতকেই আমার কপালে জুটাবেন, এই জন্যই বাসর রাতে বউয়ের ঘুমটা খুলে প্রথমবারের মতন মুখ দেখার ইচ্ছাটুকুও ছিল না আমার । অনেক রাত পর্যন্ত বসে থেকে যখন মেয়েটি বুঝলো, তার জীবনের সবচেয়ে আপন মানুষটির আপাতত তার মুখ দেখার ইচ্ছা নেই, সে তখন ঐ মুখ ঘোমটাতে ঢাকা অবস্থাতেই ঘুমিয়ে পড়লো । ঘুমিয়ে ঢুলে পড়া মাত্রই তার মুখ থেকে ঘোমটা সরে গেলো আর আমি অনিচ্ছাসত্ত্বেও তার দিকে খেয়াল করলাম । এ আমি কি দেখলাম !!! এ তো রাজরানী নয়, সাক্ষাৎ কোন পরী...... আমি নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না, এটা কি সত্যিই নাকি কল্পনা ?
পর্ব - ৫
পাগলিটার ঘুমরত অবস্থাই আমি আমার জীবনে প্রথম প্রেমে পড়লাম । পড়লাম মানে একেবারে ডুবে গেলাম । রবীন্দ্রনাথের হৈমন্তী গল্পের মত বলতে ইচ্ছে করছিল তখন, "আমি পাইলাম, আমি ইহাকে পাইলাম" । সেই মুহূর্তেই আমার নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে ভাগ্যবান বলে মনে হচ্ছিল । এত খুশি খুশি অবস্থায় আছি যে যে কোন মুহূর্তে হার্টফেল করে বসতে পারি, এই ভয়তে আমি তখনই ওর পাশের জায়গাটুকুকে শুয়ে পড়লাম । শুইলাম অবশ্য ওর দিকে মুখ দিয়ে । ওর মুখের দিকে তাকিয়ে আছি আর মুচকি মুচকি হাসছি । কখন যে এভাবে ঘুমিয়ে পড়েছি, তা নিজেরও মনে নেই । যাই হোক, সকালে আমার ঘুম কখনই খুব ভোরে ভাঙ্গে না । বরং বিয়ের আগে থেকেই বাড়ির সকলের ঘুম ভেঙ্গে যাওয়ার পর মা এসে আমার ঘুম ভাঙ্গিয়ে দিয়ে যেতো । বেকার মানুষ, এই ঘুম ছাড়া আর আছেই বা কি । এখন তো বিয়ে করেছি, তাই এই দায়িত্ব থেকে যে মা অবসর নেবেন, সেটা তিনি আগেই বলে দিয়েছেন । আমি যখন ঘুম থেকে উঠলাম তখন ঘড়িতে বারোটা পার হয়ে গেছে । হ্যাঁ, কেউ আমাকে ডাকেনি, নিজে নিজেই উঠেছি ঘুম থেকে । ঘড়ির সময় দেখে আবার মেজাজ গরম হলো । তাছাড়া উঠে পাশে মেয়েটিকেও পেলাম না । আসলে তখন পর্যন্ত মেয়েটি মেয়েটি করছি কারণ তখন পর্যন্ত ওর নামটিই শোনা হয়নি আমার ।
যাই হোক, আমাদের বাড়িতে সবাই যে যার মত থাকলেও তিন বেলা খাওয়াটা সবাই এক সাথে একটি নির্দিষ্ট সময়ে খাওয়া হয় । সকাল বেলার নাস্তা খাওয়ার সময় সকাল দশটা । এখন তো আরও দুই ঘণ্টা পার হয়ে গেছে, মনে হয় আজকের সকালের নাস্তাটা গেলো । ধুর, মেয়েটির উপর আবার রাগ আসছে । তবু নিজেকে বুঝ দিলাম, ধুর, এই মেয়েটার না আমি প্রেমে পড়েছি, তাহলে আবার রাগ কিসের !!! হঠাৎ মুখ ঘুরিয়ে দেখলাম খাটের পাশে একটি চেয়ার রাখা আর সেই চেয়ারের উপর নাস্তা রাখা । মুহূর্তেই আমার চেহারা ১০০ ওয়াটের বাতির মত উজ্জ্বল হয়ে গেলো ।
