নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

A learning Advocate!

মেহরাব হাসান খান

আমি H2O,,,,Solid,Liquid & Gas.How do you deserve me?

মেহরাব হাসান খান › বিস্তারিত পোস্টঃ

উপহার

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১:২৫


১...
নঈম উদ্দিন চেয়ারম্যান তাড়াতাড়ি বিচার শেষ করতে চাচ্ছেন। কিছুতেই হচ্ছে না। দুই পক্ষ দর কষাকষি করছে। উনি জোর দিয়ে কিছু বললেই বিচার শেষ! উনি বিচারের বিষয় ঠিক মনোযোগ দিয়ে শুনেননি।
ছাগল চুরির বিচার। আর যাইহোক জরিমানাতো দশ হাজার হতে পারে না?
কাচারি ঘরে মানুষের বিরাট জটলা, কেউ উচ্চস্বরে কথা বলছে না। নঈম উদ্দিন চেয়ারম্যানকে সবাই ভয় পায়। সবাই বেশ হতবাক, চেয়ারম্যান এখনো ধমক দিয়ে কিছু বলছেন না কেন?

বিচারে চেয়ারম্যানের ঠিক মনোযোগ নেই। উনার মন পরে আছে দুধেরচর গ্রামে ছোটবোন ছফিনার কাছে। খুব ভোরে বোনকে নাইওর আনার জন্য পালকি পাঠানো হয়েছে। ঠিক সময়ে আসলে তার সাথে দুপুরে খাবার খাওয়ার কথা।অথচ তিনি খাবার টেবিলে বোনকে পাননি।
অভিযুক্ত কালাম বেশ জোরেশোরেই বলল,"চেরম্যান সাব আপনেই কন, ঐ অষুইগগা ছাগলের দাম ১০ হাজার অইব কেমনে?আমি ১৫'শ টেকার এক টেকাও বেশি দিতাম না। কইয়া দিলাম, আমি চুর অইবার পারি তয় এক কতার মানুষ!"
চেয়ারম্যান উঠেই কালামকে একটা চড় দিলেন,বললেন,"হারামজাদার বিরাট বাড় বেড়েছে!এক সপ্তাহের মধ্যে ৫ হাজার টাকা জরিমানা দিবি।নইলে...."

কাচারি ঘর থেকে বেড়িয়েই তার দেখা হল জ্যেষ্ঠ পুত্র ফরিদুল আলমের সাথে। পুত্র হাসিহাসি মুখে বলল,"আব্বা, ফুপু আয়ে নাই। আমি ঘোড়ার গাড়ি নিয়াও গেছি, দেহি ফুপু বাড়ির দহলে বইয়া রইছে। ফুবু ঘোড়া গাড়িতেও চড়ে নাই।আমি কি করমু?"
চেয়ারম্যান রেগে গেলেন।
তিনি আগেই বলেছেন, বোনকে আনতে যেন নতুন রিকশা যায়। নতুন রঙ করা, রঙিন কাগজ দিয়ে সাজানো রিকশা। বাজারে এই নতুন গাড়ি চালু হয়েছে, উনার বোনের নতুন নতুন জিনিসের বিরাট শখ!
পুত্রের গালে এক চড় দিতে পারলে রাগ কমতো। তিনি চড় দিলেন না। পুত্র বড় হয়েছে, কয়েক দিন আগেই আনন্দ মোহন কলেজে বিএসসিতে ভর্তি হয়েছে। এমন পুত্রকে তো আর সবার সামনে চড় দেয়া যায় না।

চেয়ারম্যান কোন কথা না বলেই দুধেরচর গ্রামের দিকে হাঁটা দিলেন। পেছনে আসছে রিকশা, নতুন রঙ করা রিকশা!
চালক লেদু একই সাথে ভীত আর আনন্দিত। চেয়ারম্যানকে রিকশায় উঠতে বলে, এই সাহস তার নেই। রিকশার পেছনে সে "বেদের মেয়ে জোছনা" বইয়ের ছবি আঁকিয়েছে। একটু পরপর সে ছবি দেখে, গামছা দিয়ে মুছে নায়িকাকে একটা চুমু খায়!এখনো তার এ কাজটা করার ইচ্ছে করছে, সাহস হচ্ছে না। গরীব হবার বিরাট জ্বালা, যা ইচ্ছে তা করা যায় না!

