নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

A learning Advocate!

মেহরাব হাসান খান

আমি H2O,,,,Solid,Liquid & Gas.How do you deserve me?

মেহরাব হাসান খান › বিস্তারিত পোস্টঃ

দ্বৈরথ

০৮ ই মে, ২০২০ দুপুর ২:৩৫


মিকির মন ভালো নেই! এটার ইংরেজি কি হবে?
Miki feels bad!, নাকি Miki is sad! Miki's mind is upset! এটা হবে?
আসলে কোনটার মাঝেই অত জোর নেই। এখানেই ইংরেজি বাংলা ভাষার কাছে হেরে যায়৷ বাংলা ভাষা অনেকটাই জোরালো; আবেগ, রাগ, অভিমান, ভালোবাসা অত্যন্ত স্পষ্ট-জোরালোভাবে প্রকাশ করে।

তবে আজ মিকির মন সত্যিই ভীষণ খারাপ। ও দরজা বন্ধ করে বসে আছে। দুপুর থেকে কিছু খায়ওনি। নাসির সাহেব কি করবেন ভেবে পান না।
বিয়েতো কত মেয়েরই ভাঙে, তাই বলে ঘরের দরজা বন্ধ করে বসে থাকতে হবে?

মিকির ঘর থেকে গান ভেসে আসে,,,,,
"One day I am gonna fly away
One day when heaven calls my name
I lay down, I close my eyes at night
I can see moon and light....."
মন খারাপ করা গানের সুর।নাসির সাহেব হাসফাস করেন। মেয়ে কষ্টের গান শুনবে কেন?

মেয়েকে কয়েকটি কথা বলা উচিত, বলা যাচ্ছে না। তিনি কয়েকবার দরজায় টোকা দিয়েছেন। মিকি বিরক্তি নিয়ে বলেছে,"বাবা, বিরক্ত করবে না তো। আমার মন খারাপ না।মাথা ধরেছে।"
"মারে, বাইরে আয়। দু'একটা কথা বলি।বিয়েতো ছেলে খেলা না, একশ কথা হবে, একশ ঘর আসবে, তারপর বিয়ে হবে!বিয়েতো তোর একা ভাঙে না, সব মেয়েরই ভাঙে। এতে নাওয়া-খাওয়া বন্ধ করে দেবার কি আছে? মারে, বাইরে আয়, দুইটা ভাত মুখে দে।"
"বাবা, চুপ কর। আমার মত সব মেয়ের বিয়ের তারিখ ঠিক হওয়ার পর ভাঙে না। তাও চার চার বার!"

নাসির সাহেব ভাবেন, ঠিকই তো। চারবার মিকির বিয়ের তারিখ ঠিক হয়ে ভেঙে গেল! এমন কি সবার হয়?
উকালতি পড়ে মেয়ের লজিক পরিষ্কার।
নাসির সাহেব মাশুক, আমান, প্রতীতী, বাবুল, মেহরাব কারও নাম্বার জানেন না। জানলে এদের কল দিতেন, এরাই পারবে মেয়ের অভিমান ভাঙাতে। মেয়ে আবার বন্ধু আত্মপ্রাণ!
এরা প্রায়ই বাসায় আসে, হইচই করে, বাইরে ঘুরতে যায়। বেশিরভাগই ঢাকার এই জায়গা ঐ জায়গায় কাচ্চি খেতে যায়। নাসির সাহেব প্রায়ই ওদের সাথে যান, উনি কাচ্চি খেয়ে মজা পান না। উনার কাছে মনে হয়, একগাদা তেল, দুই পিস মাংস চালের মধ্যে ছেড়ে নাড়াচাড়া দেয়া হয়েছে। উনি মুখ কালো করে অখাদ্য গিলতে থাকেন। ছেলে মেয়েগুলা আগ্রহ নিয়ে কাচ্চি খায়, দেখতেও ভালো লাগে।

উনার যে বয়স তাতে তার উচিত আনন্দে থাকা। তা হয় না, কোন কারণে মিকি বা মিকির বন্ধুরা তার সঙ্গ পছন্দ করে না৷ কিছুক্ষণ গল্প করেই ছটফট করে, তারপর মিকি সবাইকে ঘরে নিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়। তিনি মন খারাপ করেন, কিছুই বলেন না। মা হারা মেয়েকে তো আর বকা দেয়া যায় না!

