নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

A learning Advocate!

মেহরাব হাসান খান

আমি H2O,,,,Solid,Liquid & Gas.How do you deserve me?

মেহরাব হাসান খান › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঋণ পরিশোধ

১৫ ই নভেম্বর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৫৯


১...
"তুমি বলদ, তুমার চৌদ্দগুষ্টি বলদ...." ঝগড়া লাগলে আম্মা এই মোক্ষম অস্ত্র ব্যবহার করে বারবার জিতে যান। আব্বা কথার পিঠে কথা বলা বন্ধ করে, মন খারাপ করে বারান্দায় বসে থাকেন।
শুধু যে আম্মা তা না, দাদা ভাইকেও দেখেছি রেগে গেলেই আব্বাকে বলতেন,"তুই বলদা আক্কু! তোরে দুই চৌক্ষে দেখতে চাই না।আমার সামনে থেকে যা।"
আব্বা আর কথা বলতেন না। দাদা ভাই চেয়ারম্যান ছিলেন, উনাকে সবাই অমায়িক আচরণের জন্য খুব পছন্দ করে। আব্বাকেই কেবল উনি বিচ্ছিরিভাবে গালিগালাজ করেন। তবে দাদা, আম্মা কখনো মিতুর সামনে আব্বাকে বকা বাদ্য করেন না।

এ বাড়িতে মিতুর শাসন চলে। কোন রহস্যময় কারনে সবাই ওকে ভয় পায়। আমাদের বাড়ির কেউ মিতুর কথার অন্যথা করে না। আমি কারণটা জানি। উজ্জ্বল গায়ের রঙ, লম্বা চুল, বড়বড় চোখের মিতু যত বড় হচ্ছে ততই দাদির মত হয়ে যাচ্ছে।কেবল ঠোটের উপর তিল নেই।ইদানিং পান খেয়ে ঠোট লাল করে রাখে।
সেদিন নাকি দাদি শাড়ি পড়ে বাড়ির পেছনে লেবুর ঝাড়ের কাছে গুনগুন করে গান গাইছিল আর হাটছিল। দাদা ভাই দু'একবার ডাকলেন,"ছফিনা, এই ছফিনা। সন্ধ্যাবেলা লেবুর ঝাড়ে সাপ থাকে, পঙ্ক্ষিরাজ সাপ। ঘরে আসো।আধা পাগল মেয়েছেলে নিয়ে বিরাট যন্ত্রণা।গান গাইবা ঘরে গাও, বারান্দায় গাও; জঙ্গলে যাওয়ার দরকার কি?"
দাদি শুনলেন না, দাদা আম্মাকে পাঠালেন।আম্মা গিয়ে দেখেন কেউ নেই। দাদা বিশ্বাস করলেন না। নিজেও ওখানে গেলেন, ওখানে কেউ নেই।তবে ঘ্রাণ আছে, খয়েরের আচ্ছন্ন ঘ্রাণ। দাদী রাজশাহীর সুগন্ধি খয়ের দিয়ে পান খেতেন।
কেউ না বুঝলেই আমি জানি, ওইটা মিতু ছাড়া কেউ না। ও মাঝেমধ্যেই দাদির শাড়ি পড়ে হাটাহাটি করে!

একদিন দাদাভাইকে খুব করে ধরলাম, ঘটনা কি বলতে হবে। দাদা ভাই রাজি হলেন না। অথচ মিতু বলতেই রাজি হলেন। আমার মন খারাপ হল। আমার চেহারা দাদার বাবার মত হলে ভালো হত, দাদা ভাই আমাকেও আদর করতেন!

"তোর বাপে ছোটবেলা থেকেই ব-ল-দ! বিরাট বলদ।আমার উচিত ছিল ওরে দিনে তিনবার থাপড়ানো।তোর দাদির জন্য পারিনি। বিরাট ভূল করেছি। কি করবো, তিন ছেলে মরার পর সে হইছে। তোর দাদি তারে কোন সময় চোখের আড়াল করতো না।
বলদটা ময়মনসিংহ জিলা স্কুলে পড়বে, তোর দাদি রাজি না।সে ছেলেকে বাইরে দিবে।সিদ্ধান্ত হল, তোর দাদি আর তোর বাপ ময়মনসিংহ থাকবে। এবার ঝামেলা করলো তোর বাপ, সে গ্রাম ছেড়ে কোথাও যাবে না। সে গ্রাম ছেড়ে গেলে নাকি ফুলবানু পাগলনীকে কেউ খাবার দিবে না, সে না খেয়ে থাকবে! ইচ্ছে করছে তারে পিটাইয়া পাগলীর প্রেম ছুটাইয়া ফালাই।"
মিতু চোখ বড়বড় করে বললো,"তুমি কি করলে, আব্বাকে মেরে ময়মনসিংহ রেখে আসলে?"

