নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একজন শৌখিন লেখক আমি, আবার কবিও বলা যেতে পারে । যখন যা ভালো লাগে তাই লিখি ।
গল্পের পূর্বের অংশ পাবেন ১ম তিনটি পর্বেঃ
জীবনের এক ভয়ংকর অভিজ্ঞতার সম্মুখীন - পর্ব - ০১
জীবনের এক ভয়ংকর অভিজ্ঞতার সম্মুখীন - পর্ব - ০২
জীবনের এক ভয়ংকর অভিজ্ঞতার সম্মুখীন - পর্ব - ০৩
তবে এ যাত্রায় আর কালা মজিদ আমাকে ঘাঁটলো না, নিজের আশেপাশে থাকা দুই সাগরেদকে পাশে ডেকে আবার হাত-পা মালিশ করতে বললো । কেন জানি মনে হচ্ছে, এই লোকটার শরীরে সবসময় এক ধরনের জড়তা লেগেই থাকে । যখনই বসে আছে তখনই কাউকে না কাউকে দিয়ে নিজের শরীরের জড়তা ভাঙ্গানোর কাজে লাগিয়ে রেখেছে । যাই হোক, কালা মজিদের কর্মকাণ্ড দেখে বাকি সময়টুকু কাটানোর ইচ্ছা নেই আমার । হাজতে পুরো একটা রাত কাটিয়ে ফেললাম আমি । কি সাংঘাতিক ব্যাপার !! আমার বাপ-দাদা চৌদ্দ-গুষ্ঠির মধ্যে কেউ কোনদিন পুলিশের হাতে ধরা খায়নি । আমিই এক প্রকার রেকর্ড করে ফেললাম । তবে এটা এমনই একটা রেকর্ড, যা নিয়ে গর্ব করা যায় না । আমারও গর্ব করতে ইচ্ছা করছে না মোটেও । যদিও আমি অপরাধী নই, তবুও নিজেকে কেন জানি খুব ছোট মনে হচ্ছে । কেন জানি মনে হচ্ছে দুনিয়ার চোখে সেই আগের সম্মানটুকু আর দেখতে পাবো না । লোকে আমাকে দেখে মশকরা করবে । বলবে ঐ দেখ সন্ত্রাসী কালাম যাইতেছে । আমার কাপড়ের ব্যবসায় লালবাতি জ্বলবে । নাকি ইতিমধ্যেই জ্বলে গেছে, কে জানে । আমার ছেলেটার স্কুলে ওর বন্ধু-বান্ধবীর অভিভাবকরাও এটা নিয়ে বলতে ছাড়বে না, আমি জানি । মেয়েটাকে তো এখনও স্কুলেই দেইনি, যদি দিতাম, তাহলে হয়তো ওর সাথেও...... থাক, আমার ভাবনাগুলো গুলিয়ে যাচ্ছে । আমি নিজেকে হারাচ্ছি খুবই ধীরে ধীরে । এটাই কি আসল আমি ?
