নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
জামান সাহেব স্ত্রীর হাত ধরে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলেন। এখানে থেকে এঁকেবেঁকে বাজারের দিকে চলে যাওয়া পথ দেখা গেলেও আশার আলো দেখা যায়না। আয়েশা বেগম রিনরিনে গলায় প্রশ্ন করলেন,"আমরা যাবো কই? কয়েকটা শাড়ি নিয়ে নিতাম। আমি কি পড়মু? আমার হাতটা ছাড়েন, আহ হা!আমি হাতে ব্যাথা পাই। আপনেতো চশমাও আনেন নাই!চোখে কিছু দেখেন নাকি?আপনেতো চশমা ছাড়া কানা!"
জামান সাহেব হাত ছাড়েননি। প্রায় টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছেন।
আয়েশা বেগম বিদ্রোহ করে উঠেন,"আপনে আমারে কই নিয়া যান? আমি যাবো না। এই বাড়ি আমার, পুলাপান আমার, এই বাড়ির সব গাছ আমি লাগাইছি, পুলাপানসব বড় আম্মা বলতে পাগল;এরা আপনেরও ভাই-বইন, আমি এই বাড়ি ছাইড়া যাবো না।আমার নারকেল, সুপারি মাইনশে নিবো, গাছগুলা গরু-ছাগলে নষ্ট করবো!আমি এই বাড়ি ছাইড়া যাবো না।"
জামান সাহেব স্ত্রীর গালে চড় দেন। আয়েশা বেগম কোন উচ্চবাচ্য করেন না। স্বামীর পিছনে হাটতে থাকেন।
আশ্চর্য! অনেক বছর আগে জামান-আয়েশা এই গ্রামে এসেছিলেন। এই পথে এসে, পিছনের দাঁড়িয়ে তিরস্কার করতে থাকা প্রাসাদ তৈরি করেছিলেন। আজ তিলে তিলে গড়া আধাপাকা প্রাসাদ পেছনে ফেলে যাচ্ছেন!
অবশ্য যখন এসেছিলেন তখন হাত খালি ছিল না,আয়েশা বেগমের দুইহাত শক্ত করে ধরে রেখেছিল দুই দেবর শরীফ, সজীব। জামান সাহেবের কোলে ছিল পিচ্ছি বোন দিলরুবা। দিলরুবা বারবার বলছিল,"আম্মা, ও আম্মা, খিদা লাগছে। ভাত দেও।খাওনের কিছু না থাকলে, লবণ ছিটা আর কাগজী লেম্বু চিইপ্পা দিও।আম্মা......."
আয়েশার খুব ভালো লাগতো, দেবর-ননদরা তাকে আম্মা ডাকতো। তারচেয়েও বেশি ভালো লাগলো মানুষটারে, সৎ ভাই-বোনদের কেউ এত আদর করে নাকি?
শরীফ, সজীব জমজ আর রূবার বয়স কত মনে নাই। দুজনের জীবন এদের নিয়েই চলছিল।
আয়েশা বেগম বাপের বাড়ির ওয়ারিশ এনে এই বাড়ি ভিটা কিনেছিলেন, জামান সাহেবের বাপের অত সম্পদ ছিল না। তবে বৌ আর দেনা ছিল অনেক। যেখানে গিয়েছেন কাজী নজরুলের মত বিয়ে করে এসেছেন। তবে আশার কথা, প্রথম পক্ষ আর শেষ পক্ষ ছাড়া মাঝের তিন পক্ষের কোন সন্তান হয় নাই। প্রথম পক্ষের সন্তান জামান সাহেব একাই, শেষ পক্ষে তিনজন- শরীফ,সজীব আর দিলরূবা!
জামান সাহেবের বাবা মারা যাবার পর তার দেনা শোধ করতেই বাড়ি ভিটা, জমি সব চলে গেল।
জামান-আয়েশা ওদের নিয়ে ঐগ্রাম ছেড়ে কাঠালীপাড়া গ্রামে চলে এলেন। পাছে ঐ এলাকায় ভাইবোনকে বাবার কৃতকর্মের অপবাদ সহ্য করতে হয়।
জামান সাহেব কোটেরচর মাদ্রাসায় শিক্ষকতার চাকরি নিলেন। বিকালে বাড়ি ফিরেই ছাত্র পড়াতেন। গ্রামে গরীব মানুষ টিউশনির টাকা না দিলেও শাকসবজী, মাছ, ফল পাঠিয়ে দিত অনেক। তাদের টাকা নাই, দিবে কোথা থেকে?