২...
হুরমুছ আলী খান তাড়াহুড়ো করছেন। বারবার হিসেব গুলিয়ে যাচ্ছে। যেদিন একটু তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে চান সেদিনই এমন হয়। উনি আবার প্রথম থেকে শুরু করেছেন, আবার গরমিল হয়ে গেল। উনি মনে মনে বললেন, হিসাবের খেতা পুড়ি।
দোকানের গমস্তাকে বললেন, নীলপাড় দেয়া সবুজ লতাপাতা আকা একটা শাড়ি বের করতে।
সকলের ধারণা, শামলা মেয়েদের উজ্জ্বল রঙের শাড়িতে ভালো লাগে। মিছা, ডাহা মিছা। শ্যামলা মেয়েরা উজ্জ্বল রঙ পরলে, রঙের একটা ছাপ মুখে পরে তাদের আরও কালো লাগে। তাদের ভালো লাগে গাঢ় রঙে!
উনার মা বলতেন, তিনি বিশ্বাস করেন নাই। ছফিনা বিবিরে দেইখা বিশ্বাস হইছে।

সন্ধ্যা হব হব করছে। হুরমুছ আলী খান নবুর আড়ার কাছে আসতেই মাগরিবের আযান দিয়ে দিল। এখানে এলেই অজানা কারণে গা ছমছম করে। উনি হাঁটার গতি বাড়িয়ে দেন। প্রায় দৌড়ে বেড় শিমুল গাছটার কাছাকাছি এসে থামেন। সবাই বেড় শিমুল গাছটার নিচে এসে ভয় পায়, হাঁটার গতি বাড়িয়ে দেয়, কেবল হুরমুছ আলী উল্টো।

শিমুল গাছের শেকড় দিয়ে তৈরি ঘরের মত জায়গাটায় থাকেন জটাধারী বুড়ি। সে কবে কোথা থেকে এখানে এসেছে, কে জানে?
কেউ অত মাথাও ঘামায় না। শুকনো বুড়ির গায়ের চামড়া প্রায় হাড্ডির সাথে মিশে গেছে, কালো কুচকুচে মুখে সাদা চোখ দুটো ভয়ংকর, প্রায় কোটর থেকে বেড়িয়ে আসছে! বুড়ির জটা কত লম্বা অনুমান করা যায় না, তবে পেটের দিকে বেশ কয়েকটা প্যাঁচ দেয়া। সাথে থাকে বিশাল এক বস্তা।
বুড়ি কখনো ভিক্ষা করে না, রান্নাও করে না, কিভাবে বেচে থাকে, কেউ বলতে পারে না।
তবে বুড়ি ঘুমিয়ে থাকলে তার জটা নাকি বড়সড় অজগর হয়ে যায়, পাহারা দেয় তার বস্তাটা!করিমের বাপ নিজের চোক্ষে দেখেছে।
বুড়িকে দেখে হুরমুছের একদম ভয় লাগে না, বরং খুব মায়া হয়। মাঝেমধ্যেই সে দু একটা টাকা ঘুমন্ত বুড়ির কাছে ফেলে যায়।

আজ বেড় শিমুল গাছের কাছে এসে হাফ ছাড়তেই হুরমুছ বুড়িকে দেখতে পেল।
বুড়ি ওর হাত ধরে বললো,"আয় হুরমুছ, নমজ পইড়া বাইতে যাইবি। মাগরিবের অক্ত এক্কেবারে খাটা।"
বুড়ি ঊনাকে টানতে টানতে শেকড়ের ঘরে নিয়ে এলো।
জায়গাটা অত্যন্ত নোংরা। এখানে সেখানে জমাটবাধা কাশি-থুতু, অল্প খাওয়া ভাত-মাছ,ফল, একপাশে কুকুর ৫-৭টা বাচ্চা ফুটিয়েছে।বাচ্চাগুলোর চোখ ফুটে নাই, তাতে কি?বাচ্চাগুলো এদিক সেদিক ঘুরে বেড়াচ্ছে!
এই সবের সাথে প্রস্রাবের কড়া গন্ধ মিলে একাকার। হুরমুছ আলী খান ইতস্তত করছেন।
বুড়ি বললপন,"ও আল্লাহ! খাড়াইয়া রইছস কেন? নমজের অক্ত যায় যায়, নমজ পড়। ঘিন লাগেনি তর?আল্লার দুনিয়ার কোন নাপাক জায়গা নাই।তুই নমজ পড়, আমি তর খাওন বানাই।"
হুরমুছ আলী খানের মনে হল, দুপুরে খাওয়া হয় নাই।তিনি নামাজে দাড়ালেন।