"আরে না, বিকালে বাড়ি ফিরে দেখি। তোর দাদি নিজে পাগলীকে গোসল করিয়ে দিচ্ছে।পরে পাগলী আর তোর বাপে একলগে ভাত খায়। পাগলী তারে ভাত মুখে তুলে দেয়। তর দাদি কাছেই, দেখে আর কান্দে, কয়," বইন, আমার পুলা আইজ থেইকা তোমারও পোলা।"
আমার মেজাজ হয় খারাপ।কিছু কইতে পারি না।
সুন্দরী বৌ বিরাট ঝামেলা, কিছু বলা যায় না।মারা যায় না, দরদ লাগে।কেমনডা লাগে ক...
মুহিত তুই জীবনেও সুন্দরী বিয়া করিস না।

সে দুধেরচড় প্রাইমারি স্কুলে পড়ছে।তোর দাদি সারাদিন জানালার পাশে বসে থাকতো, জানালা দিয়ে তোর বাপকে যাতে দেখা যায়।
একদিন কি হইলো, বলদটা স্কুল থেকে কানতে কানতে বাড়ি ফিরলো। তোর দাদি আমার সাথে শুরু করলো ঝগড়া, আমি নাকি ছেলেকে মেরেছি।সে আমার সাথে আর থাকবে না। কি যন্ত্রণা ক দেহি!
আর বলদাটা হেচকির চোটে কথা বলতে পারে না।
চোখ মুছে কোন রকমে বললো, স্কুলে কেউ খাবার আনে না।ও একলা একলা খায়, সবাই তাকিয়ে থাকে।ওর শরমে কান্না আসছে!
এইবার ক, এরচেয়ে বড় বলদ আছে? তর দাদি এরপর থেকে বাড়িতে দস্তরখানা খুললো, পাড়ার সব পুলাপান একলগে খাইতে আসে। অবশ্য এই ঘটনার জন্যই আমি কোনদিন চেয়ারম্যানিতে ফেল করিনাই।হাহা....

আসল ঘটনা শোন, বলদটা কোন রকমে মেট্রিক পাস করলো। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে ভর্তি হইতে যাবে, তোর দাদি অসুস্থ। সে মাকে ছেড়ে যাবে না, সারাদিন হাত ধরে বসে থাকে। তো শেষ তারিখে আমি জোর করে পাঠাইলাম, আমি লগে যাইতাম বলদটা কি ঝামেলা করবো ঠিক নাই। কি মনে কইরা গেলাম না।

সন্ধ্যা মিলাইয়া গেল, সে আর ফিরে না।
ঘটনা হইল, সে ভর্তির টাকা জমা দিবার জন্য লাইনে দাড়াইছে। পাশে তার বন্ধু বুলবুল কান্দে। হের মায় অসুস্থ, মায়ের চিকিৎসার টাকা নাই। হেয় আগে ভর্তি হয়ে টাকা শ্যাষ কইরা ফেলছে। তোর হাতেমতাই বাপ হেরে টামা দিয়া দিছে, আর ভর্তি হইতে পারে নাই!
ক কেমন বলদ, আগে তুই ভর্তি হ।পরে হেরে টেকা দিস। আমার উচিত আছিল হেরে ত্যাজ্য পুত্র করে দেয়া!"
মিতু চোখমুখ শক্ত করে ফেললো, বললো,"দাদাজান, তুমি আর কোনদিন আব্বাকে বলদ বলবে না। বললে আমি এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো।"
"কই যাবি তুই?" দাদাজান করুণসুরে জিজ্ঞেস করলেন।
"তুমি আব্বাকে আরেকবার বলদ ডেকেই দেখবে।"
দাদাভাই বিরাট বিপদে পরলেন, তিনি "বলদ, বলদা আক্কু" এই দুইটা ছাড়া কোন গালি জানেন না।

২....
আম্মা খিলখিল করে হাসছেন।
"শুনেন ভাবি, জরুলী বিভাগের সামনে মুহিতের মুখটা যদি দেখতেন। লাল অইয়া গেছিল, বান্দরের পুটকির মত!হাহা...."
আম্মা এরবেশি আর বলতে পারছেন না। সবাই হেসে গড়িয়ে পরছে। এরা সবাই রুগী, হার্টের রুগী!

