নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
টাই ফাসের মত লাগছে।চাইলেও ঢিলা করে দিতে পারছি না।আর দুজনের পরই আমার সিরিয়াল। আমাকে বিকাল ৪ টায় আসতে বলা হয়েছে। আমি ২টায় চলে এসেছি, রিস্ক নিতে চাইনি।প্রথম চাকরির ইন্টারভিউ তাই।আগে ৩টা বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করেছিলাম, আমাকে ডাকা হয়নি। হতাশায়, কষ্টে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছিলাম,
"যারা বলতে, বেসরকারি পড়ে কি হবে?
যারা বলতে, এত ভালো সিজিপিএ দিয়ে কি হবে?
এত পড়ে কি হবে?
সবাই ঠিক ছিলে।"
এরপরের আবেদনেই ডাক পরল।
এখানে যারা ভাইভা দিতে বসে আছে, সবার বয়স আমার চেয়ে বেশি।আমিই সদ্য পাস করেছি, একটু অস্বস্তি লাগছিল। আমার অস্বস্তি আরও বাড়িয়ে দিয়ে বাকি দুজনের আগেই আমার ডাক পরলো।আমার পর আরও তিনজন ছিল, সবাইকে চল যেতে বলা হল। সবাই আমার দিকে তাকালো যেন সবই আগে থেকে ঠিক, আমার চাকরি হবে।তবে তাদের ডেকে হয়রানি কেন?
আমি রুমে ঢুকতেই দুজন বের হয়ে গেলেন।একজন চোখ বন্ধ করে বসে আছেন।আমি ছালাম দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। আমার বসা উচিত কিনা বুঝতে পারছি না।
উনি চোখ খুলে তাকালেন। বললেন, বসুন। আহ্হা, দাঁড়িয়ে আছেন কেন?
টাই লুজ করে কোট খুলে রাখলেন।বোঝা যাচ্ছে, উনি বেশ ক্লান্ত। প্রায় সারাদিন ইন্টারভিউ নিয়েছেন হয়তো!
উনি কথা বললেন, "আসলে কি হয়েছে,লেকচারার পদে নেয়া হবে আমাদের চেয়ারম্যানের শ্যালককে।আমাদের আগে জানানো হয়নি।তাহলে আপনাদের কষ্ট দিতাম না।সবাইকে চলে যেতে বলেছি, আপনাকে ডাকলাম।অনেকক্ষণ ধরে বসে আছেন, আর আপনার নামটাও পরিচিত। মেহরাব হাসান খান নামে একজনের লিখা সামু ব্লগে পড়ি।লোকটি খুন,খারাপি, যৌনতা ছাড়া লিখতেই পারেন না।আপনার নামের শেষে কেবল "খান" নেই।আপনি কি সে?"
আমার কিছু বলা উচিত।ক্ষুধা পিপাসায় আমি ক্লান্ত, কি বলবো? আমি একটু হাসলাম। বিরক্ত হলে আমি এমন করেই হাসি।আমার বিরক্ত হবারই কথা। চাকরি হবে না তো আমাকে ডাকবে কেন? আমার সাথে গল্প করার কি আছে?আমি কিছু বলবো, তার আগেই তিনি কথা বলা শুরু করলেন।
"তোমার রেজাল্টের যে অবস্থা দেখলাম, তাতে সাহিত্য পড়ার সময় পেয়েছ বলে মনে হয় না।তবুও জিজ্ঞেস করলাম আরকি। এযুগের ছেলেরা ফেসবুক চালায়,পাবজি খেলে, ইউটিউবে সারাদিন ভিডিও দেখে।সাহিত্য পড়ার সময় তাদের নেই।তুমি করে বলে ফেললাম, কিছু মনে করলে নাতো!"