ফ্রেশ হয়ে নাস্তাটা সেরে নিলাম । ঐ যে একটা কথা আছে না, "পুরুষ মানুষের মনের রাস্তা শুরু হয় তাদের পেটের মাধ্যমে", আমার এই কথাটিই বারবার মাথায় আসছিল । কারণ আজকের নাস্তার স্বাদ অন্য রকম হয়েছে, মা যে বানায়নি আমি নিশ্চিত । তাহলে কি পাগলিটাই !!! আমি তদন্ত করতে ধীর পায়ে রান্নাঘরের দিকে এগিয়ে গেলাম । প্রায় রান্নাঘরে ঢুকবো এমন সময় পিছন থেকে মা বলে উঠলেন, "কি রে কালাম ? আজকে এত দেরি করে ঘুম থেকে উঠলি যে ? কাজ-কাম নাই তোর ?" ততক্ষণে পাগলিটার দিকে আমার চোখ গেছে । আমি খেয়াল করলাম কথাগুলো শুনে মেয়েটি মুচকি মুচকি হাসছে । তবু এখন মেয়েটির কর্মকাণ্ডে আমার মোটেও রাগ আসছে না । "হ্যাঁ, মা, যাবো তো । মানে ভাবলাম ওর সাথে একটু দেখা করে যাই, তাই আর কি...... " আমি মায়ের কথার উত্তরে বললাম । "ও তো তোর বিয়ে করা বউ । এত পিরিতির কি আছে ? ও কি কোথাও চলে যাচ্ছে নাকি? এখানেই আছে । তুই যা, আমি বউমাকে একটু কাজ শিখিয়ে নিচ্ছি ।" মায়ের গলা দেখছি ধীরে ধীরে চড়া হচ্ছে । বাড়িতে নতুন বউ আসলে মায়েরা যে নিজেদেরকে অনিরাপদ মনে করে, তার প্রমাণ পাচ্ছি হাতেনাতে । তারা ভয়ে থাকে তাদের ছেলে হয়তো পর হয়েই গেলো । আচ্ছা, এমন ভয় থাকলে ছেলেকে আবার বিয়ে দেওয়ার জন্য পাগল হয়ে যায় কেন এই মায়েরা ? না বাপু, এত কথা আমার মাথায় ঢোকে না । অন্য সময় না হলেও এখন তো মায়ের কথা শোনাই লাগবে, মাইয়ের ভয় যদি আবার বিশ্বাসে পরিণত হয়, তাহলে তো বিপদ । তাই কি আর করার...... পাগলিটার সাথে দেখা না করেই আমি গুছিয়ে বাইরে বের হয়ে গেলাম । আব্বার সাথে নিয়মিত দোকানে বসছি, কাজ শিখতে হবে । নতুন দায়িত্ব ঘাড়ে এসে পড়েছে, এবার নিজের পায়ে দাঁড়ানোর একটা তাগিদ অনুভব করছি ।
দোকানে বসে আছি অনেকক্ষণ, কাজে মন বসছে না । খালি বাড়ি ছুটে যেতে ইচ্ছে করছে । পাগলিটার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে, অনেক কথা । ছোটবেলা থেকে যে কথাগুলো জমিয়ে রেখেছি, যেই কথাগুলো বাবা-মাকে বলা যায় না, বড় কিংবা ছোট ভাই-বোনকেও বলা যায় না, সেই কথাগুলো, মনের অনুভূতিগুলো, ইচ্ছেগুলো ওকে বলতে ইচ্ছে করছে খুব । আমার অমনযোগী ভাব আব্বার চোখ এড়ালো না । "কালাম, কোন সমস্যা ?" "না, তো আব্বা, কোন সমস্যা নেই ।" আমার উত্তর শুনে আব্বা দেখি মুচকি মুচকি হাসছেন । "ক্ষিদা লাগছে, কিন্তু আজকে বাড়ি যেতে ইচ্ছে করছে না । তুই গিয়ে বাড়ি থেকে টিফিন বাটিতে করে আমার খাবারটা নিয়ে আয় ।" আব্বা এই কথা বলে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলেন । আব্বার এই কথা শুনে মনের মধ্যে খুশির বোমা ফুটলেও, আমি এমন ভান করার চেষ্ঠা করলাম, যেন আমি অনিচ্ছাসত্ত্বেও তার আদেশ পালন করছি । আমি বাড়ির পানে রওনা হলাম । এত খুশি লাগছে যে মনে হচ্ছে নাচতে নাচতে বাড়ি যাই ।