কে বলবে, একটু আগেও আম্মা দম নিতে পারছিলেন না। হার্ট বিট ছিল ৫০ এর নিচে। আমি আম্মাকে জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউটে নিয়ে এসেছি। আম্মা আমার হাত ধরে আছেন, কিছুতেই ছাড়বেন না। আমি টিকেট কাটতে যেতে পারছি না।এখানে টিকেট ছাড়া চিকিৎসা করা হয় না। জীবনের চেয়ে এদের কাছে ১০ টাকার টিকেট দামী! ডাক্তার আম্মাকে ধমক দিলেন।
আম্মা ডাক্তারকে কাছে ডেকে কান ধরে বললেন,"ঘাস খাইয়া ডাক্তার হইছস, ব্যাটা!জীবনে দেখছস, সন্তানের হাত থাইকা আজরাইল মায়ের জান কবয করছে? করে নাই। আমার ছেলে হাত ছেড়ে দিলেই আমি শ্যাষ। আমি পুলার হাত ছাড়বো না।তুই না করলি আমার চিকিৎসা।আমি তর চিকিৎসায় থু দেই!"

কম বয়সী ডাক্তার বেশ অবাক হয়ে গেলেন।তবে আম্মার চিকিৎসা করলেন।
আম্মা বিড়বিড় করছিলেন,"আল্লাহ, আমি মরতে চাই না। আমার ছেলের একটা গতি না দেইখা আমি মইরা বেহেশতেও যাইতে চাইনা।ও আল্লাহ, আমি মরতে চাই না।"

তিন তলার পিসিসিইউ এর ৩নং ব্লকে আটটা বেড।এই ব্লক ছাড়া বাকি ব্লকের সবাই ঘুমিয়ে পরেছে বা ঘুমানোর চেষ্টা করছে।এই ব্লকে আম্মা লুডুর আসর বসিয়েছেন। লুডু খেলায় আমি সব সময় আম্মার দলে থাকি,আব্বা আর মিতু আমাদের বিপক্ষে থাকে। আজ খেলতে পারছি না। আম্মা মহিলা ব্লকে, ওখানে ছেলেদের যাওয়া নিষেধ!

আব্বা দুএকবার আম্মাকে ডাকলেন,"ইলা, এই ইলা। তুমি এত কথা বলছো কেন?ডাক্তার বলেছে কথা না বলে শুয়ে থাকতে।"
আম্মা আব্বার দিকে তাকাচ্ছেন না। উনি "কানা"র চিন্তায় মগ্ন!আম্মার কানা উঠলেই একটা পাকা গুটি খাওয়া পরবে।
এক বয়স্ক মহিলা বললেন,"আফা একটা কথা জিজ্ঞেস করি। কিছু মনে করবেন না। এইটা কি আপনের নিজের ছেলে? চান্দের মত ছেলে! আপনি আর ভাই দুজনেই কালো, এই ছেলে চান্দের রূপ পেল কিভাবে?"
কলেজ শিক্ষিকার মত তিনি নিজের চশমা ঠিক করে উত্তরের জন্য অপেক্ষা করছেন।

আম্মা এই প্রশ্ন অনেকবার শুনেছেন। কোন অনুষ্ঠানে গেলেই আম্মা এই প্রশ্ন শুনেন।কোন উত্তর দেন না।আম্মা খুব মন খারাপ করেন, আমার দিকে তাকিয়ে থাকেন। আমি কি বলবো? আর আম্মাই বা এত বিব্রতবোধ করেন কেন? আম্মাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, আম্মা কিছু বলেননি অঝোরে কেঁদেছেন।

৩...
আম্মা কেবিনে ঘুমোচ্ছেন। আমি আর আব্বা বাইরে পায়চারি করছি। দাদাজান এখনো পৌছাননি। তিনি মিতুকে স্কুল থেকে নিয়ে আসবেন।