নামাজ শেষ করতেই বুড়ি খাবারের প্লেট এগিয়ে দিলেন। হুরমুছ আলী খান অত্যন্ত বিরক্ত হলেন। নোংরা মাটির পাত্রে তো খাবার নেই, টলটলে পানিতে ভাসছে একঝাঁক পোকা। কোন জন্তুর মারা পঁচা শরীরে যে পোকা দেখা যায়, সেসব পোকাই কিলবিল করছে। উনি অন্যদিকে তাকিয়ে রইলেন।
বুড়ি বললো,"অ হুরমুছ খাস না কেন? তর পেডে ত খিদা। খাইয়া ল।ও আইচ্ছা, তুইয়ো বজ্জাত বেটাগর মত কিরা দেহসনি?
"হুন একটা গপ্পো কই, তহন আমি বিরাট সুন্দরী। পরীর লাহান। বাইরে বাইরে ঘুইরা বেড়াই, কি করতাম? মায় মমিসিং ইস্টিশনে ফালাইয়া গেছেগা, হেয় কি করবো!নটি বাড়িতে পুলাপান তো পালন যায় না।
সুন্দর অওন বিরাট জ্বালা। রাইত বিরাইতে বজ্জাত বেটারা কাছে আইতো, বিয়া করতে চাইত।আমিও ভান ধরতাম যে আমি বিরাট কামেল বেডি। ওগরে খাইতে দিতাম গুবইরা পুহা, তেলচুড়া, কেইচ্চা। কইতাম, তুমার মনে আমারে নিয়া খারাপ চিন্তা থাকলে তুমি এইহানে খাওন দেখবা না, দেখবা পুহা-মাহড়।তুই ক, পুহা-মাহড়রে আর কি দেখত?"
বুড়ি একা একাই হাসছিল।

বুড়ি লম্বা শ্বাস নিয়ে আবার কথা বলা শুরু করে,"খাইয়া ফালা, চৌখ বন্দ কইরা খাইয়ালা। এক চামুচ খাইলেই তর পোলা হইবো।আমি তর মায়ের লাহান, তরে খারাপ জিনিস দিমুনি?
আমার মিহি চা,চাইয়া দেক আমি তর মায়ের মতন। ওরে আল্লা! আমি কি কই? আমার মাতা ঠিক নাই। তুইত মায়েরে দেহস নাই!খা, বাজান খা।"

৩...
ঘোর অন্ধকার! একহাত দূরেই কিছু দেখা যাচ্ছে না। বাড়ির দেউড়ির কাছে এসেই হুরমুছ খান ছফিনা বিবির হাসির আওয়াজ পেলেন।
ছফিনা বিনি আর নঈম উদ্দিন পাশাপাশি বসে আছেন। ছফিনা বিবি ভাইয়ের হাত ধরে বসে গল্প করছেন। হুরমুছ খান দাঁড়িয়ে রইলেন। গিয়ে করবেন কি? ভাইবোনের মাঝে উনার জায়গা নেই!
আচ্ছা, কুপি বাতির আলোয় ভাইবোনের গাঢ় ভালোবাসার এই ছবি কোন শিল্পী আঁকতে পারবেন?

উনার তন্দ্রা ভাঙলো ছফিনা বিবির কথায়।
"ও আল্লাহ! আপনে খাড়াইয়া রইছেন কেন? আর আইজ এত দেড়ি করলেন কেন? এই আপনের বিবেচনা? ভাইজান হেই বৈকাল থাইকা বইসা আছে।ঘরে যান, হাত-মুখ ধুইয়া আমারে বিদায় দেন।"
তিনি বললেন,"ভাইজানরে নিয়া ঘরে বসলা কেন?ঘরে বস, ভাইজানরে খাওন দেও।"
"কি কন আপনে? আমি সবার থেইকা বিদায় নিছি, অহন আবার ঘরে যামু কেন?আর ভাইজানরে নিয়ে আপনের চিন্তা নাই।আমার ভাইজান, আমি মাথায় রাখমু, না মাটিতে রাখমু, আমার বিষয়।"

হুরমুছ খান নতুন নীল পাঞ্জাবী পড়ে তাড়াতাড়ি বেড়িয়ে এলেন।
ছফিনা বিবি বললেন," আপনে নতুন কাপড় পরছেন কেন? আপনেরে তো সাথে নিব না। আমরা ভাইবইনে রিকশায় বসমু, আপনে কই বইবেন?"
হুরমুছ খান নতুন শাড়িটা হাতে দিয়ে বললেন,"আমারে সাথে নিবা না, তাইলে আমার জন্য অপেক্ষা করছো কেন?"
"আপনের কাছে না কইয়া জীবনে নাইওর গেছিনি,কি কন!আর এইবার এক্কেরে যাইতাছি, আর ফিরমু না। আপনের ভাইয়ের বউ আমারে কইছে, আমি নাকি আপনেরে পুলা দিতে পারমু না। আমি গোসসা করছি।আপনে হেরে বুঝাইয়া কইবেন, পুলা মাইয়া অওয়াতে আমার হাত আছেনি?
আপনের আমার লগে আসনের দরকার নাই, তয় চাইলে রিকশার পিছনে হাইট্টা আসতে পারেন।"