পর্ব - ৬
স্বপ্নের ঘোর থেকে বাস্তবে ফিরে এলাম সেই পুলিশ ভাইটির ডাকে যে কিনা আমাকে পুলিশ স্টেশনে প্রথম আসার পর পানি এনে খাইয়েছিল । আমি পুলিশ ভাইটির কৃতজ্ঞতা স্বীকার করতেই কিনা নেমপ্লেটে লেখা তার নাম খেয়াল করলাম । আসলাম শেখ । বাংলাদেশে ১৯৭১ সালের পর থেকে শেখ নামধারী বৃদ্ধি পেয়েছে অনেক । কেউ নামের আগে, কেউবা মাঝে আবার কেউ নামের পিছে লাগিয়ে দিচ্ছে এই শব্দখানা । হয়তো বাপ-দাদা চৌদ্দ-গুষ্ঠির মধ্যে কেউ শেখ নেই অথচ ছেলে দিব্যি শেখ নাম নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে । যাই হোক, এই শেখ কি তেমনই নতুন সংযোজিত শেখ কিনা তা আর আমি জিজ্ঞাসা করলাম না । অনেকক্ষণ ধরে ডাকছেন মনে হচ্ছে । কারণ তার মুখে আমি এখন রাগের অভিব্যক্তি দেখতে পাচ্ছি । খুব প্রিয় একজন মানুষের উপরেও অবহেলা কারণজনিত ব্যাপারে রাগ করা খুব অস্বাভাবিক নয়, আর তাছাড়া আমি তো পুলিশ ভাইয়ের আপন কেউ না । আর তাছাড়া আমি স্বপ্নের জগতে ছিলাম বেশ অনেকক্ষণ যাবৎ । আশ্চর্য লাগছে এখন এই ভেবে এই সময়ের মধ্যে নূপুর বা সালাম কি আমার সাথে কথা বলেনি নাকি তারা খেয়ালই করেনি যে আমি অন্যমনস্ক নাকি তারা ঠিকই কথা বলে যাচ্ছে কিন্তু আমি শুনতে পারছিলাম না । কি জানি বাপু, কোনটা । তবে পুরনো সুখের স্মৃতিগুলো রোমন্থন করতে খুব ভালো লেগেছে । আমি জনাব আসলাম শেখকে জবাব দিলাম, "ভাই, আমাকে ডাকছিলেন ?" আসলাম শেখ সাহেবের তীক্ষ্ণদৃষ্টি এবার একটু শীতল হলো । তিনি এবার আমার দিকে উত্তর দিলেন, "আপনাকে স্যার ডাকছেন ।" "কে বদরুল সাহেব ?" "জী," । এতটুকু কথোপকথন শেষে আসলাম শেখ হাজতের গেট খুলে দিলো, আমি আবারও হাজতের বাইরে আসতে পেরেছি, কেমন জানি এবার সত্যি সত্যি স্বাধীনতার অনুভূতি হচ্ছে । ১৯৭১ এ স্বাধীনতা পাওয়ার চেয়েও বেশি ভালো অনুভূতি ।
আমাকে হাজত থেকে বের করেই সরাসরি বদরুল সাহেবের সামনে আনা হলো । আমার পাশে দাড়িয়ে নূপুর আর সালাম । তাদের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারছি চোখেমুখে উৎকণ্ঠা । সালাম অনেকক্ষণ ধরেই আমার জামিনের জন্য ওরই পরিচিত একজন উকিলের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্ঠা করছে, কিন্তু ওর ভাব দেখে বুঝা হচ্ছে হয়তো উকিল সাহেবকে ফোনে পাওয়া যাচ্ছে না, নয়তো উকিল সাহেব রাজী হননি । আমি সালামকে চিনি ভালো করেই, নয়তো সালামের মুখ এত গোমরা হয়ে থাকতো না । যাই হোক বদরুল সাহেবের সামনে দাঁড়ানো মাত্র আমি আবারও আমার আশেপাশের মানুষজনের কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করা শুরু করলাম ।