একটু পর দেখতে পেলাম নূপুর প্রায় হন্তদন্ত হয়ে থানায় ঢুকলো । আমার হাজত থেকে আমি ওকে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি । সাথে সালাম । ওরা দুইজনই জনাব বদরুলের সাথে কি যেন বললো, একটু পর ওরা দুইজনই আমার কাছে আসলো । নূপুর বেচারীর চোখ দুটোর নিচে হালকা কালি পড়েছে, ঠিক যেমনটা এক রাত না ঘুমালে কারও চোখে পড়ে । বুঝলাম, চিন্তায় ঘুমাইনি বেচারী । বেশ কিছুক্ষণের নিরবতা ভেঙ্গে প্রথমে সালামই কথা শুরু করলো । "কি হয়েছে ভাইয়া ? তোমাকে এখানে ধরে এনেছে কেন, বলতে পারো ?" আমি উত্তরে বললাম, "মনে হয় গত মাসে যে তিনটা লট এসেছে সেখানে কোন ঘাপলা থাকতে পারে । আমাকে ম্যানেজার সাহেব রিপোর্ট করেছিলেন যে তিনি হিসাব মেলাতে পারছিলেন না । আমি অবশ্য আরেকটি কন্ট্রাক্টে ব্যস্ত ছিলাম, তাই ঐ ঝামেলায় মন দিতে পারিনি । কিন্তু ম্যানেজার সাহেবের তো ঐ সমস্যা সমাধান করে ফেলার কথা... আমি তো উনাকেই এই দায়িত্ব দিয়েছিলাম । আচ্ছা, দোকানের কেউ জানে আমার থানায় থাকার কথা ?" সালাম আবার বললো, "হ্যাঁ, জানে, জানবে না কেন !! তবে সবচেয়ে চিন্তার বিষয় হচ্ছে আজকে সকালেই ম্যানেজার সাহেব ফোনে জানিয়েছেন তোমার দোকানের দুইজন কর্মচারী নাকি আচমকা ছুটি নিয়ে বাড়ির দিকে গেছে আর যাবার সময় বলে গেছে, ফিরতে দেরিও হতে পারে ।" আমার দুইয়ে দুইয়ে চার মেলাতে সময় লাগলো না । তবে আমি সালামকে আর কিছুই বললাম না এই ব্যাপারে ।
"আচ্ছা, তুমি কি গো ? এত বড় ঝামেলাকে এভাবে কেউ ছোট করে দেখে !! এখন এখানে বড় কোন ঝামেলা হলে আমার কি হবে, একবার ভেবেছো ?" নূপুর আহ্লাদী ছোট মেয়ের মত আমার কাছে একটার পর একটা নালিশ করতে লাগলো । এই মেয়েটার সাথে বিয়ে হয়েছে আজ প্রায় আট বছর হলো । গ্রামের মেয়ে, বেশি উচ্চশিক্ষিতও না, মাত্র এইট পাশ । দেখতে মুখশ্রী সুন্দর, ফর্সা, গোলগাল চেহারা, স্লিম দেহের গঠন । মেয়েটার সাথে থাকার এই আট বছরে প্রতিটি দিন আমি নতুনভাবে প্রায় প্রতিদিনই ওর প্রেমে পড়েছি । অথচ এরেঞ্জ মেরেজ, আব্বা যখন প্রথম ওর ছবি দেখান, তার আগেই নাকি তিনি মেয়ের বাড়িতে হ্যাঁ করে দিয়ে এসেছিলেন । আমাকে ছবি দেখানো ছিল শুধুই আনুষ্ঠানিকতা । আমি রাগ করে ছবিটা ভালো করে দেখিনি, কারণ আমি সেই সময় বিয়ের জন্য মোটেও রেডি ছিলাম না । একটা বেকার ছেলে, যে কিনা নতুন ব্যবসা করার চিন্তা করছে, তার কপালে কি আদৌ কোন রাজরানী জুটবে !! ভেবেছিলাম, আব্বা হয়তো কোন গেয়ো ভূতকেই আমার কপালে জুটাবেন, এই জন্যই বাসর রাতে বউয়ের ঘুমটা খুলে প্রথমবারের মতন মুখ দেখার ইচ্ছাটুকুও ছিল না আমার । অনেক রাত পর্যন্ত বসে থেকে যখন মেয়েটি বুঝলো, তার জীবনের সবচেয়ে আপন মানুষটির আপাতত তার মুখ দেখার ইচ্ছা নেই, সে তখন ঐ মুখ ঘোমটাতে ঢাকা অবস্থাতেই ঘুমিয়ে পড়লো । ঘুমিয়ে ঢুলে পড়া মাত্রই তার মুখ থেকে ঘোমটা সরে গেলো আর আমি অনিচ্ছাসত্ত্বেও তার দিকে খেয়াল করলাম । এ আমি কি দেখলাম !!! এ তো রাজরানী নয়, সাক্ষাৎ কোন পরী...... আমি নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না, এটা কি সত্যিই নাকি কল্পনা ?
(বাকিটা আগামী পর্বে)
©somewhere in net ltd.
১| ১৫ ই মে, ২০১৬ দুপুর ২:৫৫
কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: আপনি কি ভাই গল্প লিখছেন নাকি নিজের জীবনের সত্য কাহিনী? পড়ে মনে হচ্ছে আপনি গল্প লেখার চেষ্টা করছেন।