ছোট বৃত্তাকার কাচের জানালা দিয়ে আম্মাকে দেখা যাচ্ছে। আম্মা মাঝেমধ্যে চোখ খুলেই ডাকেন,"মুহিত, এই মুহিত। তুই আমার হাত ছাড়বি না। দূরে আজরাইল দাঁড়াইয়া আছে, তুই হাত ছাড়লেই খেল খতম! আমি তোর মারে গিয়ে কি কমু, আমার লজ্জা আছে!আমি তোকে বিয়া করামু, তোর পুলামাইয়ারে স্কুলে দিয়া আসমু, নিয়া আসমু। রাইতে কমু এত্তগুলা ভূত পেত্নীর কিসসা! তুই ছোটবেলায় ভূত ভয় পাইতি। ডরে আমার আঁচল ঠেংএর লগে বাইন্ধা ঘুমাইতি। ইছা মাছের মত পেচাইয়া আমার লগে মিইশ্যা যাইতি।কি যে ভালা লাগতো!মনে অইতো, আমার কোলে চান্নি আইসা পরছে।
আমার মায়ে কইছে, সতীনের পুলারে এত আদর কিয়ের। এরপর মায়ের কাছে আর যাইনাই। কেন যামু?
তুই আমার পুলা, মাইনশে যাই মনে লয় কউক!আমি কালা, তুই ফকফইক্কা সাদা তয় কি অইছে! জন্ম না দিলে মা অয় না কে কইছে? যে কইছে মিছা কইছে! মাইনশে যেসুম কয়, তুই আমার আসল পুলা না, একদিন আমারে ছাইড়া যাইবিগা!আমার খারাপ লাগে। কই যাইবি তুই? আমারে নিবিনা?"
বাইরে থেকে সব শোনা যায়, আমার আম্মা আস্তে কথা বলতে পারেন না।
আম্মা কাঁদতে থাকেন। আমি ভেতরে যেতে পারি না।কেবিনে প্রবেশ নিষেধ।

কেবিনের আয়া বেড়িয়ে এলেন, চোখ মুছছেন। উনি নোংরা সবুজ শাড়ি, ধবধবে সাদা ব্লাউজ পড়েছেন। ম্যাচিং হয়নি, তবুও ভালো লাগছে।ব্লাউজের হাত কব্জি পর্যন্ত, বডি এমন লম্না যে পেটের কোন অংশ দেখা যাচ্ছে না। কে বলে শাড়ি অশ্লীল পোশাক? ইনাকে আমার ভালো লাগলো।
কিছু মানুষ থাকে যাদের দেখলেই মন বলে, ইনি ভালো মানুষ।
"আপনে হের ছেলে।আহারে! কি ভালোবাসা। জানেন, আমারও একটা ছেলে আছে।সে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। বিরাট মেধাবী ছেলে।অনেক দিন দেখি না।খুব পড়াশোনা করেতো, সময় পায় না।"
"আপনার ছেলে আসে না?"
"না, অনেকদিন আসে না।পড়াশোনার খুব চাপ।আপনিতো পড়াশোনা করেছেন, আপনিই এত কি চাপ, যে এক'দু দিনের জন্যও আসা যায় না!আমি যেতে চাইলেও নিষেধ করে। শুধু টাকা লাগলে কল দেয়।মাঝেমধ্যে জিজ্ঞেসও করে না, আমি কেমন আছি।"
আমি চুপ করে রইলাম।
"খুব ছোটবেলায় ওর বাবা মারা গেল।আমি মানুষের বাসায় কাজ করে ওকে পড়িয়েছি।নিজে কাজ করেছি, ওকে কাজ করতে দেইনি। ওকে স্কুলে পাঠিয়েছি। খাতা কলম কিনে দিতে পারিনি। ও খাতায় প্রথমে পেন্সিল দিয়ে লিখতো, আমি ওগুলা মুছে দিতাম।পরে আবার কলম দিয়ে লিখতো। আমি আয়া, এখন এই পরিচয় দিতে ও লজ্জা পায়।আমি সব বুঝি।
একটু সাহায্য করুন, ওর নাম্বারে দশ হাজার টাকা বিকাশ করে দিন। এইমাত্র টাকা চেয়ে কল দিয়েছে।"