বদরুল সাহেবের পুরো চোখ লাল হয়ে রয়েছে । সাধারণত দুইটি ক্ষেত্রে একজন মানুষের চোখ এমন সাত-সকালে লাল হতে পারে । এক, যদি ঘুম একেবারেই না হয় আর দুই, ঘুম হয়েছে বেশি বা অপূর্ণ আকারে । আমার মনে হচ্ছে বদরুল সাহেবের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় ব্যাপারটাই ঘটেছে । "স্যার, আমাকে ডেকেছেন ?" বদরুল সাহেবের মুখভর্তি পান । ভালোই বুঝা যাচ্ছে কারণ তিনি উপর্যপুরি মুখ নাড়িয়েই যাচ্ছেন আর তার মুখের দুই পাশ থেকে পানের চিপ একটু একটু করে চুইয়ে পড়ছে । আবার লক্ষ্য করলাম তার সামনে চা রাখা । দুধ চা । একটি শক্ত কাগজ দিয়ে ঢেকে রাখা । আমি বুঝলাম না একজন মানুষ একইসাথে পান আর চা কি করে খেতে পারে ? এমনিতেই পুলিশের সাথে ঘটা ঘটনাগুলো আমার বরাবরই কেমন জানি একটু কনফিউশন লাগে । এই তো গেলো বদরুল সাহেবের কথা । এবার আসি আরও যা পর্যবেক্ষণ করলাম তা নিয়ে ।
পর্ব - ৭
আমার আশেপাশে পরিস্থিতি খুব একটা ঠাণ্ডা বা নিরিবিলি না । রাতে যেমন গুটি কয়েক মহিলা ও পুরুষদের এনে পুলিশ স্টেশন ভরে রাখা হয়েছিল, দিনের বেলায় ব্যাপারটা ঠিক তেমন না । তাছাড়া এখন পুলিশ স্টেশনে পুলিশের সংখ্যাও রাতের চেয়ে ঢের বেশি । সবাই কেমন জানি ছুটাছুটি করছে । সকলেই ব্যস্ত । ওদিকে আরেক হাজত থেকে গানের আওয়াজ হচ্ছে জোরে জোরে । আমি যে হাজতে ছিলাম তার পাশের হাজত আর কি । গানটি অবশ্য একজনই গাচ্ছে, বুঝা যাচ্ছে । মনে হচ্ছে কারও বাথরুম আটকে গেলে সে যেভাবে জোর দেয়, তখন মুখ নিঃসৃত শব্দগুলো অনেক চাপা ও ক্ষীণ হয়, এক্ষেত্রেও ব্যাপারটি অনেকটাই তাই । আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে সবার ব্যস্ত গতিবিধি দেখে বোধ হচ্ছে কেউই ঐ লোকটার গান শুনতে পাচ্ছে না । আমি মনে মনে ভাবলাম, আহা রে কি কষ্ট করেই না লোকটা গানটা গাচ্ছে !! আরও খেয়াল করলাম রাতে কারণে-অকারণে কেঁদে যাওয়া বাচ্চাটি এখন আর এখানে নেই, তবে কি বাচাটির আসল বাবা-মা কে খুঁজে পাওয়া গেছে, নাকি (আল্লাহ্ না করুক) খারাপ কিছু ঘটলো ওর সাথে, একটু জানতে ইচ্ছা করছে । আচ্ছা, বদরুল সাহেবকে জিজ্ঞাসা করলে এর উত্তর পাওয়া যাবে নাকি আসলাম শেখ ? আমি আবারও কনফিউশনে পড়ে গেলাম । হঠাৎ খেয়াল করলাম, এক কোনায় একজন লোক জীর্ণবস্ত্র অবস্থায় মাটির দিকে মুখ করে মাথা নিচু করে বসে আছে । লোকটির খালি গা (শরীর) আর সারা শরীরে মাটি/কাঁদা লাগানো, মনে হচ্ছে নেশা করার কারণে তাকে ধরা হয়েছে । আর এক পাশে এক বুড়ো চাচা বসে আছে, সেও বদরুল সাহেবের মত মুখভর্তি পান চিবোচ্ছে । মুখে ভাবলেশবিহীন । চাচাকে হয়তো ধরে আনা হয়নি, তিনি হয়তো কোন হাজতির সাথে দেখা করতে এসেছেন । আর তেমন কিছু খেয়াল করার মত পেলাম না । বলতে যদিও অনেক সময় লাগলো কিন্তু এতকিছু দেখলাম মাত্র অল্প কিছু সেকেন্ডের মধ্যেই । যাই হোক সৎবিৎ ফিরে এলাম বদরুল সাহেবের ডাকেই ।