মাগরিবের নামাজ পড়েই মাঠে যেতেন, ক্ষেত চাষ করতেন। দিনের বেলা বলদ ধার পাওয়া যায় না, সবাই নিজের জমি চাষ করে। তাই তিনি রাতে চাষ করেন। রাতে ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফিরেই ঘুম পায়, তিনি ঘুমিয়ে পড়েন না। দুই ভাইকে পড়াতে বসেন। বোন রুবা সারাদিন ঘুমায়, রাতে জেগে থাকে। তিনি বোনকে কোলে নিয়ে ভাইদের পড়াতে বসেন!
রাত যত গভীর হয় মাস্টার বাড়ি থেকে পড়ার আওয়াজ তত স্পষ্ট হয়....
"পাঁচ এক্কে পাঁচ
পাঁচ দুগুনে দশ
তিন পাঁচে পনেরো..... "
"Long time ago there lived an old
farmer. He had three sons. They used
to quarrel always......."
শব্দ করে পড়তে পড়তে দুই ভাই ঘুমে ঢলে পড়ে, আয়েশা ভাত নিয়ে বসে ঝিমান।কুপী বাতির তেল শেষ হয়ে যায়, শরীফের নামতা, সজীবের গল্প মুখস্থ হয় না। জামান সাহেব কাউকে ঘুমাতে দেন না।
আয়েশা সারাদিন ব্যস্ত থাকেন। নতুন বাড়ি ভিটার মাটি থাকে কাঠফাটা, রূক্ষ!একে পরম যত্নে বশে আনতে হয়।এই জন্য যত পার গাছ লাগাও।
আয়েশা রান্নাবান্না ছাড়া বাকি সময়টা গাছ লাগিয়ে কাটান। আম গাছ, কাঠাল গাছ, জাম গাছ, বড়ই গাছ, পেয়ারা গাছ, নারকেল গাছ, সুপারি গাছ, জাম্বুরাগাছ, কি নেই বাড়িতে! বাড়ির চারপাশে তিনি সারি সারি সুপারি গাছ লাগিয়েছেন, ফাকে ফাকে নারিকেলগাছ।কোন কারণে এই বাড়িতে বেল গাছ হচ্ছে না। আয়েশা তিনবার লাগিয়েছেন, তিনবারই মারা গেছে!কেন?
বসত বাড়িতে লিচু গাছ, বাশ ঝাড় লাগানো নিষেধ। এতে বংশ নির্বংশ হয়। অথচ বাড়ির পিছনে উটকো বাশ, লিচুর চারা গজিয়ে উঠে!
আয়েশা বেগম মুরগী পালেন। তিনটা মুরগী দুইটা ডিম পাড়ে। দুইটা ডিম দুই ভাইকে সিদ্ধ করে দেন। তিনটা মুরগী একসাথে ডিম পাড়ে না, তাহলে জামান সাহেবকেও দিতে পারেন। এ নিয়ে তার আফসোসের সীমা নেই!
আয়েশা বেগমের খুব ইচ্ছে তার মাকে এই বাড়ি নিয়ে আসেন। মায়ের হাতে সব গাছ হয়, মরে না। আরেকটি ইচ্ছে আছে, জামান সাহেবকে জানাতে চান না। তিনি মায়ের কাছে একটা দুধের গাই চাইবেন। মানুষটা এত কষ্ট করে, একটু দুধ খাওয়াতে পারলে মন্দ কি!
মায়ের সাথে আরেকটা বিষয়ে আলোচনা করতে হবে, মায়া বড়ি খাইলে কি সত্যিই পুলাপান হয় না? তারতো পুলাপান আছেই,শরীফ, সজীব, রুবা! আর দিয়া কি হইব?
সময় নদীর স্রোত অবিরাম বয়ে যায়। বাড়ির পাশে তালগাছ ছাড়া সব গাছে ফল আসে। কথায় আছে 'যে লাগায় তাল, সে খায় বাল'। আয়েশা বেগম জীবিত থাকাকালে নিশ্চয়ই তালগাছে তাল হবে না!