হুরমুছ খান হাতের শাপলা পাতায় মোড়ানো বুড়ির খাবারটা এগিয়ে দিলেন। ছফিনা বিবি কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললেন,"পুলা অওয়নের লেইগা খাওয়ন পইড়া আনছেন? আমি ত এইগুলা খাইতাইম না।"
বলেই তিনি হনহন করে রিকশার দিকে চলে গেলেন।

৪...
বড়ডুবি বিল পেড়িয়ে দুধেরচর ঈদগাহ মাঠের পাশে দিয়ে পলাশকান্দির দিকে আঁকেবেকে চলে যাওয়া পথটা দিয়ে রিকশা চলছে।রাস্তার একপাশে বিল আরেক পাশে সবুজ ধান খেত। চাঁদের আলোয় বিল-ধানখেত দুটোই সৌন্দর্য মেলে ধরেছে। রাস্তায় কোন গাড়ি তো দূরের কথা কোন জন-প্রাণি নাই! তবুও লেদু অকারণে টুংটাং বেল বাজাচ্ছে। রিকশায় ভাইবোন হাত ধরে বসে আছেন, পেছনে হেঁটে আসছেন হুরমুছ খান।

রিকশা ঘন শনের ঝাকটার দিকে আসতেই ছফিনা বিবি বললেন,"এই রিকশা থামা, আমি হাইট্টা যামু।"
নঈম উদ্দিন চেয়ারম্যান বললেন,"কি কস তুই, হাইটা যাবি কেন?এখনো অনেকটা পথ বাকি।"
"পিছনে চাইয়া দেহেন ভাইজান, আমার উনি হাইট্টা আইতাছে। আমি আরামে বইসা যামু, আর উনি যাবেন হাইট্টা। এইটা আমার ভালা লাগে না।"
"বইনে, আমি তরে মাঝে মাঝেই বুঝি না।"
ছফিনা বিবি হাসলেন, বললেন,"বুঝবেন কেমনে? আমার মাথা গেছে আউলাইয়া। আমার তিন মাইয়া, একটাও পুলা নাই। মানুষটার পোলা খুব পছন্দ, একটা পোলা চায়। এইটা আমি পারতাছি না!আমার মাথা খারাপের যোগাড়!মাইনশের খোটা শুইনা আমি পাগল অইয়া গেছি!"

চারপাশে রূপালী চাঁদের আলো, বিলের পানিও চিকচিক করছে, তাল দিয়ে দোল খাচ্ছে ধানের ক্ষেত।পথে হেঁটে যাচ্ছে তিনজন। একজন রমনীর হাত ধরে আছে একজন ভাই, একজন প্রিয়। তিন সংখ্যাটা বিশেষ_ত্রিকাল, ত্রিনয়ন, ত্রিভূবন, তিনপুরুষ।
তারা কেউ কিছু বলছে না। লেদুর মন খারাপ, ওর রিকশা খালি যাচ্ছে!

ছফিনা বিবি বোরকা খুলে ফেলবেন, বললেন তার গরম লাগে।হুরমুছ খান মিনমিন করে বললেন,"আল্লাহ বলেছেন মেয়েছেলের পর্দা....."
"আপনে চুপ থাকেন, পারলে আপনের আল্লারে কন আমারে একটা পোলা দিতে। হেইডাতো পারবেন না...."
হুরমুছ খান চুপ করে গেলেন।

৫...
শোলার বেড়া দেয়া টিনের দোচালা ঘর। একপাশে কলাগাছের বড় গড়, বড় একটা কড়ই গাছে প্রায় ঘরের উপর পড়ে আছে। ঘরের ঠিক পিছনে পায়চারি করছেন দুজন লোক, নঈম উদ্দিন চেয়ারম্যান আর হুরমুছ আলী খান। কেউ কারও দিকে তাকাচ্ছেন না, মাটির দিকে তাকিয়ে এমাথা থেকে ওমাথা হেঁটে যাচ্ছেন। নঈম উদ্দিন চেয়ারম্যানের পিপাসা পেয়েছে, বোনের বাড়ি কিছু খাওয়ার নিয়ম নাই!

