নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
"মনা রে মনা কোথায় যাস?
বিলের ধারে কাটবো ঘাস
ঘাস কি হবে?
বেচবো হাটে,
কিনবো শাড়ি পাটে পাটে।
মাকে দেব পাটের শাড়ি,
বোনকে দেব রঙিন হাড়ি।"
প্রতিদিন সন্ধ্যায় সুর করে মাথা দুলিয়ে এই ছড়া শিখি।আম্মা মুখ বাঁকিয়ে বলেন,"আমায় শাড়ি পরে কিনে দিও, আগে ছড়াটাতো ভালো করে শিখ।" মাঝের দুই প্যারা ভুলে যাই; মা আর বোন অদলবদল করে বলে ফেলি।
আম্মা সহজে রাগেন না।সেদিন রেগে গেলেন, এক চড় দিয়ে বললেন,"সব কাজে ঠিক কেবল পড়ালেখায় মন নেই।" শাস্তি দিলেন যে আমাকে চিড়িয়াখানায় রেখে আসা হবে। এই দায়িত্ব দেয়া হল কাকাকে। আমি মেনেই নিলাম, যে মা একটা ছড়া শিখতে না পারায় আমাকে মারতে পারেন তারচেয়ে চিড়িয়াখানা ভালো!
কাকা আমাকে চিড়িয়াখানায় না দিয়ে, গ্রামে নিয়ে এলেন। যেহেতু বছরের মাঝখানে কোন স্কুল নিবে না, আমাকে মাদ্রাসায় দেওয়া হল। ক্বারি হুজুর নামে এক ভয়ানক হুজুর আযান দেয়া শেখাচ্ছেন, যারা পারছে না তাদের জালি বেত দিয়ে পাছায় পাঁচটা বাড়ি!
আমার মাদ্রাসা যেতে ইচ্ছে করে না।
প্রতিরাতে স্বপ্নে দেখি, ক্বারি হুজুর আমায় বেত নিয়ে দৌড়াচ্ছেন। আম্মা সামনে দাঁড়িয়ে, আমি তার দিকে দৌড়াচ্ছি আর দৌড়াচ্ছি! আমি প্রাণপণে দৌড়াই আম্মার কাছে পৌঁছাতে পারি না, ক্বারি হুজুর আমায় ধরে ফেলেন!যখনি পাছায় বাড়ি দিবেন আমি "অ আম্মাগো" বলে জেগে উঠি!আম্মাকে কোথাও খুজে পাইনা!
মাদ্রাসায় গেলে আমাকে ২টাকা দেয়া হয়। দুইটা পুড়ি বা দুইটা সিংগাড়া পাওয়া যায়। রিপা, শাকিল, রবিউলরা খায়; আমি খাইনা।আমি টাকা জমাই, গ্রামীণ ফোনে মিনিট ১০ টাকা।খুব জটিল প্রক্রিয়া, এক দোকানে কল দিয়ে আম্মাকে চাইলে তিনি ডেকে দেন। প্রায় ২০ মিনিট লাগে, আমার পিছনে লাইন জমে যায়।লোকজন রেগে যান, আমি মোবাইল ছাড়ি না!
আম্মার সাথে কথা বলি।কখনো কিছু বলতে পারিনা, আমি কাঁদি, আম্মা চুপ করে থাকেন।
"ইচ্ছে" ছড়াটা কবির নাম আহসান হাবীব'সহ মুখস্থ করে ফেলেছি।আম্মাকে পুরোটা শুনিয়ে দিলাম।আম্মা তবুও কিছু বললেন না, চুপ করেই রইলেন। আমি আবার বললাম,"আমি সব ছড়া তাড়াতাড়ি শিখে ফেলবো।দুধ খেয়ে নিবো, রাতে একাই ঘুমাবো।"
দুধ আমার গন্ধ লাগে, বমি আসে। রাতে হেওড়া গাছে পেত্নী আমায় খেয়ে ফেলতে চায়, আমার ভয় লাগে।
আমি সবকিছুতে রাজি, তবু আম্মার মন গললো না।আমি আম্মার সাথে আর কথা বলি না।
দোকানী আমাকে ডেকে লোক পাঠান, আমি যাইনা। যে মা আমাকে নিতে আসে না, তার সাথে আমার কথা কিসের?
সেদিন আমি কান ধরে একপায়ে দাঁড়িয়ে আছি। আমার অপরাধ গুরুতর। আমি মাদ্রাসায় না গিয়ে বিলপাড়ে বসে থাকি, একাএকা কথা বলি। কাকা সেদিন দেখে ফেলেছেন।
বড়ফুপু সেদিন বেড়াতে এলেন। আমার দিকে তাকিয়ে কাকাকে বললেন,"চানু, একে শাস্তি দিচ্ছ কেন?পুলাপান আদরের জিনিস মারার জিনিস না।খবরদার আর যেন না দেখি।"
কোন কারণে বড়ফুপুকে সবাই ভয় পায়। আমি পাইনা, আমি ডাকি "বড় ঝি"।
বড় ঝি আমাকে উনার সাথে নিয়ে গেলেন।
আমায় গোসল করিয়ে ভাত খেতে দিয়েছেন, ডালের বড়া, ঘন ডাল কাতলা মাছের মাথা দিয়ে রান্না করা।
" আপনে খাবেন না?"
"না, তুমি খাও আমি দেখি।তুমি খাইলে আমার খাওয়া হবে।"
"আমি খাইলে দেখলে আপনের কেমনে খাওয়া হবে? হাহা..."