শরীফ,সজীব কলেজে পড়ে, আনন্দ মোহন কলেজ। রূবা স্কুলে যাওয়া শুরু করেছে অনেক দিন আগে। আয়েশা কেউ বেড়াতে এলে গল্প করে তার ছেলে দুইটা ম্যাট্রিকে স্ট্যান করছে। কিছুটা আফসোস করে, এখন তারা আর মা ডাকে না। অবশ্য দেবর মা ডাকছে এটা লজ্জারও, এজন্য অত খারাপও লাগে না। দুই পোলারে না দেখে আয়েশার খারাপ লাগে, কিন্তু পড়াশোনার গুরুত্ব সে বোঝে। সে নিজেও ক্লাস সেভেন পাস!
যেদিন জামান সাহেবকে পোয়া পিঠা, সেমাই পিঠা, ছিটা পিঠা খেতে দেয়; তিনি বলেন,"বউ,কিছু পিঠা পাতিলায় বাইন্ধা দেও। শরীফ,সজীবরে দিয়া আসি। ওরা মেছে থাকে, কি খায়!না খায়!"
"আইচ্ছা, আপনে গোসল দিয়া আসেন। আমি একটা মুরগী আর চাইট্টা পোলাও রাইন্ধা দেই।"
আয়েশার খুব ভালো লাগে, মানুষটা ভালো খাবার একা খেতে পারেন না। দুই ভাইকে দেওয়া চাই-ই চাই।
জামান সাহেব পাতিলে পিঠা, পোলাও, মুরগী নিয়ে হাটা দিবেন, দেখেন আয়েশা নতুন শাড়ি পরে দাঁড়িয়ে আছেন।
"বউ, তুই যাস কই?"
"আমি আপনের সাথে মমিসিং যাবো। দুই পোলার জন্য মন পুড়ে।"
"কি কও, আবার চিন্তা কর। অনেকটা পথ, ব্রহ্মপুত্র পাড় হউয়া হাইট্টা যাইতে হয়। রিকশা ভাড়া মেলা, আমার কাছে টেকা নাই কইলাম।"
"আমি পারবো, আপনের চিন্তা নাই।"
জামান সাহেবের দুই হাতে দুই পাতিল। আয়েশা উনার শার্টের কোনা ধরে হাটতে থাকেন।
নৌকায় আয়েশা জামান সাহেবকে প্রায় জড়িয়ে ধরে থাকে, থরথর করে কাঁপতে থাকেন।
"এমন করতাছ কেন?এই আয়েশা!"
"আমার ডর লাগে গো!নাও যদি উল্টাইয়া যায়, আমিতো সাঁতার জানি না।"
"আহ্লাদ করবা না, দূরে গিয়ে বস। মাইনশে কি কইবো? আমি মাস্টার মানুষ।"
আয়েশা আরও শক্ত করে স্বামীকে ধরে রাখেন।
ব্রহ্মপুত্র পাড় হতেই চলে যায় অনেক সময়। তারপর শুরু হাটা পথ। জয় বাংলা বাজার হেটে আসতেই আয়েশা হাপিয়ে যান।
"এই যে, আপনে আস্তে হাঁটেন। আমি আপনের সাথে হাইটা পারি না, আপনের লম্বা লম্বা ঠেং!একটা রিকশা নিবেন,আর পারি না?"
"আগেই কইছিলাম, আসার দরকার নাই।"
আয়েশা বেগম চুপ করে যান।
কতক্ষণ হাটতে হবে, কে জানে? আয়েশার পা ফুলে যায়, তিনি কিছু বলেন না।
উনার কাছে ডিম বেচা দুই টাকা আছে। রিকশা নিলে এক টাকা লাগবে। থাকবে এক টাকা! তিনি সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না, তিনি দুই টাকা নিয়েছেন দুই ভাইকে দিবেন!