"কি ব্যাপার, কামাল সাহেব, এত মনোযোগ দিয়ে কি দেখছেন ?" "কিছু না স্যার । একরাত পুলিশ স্টেশনে থেকে হঠাৎ খেয়াল করলাম আমার পর্যবেক্ষণ করার ক্ষমতা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে, স্যার ।" কথা শেষ করা মাত্রই খেয়াল করলাম বদরুল সাহেব হঠাৎ চোখ সরু করে আমার দিকে তাকালেন । পুলিশের সাথে এই এক সমস্যা । তারা প্রত্যেকটি ভালো-খারাপ কথায় সন্দেহ করে, ভাবে হয়তো কথা অন্য কোন অর্থে বলা হয়েছে । কিন্তু আশার কথা কিছুক্ষণ পর বদরুল সাহেব আবার স্বাভাবিক হলেন । স্বাভাবিক হওয়া মাত্রই আবার বলা শুরু করলেন, "এনায়েত করিমকে তো মনে হয় চেনেন ?" বদরুল সাহেবের এমন প্রশ্ন শুনে আমার মনে হঠাৎ করেই ভয় ধরে গেলো । এই যাহ, তাহলে কি বড় কোন সন্ত্রাসী গ্যাং-এর সাথে আমাকে জড়িয়ে কেস করার ধান্দায় আছেন নাকি এই লোক ? আচ্ছা, এই এনায়েত করিমটা কে ? ঐ সন্ত্রাসী গ্যাং-এর লিডার নাকি সাব-লিডার ? আমি বেশ চিন্তায় পড়ে গেলাম । বেশি চিন্তায় আমি আবার আঙুল, ভালো করে বললে নখ কামড়াতে শুরু করি । এটা আমার ছোটবেলার অভ্যাস । এবারও কখন জানি অজান্তেই নখ কামড়াতে শুরু করেছি । হয়তো টেরই পেতাম না, যদি না বদরুল সাহেব ডাক দিয়ে আবারও সৎবিৎ ফেরত আনতেন আমার । 'কি হলো, বললেন না চেনেন নাকি ?' "ইয়ে মানে, স্যার, কোন এনায়েত করিমের কথা বলছেন ? চিনতে পারছি না, যদি একটু ক্লিয়ার করে বলতেন ।" "ঐ যে ভাই-বন্ধু বস্ত্রালয়ের মালিক । চেনেন নাকি ?" আমার হঠাৎ খেয়াল হলো এনায়েত করিমের কথা । আমরা একই মার্কেটে দোকান দিয়েছি সেই আরও দুই বছর আগেই । লোকটির সাথে আমার দেখা তেমন হয়না, কারণ আমরা দুইজনই মোটামুটি বেশ ব্যস্ত মানুষ । হয়তো মার্কেটের কোন মিটিং-এ হঠাৎ তার সাথে দেখা হয়ে গেলো, ব্যস এতটুকুই । "জী, স্যার, চিনেছি এবার । হ্যাঁ, চিনি তো । কি হয়েছে উনার ?" বদরুল সাহেব এতক্ষণ আমার উত্তরের অপেক্ষাতেই ছিলেন । এটা বুঝা গেলো উনার পান চিবানোতে হঠাৎ বিরতি দেওয়ার কারণে । আমার উত্তর দেওয়ার সাথে সাথেই সেই পান চিবানো আবার শুরু হলো । "না, উনার কিছু হয়নি, উনার সাথে গতকাল আমার কথা হয়েছে । তাও আবার আপনাকে নিয়ে ।" আমি বলতে সাহস পেলাম না, কি কথা ? আর তাছাড়াও বদরুল সাহেব এনায়েত করিমকে কি করে চেনেন ? ইত্যাদি । পুলিশকে যত প্রশ্ন কম করা যায় ততই ভালো ।