মিকিকে বড় করতে নাসির সাহেবের অত কষ্ট হয় নাই। মেয়ে নিজের মনে সারাদিন খেলেছে, খাওয়া নিয়েও কোন ঝামেলা করতো না। উনি নিজেই রান্না করতেন, মেয়ে আগ্রহ করে খেত। উনি খেতে পারতেন না, লবণ বেশি, সিদ্ধ হয় নাই, নয়তো মশলা বেশি! কি ভয়াবহ সময় গেছে, এখন অবশ্য তিনি ভালো রান্না করেন!

মিকি অবশ্য মাকে খুব পছন্দ করতো। শাহানা ছোট্ট মিকিকেও খুব মারতেন। অকারণেই মারতেন।
তখন নাসির উদ্দিন সাহেব ঢাকা বার'র কুখ্যাত ডিভোর্স লইয়ার। সারাদিন ব্যস্ত থাকেন। ছুটি বলতেই নাই!
শহরের মানুষ যত দ্রুত বিয়ে করে তার চেয়ে হুটহাট তালাকের জন্য পাগল হয়ে যায়!
মিকি বাবাকে অত কাছে পায়নি বললেই চলে।

সেদিন রাতে তিনি অনেক ব্যস্ত। দেশ বরেণ্য লেখক হুমায়ুন আহমেদ আর গুলকেতিনের ডিভোর্স ফাইল করবেন। সারা দেশ এইটা নিয়ে আলোচনা। হেলাফেলা করার সুযোগ। তিনি মনোযোগ দিয়েই লিখছেন। ছোট্ট মিকি তখন মাত্র স্কুলে যাওয়া শুরু করেছে। সামনের দাঁত দুটো একটু বেশিই বড়, সমবয়সীদের চাইতে বেশ লম্বা, বড়সড় চোখদুটোতে রাজ্যের বিস্ময়, টুলটুলে গাল আর কুটকুট করে কথা বলা মিকির প্রথম দিনই নাম হয়ে গেল মিকি মাউস/জেরি। মিকি রাতে বাবাকে আগ্রহ করে স্কুলের গল্প বলতে এলো, নাসির উদ্দিন ওকে থামিয়ে মায়ের কাছে পাঠিয়ে দিলেন। শাহানার কাছে গিয়েও মিকি একটা চড় খেল।
নাসির সাহেব বসার ঘর থেকেও চড়ের শুব্দ শুনলেন। মিকি একটুও কাঁদলো না। ও সুর করে গান গেয়ে একা একাই খেলতে লাগলো
"ওপেনটি বাইস্কোপ, নাইন টেন টেসস্কোপ
সুলতানা বিবিয়ানা, সাহেব বাবুর বৈঠকখানা
রাজ বাড়িতে গিয়েছি, পান সুপারি খেয়েছি
পানের আগায় মরিচ বাটা
ইশকুরুপের চাবি আটা..."

তিনি আস্তেধীরে লিখা শেষ করলেন। ভাবলেন এখনি শাহানা গিয়ে কয়েকটা কড়া কথা শুনিয়ে দিবেন। গিয়ে দেখলেন মিকি মায়ের কোলে মাথা রেখে গুটি পাকিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। শাহানা মুখ কালো করে বসে আছে।
শাহানা শান্তভাবে তাকে বললেন,"আমি তোমার সাথে আর থাকছি না। দেখ, এটা দুজনের জন্যই ভালো। মানুষ হিসেবে তুমি প্রথম শ্রেণির, কিন্ত আমি আর তোমাকে সহ্য করতে পারছি না।আমাকে মাফ করে দিও।"
"কি এমন হয়েছে, শাহানা!তুমি মিকিকে শুধুশুধু মার। আচ্ছা, ঠিক আছে। তুমি কিছুদিন বাবার বাড়ি থেকে ঘুরে এসো।দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে।"
শাহানা তখন ডিভোর্স পেপার এগিয়ে দিলেন।
"দেখ, তুমি বাড়াবাড়ি করো না। সাইন করে দাও। না করলে কোর্টে যেতে হবে, আর মামলা সাজিয়েছেন বিখ্যাত ক্রিমিনাল লইয়ার সোহেল রানা। তোমাকে মাতাল, দুশ্চরিত্র, বহুগামী প্রমাণ করার এতগুলো সাক্ষ্য প্রমাণ তৈরি করেছেন। একবার ভাব, বড় হয়ে তোমার মেয়ে এগুলা শুনলে কষ্ট পাবে না? আমিও চাইনা তুমি এই অসম্মানের মধ্যে দিয়ে যাও।"
নাসির সাহেব কি বলবেন বুঝতে পারছিলেন না। তিনি সাইন করলেন।