মানুষটার জন্য তার মায়া হয়, আহারে! মানুষটা কত রাস্তা হেটে ভাইদের দেখতে যায়।
সময় দ্রুত কেটে যায়। দুই ভাই পড়াশোনা শেষ করে চাকরি শুরু করে। একজন ঢাকা বারের তুখোড় আইনজীবী, আরেকজন জগন্নাথ কলেজের প্রফেসর। রুবাকে ভালো বিয়ে দেয়া হয়, জামাই ব্রাকের ম্যানেজার। বেতন অল্পই পায়, তবে মানুষ ভালো, গ্রামে ধানী জমি অনেক। আসলে রূবা অত ছাত্রী ভালো ছিল না,তবে দেখতে ভালো। তাই তাড়াতাড়ি বিয়ে দেয়া। আয়েশা হাফ ছেড়ে বাচে, যাক এবার মানুষটা শান্তি পাবে। কোন কাজ নাই, বসে বসে খাবে!
আর মানুষটার কিছুদিন আগেই বুকে অপারেশন করতে হয়েছে, বেশ টাকা গেছে। রুবার বিয়েতেও কিছু টাকা গেছে। তখন শরীফ, সজীবের কাছে টাকা ছিল না, তাই কিছু জমি বিক্রি করতে হয়েছে।
আসলে কিছু বদলায় না,সব আগের মতই। শরীফ বিয়ে করে পল্টনের দিকে স্থায়ী হল, ওখান থেকে কোর্ট কাছে, ওখানেই তার চেম্বার। সজীব স্থায়ী হল সদরঘাটের দিকে, ওর কলেজ ওইদিকেই। শরীফের এক ছেলে নাফি, এক মেয়ে নুসাইবা। সজীবের দুই ছেলে, আবিদ আর রাঈদ!
এই চারজন জ্যাঠা-জ্যাঠীকে যতটা পছন্দ করে, এদের বাবা-মা ঠিক ততটাই অপছন্দ করে!
এরা জামান সাহেব, আয়েশা বেগমকে বড় বাবা, বড় মা ডাকে। বাড়ি এলে এরা দুজনের সাথেই খায় ঘুমায়, মাঠে যায়, গাছে পানি দেয়, পুকুরে ঝাপিয়ে পরে! জামান বড় একটা খাট বানিয়েছেন চারপাশে বেড়া দেয়া, পুলাপান যদি ঘুমের মধ্যে পরে যায়!অবশ্য এদের গ্রামের বাড়িতে অত নিয়ে আসে না। এই নিয়েও আয়েশার আফসোস, আক্ষেপের অন্ত নেই।আহারে!পুলাপান কি মায়া নিয়ে বড় মা ডাকে।
গতরাতে জামান সাহেবের ভাই-বোন হুট করে বাড়ি আসে। উনি ওদের খাবার ব্যবস্থা করার জন্য অস্থির হয়ে পরেন।
নাফি, রাঈদ, আবিদ বড় বাবার সাথে বাজারে রওনা দেয়। রাঈদটা ছোট, ওকে জামান সাহেব কাধে তুলে নেন। নাফি, আবিদের হিংসার শেষ নেই!ওরা যে কেন তাড়াতাড়ি বড় হল?
বাজার থেকে পাঁচ কেজি ওজনের একটা বোয়াল কেনা হয়। নাফি অবাক হয়, মাছটা ওর সমান। জামান সাহেব মাছটা না কাটিয়ে বাড়ি নিয়ে আসেন। বড় মাছ দেখলেও চোখের শান্তি!
বোয়াল দেখে নাফি বা রাঈদের আম্মু কেউ খুশি হয় না।
নাফির আম্মু বলে,"দেখেছেন ভাবি, আমি আগেই বলেছি এরা দুই ভাই বেশিরভাগ টাকাই গ্রামে পাঠিয়ে দেয়৷দেখলেন প্রমাণ!"
রাঈদের আম্মু সায় দেয়।
খাবার টেবিলে বিশাল আয়োজন বেগুন ভাজা, করলা ভাজি, কই ভাজি, কালোজিরা ভর্তা, বোয়ালের কোপ্তা, শিং মাছের ঝোল, বোয়ালের মাথা দিয়ে মুগের ডাল, আর কাগজী লেবু। ধনে পাতা দিয়ে রান্না করা মুগের ডাল ঘ্রাণ ছড়াচ্ছে খুব। সবই ভাই বোনের প্রিয় খাবার। এরা কেউ আগ্রহ করে খাচ্ছে না।
জামান সাহেব জিজ্ঞেস করলেন,"কিরে তরা ভাত নড়াচড়া করস, খাস না কেন?রান্না ভালো হয়নাই!"