ছেলের নাম রাকিব।আমি টাকা পাঠিয়ে মোবাইল ফেরত দিলাম। উনি বললেন,"আপনি রুমে গিয়ে মায়ের হাত ধরে বসে থাকেন। আপনার আম্মার ভালো লাগবে।ডাক্তাররা বলে রুগির হাত ধরে থাকলে জীবাণু ছড়ায়। কিন্তু যে ভালোবাসা, সাহস অসুস্থ মানুষটা পায়; তা তারা দেখতে পায় না।
আপনি যান, ডাক্তার এলে আমি আপনাকে বলবো।আপনি তাড়াতাড়ি বেড়িয়ে পরবেন।"

৪...
আব্বা হাসপাতাল ঘুরে আসলেন।আব্বার মুখটা হাসি হাসি। দাদাজান বিরক্ত হচ্ছেন, কিছু বলতে পারছেন না।পাশেই মিতু বসে আছে।
আব্বা আনন্দিত গলায় বললেন,"জানিস মুহিত, এই হৃদরোগ ইন্সটিটিউটের প্রধান ডাক্তার আমার বন্ধু বুলবুল।আমারও ওর সাথেই ডাক্তারি পড়ার কথা ছিল, দূর্ভাগ্যক্রমে আমি পারিনি।আমি ওর সাথে দেখা করতে যাচ্ছি।দেখিস, তোর আম্মা এই হাসপাতালে জেনে কি সমাদরটাই না করবে।সারাক্ষণ একটা চিকিৎসক ব্যবস্থা করে ফেলবে, দেখিস। আমার জিগরি বন্ধু। স্কুলে আমরা ওকে নিয়ে ছড়া কাটতাম। "বুলু বুলু তুই একটা আলু"। হাহা...."
মিতু আর আব্বা হাসছেন। দাদাভাই ঘোৎঘোৎ শব্দ করছেন। অতিরিক্ত রেগে গেলে দাদা এমন শব্দ করে রাগ গিলে ফেলেন! দাদা ভাই যখন রেগে যান, তার মাথায় একটা বেতের টুপি পড়িয়ে দিলেই মাওলানা ভাসানী। উনার সাথে এই তফাৎ, উনি সবসময় নাকি রেগে থাকতেন!

আব্বা খুব উৎসাহ নিয়ে ডা. বুলবুল আহমেদ এর সাথে দেখা করতে গেলেন।
দুই ঘন্টা হয়ে গেল। আম্মার কেবিনের আয়া এলেন না। এই সুযোগে আমার সাথে দাদা ভাই আর মিতুও কেবিনে ঢুকে পরলো।আমরা সবাই মিলে গল্প করছি।
আম্মা কিছুটা বিরক্তমুখে বললেন,"মুহিত, আমি অসুখে কি কি আইড়া-নাইড়া প্যাচাল পাড়ছি তুই হুনছস? আমার ছুডুবালার অভ্যাস অসুখ অইলেই প্যাচাল পাড়ি!কি হুনছস তুই?আমারে ক।"
"আম্মা, আমি কিছুই শুনিনি। এরা কেবিনে আসতে দেয় নাই।"
"ভালা করছে।তয় পরেরবার আমারে হাসপাতালে আর আনবি না।মা অসুস্থ হেরা পুলারে ঘরে আইতে দিবো না, এইডা কেমুন কথা!"

আম্মা জেদ করছেন। রাতে সবাই একসাথে খাবার খেতে হবে,তিনি দেখবেন হাসপাতালে সবাই একসাথে খাবার খেতে কেমন লাগে!পরে নাতি-নাতনীদের সাথে এই গল্প করবেন।আমি আব্বাকে খুজতে বের হলাম।
এই ফ্লোরে ওয়াশরুমের পাশে বেশ মানুষের জটলা।কেউ বললো,"আহারে!এই আয়াটা ভালো ছিল। এর একটা ছেলে আছে। ইনি মারা গেলেন, ছেলেটার কি হবে?"
আমার খোজ নেয়ার অত সময় নেই। আব্বাকে খুজে বের করতে হবে, তারপর খাওয়াদাওয়া শেষে দাদাভাই আর মিতু বাসায় ফিরে যাবে।রাত বেড়ে যাচ্ছে!