পর্ব - ৮
আমার আর কোন প্রশ্ন না পেয়ে হয়তো বদরুল সাহেব একটু আশাহতই হলেন । তিনি হয়তো চেয়েছিলেন আমি বেশ অবাক হবো, এই ভেবে যে তিনি তো আমার সার্কেলের লোকদেরকে ভালোই চেনেন । কিন্তু আমার মুখের ভাবলেশহীন অবস্থা দেখে উনার আশাহত হওয়াটাই স্বাভাবিক । আমার প্রশ্ন যা হওয়া উচিৎ ছিল সেটা না করলেও সেই অনুযায়ী উত্তর দেওয়া শুরু করলেন বদরুল সাহেব । "আসলে এনায়েত করিম আমার বড় ভাইরা-ভায়ের বন্ধু । আপনার ব্যাপারে কথা বলতেই উনি কাল আমাকে ফোন করেছিলেন । পরে অবশ্য আমার ভাইরা-ভাই কে নিয়ে রাতের দিকে আমার বাড়িতেও নাকি এসেছিলেন । আমি তো পুলিশ স্টেশনেই ছিলাম, তাই আর আমার সাথে দেখা হয়নি । পরে আবারও ফোন দিয়েছিলেন । তখনই আপনাকে নিয়ে কথা হলো বিস্তারিত ।" আমি আগের বিষয় নিয়ে চিন্তামুক্ত হয়ে গেলেও নতুন আরেকটি বিষয়ে চিন্তাযুক্ত হয়ে গেলাম । আমাকে নিয়ে আবার কি বিস্তারিত কথা হলো ? তবে কি এনায়েত করিম আমাকে নতুন করে কোন বিষয়ে ফাঁসিয়ে দিলেন ? আমাদের দোকান যে মার্কেটে সেটি ভেঙে দেবে বলে অনেকদিন ধরেই নোটিশ দিয়ে যাচ্ছে মার্কেট মালিক সমিতি । শুধুমাত্র আমাদের দুইজনের কারণেই ভাঙতে পারছে না । আমাদের দোকান ঐ মার্কেটে মাত্র দুই বছর হলেও, আগে এর পাশেই ছিল প্রায় দশ বছর ধরে । তাই মার্কেট এলাকায় আমাদের ভালোই প্রভাব রয়েছে । আর এনায়েত করিমও বেশ প্রভাবশালী লোক । এই কারণেই মার্কেট ভাঙ্গা সম্ভব হচ্ছে না মার্কেট মালিক সমিতির । আমি ভাবছি, একা প্রভাব বজায় রাখার জন্য এনায়েত করিম কিন্তু আমাকে ফাঁসিয়ে দিতে পারেন । তিনি ঠিক এই কাজটিই করেননি তো ? আমি এবার আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না, বদরুল সাহেবকে জিজ্ঞাসা করেই বসলাম, "স্যার, কি বলেছেন এনায়েত করিম সাহেব আপনাকে ?" "আচ্ছা, আগে বসুন । পরে সব কথা হবে ।" বদরুল সাহেব ইশারা করতেই তিনটি চেয়ার আমাদের তিনজনের জন্য এগিয়ে দেওয়া হলো । আমরা চেয়ারের ব্যবস্থা হওয়া মাত্রই বসে পড়লাম । এতক্ষণ দাড়িয়ে কথা বলার জন্যই কিনা পা দুইটা বেশ চিনচিন করছে এখনও । নূপুর আর সালামেরও একই অবস্থা । আমি ওদের মুখ দেখেই বুঝতে পারছি । আর তাছাড়া অনেকক্ষণ চুপ করে থাকার কারণেই কিনা তারা দুজনেই বেশ অস্বস্তিতেও আছে ।