শরীফ বললো,"ভাইজান, আমরা ঢাকায় জমি কিনবো। আমাদের কিছু ক্যাশ টাকা দরকার।"
আয়েশা হেসে বললো,"তুমার ভাই টেকা কই পাবে?তোমরা চাকরি কর, তোমাদের কাছেই তো মেলা টেকা থাকার কথা। তাই না?"
তিনি উত্তরের আশায় দুই ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে থাকেন, কেউ কিছু বলে না।
জামান সাহেব বলেন,"আমার কাছে তো টাকা নাই রে। দেখলি তো, রুবার বিয়েতে টাকা গেল মেলা, আমি অসুস্থ হয়ে গেলাম। কিছু জমি বিক্রি করে ঝামেলা সামাল দিলাম। আমার তো জমানো টাকাও নাই।"
সজীব বললো,"যদি ভাবির গয়নাগাটি কিছু বন্ধক রাখা যায়? পরে টাকা দিয়ে ছাড়িয়ে দিলাম..."
"আমার গয়না আছে নাকি? যা বাপের বাড়িত্তে আনছিলাম, সবই তো রুবার বিয়েতে দিয়া দিছি।"
শরীফ কেশে বলে,"তাহলে আমাদের ওয়ারিশ দেন, জমি দেন, জমি বেঁচে টাকা দেন।"
সজীব শরীফের কথায় সায় দেয়,"জ্বী ভাইজান, তাই করেন। আপনে তো আব্বার জমিন সব বিক্রি করে একাই টাকা নিছেন, এই বাড়ি করছেন, জমি কিনছেন, এখন এই জমি থেকে আমাদের দেন। আমাদের এখানে ওয়ারিশ আছে তো!"
রুবা বলে,"ভাইজান, আমিও তাই ভাবছি। আপনি কিছু টাকা দিলে, আমরা কিছু মিলিয়ে শহরে জমি কিনলাম। আমার আজ বাদে কাল বেবি হবে, তাদের মানুষ করতে হবে। আপনের তো বাচ্চাকাচ্চা নাই, ঝামেলা আপনি কি বুঝবেন?"
আয়েশা বেগম, জামান সাহেব চুপ করে থাকেন।
শরীফ শান্ত গলায় বললো,"ভাইজান, ভাবি, আপনেরা আপোসে কিছু না দিতে চাইলে আমাদের কোর্টে যেতে হবে।"
জামান সাহেব, আয়েশা উচ্চবাচ্য করেন না। তখনই জমির হিসেব নিয়ে বসে যান!
নাফি বলতে থাকে,"বড় আব্বা, চল। আজকে না পুকুরে মাছ ধরার কথা। তুমিতো আজকে সাতার শেখাতেও পুকুরে নামলে না। এবার আমি সাতার না শিখে কিছুতেই ঢাকা ফিরে যাবো না।"
আবিদ, রাঈদ বড় আব্বার জামা ধরে টানতে থাকে। জামান সাহেবের চোখ ঝাপসা, উনার অন্যদিকে মনোযোগ নেই। তিনি মনোযোগ দিয়ে ভাগ করছেন, জমি ভাগ কঠিন জিনিস!
নুসাইবার হাতে বেল গাছের চাড়া। সে বড় আম্মার আঁচল ধরে টানছে,"বড় মা,চল বিকাল শেষ হয়ে গেল তো। তুমি না বললে, বিকালে গাছ না লাগালে গাছ হয় না। এসো, বেল গাছটা আগে লাগাই। পরে সব গাছে পানি দেই, হাস-মুরগীর খাবার দেই। কত কাজ!আর তুমি বসে আছ?"
সব ভাগাভাগি হয়ে যায় দ্রুতই; বড়ই গাইচ্চা খেত, বানপাড়ের খেত, বড় পুকুর, বাড়ি ভিটা সবই! সজীব, শরীফ, রুবা ভাগের জমি পেয়ে অনেক খুশি। সবার ভাগে বেশ অনেক জমি পড়েছে। কেবল জামান সাহেবের ভাগে কিছুই পড়ে না। পড়বে কিভাবে? তিনি নিজের ভাগের জমি আগেই বিক্রি করে ফেলেছেন!