ঘরের পাশেই কলাপাতা দিয়ে তৈরি একটা অস্থায়ী ঘর। ঐ ঘর থেকে ছফিনা বিবির চিনচিনে গলা ভেসে আসছে,"এই যে হুনছেন? আমি মইরা গেলে আপনে আমার পুলাপানরে কিন্তুক মারবেন না, বহাও দিবেন না।যদি দেন.....।আবার বিয়া করলে, পুলাপানরে মামার বাড়ি......."
উনি কথা শেষ করতে পারেন না। ব্যাথায় গলা বুজে আসে।ঘরে বসে আছেন রোকেয়া দাই, আগের তিনিটা মেয়েও উনার হাত দিয়েই দুনিয়ার আলো দেখেছে।

কলাপাতার ঘরের পাশে বড় জাম্বুরা গাছটার নিচে গলা জড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে বকুল, শিউলি আর পারভীন। বড়বোন বকুল খুব মায়াবতী। সকাল থেকেই মায়ের পেটে ব্যাথা, সে দুই বোনকে ভাত খাইয়েছে। একবার মায়ের কাছে গিয়েছে, মা চড় দিয়েছেন। ও ব্যাথা পেলেও কাঁদেনি।
আবার যেতে ইচ্ছে করছে, ঠিক সাহস হচ্ছে না। মায়ের হাত ধরে বসে থাকতে পারলে ওর ভালো লাগতো!
পারভীন কাঁদতে কাঁদতে জিজ্ঞেস করলো,"বড়ফা, আম্মা তো মইরা যায়!কাইলকা হাটবার, আমারে আলতা কিইন্না দিবো কেডা?"

ঠিক তখনি আকাশ বাতাস ফাটিয়ে কান্নার আওয়াজ পাওয়া গেল।বলাই বাহুল্য, জন্মের পর পুত্র সন্তানের গলার আওয়াজ বেশি হয়।

হুরমুছ আলী খান সদ্যোজাত পুত্রকে নিয়ে বেড় শিমুলগাছের নিচে হাঁটা দিলেন। পেছনে আসছেন নঈম উদ্দিন চেয়ারম্যান, উনি বেশ বিরক্ত। এই বলদ পোলা নিয়া যায় কই? মামার হাত ধরে হাটছে বকুল। সে এখনো ভাইয়ের মুখ দেখতে পারে নাই।

জটা বুড়ি হুরমুছ আলী খানকে দেখেই ফসফস করতে লাগলেন।
"আবার আইছস?তরা পাইছস কি? আমার বস্তা চুরি করবি? কি আছে আমার বস্তায়, তর মার মাতা তর বাপের মাতা..."
"আম্মা, আপনের দোয়ায় আমার পোলা হুইছে। আপনে অর মুখ দেইখা একটা নাম দেন।"
বুড়ি পুত্রের মুখ দেখলেন, বললেন,"আমি কারও জইন্যে দোয়া করি না। আর দোয়া কইরা কিছু অয় নি?
ও আল্লাহ! এই পোলা দেহি পাতিলের তলার মত কালা।আর হইছেও আমাবস্যায়। এই পুলা অইব পুন্টা, বজ্জাত। এই কাইল্লা, বজ্জাত পোলার নাম আমি রাখমু না।"

বকুল বললো,"আব্বা, ভাইয়ের নাম রাখমু ছাত্তার।" বকুল ভাইয়ের মুখ দেখে অভিভূত। বুড়ির দিকে তাকিয়ে বললো,"অই বুড়ি, তর চোখ কানা। আমার ভাই কালা নি! ভাইরে কাঁচা হলুদ, আর লাল গাইয়ের দুধ খাওয়াইলে আরও ফকফকা হইবো।"
নঈম উদ্দিন, হুরমুছ খান কেঁদে ফেললেন।
আচ্ছা, আনন্দ বেদনা কে তৈরি করেছেন? তাকে কি আনন্দ বেদনা স্পর্শ করে? যদি করেই, তবে আনন্দ বেদনার প্রকাশ একই রকম কেন?

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৩:৫৬

নেওয়াজ আলি বলেছেন: অতুলণীয়

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ৯:৩৬

মেহরাব হাসান খান বলেছেন: ধন্যবাদ।

২| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৪:২৯

রাজীব নুর বলেছেন: বেশ কিছুদিন পর আপনার পোষ্ট পেলাম।
মিস করেছি।

আপনার লেখা পড়ে আরাম পেলাম। ঝরঝরে লেখা। সহজ সরল ভাষা।

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ৯:৩৭

মেহরাব হাসান খান বলেছেন: আমার খারাপ দিন যাচ্ছে। লিখা আসে না। একগাদা প্লট নিয়ে লিখতে যায়, লিখা আসে না।থেমে থেমে যাই।

দোয়া করুন আমার জন্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.