নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন, ২০২৩ রাষ্ট্রপতির সম্মতি লাভ করেছে এবং ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে কার্যকর হয়েছে। এতদিন ভূমি সংক্রান্ত সকল অপরাধ বিষয়ক মামলা দণ্ডবিধি, ১৮৬০ এর ধারার অধীনে দায়ের করা হতো (ধারা ৪০৬, ৪২০, ৩৮৯, ৪৪৭, ৪৬৭, ৪৭১)। ভূমি বিষয়ক নতুন আইনে অপরাধগুলো সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে এবং দেওয়ানি আদালতের এখতিয়ার বাড়ানো হয়েছেন।
২৭ টি ধারা সংবলিত নতুন এই আইন ভূমি ব্যবস্থাপনায় নি:সন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে চলেছে। একারণে এই আইন বিষয়ে সকলের জানা প্রয়োজন। আর সে উদ্দেশ্য নিয়েই আমার এই লিখা।
"ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন, ২০২৩"
আইনে পরিলক্ষিত বিষয়গুলো হলো:
১. ভূমি সংক্রান্ত অপরাধ ও অপরাধের দন্ড:
ভূমি প্রতারণা সংক্রান্ত অপরাধ ও দণ্ড:
অন্যের জমিকে নিজের বলা, ভূমি বিষয়ক তথ্য গোপন করা, মিথ্যা বিবরণ সংবলিত দলিলে স্বাক্ষর করা, অন্যের জমি ক্ষমতাপ্রাপ্ত না হয়ে হস্তান্তর করা এবং মিথ্যা পরিচয়ে জমি হস্তান্তরকে অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে; যার শাস্তি অনধিক ৭ বছর কারাদণ্ড ও অর্থ দণ্ড(ধারা ৪)।
ভূমি জালিয়াতি সংক্রান্ত অপরাধ ও শাস্তি:
মিথ্যা দলিল বা দলিলের অংশ বিশেষ তৈরি,
দলিল সম্পাদিত হবার পর তার কোন অংশ পরিবর্তন, অসাধুভাবে দলিলে স্বাক্ষর, সিলমোহর বা পরিবর্তনে বাধ্য করাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে; অপরাধীর শাস্তি অনধিক ৭ বছর কারাদণ্ড ও অর্থ দণ্ড(ধারা ৫)।
অবৈধ দখল ও শাস্তি:
কোন জমি আইনানুগভাবে মালিক না হলে কেউ দখলে রাখতে পারবে না। অবৈধ দখলের জন্য শাস্তি অনধিক ২ বছর কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড(ধারা ৭)।
ক্রেতা বরাবর বিক্রিত জমি হস্তান্তর না করার শাস্তি:
কেউ যদি জমি সম্পূর্ণ মূল্য পরিশোধ করা স্বত্তেও ক্রেতা বরাবর জমি হস্তান্তর না করে তবে তার শাস্তি অনধিক ২ বছর কারাদণ্ড ও অর্থ দণ্ড(ধারা ৯)।
সরকারি, আধা-সরকারী, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান বা জনসাধারণের ব্যবহার্য ভূমির অবৈধ দখল, প্রবেশ, কোন কাঠামোর ক্ষতিসাধন (ধারা ১১) ও সরকারি, আধা-সরকারী, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান বা জনসাধারণের ব্যবহার্য ভূমির অবৈধ ভরাট, শ্রেনি পরিবর্তন( ধারা ১২) এর শাস্তি অনধিক ২ বছর কারাদণ্ড ও অর্থ দণ্ড।
মাটির উপরিভাগ কর্তন ও ভরাট:
জেলা প্রশাসকের অনুমতি ছাড়া কেউ আবাদযোগ্য জমির উপরিভাগ কর্তন, বা জমির রেকর্ডীয় মালিক বিনা অনুমতিতে জমির শ্রেনী পরিবর্তন করলে শাস্তি অনধিক ২ বছর কারাদণ্ড ও অর্থ দণ্ড(ধারা ১৩)।
অপরাধ সংঘটনে সহায়তার শাস্তি:
কেউ যদি উক্ত অপরাধ সংঘটনে সহায়তা, প্ররোচনা প্রদান করে, সেটাও অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। তাহ শাস্তি হবে প্রকৃত অপরাধীর সমান(ধারা ১৬)।
২. ভূমি সংক্রান্ত অপরাধ ও বিচার এখতিয়ার:
ভূমি সংক্রান্ত প্রতারণা ও জালিয়াতিকে উক্ত আইনের ৪ ও ৫ ধারায় সুনির্দিষ্টভাবে দন্ডনীয় করা হয়েছে। এই আইনে প্রতারণা জামিনঅযোগ্য অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে(ধারা ১৯)। প্রতারণা ও জালিয়াতির অপরাধের বিচার ভার কেবল জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের উপর ন্যাস্ত করা হয়েছে (ধারা ১৯, ২০)। দখল উদ্ধারের ক্ষেত্রে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশ অমান্য করলে তার বিচার ভারও থাকবে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের উপর( ধারা ১৫, ২২)।