আমি আবারও জিজ্ঞাসা করলাম, "কি বলেছেন এনায়েত করিম সাহেব আপনাকে, স্যার ?" বদরুল সাহেব আমাকে আরও কিছু সময় উৎকণ্ঠায় রাখার জন্যই কিনা সময়ক্ষেপণ করতে লাগলেন । "আচ্ছা, এনায়েত করিম সাহেবের বস্ত্রালয়ের দোকান তো আপনার দোকানের পাশেই, তাই না ?" "জী, হ্যাঁ ।" "এনায়েত করিম সাহেবের সাথে আপনার উঠাবসা কেমন মানে প্রতিদিন খোঁজখবর নেওয়ার সুযোগ পান কিনা একে অন্যের ?" "না ব্যস্ততার কারণে বেশিরভাগ দিন এমন হয়ে ওঠে না । তবে সময় সুযোগ পেলে একে অন্যের খোঁজ নেওয়া হয় ।" "তবে যাই বলেন, এনায়েত করিম সাহেব কিন্তু আপনার সম্পর্কে আমাকে অনেক গোপন কথাও বলেছেন ।" এই কথা বলেই বদরুল সাহেব উচ্চস্বরে হাসা শুরু করলেন । বদরুল সাহেব যে এমন জোরে হেসে উঠবেন হঠাৎ করে এমন প্রত্যাশা হয়তো কারোরই ছিল না, তাই আশেপাশে সবার মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসলেন বদরুল সাহেব । এমনকি আসলাম শেখও দেখি মুচকি মুচকি হাসার চেষ্ঠা করে যাচ্ছেন । বুঝাই যাচ্ছে, তার মোটেও হাসি আসছে না, কিন্তু নকলভাবে হাসি আনার ব্যর্থ চেষ্ঠা যাকে বলে । বদরুল সাহেব উচ্চস্বরে হাসতে হাসতেই আসলাম শেখের এই ব্যাপারটি লক্ষ্য করলো, আর তাকে এই কারণে সন্তুষ্ট হলো বলেই মনে হলো । মানুষের অনেক সময়ই এই সমস্যাটা হয় । তারা একা একা কোন কাজ করতে শুরু করলে, সঙ্গীর অভাবে সাহস হারিয়ে ফেলে, তখন হয় তারা কাজটি বন্ধ করে দেয়, নয়তো বারবার নতুন করে শুরু করে, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা কোন সঙ্গী না পায় । বদরুল সাহেবের হাসি হয়তো শুরু হতেই থেমে যেতো কোন সঙ্গীর অভাবে, কোন এক্ষেত্রে আসলাম শেখ তার যোগ্য সঙ্গী হওয়াতে বদরুল সাহেব অনেকক্ষণ যাবৎ-ই হাসলেন আর এরপর থামলেন । আর আসলাম শেখের এই কর্মকাণ্ড দেখে ঠিক সব মানুষের সাধারণ বৈশিষ্ট্য না, তবে বাঙালির একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্যের কথা মনে পড়লো আমার । বাঙালি আর কিছু পারুক না পারুক ঊর্ধ্বতনকে খুশি করার চেষ্ঠা ঠিকই করে, তা নিজের যতই কষ্ট হোক না কেন । যাই হোক, আসল কথাতে আসি এবার । আমি আবারও চিন্তায় পড়ে গেলাম । একে তো বদরুল সাহেব আমাকে সরাসরি বলছেনই না এনায়েত করিম সাহেব তাকে কি বলেছেন, আবার তিনি একটির পর একটি কথা বলে আমাকে ঘাবড়ে দেওয়ার চেষ্ঠাও করছেন । না, তাকে তো জোরও করতে পারছি না । কোথায় জানি শুনেছিলাম পুলিশের হ্যাঁ-এর সাথে হ্যাঁ মেলাতে হয়, না করলেই বরং সমস্যা বাধে । তবু আমি একটু সাহস সঞ্চার করে আবারও জিজ্ঞাসা করলাম, "আচ্ছা, এবার কি আপনি বলবেন, আপনাকে এনায়েত করিম সাহেব আসলে কি বলেছেন ? আমি পুরোটুকুই শুনতে চাচ্ছি ।" বদরুল সাহেব আমার প্রশ্ন শুনে আমার দিকে মিটমিট করে চাইলেন । লোকটির হয়তো এই মুহূর্তে রেগে যাওয়ার কথা কিন্তু লোকটি আমাকে নিয়ে মজা নিচ্ছে, তাই সহসা রাগছে না । ওদিকে আমার টেনশন বেড়েই চলেছে ।
(বাকিটা আগামী পর্বে)
©somewhere in net ltd.