শাহানা মিকিকে ডেকে তুললেন, বললেন," মিকি, আমি আর তোমার বাবা আর একসাথে থাকছি না। আমি তোমার গুলজার আঙ্কেলকে বিয়ে করবো। তুমি ব্যাগ গুছিয়ে নাও, আমরা এখনই এবাড়ি ছেড়ে চলে যাবো।"
মিকির চোখে রাজ্যের বিস্ময়। মিকি শিং ঝুটি দুলিয়ে বাবার কাছে এলো। বাবার হাত ধরে বললো,"বাবা, তুমি শিং ঝুটি করতে পারো? তুমি যদি আমার সাথে গল্প কর, তাহলে আমি তোমার সাথে থেকে যাবো।"
নাসির সাহেব মেয়ের কথায় আশ্চর্য হলেন। মেয়ে স্কুলে যায়, এই মেয়েকে নিয়ে তিনি কখনো আহ্লাদ করেননি, এখনকার বাবা যেমনটি করে। কখনো মেয়ের হাত ধরে দু'কদম হেটেছেন কিনা উনার মনে নেই। বাবার প্রতি মেয়ের এহেন ভালোবাসা দেখেই হয়তো তিনি কেঁদে ফেললেন।
শাহানা মেয়ের গালে এক চড় দিলেন।
"দেখ, মিকি তুমি বুঝতে পারছো না। তোমার বাবা কাজ পাগল মানুষ, সারাদিন টাকার পেছনে ছুটেন। তোমার বাবা কোর্টে গিয়েই ভুলে যাবেন, তুমি বাসায় একা আছ!তুমি যাবে আমার সাথে।"
মিকি রাজি হল না। শাহানা এক কাপড়ে বাড়ি ছাড়লেন। কয়েকদিন পরই শাহানা আর নাসির সাহেবের বন্ধু গুলজার বিয়ে করলেন।

নাসির সাহেব উকালতি ছেড়ে দিলেন। টাকা পয়সার অভাব উনার কোন সময় ছিল না, সময়ের অভাব ছিল!
মেয়ের জন্য পুরোটা সময় সব বরাদ্দ করলেন। মিকিও খুশি! মিকিকে নিয়ে এখানে সেখানে বেড়াতে যান, মিকি সারাপথ কথার ফুলঝুরি ছোটায়। উনার ভালো লাগে। রাতে ঘুম পাড়াতে মিকিকে গল্প শোনাতে হয়,মিকি এক গল্প দুইবার শোনে না। নাসির সাহেব বানিয়ে বানিয়ে গল্প বলতে বলতে ক্লান্ত হয়ে নিজেই ঘুমিয়ে পড়েন! মিকি জেগে থাকে, বাবার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।
নাসির সাহেব চোখ মেলে দেখেন তিনি ছোট্ট মিকির কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছেন। মিকি আদুরে গলায় বলে,"বাবা, তুমি ঘুমাও। আমি চুলে হাত বুলিয়ে দেই।"
তিনি শান্তিতে ঘুমিয়ে পরেন।