৩. দলিল বাতিল মোকদ্দমা:
দলিল বাতিলের জন্য আর দেওয়ানী আদালতে যেতে হবে না। প্রতারণা বা জালিয়াতির মাধ্যমে তৈরি দলিল বাতিলের মামলা জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এর নিকট দায়ের করা যাবে(ধারা ৪, ৫)। দলিল প্রতারণা বা জালিয়াতির মাধ্যমে তৈরি হয়েছে মর্মে প্রমাণিত হলে আদালত জেলা প্রশাসককে সংশ্লিষ্ট সাবরেজিস্টার অফিসে নোট দেয়ার আদেশ প্রদান করবেন (ধারা ৬)।
আগে দলিল বাতিল বলে রেজিস্ট্রার বা নথিতে নোট দেয়ার এখতিয়ার কেবল দেওয়ানী আদালতের ছিল। নতুন আইনে প্রতারণামূলক বা জাল দলিল প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট যেকোনো কর্তৃপক্ষকে (যেমন সাবরেজিস্ট্রার) সংশ্লিষ্ট নথি বা রেজিস্টারে নোট দেওয়ার আদেশ প্রদান করতে পারবেন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (ধারা ৬)। এতে বিচারপ্রার্থীদের ভোগান্তি কমবে। ফৌজদারি আদালতের মাধ্যমেই দলিল বাতিল সম্পর্কিত যাবতীয় প্রতিকার পাওয়া যাবে।
৪. দলিলের সংজ্ঞা:
এই আইনে দলিল বলতে সাবরেজিস্টার অফিসে রেজিষ্ট্রিকৃত দলিল, খতিয়ান, পর্চাসহ ভূমি বিষয়ক সকল কাগজপত্রই দলিল হিসেবে গণ্য হবে ( ধারা ২(৫))
ফলে ‘খতিয়ানের’ প্রতারণামূলক লিখনের বিষয়ে জেলা প্রশাসক/ এসি ল্যান্ডদের নির্দেশ দিতে পারবে আদালত।
৫. ভূমির দখল উদ্ধার:
দেওয়ানী আদালত কোন পক্ষের আবেদনে বা স্বেচ্ছায় কোন জমির দখল উদ্ধারের দায়িত্ব এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটকে দিতে পারবেন ( ধারা ৮(৭))। ফলে বিনা খরচায় দখল উদ্ধারের একটা সুযোগ তৈরি হবে। জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটও আদেশের মাধ্যমে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটকে নির্দেশ প্রদান করতে পারবেন কোন পক্ষের অনুকূলে দখল উদ্ধারের (ধারা ২০)।
৬. আদালতের উপর চাপ:
দেওয়ানি আদালতে মামলার চাপ কমবে এবং জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের ওপর চাপ বাড়বে। দলিল/খতিয়ানকে অকার্যকর করা, জাল/প্রতারণামূলক দলিল/ খতিয়ানের পেছনে দায়ী ব্যক্তিদের সাজা প্রদান করা এবং প্রকৃত হকদার ব্যক্তিকে জমি বুঝিয়ে দেওয়া সবকিছুই হবে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে।
আবার দখল-উদ্ধারের মোকদ্দমাও করতে হবে না দেওয়ানি আদালতে। কারণ এই আইনের ৮ ধারায় এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে ০৩ মাসের মধ্যে বিনাখরচায় দখল-উদ্ধারের প্রতিশ্রুতি দেওয়া আছে। ফলে দেওয়ানি আদালতের কাজ যে কমে আসবে, সেটি বলাই বাহুল্য।
৭. জমির দখল কে রাখতে পারেবন:
এই আইনের ৭ ধারা অনুযায়ী জমি দখলে রাখতে পারবেন
ক) সর্বশেষ হালনাগাদকৃত খতিয়ানের মালিক;
খ) সর্বশেষ হালনাগাদকৃত খতিয়ানের মালিকের উত্তরাধিকার বা মালিক থেকে অধিকারপ্রাপ্ত ব্যাক্তি;
গ) আইন অনুযায়ী সম্পাদিত দলিলের মাধ্যমে অধিকারপ্রাপ্ত ব্যক্তি;
ঘ) আদালতের আদেশে মালিকানা ও দখল অধিকারপ্রাপ্ত ব্যাক্তি।
তবে একই জমির উপর একাধিক দাবিদার বা দলিল থাকে। সেক্ষেত্রে কার, বা কোন দলিলের প্রাধান্য থাকবে সে ব্যাপারে আইনে স্পষ্ট বলা নেই।
৮. ভূমির সীমানা নিয়ে মামলা:
আমাদের দেশে ভূমির সীমানা নিয়ে বিরোধ প্রচুর। মানুষ গায়ের জোরে অন্যের জমি থেকে দখল নিয়ে নেয়। এই আইনে ১০ ধারায় জমির সীমানা বা সীমানা প্রাচীরের ক্ষতিসাধনকে দণ্ডনীয় অপরাধ করা হয়েছে, বিচারের ভার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটকে দেয়া হয়েছে। সুতরাং ভুমির সীমানা নিয়ে মামলা বাড়নে।
৯. থানায় মামলা দায়ের:
নতুন ভূমি আইনে ১৯ ধারায় এই আইনের সকল অপরাধকে আমলযোগ্য করা হয়েছে। এখন বিচারপ্রার্থীরা থানাতেই মামলা দায়ের করতে পারবেন এবং পুলিশ বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার করতে পারবে।
আমাদের দেশে জমি-জমা নিয়ে বিরোধ অনেক। এক্ষেত্রে মানুষ পুলিশের মাধ্যমে যে হয়রানির শিকার হবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
১০. ভূমি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে খতিয়ান/নামজারী ও খাজনায় হস্তান্তরকারীর নাম:
এতদিন কেবল বিক্রয় দলিল রেজিষ্ট্রেশনের ক্ষেত্রে বিধান ছিল, হালনাগাদ খতিয়ান/ নামজারী ও খাজনা খারিজে হস্তান্তরকারীর নাম থাকতে হবে।
নতুন আইনে ধারা ৬ অনুযায়ী হেবাসহ সকল হস্তান্তরের ক্ষেত্রে খতিয়ান/ নামজারি ও খাজনায় হস্তান্তরকারীর নাম থাকার বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে।
১১. মামলার সাক্ষী সুরক্ষা ও ক্ষতিপূরণ প্রদান:
সাক্ষীর সুরক্ষায় (ধারা ২০) ও ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদানে (ধারা ২১) জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট যেকোনো ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারবেন। জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এর এহেন এখতিয়ার আদালতের প্রতি আস্থা তৈরি ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করনে সহায়ক হবে।
উল্লেখ্য যে, জমি থেকে দখলচ্যুত ব্যক্তি দখলচ্যুত হবার ১২ বছরের মধ্যে দখল উদ্ধারের মোকদ্দমা করবেন দেওয়ানী আদালতে( ধারা ২৮, তামাদি আইন, ১৯০৮)। দখলহীন ব্যাক্তি ১২ বছরের মধ্যে মোকদ্দমা না করলে জমিতে তার অধিকার হারান। কিন্তু নতুন আইনে দখলহীন ব্যক্তির দখল উদ্ধারের জন্য কোন সময় বেধে দেয়া হইনি(ধারা ৮)। তাই আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, দখলহীন ব্যক্তি যে কোন সময় দখল উদ্ধারের মোকদ্দমা করতে পারবেন এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে (ধারা ৮)।
আবার, নতুন আইনের ৩ ধারায় বলা আছে, এই আইন অন্যান্য আইনের ব্যত্যয় ঘটাবে না, বরং অতিরিক্ত হবে।
সে হিসেবে তামাদি আইনের ২৮ ধারা এখানে বহাল ও কার্যকরই থাকে।সেক্ষেত্রে দখলহীন হবার ১২ বছর পর দখল উদ্ধারের মোকদ্দমা এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আদালতে দায়ের করা যাবে, এটা বলার সুযোগ নেই।
*মেহরাব হাসান, আইনজীবী, জেলা ও দায়রা জজ আদালত, ঢাকা।
আইনটি পাওয়া যাবে: Click This Link
০৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৫৫
মেহরাব হাসান খান বলেছেন: মানুষ নিজের জন্য কিছু করে না, অন্যের জন্যই এত কাপঝাপ।
২| ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ দুপুর ২:৫৮
সাহাদাত উদরাজী বলেছেন: আইন জেনে কি হবে, সব তো ধনীদের জন্য!
০৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৫৬
মেহরাব হাসান খান বলেছেন: একবার চিন্তা করুন, আইন না থাকলে গরীবদের কি হত!
©somewhere in net ltd.
১| ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১২:৫৫
রাজীব নুর বলেছেন: মানুষের শেষ ঠিকানা সাড়ে তিন হাত মাটি।