মাগরিবের আযান দিয়ে দেয়। নাফি,আবিদ, রাঈদ, নুসাইবা বড় আব্বা, বড় আম্মাকে ডেকে ডেকে ক্লান্ত হয়ে নিজেরাই খেলা জুড়ে দিয়েছে।
এই ঘোর সন্ধ্যায় জামান সাহেব স্ত্রীর হাত ধরে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে পরেন। যেখানে তার কেউ নেই, কিছুই নেই; সেখানে আর এক মুহুর্ত নয়।
নাফি, রাঈদ, আবিদ, নুসাইবা বাবা-মাকে প্রশ্ন করতে থাকে,"বড় আম্মা, বড় আব্বা যায় কই? আমিও যাবো। আমাকে নিতে বল।"
"তোমার বড় আব্বা, বড় আম্মা, তোমাদের জন্য চকলেট, চিপস আনতে যায়। এখনি ফিরে আসবেন, তোমরা গেলে চকলেট, চিপস আনবে না কিন্তু।"
শিশুরা ঈশ্বরের আরেকরূপ, এদের কোন কিছু করার সামর্থ্য নেই। ছলনায় এদের সহজে ভুলানো যায়।
জামান সাহেব, আয়েশা বেগম একই পথ ধরে হেটে যান, পেছনে পরে থাকে তাদের প্রাসাদ!
২৮ শে এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৩:৩৩
মেহরাব হাসান খান বলেছেন: বাহ! আপনার পড়ার ধৈর্য্য অনেক।
২| ২৮ শে এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ২:০৮
মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: গল্পটি ভাল লেগেছে।
২৮ শে এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৩:৩৬
মেহরাব হাসান খান বলেছেন: ধন্যবাদ, সুজন ভাই।
অনেকদিন আধা লিখে জমিয়ে রেখে ছিলাম, আজকে কোনমতে শ্যাষ করলাম।
৩| ২৮ শে এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ২:১৪
ইসিয়াক বলেছেন: খুব সুন্দর।
২৮ শে এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৩:৩৫
মেহরাব হাসান খান বলেছেন: রফিক ভাই আছেন কেমন?
অনেকদিন পর মন্তব্য করলেন। ঢাকাতে আছেন, না গ্রামে চলে গেছেন?
৪| ২৮ শে এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৪:৪৫
রাজীব নুর বলেছেন: শরীফ সজীবের জন্য পিঠা। তারা পিঠা ঢাকা নিয়ে যাবে। পোষ্টে নানান রকম খাবারের কথা বলেছেন।
যাই হোক সুন্দর গল্প বপলব না। হাহাকার ভরা গল্প।
২৮ শে এপ্রিল, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৫৬
মেহরাব হাসান খান বলেছেন: হ্যা, আগে আম্মা অনেক পিঠা বানাতেন। তাও কম পরে যেত। চাচা, ফুপাতো মিলে আমরা চার ভাই, তিন বোন আর বড়রা তো আছেই। তাই ভাগে অত পরতো না।খাবলাখাবলি করে খেয়ে নিতাম!
এখনো পিঠা বানান, তবে বাসায় আমরা মাত্র তিনজন। ভাগে অনেক পরে, মজা লাগে না।
আর পিঠা বানানোর যা আয়োজন লাগে, খেতেও পারি কম। তাই মন চাইলেও আম্মাকে বলি না।
৫| ২৯ শে এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১:০৫
ইসিয়াক বলেছেন: আমি তো ঢাকাতে থাকি না ভাইয়া আমি থাকি যশোহরে।
আমি এখনও পর্যন্ত ভালো আছি। ভালো থাকবেন। রোজা রেখেছেন?
২৯ শে এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১:১৮
মেহরাব হাসান খান বলেছেন: ভালো আছেন, ভালো থাকলেই ভালো।
হ্যা, রোজা রেখেছি।
©somewhere in net ltd.
১| ২৮ শে এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১:২৪
নেওয়াজ আলি বলেছেন: ভালো +