নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
১...
উনি হন্তদন্ত হয়ে রাস্তা পাড় হচ্ছেন। কোটের কোণা টেনে ধরলো একটা পথশিশু।
"স্যার, পাঁচটা টেকা দেন। ভাত খামু।"
উনার চশমা নাকের ডগায়, চশমার উপর দিয়ে ছেলেটার দিকে তাকালেন। চট করে রেগে গেলেন! ছেলেটার চুলের মুঠি ধরে টেনে দিলেন কষে চড়।
"হারামজাদা, দিলি তো কোটটা নোংরা করে।"
কান মলে ছেলেটার হাতে কিছু গুজে দিয়ে বললেন,"বাসায় যা হারামির বাচ্চা। গাড়ির নিচে পরে মরবিতো।"
ছেলেটা হাসবে, না কাঁদবে? বুঝতে পারছে না!ওর হাতে হালকা সবুজ পাঁচ টাকার নোট, শেষে দুইটা শুন্যও বসানো।
২...
দরজায় ঠকঠক করেই যাচ্ছ। আমি খুলছি না, মনোযোগ দিয়ে পেপার পড়ছি বিশেষ করে করোনা সংবাদ। কিভাবে প্রতিরোধ করবো এইসব।
ভেবেছি ভিক্ষুক, চলে যাবে। তা না, ঠকঠক করেই যাচ্ছে।
দরজা খুলতেই লম্বা করে সালাম দিয়ে হাত বাড়িয়ে দিলেন। আমি হাত মেলালাম না।
"ভাই সাব, আপনের নাম?"
"মেহরাব হাসান।"
"বাহ! মুসলমান, খুশি হইলাম। তাইলে আল্লাহর উপর বিশ্বাস রাখেন হাত মিলান, আল্লায় মুসলমানরে এই রোগ দিবে না।"
হুজুর হাত বাড়িয়েই রইলেন।
"আসেন ভাই, নামাজে যাবেন।"
"দেখুন, সব মুসলিম দেশগুলোতে জামাতে নামাজ নিষিদ্ধ। আপানারা কেন পড়ছেন? আমি যাবো না, অন্যদিন।"
"ভাইসাবের পড়াশোনা কি?"
"জ্বি, আইনে অনার্স-মাস্টার্স করেছি!"
"ও এইবার বুঝলাম, এই এক সমস্যা! বেশি পড়াশোনা করে আপনারা নাস্তিক হয়ে যান। মনে রাখবেন, আল্লাহ একদিন বিচার করবে। আপনারা সব পাপী!"
বাকি চারজন উনার কথায় সায় দিলেন। উনারা সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেলেন।
৩...
দূরের টিউশনিগুলা আগেই অফ করে দিয়েছি। মানুষের স্পর্শ, ভীড় এড়িয়ে চলছি। কাছেরগুলোতে যেখানে হেটে, ভীড়, স্পর্শ এড়িয়ে যাওয়া যায়, এমন দু'টা টিউশনিতে যাই। আমাকেও তো টিকে থাকতে হবে!
একজন অভিভাবক কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না, বলছেন,"কিছুই হবে না। দেশে এখনো তেমনভাবে ছড়ায়নি।তুমি পড়াতে এসো।"
আমি তবুও যাই না।
উনি কল দিয়ে বিরক্ত হন, বিরক্ত করেনও। আমি কল ধরি না।
আজ সকালে রাগ হল খুব, আমি কল ধরে বললাম,"আন্টি, যে কয়দিন আসবো না। হিসেব করে টাকা কেটে দিবেন।"
উনি বললেন,"আচ্ছা, ঠিক আছে।"
৪...
সারাদেশে স্কুল,কলেজ বন্ধ।অথচ আমাদের এলাকার ছাত্রবহুল চারতলা ভবনের কোচিংটা বন্ধ হয়নি। অদ্ভুত নিয়মে চলছে!
সকাল ৮ঃ০০ থেকে ৮ঃ১৫ এর মাঝে যারা যাচ্ছে তাদের ভেতরে ঢুকিয়ে বাইরে থেকে তালা দিয়ে দিচ্ছে। যারা ঠিক সময়ে আসতে পারছে না, তারা ঢুকতে পারবে না!
অথচ আমিই চারজন এইট পড়ুয়া ছাত্রকে চিনি যাদের বাবা বিদেশ ফেরত!
একবার ভাবলাম পুলিশকে কল দেই। পরে মনে হল, কি দরকার? শত্রুতা বাড়িয়ে! জাগ্রত মানুষকে জাগানোর সাধ্য আমার কই?
তবে কোচিং-এর এক শিক্ষকের কাছে জানলাম আসল কারণ।
উনি বললেন,"মাসের মাঝখানে কোচিং বন্ধ করে দিলে বেশিরভাগ অভিভাবক বেতন দিবে না। আমরা বেতন পাবো না।"
"আপনারাও না হয় হাফ বেতন নিলেন।"
উনি অন্ধকার মুখে হাসলেন।
৫...