আব্বাকে পাঁচ তলায় পাওয়া গেল। আব্বা ডা. বুলবুল আহমেদের রুমের সামনে বসে আছেন। প্রায় ৫ ঘন্টা ধরে বসে আছেন। এসিস্ট্যান্ট এসে বললো,"চাচা, আর কত বসে থাকবেন!একটা কার্ড দিন, দেখি স্যার আপনাকে চিনেন কিনা?"
আব্বা হাসলেন।বললেন,"আমার কার্ড নেই! বানাবো বানাবো করে বানানো হয়না। মুহিত মনে করে দিস, এবার নিজের কার্ড বানাবোই।"
আব্বা একটা চিঠি লিখে দিলেন।
বুলু,
ভালো আছিস? তোর ভাবি তোদের হাসপাতালে, এখন ভালো আছে।অনেক দিন তোদের কারও সাথে দেখা হয় না, আমি ভাবলাম তোর সাথে দেখা করে যাই।
ইতি,
মনিব খান
(কলেজে তোরা আমায় "মনা মিয়া" ডাকতিস)

এসিস্ট্যান্ট চিঠি ফেরত নিয়ে এল।
"চাচা মিয়া,স্যার আজকে ব্যস্ত। আপনাকে অন্যদিন আসতে বলেছেন।"
আব্বা খুব লজ্জা পেলেন। আমার খুব ইচ্ছে করছিল, আব্বার পিঠে হাত রাখি। আব্বা পাশের ওয়াশরুমে ঢুকে গেলেন। সন্তান পিতাকে সান্ত্বনা দিতে পারে না।নিয়ম নেই!

আম্মার কেবিনের পাশে মানুষের জটলা লেগেই আছে।
পারভিন আয়া মারা গেছেন! ওয়াশরুমে পিছলে পরে মাথায় আঘাত পেয়েছেন, প্রায় সাথে সাথেই মারা গেছেন।
উনি যে নাম্বারে প্রায়ই বিকাশ করে টাকা পাঠাতেন সে নাম্বারে কল দিয়ে জানানো হয়েছে। ছেলেটা বলেছে,সে পারভিন নামে কাউকে চিনে না।
আমি সাদা কাপড় সরিয়ে উনাকে দেখলাম। হ্যা, উনার সাথেই আমার কথা হয়েছে। মায়া লাগে!উনি ছেলেটাকে না দেখেই চলে গেলেন। সৃষ্টিকর্তাকে আমার খুব অক্ষম মনে হয়। উনি মানুষের ছোট ছোট ইচ্ছেগুলোও পূরণ করতে পারেন না!

আমি কেবিনে ঢুকতেই আম্মা বললেন,"তুই কি উড়াইল্লা পাখি!কুনসুমু যাস, কুনসুমু আসস খুজ পাই না।এইহানে আমার সামনে বইসা থাক।কোথাও যাবি না।"
পারভিন আয়ার মোবাইলটা আম্মার বেডের পাশে টেনিলের উপর। আমি ওখান থেকে রাকিবের নাম্বার নিয়ে কল দিলাম।

"রাকিব, শুনুন। আজকে হাসপাতালে একজন আয়া মারা গেছেন। নাম পারভিন আক্তার।আপনি উনাকে চেনেন?"
"জ্বী না, আমি উনাকে চিনি না।আপনারা কেন আমাকে বারবার বিরক্ত করছেন, বুঝতে পারছি না!"
"আসলে সমস্যা হয়েছে কি, উনার রুম থেকে ৫ লাখ ক্যাশ টাকা পাওয়া গেছে। উনার কোন ওয়ারিশ নেই!উনি কি আপনার পরিচিত?টাকাগুলো কি করা হবে বুঝতে পারছি না।"
রাকিব কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো।
"উনি আমার মা। আমি চট্টগ্রাম থাকি।আমি এখনি রওনা দিচ্ছি।"
খুব জানতে ইচ্ছে করে;আচ্ছা, টাকাইতো সব।যখন টাকা ছিল না, তখন টাকা মানুষ কিভাবে ঋণ পরিশোধ করতো?

মন্তব্য ১৬ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ৮:১৮

ইসিয়াক বলেছেন: মানুষের জীবন রড় বেশী স্বার্থের শৃঙ্খলে বন্দী ।
পড়ে মন্তব্যে আসছি।

১৫ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ৯:১৮

মেহরাব হাসান খান বলেছেন: তাই বলে এতটা? খারাপ লাগে। একজন ভিক্ষুক এয়ারপোর্টের ফুট ওভার ব্রিজে মারা যান, নিজের ছেলেকে প্রতিনিয়ত টাকা পাঠাতেন। যেদিন মরে ব্রিজেই পরে থাকলেন, বিকাশ দোকানদার ছেলেকে কল দিলেন। উনি চিনতে পারলেন না।খবরটা পড়ে খারাপ লেগেছিল, আমি গল্পে অন্যভাবে লিখেছি।

২| ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ৮:৩৬

রাজীব নুর বলেছেন: চমৎকার।
পড়তে একটুও বিরক্ত লাগে নি।

১৫ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ৯:২০

মেহরাব হাসান খান বলেছেন: আপনি মন্তব্য করেছেন, ভালো লাগছে। গত দুইটা গল্পে একটু পরপর ব্লগে এসেছি, রাজীব ভাই কি বলে! আপনার কমেন্ট নেই!কি যে বাজে অবস্থা।

৩| ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ৯:১৫

শায়মা বলেছেন: ভাইয়া তোমার গল্প পড়লে আমি ভুলে যাই হুমায়ুন আহমেদের গল্পের বই পড়ছি নাকি তোমার! :)

১৫ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ৯:২২

মেহরাব হাসান খান বলেছেন: আমি উনার ভূত! হাহা...

৪| ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ৯:২৪

শায়মা বলেছেন: হা হা তাই তো মনে হচ্ছে......

১৫ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ৯:৩১

মেহরাব হাসান খান বলেছেন: আপা, আপনিই বলুন এজন্য আমার গর্ব করা উচিত কিনা? তবে মাঝেমধ্যে দু'একজন বলে, আমি অনুকরণ করি। ঠিক তা না, আবার তাই।উনার লিখা অনেক পড়ি, এটা একটা কারণ হতে পারে।

আপনারা উৎসাহ দেন, তাই আজেবাজে লিখে যাচ্ছি আরকি!

৫| ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ৯:৪৭

আহমেদ জী এস বলেছেন: মেহরাব হাসান খান ,




সুন্দর লেখা।
গল্পের মাঝে হলেও একটি নিদারূন সত্য বলে গেছেন - সৃষ্টিকর্কাকে আমার খুব অক্ষম মনে হয়। উনি মানুষের ছোট ছোট ইচ্ছাগুলোও পূরণ করতে পারেন না।

১৫ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১০:১৫

মেহরাব হাসান খান বলেছেন: এটা নিছক গল্প। সৃষ্টিকর্তার সবার দিকেই সজাগ দৃষ্টি রাখেন। মাঝেমধ্যে ছোট চাওয়াগুলো এত বড় হয়ে যায়!

৬| ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১০:১৯

ওমেরা বলেছেন: মানুষ কি এত খারাপ হতে পারে ------

১৬ ই নভেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১:০৭

মেহরাব হাসান খান বলেছেন: আমিও বিশ্বাস করি, মানুষ অত খারাপ না। এটা একটা মিথ্যা গল্প। এর ভিত্তি নেই।

৭| ১৬ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১২:২৪

মা.হাসান বলেছেন: অসামান্য লেখা। এয়ারপোর্ট ফুট ওভার ব্রিজের ভিক্ষুকের কথা শুনিনি, তবে ব্লগেই একজন লিখেছিলেন- বাবা হকার, বাসে বাবা-মেয়ের দেখা, মেয়ে বাবর পরিচয় দিতে চায়না।

হাসপাতালে জীবনের চেয়ে ১০ টাকার টিকেটের অনেক বেশি দাম। এরশাদ সাহেব টিকেটের ব্যবস্থা চালু করেছিলেন। প্রথমে মনে হয় তিন টাকা ছিলো। ইত্তেফাকে খবর এসেছিলো-- গরিব পরিবারের কাছে টিকেট কাটার টাকা ছিলো না। ভিক্ষে করে টাকা জোগাড় করার পর ভর্তি করানোর সময়ে দেখা গেল রোগি মারা গেছে। জন বান্ধব কোন সরকারই টিকেট ব্যবস্থার পরিবর্তন করলো না।

১৬ ই নভেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১:০৯

মেহরাব হাসান খান বলেছেন: নিয়ম হবে,আগে চিকিৎসা পরে টাকা। লোকজন তা মানে কই!

৮| ১৬ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১২:২৫

মা.হাসান বলেছেন: আমারো জানতে ইচ্ছে করে যখন টাকা ছিলো না তখন মানুষ কি করে এই অমানুষত্ব দেখাতো।

১৬ ই নভেম্বর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:৫২

মেহরাব হাসান খান বলেছেন: কখনো জানতে পারলে আমাকেও জানাবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.