তবে একটা ঝামেলা হল, মিকি কিছুতেই স্কুলে যাবে না। নাসির সাহেব মেয়ের জানালার পাশে বসে থাকতেন। মিকি একটু পরপর তাকিয়ে দেখতো। বাবাকে না দেখলেই অস্থির হয়ে যেত, কান্নাকাটি জুড়ে দিত।
নাসির সাহেব স্কুলের পুরো সময়টা অন্যান্য মায়েদের সাথে বসে থাকতেন। প্রথমে সবাই একটু অস্বস্তিবোধ করলেও পরে ঠিক হয়ে যায়।
মহিলারা আগ্রহ করে গল্প করতে আসেন, তিনি কিছুতেই গল্প জমাতে পারেন না। মহিলাদের গল্পের পুরোটা জুড়েই গয়না,শাড়ি, কার স্বামী কত খারাপ, কার স্বামী কাকে আদর করেন, কে কত কষ্ট করে সংসার করছেন এগুলো থাকে।
কয়েকজন অতিউৎসাহী তাকে জিজ্ঞেস করেছে, মিকির মা তাকে ছেড়ে গেল কেন? কারণটা তো তিনি নিজেও জানেন না। কি বলবেন ভেবে পান না? শুধু হাসেন। শেষে তাকে কেউ ঘাটাতেন না। তাকে অগ্রাহ্য করে অশ্লীল গল্প চালিয়ে যেতেন!

একদিন কাঁদতে কাঁদতে স্কুল ক্লাস থেকে বেড়িয়ে এল। বাসায় না এসে কিছুই বলবে না। বাসায় এসে মিকি স্বাভাবিক, যেন কিছুই হয়নি। তবে ঘোষণা দিল আর স্কুলে যাবে না।
তিনি মেয়ের জন্য হোম এডুকেশন'র ব্যবস্থা করলেন। মিকি বাসায় পড়তো, কেবল স্কুলে যেত পরিক্ষা দেবার জন্য। মিকি ছাত্রী ভালো, স্কুল কোনদিন আপত্তি করেনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে মিকি আস্তে আস্তে দূরে সরে গেল। বন্ধু জুটে গেল অনেক মেহরাব, আমান, প্রতীতী, বাবুল, মাশুক। তিনি বন্ধুদের সাথে মিশার চেষ্টা করেছেন, এখনো করছেন। ঠিক পারছেন না। এই ছেলেগুলার চলা-বলা ঠিক নেই, কিন্ত এদের কাজের পেছনে শক্ত যুক্তি আছে৷ একটু এলেমেলো, একটু দিশেহারা কিন্তু বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে।

মিকি অনেক লম্বা, এভারেজ ছেলেদের চেয়েও কিছুটা লম্বা, গায়ের রং অত উজ্জ্বল না। ঐত আমরা এই রঙটাকে শ্যামলা বলি।সামনের দুটো দাঁত একটু বড়, যদিও এই দাঁতদুটো ওর সৌন্দর্য মাঝেমধ্যেই বাড়িয়ে দেয়!
নাসির সাহেব ভেবেছিলেন এই মেয়ের অত পাত্র পাওয়া যাবে না। বাইট্টা ছেলেরা, লম্বা মেয়ে দেখলেই পালিয়ে যায়।
তা হল না, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া শুরুতেই ওর বিয়ের ঘর আসতে শুরু হল। পাত্র আসে দেখে পছন্দ করে ফেলে, আন্টি পড়িয়ে যায়। বিয়ের তারিখ ঠিক করার আগে বিয়ে ভেঙে যায়! কেন ভেঙে দেয়, পাত্রপক্ষ বলে না। মিকি খুব মন খারাপ করে, খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দেয়।

এবার ঘটনা আরও বিচ্ছিরি। পাত্রপক্ষ এবার দেখতে এসে আন্টি পড়িয়ে গেছে। কাল গায়ে হলুদ,পরের দিন বিয়ে। ছেলের নাম শাফায়াত, অতি ভালো ছেলে। মিচকা শয়তান ছেলেরা বলে, মায়ের পছন্দই তার পছন্দ।পরে এই ছেলেরাই মায়ের পছন্দের দোহায় দিয়ে বৌ পিটায়। এই তা বলেনি, সে নিজেই মিকিকে পছন্দের কথা বলেছে। ছেলে আমেরিকায় ব্যারিস্টারি পড়ছে৷ পড়াশোনা শেষে ওখানেই সেটেল করবে। দেশে বিয়ে করতে এসেছে, বিয়ে করেই চলে যাবে। এই জন্য তাড়াতাড়ি বিয়ে!