সেদিন নতুন কেনা মেরুন ট্রলি নিয়ে টঙ্গী থেকে ফিরছিলাম। আব্দুল্লাহপুর থেকে অটোতে বাসায় আসবো।
প্রথমে অটোওয়ালা প্রশ্ন করলো,"আপনে কি বিদেশ থাইকা আইলেন? কুরান্টিন থেইকা পলাইছেন?হুনছি বিদেশিরা ওইহানে থেইকা খালি পলায়।" আমি কিছু বলার আগেই জমে গেল একদল মানুষ। পাশেই একঝাঁক পুলিশ আলসে ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে। ওদের কোন ভ্রুক্ষেপ নেই।
আমাকে প্রায় কিছুই বলার সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। অগত্যা পুলিশকে ডাকলাম। নিতান্ত অনিচ্ছায় এগিয়ে এল। আমার কাছ থেকে বেশ দূরত্ব বজায় রেখে কথা বললো। এটা ভালো লাগলো!
বরাবরের মতই বিশ্ববিদ্যালয়ের আইডি কার্ড দেখিয়ে পাড় পেলাম। আইন বিষয়ে পড়া এই আইডি কার্ড আমাকে বাচিঁয়েছে অনেকবার!
একজন পুলিশ ব্যাগের দোকানে কল দিয়ে নিশ্চিত হলেন, আমি ব্যাগ ঠিক করতেই দিয়েছিলাম। আমার নতুন ট্রলির লক ভেঙে গেছে!
বিপত্তি আমার পিছু ছাড়লো না। এলাকায় ঘিরে ধরলো, একদল অতিউৎসাহী ছেলেপেলে। এদের প্রায় কাউকেই চিনি না! এদের কাজ এলাকায় কে নতুন এলো,বিদেশি এল, তাকে নাজেহাল করা!তারপর টাকা পয়সা নিয়ে চুপ করে যাওয়া।
এক আধা-পরিচিত চা দোকানী বাচিয়ে দিলেন।
বাসার গেটে আসতেই বাড়িওয়ালী আন্টি বললেন,"এই করোনার মধ্যেও তুমি দেশের বাইরে পড়তে যাচ্ছ নাকি!"
৬...
"হ্যালো, স্যার আজকে পড়াতে আসবেন না।"
"কেন?"
"আমরা খালুদের বাসায় যাচ্ছি।"
"আপনার খালু ইতালি থেকে ফিরেছেন না?"
"হ্যা।"
"আপনার নানুকে দিন।"
"হ্যা, নানু। আপনাদের ওবাড়ি যাবার দরকার কি?"
"স্যার যে কি বলেন, মেয়ের জামাই এতদিন পর এলেন, আর আমি দেখা করতে যাবো না!"
"উনারতো কোয়ারিন্টিনে থাকার কথা।"
"কি বলেন স্যার, আমাদের টাকার অভাব আছেনি! ২০ হাজার টাকা দিয়া বাসায় আসছে।"
"আচ্ছা, যান। তবে আমি আর এমাসে পড়াতে আসছি না।চৌদ্দ দিন পর আসবো।"
আজ পর্যন্ত যদ্দুর জানি, নানী- নাতনী গত পরশু থেকে ঠান্ডা, জ্বর, গলা ব্যথা, মাথা ব্যথা, ভূগছে! বৃদ্ধা আমাকে দুষলেন, আমি বলেছি তাই হয়েছে। আশার কথা, উনার মেয়ের জামাই ইতালি ফিরে গিয়েছেন এক সপ্তাহ আগে। ওখানে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন, নাতনী-নানী তার বলা ওষুধ খাচ্ছেন। দেশের ডাক্তারের উপর বিশ্বাস নেই!
৭...
আব্দুল্লাহপুর থেকে আটিপাড়া অটো ভাড়া ১০টাকা, রিকশা ভাড়া ৫০/৬০ টাকা। এখন আপনি ২৫/৩০ টাকায় রিকশা পেয়ে যাবেন। যাত্রী নেইতো!
অথচ এই রিকশাওয়ালাদের কি তেজ ছিল! কোন কারণে অটো অফ হলেই ভাড়া ১০০ টাকা।
৮...
প্রায়ই এক বুড়ো চাচার রিকশায় চলাফেরা করি। কয়েক দিন ধরেই দেখা হয়না।
সেদিন বাজার থেকে ফিরছিলাম, উনার সাথে উত্তরখান কলেজিয়েট স্কুলের সামনে দেখা হয়ে গেল।
"কাকা, কেমন আছেন? ইদানীং রিকশা নিয়ে বের হন না?দেখি না তো!"
