নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
১....
আমি অপারেশন থিয়েটারের সামনে বসে আছি।
৪র্থ তলা, মহিলা ও শিশু হাসপাতাল, আব্দুল্লাহপুর। মাঝবয়সী ভদ্রলোক এমাথা থেকে ওমাথা হাঁটছেন।উনার শিশুপুত্র চেয়ারে আমার পাশে বসে আছে। পুত্র ফুঁপিয়ে কাঁদছে।
শব্দ করলে মায়ের অপারেশনে সমস্যা হবে, নার্সের এই কথায় তার কান্নার শব্দ থেমেছে, চোখের পানি দ্বিগুণ হারে পড়ছে।
"বাবু, তোমার নাম কি?"
"রাঈদ, আর আমাকে বাবু বলবে না।আমি স্কুলে যাই, আমার রোল এক।"
"বাহ!আচ্ছা তাহলে বড় ভাই ডাকি। আচ্ছা, বড় ভাই আপনি কাঁদছেন কেন? বড় মানুষের কাঁদতে নেই।"
"ডাক্তার আমার আম্মুর পেট কাটবে আর আমি কাঁদবো না!"
"আমারও বোনের অপারেশন হচ্ছে, আমিতো কাঁদছি না।"
রাঈদ চোখ মুছলো, বেশ কয়েকবার মুছলো। তাতে চোখ থেকে পানি পড়া কমলো না।
রাঈদ আমাকে জিজ্ঞেস করলো,
"কি হয়েছে তোমার বোনের? ও কি মারা যাবে?"
"না, মারা যাবে না। পেটে একটা টিউমার হয়েছে, ডাক্তার ওটা কেটে ফেলে দিবে।"
"ওহ।"
"আমার ফোনে গেম আছে, খেলবে?"
"না, খেলবো না। আমি "আল্লাহ শাফি, আল্লাহ কাফি" পড়বো। আল্লাহ আমার মাকে ভালো করে দিবেন।"
রাঈদ কাঁদতে কাঁদতে তাসবিহ পড়ছে। আমি চুপ করে গেলাম।
একটু পর নার্স বেড়িয়ে এলেন। রাঈদের বাবাকে ডেকে বললেন, যে কোন একজন রোগীকে দেখতে যেতে পারবেন।
রাঈদ কিছু না বলেই ভিতরে চলে গেল। নার্স ভদ্রলোককে ভেতরে যেতে দিলেন না।
রাইদ হাসি মুখে ফিরে এল। আমার কাছে ফোন চেয়ে গেম খেলতে শুরু করলো।
ভদ্রলোকের অস্বস্তি বেড়ে গেল। তিনি বারবার ওয়াশরুমে যাচ্ছেন, আর চোখে-মুখে পানি দিয়ে আসছেন। উনার গালে পানি, না চোখের জল ঠিক বোঝা যাচ্ছে না।
দেড় ঘন্টা চলে গেল। আমার বোনের অপারেশন শেষ। আমি দেখতে যাইনি, ভাইয়া গিয়েছে। আমি চেয়ারেই বসে আছি। বোনকে ৬ ঘন্টা পর কেবিনে শিফট করবে।
ভদ্রলোক আর সহ্য করতে পারলেন না। নার্সকে ডেকে বললেন,"এই যে শুনুন, আমি কি ওকে একটু দেখতে পারি? আমার কেমন যেন লাগছে, কিছুই ভালো লাগছে না।"
নার্স হাসিমুখ উত্তর দিল, "না, পারেন না।"
ভদ্রলোক চেয়ারে বসে কেঁদে ফেললেন। বললেন,"এরা এত নির্দয় কেন? বেছে বেছে পাষাণ মেয়েরাই কেন নার্স হয়! জানেন? যে বার রাইদ হল, আমি প্রথমে ওটি'তে যেতে পারি নাই। আমার মা গিয়েছিল। কি যে খারাপ লেগেছে, আপনাকে বোঝাতে পারবো না। আজকে আরও বেশি খারাপ লাগছে! মনে হচ্ছে, পৃথিবীটা দুলছে।"
"আপনি শান্ত হয়ে বসুন। আমি বুঝতে পারছি।"
"না, আপনি বুঝতে পারছেন না।পারবেনও না।"
২....
চামড়ায় লোম নেই, কালচে শরীর থেকে গন্ধও বের হচ্ছে। এমন হাড্ডিসার কুকুরকে আমরা নেড়ি কুত্তা বলি। এই কুকুরগুলোকে অতি দয়ালু লোকেরাও লাত্থি দিয়ে বলে,"যাহ ভাগ।"
অথচ লোকটা কুকুরটাকে গোসল করাচ্ছে। একটু আশ্চর্য হয়েই জিজ্ঞেস করলাম,"আংকেল, আপনার ঘিন্না লাগছে না?"