নাসির সাহেব শাহানাকে দাওয়াত দিতে গেলেন। হাজার হলেও মেয়ের মা, মেয়ের বিয়ে হবে তাকে জানানো হবে না?
শাহানা বনানী থাকে। তিনি বেলি ফুল, কাচা আম আর চালতার আচার নিয়ে শাহানার সাথে দেখা করতে গেলেন। শাহানা এগুলা খুব পছন্দ করে, আর পছন্দ করে ডেওয়া ফল। শহরে এই ফল পাওয়া যায় না। গুলজারও তার বন্ধু মানুষ, এতে অসুবিধার কিছু নাই।ওবাড়িতে তিনি যেতেই পারেন!
বনানী বি-ব্লকের সবচেয়ে সুন্দর বাসা, নাম শাহানা প্যালেস। নাসির সাহেব আগেও এই বাসার সামনে এসেছেন। কখনো ভেতরে যাননি।

বাসায় ঢুকতে গিয়ে কেমন অস্বস্তি লাগলো। কয়েকবার মনে হল, ঠিক হচ্ছে না। তবুও তিনি ভেতরে ঢুকলেন। মেয়ের মায়ের একটা হক আছে না?
তিনি সোফায় আরাম করে বসলেন।
:তোমার ম্যাডামকে বল, মিকির বাবা আসছেন।
পিচ্ছি কাজের ছেলেটা ঘাড় কাত করে চলে গেল। দ্রুতই ফিরে এসে বললো,"ম্যাডাম, আইতাছে। আপনেরে বসতে কইছে।"
অনেক সময় কেটে গেল। শাহান নিচে নামলো না।
নাসির সাহেব সব পুরনো ম্যাগাজিন পড়ে ফেললেন। প্রায় দুই ঘন্টা কেটে গেল।
পিচ্চিটা আবার এসে খবর দিল,"ম্যাডাম বাসায় নাই। আপনে কতক্ষণ বইসা থাকবেন? বাড়িত যান। আর শুনেন, ম্যাডাম কইছে আপনে আর এই বাড়ির সামনে ঘুরাঘুরি করবেন না।"
নাসির সাহেব কথা না বাড়িয়ে বের হয়ে এলেন।

তিনি বাসায় ফিরেই ভয়াবহ খবর শুনলেন।
এই বিয়ে ভেঙে গেছে! কে বা কারা নাকি শাফায়াতকে চিঠি লিখেছে, মিকিকে বিয়ে না করতে। চিঠির বিষয়বস্তু হল, মিকি খারাপ মেয়ে, ওর মা ভেগে গেছে, ওকে কিছুতেই বিয়ে করা যাবে না। মিকি সারাদিন, আধরাত বাইরে বাইরে ঘুরে, মিকির ছেলে বন্ধুর অভাব নাই, এই মেয়ের চরিত্র অত্যন্ত খারাপ। আর কথায় আছে
"গাছ গুণে গুটা,
বাপ গুণে ব্যাটা,
গাই গুণে ঘি,
মা গুণে ঝি।"
যে মেয়ের মা খারাপ তার ভালো হবার প্রশ্নই আসে না। চিঠিতে বলা আছে, কথা বিশ্বাস না করলে নাকি ছবিও দেয়া যাবে। পাত্রপক্ষ পিছিয়ে গেছ, এই বিয়ে হবে না!
এরপর থেকেই মিকির মন খারাপ।

সন্ধ্যায় মিকির ফুপু, আর ছোট চাচা মিকিকে নিতে এলেন। কিছুই না বলে তারা মিকিকে নিয়ে চলে গেল।

রাত আটটার দিকে নাসির সাহেবকে নিতে গাড়ি এলে।
আশ্চর্য! মিকি কনে সেজে বসে আছে। কি সুন্দরী লাগছে মেয়েটাকে! নাসির সাহেব চোখ ফিরিয়ে নিলেন,পাছে নজর লেগে যায়। শাহানা মিকির কাছে বসে আছে। মিকির ওড়না, চুল, গয়না ঠিক করে দিচ্ছেন।
হুটহাট বিয়ে হয়ে গেল।সব শেষ করতে অনেক রাত হয়ে গেল। তবে শাফায়াত একরোখা, সে আজকেই মিকিকে তাদের বাড়ি নিয়ে যাবে। সে মিকির বাবা-মার সাথে কথা বলতে চায়।