"না, কাহা বেডা। রিকশা নিয়া বাইর হই না। দ্যাশে করলা আইছে, হুনছি সব বুড়ারা নাহি এই অষুগে মইরা যাইতাছে।আমি করলায় মইরা গেলে তিন মাইয়ার কি অইব, আমার বিয়াল্লাক মাইয়ারা! আমার বাইচ্চা থাহা বিরাট প্রয়োজন, বিরাট প্রয়োজন।"
আমি ভাবি উনাকে দিয়ে দিই ৫০০ টাকা। পরক্ষণেই দমে যাই, এই টাকা দিয়েই এই মাসটা কাটাতে হবে। বাজারে সব কিছুর দাম বেড়ে যাবে, বেশি করে কিনে জমিয়ে রাখার টাকা আমাদের নেই!
আমার টিউশনি, ভাই,মায়ের অফিস বন্ধ হয়ে গেলে আগামী মাস কিভাবে চলবে? বন্ধ টিউশনি, অফিসে নিশ্চয়ই বেতন দিবে না?
২৩ শে মার্চ, ২০২০ দুপুর ১:৪৮
মেহরাব হাসান খান বলেছেন: সর্বোচ্চ সাবধানতা অবলম্বন করার চেষ্টা করছি! দোয়া করবেন।
আপনারাও ভালো থাকবেন।
২| ২৪ শে মার্চ, ২০২০ সকাল ৯:৩৪
রাজীব নুর বলেছেন: সরকার মনে হয় করোনাকে বিএনপি ভেবেছিল..
যে যখন ইচ্ছা দমিয়ে রাখতে পারবে!!!!
২৪ শে মার্চ, ২০২০ দুপুর ১২:২৬
মেহরাব হাসান খান বলেছেন: সরকারের সাইকোলজির কোন আগামাথা নেই! কোন দিন বুঝতে পারলে লিখবো।
৩| ২৪ শে মার্চ, ২০২০ সকাল ১১:০৬
মৌরি হক দোলা বলেছেন: ৬নং কি বাস্তব ঘটনা ভাই? তাহলে তো অবস্থা ভয়াবহ!
২৪ শে মার্চ, ২০২০ দুপুর ১২:২৪
মেহরাব হাসান খান বলেছেন: Living-being psychology শিরোনামে যা লিখি সবই সত্য।
ওরা অষুধ খেয়ে সুস্থ আছে, কালও কথা বলেছি। প্রতিদিন খোজ নেই।
৪| ২৪ শে মার্চ, ২০২০ সকাল ১১:২৩
পদ্মপুকুর বলেছেন: আবেগী লেখা। কিন্তু বাঙালি আবেগ বুঝে না, পাছার উপ্রে লাঠি পড়লে তখন সোজা হইয়া যায়।
২৪ শে মার্চ, ২০২০ দুপুর ১২:২৯
মেহরাব হাসান খান বলেছেন: গরীব বাঙালি আবেগ আর পাছায় বাড়ি দুটাই বোঝে, তবে বিত্তশালীরা কোনটাই বুঝতে চায় না। টাকা দিয়ে সব বিবেচনা করে, যেমনটা করছে বিদেশ ফেরত লোকজন। টাকা দিয়ে কোয়ারিন্টিনে না থেকে বাসায় চলে আসছে। অথচ এর ভয়াবহতা বুঝতে পারছে না।
২৪ শে মার্চ, ২০২০ দুপুর ১২:৩২
মেহরাব হাসান খান বলেছেন: আর হ্যা, এখানকার প্রতিটি ঘটনা সত্য।
৫| ২৪ শে মার্চ, ২০২০ দুপুর ২:৩৩
মৌরি হক দোলা বলেছেন: "কি বলেন স্যার, আমাদের টাকার অভাব আছেনি! ২০ হাজার টাকা দিয়া বাসায় আসছে।"
এই যদি হয় অবস্থা!!!!!!!!! কোন দেশে আছি আমরা!! কপাল!
২৫ শে মার্চ, ২০২০ রাত ১:৪৬
মেহরাব হাসান খান বলেছেন: এজন্যই আর্মি দরকার, তাদের কমপক্ষে ঘুষ দিবে না বা দিতে ভয় পাবে। পুলিশ বিদেশিদের খুজে বের করে, তাদের বাসায় যায়; আর কোন আশ্চর্য কারনে বিদেশিদের কিছুই করে না, বাসা থেকে বেড়িয়ে আসে!
আমাদের এলাকায় একজন বিদেশ ফেরতের বেলায় এই হয়েছে! এখন আর্মি নামছে শুনে নাকি আজ গ্রামে চলে গেছে।
এখন আমাদের আর্মিই ভরশা! দেখা যাক, সংক্রমণ কমে কিনা?
আপনি ভালো থাকুন, নিরাপদে থাকুন।
©somewhere in net ltd.
১| ২৩ শে মার্চ, ২০২০ সকাল ১০:৫৯
রাজীব নুর বলেছেন: আপনি ভালো থাকুন। সাবধানে থাকুন।