"না, লাগছে না। তবে প্রথমে লেগেছিল। এখন লাগে না।"
"কেন?"
"অনেক লম্বা ঘটনা। এখন বলার ধৈর্য্য নাই।"
"এখনই বলুন না। একে গোসল দিতে দিতে বলে ফেলুন।"
"তখন আমি তুখোড় রাজনীতি করি। বুঝতেই পারছ, শত্রুর অভাব নেই। পার্টি মিটিং শেষে মাঝরাতে বাসায় ফিরছিলাম। অন্ধকার গলির মাঝে দুজন লোক আমাকে জোর করে ধরে গলায় ছুড়ি বসিয়ে দিতে চাইল। পাশে থেকে এই কুকুরটাই হয়তো আমাকে বাঁচানোর জন্য তাদের উপর ঝাপিয়ে পরলো। লোক দুটো সুবিধা করতে না পেরে আমাত গায়ে পেট্রোল ঢেলে দিল। একটু দূর থেকে আগুন জ্বালিয়ে দিবে। আমি ধস্তাধস্তি করে ক্লান্ত, গায়ে এক চিমটি শক্তিও নেই। হামাগুড়ি দিয়ে কিছুদূর গেলাম। ওরা আগুন দিয়ে দিল। কুকুরটা তেলের যে রেখা আছে সেটার উপর শুয়ে পরলো। আগুন আমার কাছে আসতে পারলো না, কিন্তু আমার চিৎকারে লোকজন আসতে আসতে কুকুরটার চামড়া পুড়ে গেল।
এটার জন্যই এখনো বেঁচে আছি, বুঝলে!"
৩....
রাজীব নূর ভাই কিছু ছবি শেয়ার করে বলেছেন, দেখুন মন ভালো হয়ে যাবে।
আমি ছবিগুলো দেখলাম, বেশিরভাগই মন খারাপের ছবি।আমি কমেন্ট করলাম, আমার মন বিষন্ন হয়েছে।
রাজীব ভাই ঝটপট উত্তর দিলেন, গল্প লিখুন। বিষন্ন মনে ভালো গল্প লিখা যায়।
আচ্ছা, উনি আমার সিক্রেট জানলেন কিভাবে?
৪....
:রাগ হচ্ছে খুব? আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকো, রাগ কমে যাবে।
:আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকলে রাগ পরে যায়। মন ভালো হয় না।
২০ শে মার্চ, ২০২১ রাত ১১:৩১
মেহরাব হাসান খান বলেছেন: ধন্যবাদ, রাজীব ভাই।
না, বই বের হচ্ছে না।
ইদানীং গল্প লিখি না, তাই ব্লগেও আসি না। চাকরির জন্য পড়াশোনা করার চেষ্টা করছি।
২| ২১ শে মার্চ, ২০২১ রাত ১২:৩২
রাজীব নুর বলেছেন: মাঝে মাঝে লিখবেন। চর্চা অব্যহত রাখবেন। দরকার আছে।
২২ শে মার্চ, ২০২১ বিকাল ৫:৫৫
মেহরাব হাসান খান বলেছেন: চেষ্টা করছি!
৩| ২৩ শে মার্চ, ২০২১ রাত ৯:০০
আহমেদ জী এস বলেছেন: মেহরাব হাসান খান,
মানুষের মনঃস্তত্ত্ব বোঝা ভার। একই ঘটনায় দু'জন ভিন্ন মানুষ দু রকমের প্রতিক্রিয়া দেখায়।
গল্পের ভেতরে জোরালো উপাদান থাকলেও লেখাটা তেমন জোরের হয়নি। লিখতে থাকুন, ধীরে সুস্থ্যে। লেখার পরে বারবার পড়ুন নিজেই। কাঁটাচেরা করুন।
২৪ শে মার্চ, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:২২
মেহরাব হাসান খান বলেছেন: জনাব, পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
এগুলো একটাও গল্প না। ঘটনা আরকি!
চেষ্টা করছি, একদিন ভালো লিখতেও পারি।
©somewhere in net ltd.
১| ২০ শে মার্চ, ২০২১ বিকাল ৫:০৩
রাজীব নুর বলেছেন: আপনার লেখা আমি পছন্দ করি।
আপনি গল্প ভালো লিখেন।
এ বছর আপনার কি কোনো বই বের হচ্ছে? সামুতে এত কম দেখি কেন আপনাকে?