বেশ সাজানো ঘর। সাজানো হয়েছিল মিকির বাসরের জন্য, মিকিরা তো চলেই যাচ্ছে। বিছানায় লাল চাদরে সাদা বেলি ফুল দিয়ে লিখা M+S! শাহানা বিছানায় বসে আছেন। নাসির সাহেব দরজার পাশে সোফায় বসে আছেন। রুমে ফ্যান চলার শব্দ ছাড়া আর কোন কোন শব্দ নেই।

শাফায়াত মিকি রুমে এল। শাফায়াত নাসির সাহেবের হাত ধরে বলল,"বাবা, আগের বিয়ে তিনটি আপনিই ভেঙে দিয়েছেন! ভালোই করেছেন, নইলে আমার আর মিকির বিয়ে হত! আপনাকে ধন্যবাদ, হাহা....। আমি আপনার মেয়েকে অনেক ভালোবাসি, আমি কখনো তার অমর্যাদা করবো না, তাকে কষ্ট দিব না।মিকি কিছুতেই বিয়ে করবে না, আমরা......"
নাসির সাহেব কেঁদে ফেললেন। বললেন,"আমার মাতৃহীন মেয়ে, আমি হয়তো ভালোভাবে বড়ও করতে পারিনি। তাই ভেবেছি কেন শুধুশুধু অন্যের বাড়ি গিয়ে গঞ্জনা সইবে, কষ্ট করবে? আমার কাছেই থাকুক, আমি সারাজীবন ওকে আগলে রাখবো।মেয়ে আমার বড্ড অগোছালো, অভিমানী; সংসারের কাজ কিছুই মনে হয় জানে না।তাই....."

শাহানা চিৎকার করে উঠলো," আসলে কি তাই? আসল কথা হল, মেয়েটার বিয়ে হয়ে গেলে তুমি একা হয়ে যেতে। এ জন্য মেয়ের নামে এমন বাজে চিঠি লিখতে। যাতে মেয়ের বিয়ে না হয়!তোমার লজ্জা করে না? ভাগ্যিস মিকির কাকা,ফুপু তোমার হাতের লিখা মিলিয়েছে! আর শাফায়াতদের সিসিটিভিতে চিঠি দিয়ে আসার সময়ে তোমাকে দেখা গেছে!ছিঃছিঃতুমি এত নীচ!"

নাসির সাহেব মাথা নিচু করে রইলেন। মিকি কাঁদতে কাঁদতে বাবার চুলে পিঠে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। শাহানা মেয়ের কাছে এলেন, মেয়ের কাধে হাত রাখতেই মিকি বললো," মা, যখন চাও ছেড়ে চলে যাবে, আবার যখন চাও আদর করতে আসবে, সব ক্ষমতা কি শুধু তোমারই। আমার কিছুই নাই? তুমি আমাকে স্পর্শ করবে না। তখন সবার সামনে বলতে পারিনি এখন বলছি, তুমি এখন চলে যাও আর কখনো আমাদের কাছে আসবে না।বাবাই আমার মা।"

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই মে, ২০২০ বিকাল ৪:২৭

রাজীব নুর বলেছেন: সহজ সরল জীবনের গল্প। কোনো ভান নেই। ভনিতা নেই।
ভাষা প্রাঞ্জল।

দ্বৈরথ নামে হুমায়ূন আহমেদের একটা বই পড়েছিলাম। আপনিও নিশ্চয়ই পড়েছেন।

২৬ শে মে, ২০২০ সকাল ১০:৫৭

মেহরাব হাসান খান বলেছেন: হ্যা, দ্বৈরথ পড়েছিলাম। কেমন আছেন? ইদ নিশ্চয়ই ভালো কেটেছে!

২| ০৮ ই মে, ২০২০ রাত ৮:১০

নেওয়াজ আলি বলেছেন: গল্প পড়েই সময় কাটে। সুন্দর লেখা ।

২৬ শে মে, ২০২০ সকাল ১০:৫৭

মেহরাব হাসান খান বলেছেন: চেষ্টা করছি আরকি। ইদ মোবারক!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.