"ও বাজান, তুমি হুবহু আমার আব্বার মতন।আব্বার হাসি, কথা, গায়ের গন্ধ, টিকালো নাক, বসার ভঙ্গি, সব তুমি পাইছো।"
সেদিন রাতেও আমি প্রতিবারের মত স্বপ্ন দেখলাম। ধরফর করে জেগে দেখি আমি একা না।বড় ঝি আমার হাত ধরে আছেন। গালে, পিঠে হাত বুলিয়ে বললেন,"ভয় নাই, বাজান। ভয় নাই, তুমি ঘুমাও আমি জেগে আছি।"
এরপর আমি যতদিন রাতে ঐ ভয়ংকর স্বপ্ন দেখে জেগেছি, দেখেছি বড় ফুপু আমার হাত ধরে বসে আছেন।
গান গাইতেন,"আমার গলার হার খুলে নে লো ওগো ললিতে......."
এই একটা গানই সবসময় গাইতেন। আমার ভালো লাগতো, ঘুমিয়ে পড়তাম।
একসময় স্বপ্নটা আর দেখিনি।
বড় ঝি'র একটা পা ফ্যাকাশে, একটা পা স্বাভাবিক রঙের। ফ্যাকাশে পায়ে অল্প কেটে পেস মেকার লাগানো আছে। একটা লাল, একটা সবুজ বাতি হরদম জ্বলছে।এই বাতি দুইটা নিভে গেলেই নাকি.....।ডাক্তারব্যাটা বিরাট মূর্খ, অলক্ষুণে কথা বলতে নেই তাদের কে বোঝাবে?
আমার কোন কাজ নেই, আমি দেখছি বাতি দুটো জ্বলছে, নিভছে।
বড় ঝি মাঝে চোখ খোলেন আর জিজ্ঞেস করেন,"বাজান, বাতি জ্বলে?"
আমি মাথা নাড়ি। উনি খুশি হন।
"এই বাতি নিভবে না।তুমি বাসায় যাও।বিশ্রাম নাও।তোমার ছেলের নাম দেয়ার আগে আমি কোথাও যাচ্ছি না।"
"আপনি চুপ করে থাকুন। ডাক্তার কথা বলতে নিষেধ করেছেন।"
"আমি কথা বলি না, চুপ করেই আছি।তুমি বাসায় যাও, ঘুমাও।আমার কিছু হবে না।তুমি বাসায় যাও, তোমার হাসপাতাল ভালো লাগে না।তুমি বাসায় গিয়ে ঘুমাও।যাও, এখানে থাকার দরকার কি?যাও তুমি....."
বড় ঝি কাহিল হয়ে কথা থামিয়ে দেন।
আমি কিছু বলি না।কি বলবো আমি?
যে কয়টা রাতে চোখ খুলেই আমার পাশে, হাত ধরে বড় ঝি'কে বসে থাকতে দেখেছি; সে তুলনায় এটা কিছুই না!
০৯ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ৮:২২
মেহরাব হাসান খান বলেছেন: ছেলেকে মানুষ করার জন্য। হয়তো ছেলেকে মানুষ করা, পড়ালেখা করানোর সাধ্য মায়ের ছিল না।
২| ০৯ ই নভেম্বর, ২০১৯ সকাল ৯:১১
রাজীব নুর বলেছেন: হুজুর আপনাকে বেত নিয়ে দৌড়াবে কেন!!
কি আজিব স্বপ্ন!!!
০৯ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ৮:২৪
মেহরাব হাসান খান বলেছেন: মায়ের বিচ্ছেদে বিষাদগ্রস্থ শিশু জীবনের প্রথম স্কুলে গিয়ে যদি দেখে শিক্ষক কাউকে বেদম মারছেন, তার এ ধরনের স্বপ্ন দেখা কি অস্বাভাবিক?
৩| ০৯ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ৯:৩৭
মা.হাসান বলেছেন: ভালোবাসার আলো যারা জ্বালিয়ে রাখে তাদের আলো যেন কখনো না নেভে।
ভালোবাসা থাকলে স্কুল-মাদ্রাসা সবই ঠিক আছে।
আজকাল মানুষ বড় নির্মম হয়ে যাচ্ছে। নিজের সন্তানের প্রতি ভালোবাসার অভাবের কথা মাঝে মাঝেই পত্রিকায় দেখি। শিরোনাম দেখে খবর আর পড়ি না। নির্মমতার খবর ভালো লাগে না।
গল্প অসাধারণ হয়েছে।
১০ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১:১২
মেহরাব হাসান খান বলেছেন: আমিও দয়াহীন, আগেরমত কারও কষ্ট দেখলে খারাপ লাগে না। মনে হয়, আমার কি?
তবে কি জানেন? ভালোবাসা দিলেই ফেরত পাওয়া যায়।
মাদ্রাসায় হুজুররা একটু বেশি মারেন। এর কারণ মাদ্রাসায় আমরা বেয়ারা সন্তানকে ঠিক করতে পাঠাই।
৪| ১১ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১:২৪
জুনায়েদ বি রাহমান বলেছেন: ভালো লেগেছে।
১১ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১:৪৬
মেহরাব হাসান খান বলেছেন: ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১| ০৯ ই নভেম্বর, ২০১৯ ভোর ৬:২৪
ইসিয়াক বলেছেন: দারুণ মমতায় ভরা ।
আচ্ছা, ছেলেটির মা কেন এমন করলো ওর সাথে ?