"আসলে কি, বিশ্ববিদ্যালয়ে রেজাল্ট ভালো করা সহজ। আর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কে.জি স্কুলের মত।আর আমার ইচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকচারার হওয়া তাই পড়েছিলাম ভালো করে।কিন্তু কাজের কাজ হচ্ছে কই।মনে হয় না চাকরি হবে।"
"তুমিতো আমার প্রশ্নের উত্তর দিলে না।তুমি সামু ব্লগে লিখ?"
আমি আবার হাসলাম।এই হাসির অর্থ হ্যা বা না যেকোনোটি হতে পারে!"জোকার" নামের কালজয়ী এক ভিলেন বলেছেন, হাসি মানুষকে দোটানায় ফেলে।সত্যিই তাই হয়!
আমার গল্প করতে ইচ্ছে করছে না।ইদানীং কেউ যদি জানে আমি আজেবাজে টাইপ লিখা লিখি, তার প্রথম কাজ হচ্ছে আমাকে জ্ঞান দেয়া।
সবাই হুমায়ুন আহমেদ হতে পারে না।আর আমার লেখা একদম বাজে পড়া যায় না, খুন খারাপি দিয়ে ভরা।এগুলা এখন আর লোকজন পড়ে না।ইত্যাদি ইত্যাদি.....
আমার খারাপ লাগে!কিছু বলি না, পড়াশোনা করার এই এক খারাপ দিক, চাইলেই মানুষের সাথে খারাপ আচরণ করা যায় না।বিবেক বাধা দেয়।
এইযে ভদ্রলোক আমাকে বসিয়ে রেখেছেন। আগ্রহ নিয়ে গল্প করছেন।আমি কিছু বলতে পারছি না,কারণ বিবেক বাধা দিচ্ছে।
আমার চাকরি হবে না, তো বসিয়ে রেখেছিস কেন?হাদারাম! মনে মনে গালি দিলাম।
ভাগ্যিস,মানুষ মনে মনে কথা বলতে পারে।নয়তো দুনিয়ার বেশিরভাগ মানুষ কষ্টে মারা যেত।
এই যে ইনি, ইনিও যদি জানেন আমিই সামু'র মেহরাব হাসান খান।ইনিও আমার মামা-বাবা-কাকা রূপে আবির্ভূত হবেন।আমাকে বোঝাতে চেষ্টা করবেন, আমার পড়াশোনা করা উচিত। এগুলা করে কিছু হয় না।আমার মা নেই, মা থাকলেও নিশ্চয় তিনিও এসব নিয়ে কথা শুনিয়ে দিতেন।
অথচ আমি বাকিসব ভালোভাবেই করেছি।পুরো ছাত্রজীবন স্কলারশিপের টাকায় পড়েছি।
ক্লাসে প্রথম তিন জনের বাইরে কখনো যাইনি।মাত্র ২০৮৫ টাকায় এইচএসসি পাস করেছি।
হ্যা,হয়তো কোন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাইনি।আমি আইন পড়তে চাইতাম, সবাই চাইতো আমি ডাক্তার হই।ছোটবেলায় বিদ্রোহ করতে পারিনি।তাই বড় হয়ে অহিংস আন্দোলন করলাম, ভালো করে পড়লাম না।পরিণাম আমিই ভোগ করেছি।
প্রথম ভাইভায় নিজেকে প্রমাণ করার সুযোগ না পাওয়া,সারাদিনের ক্লান্তির জন্যই হয়তো এত আজেবাজে চিন্তা করছি।লোকটি আমার সামনে নেই, এজন্য সময়ও পেয়েছি।
উনি ফিরে এলেন হাতে কতগুলো কাগজপত্র নিয়ে, আসলে কয়েকটা এলবাম আর আঁকা ছবি।উপরের ছবিটি দারুণ! প্রেমিকযুগল একটা বটগাছের শেকড়ে বসে আছে,মেয়েটির পরনে সবুজ শাড়ি, কোমড় থেকে পিঠ আর ঘাড়ের দিকটা খালি, কই অশ্লীল লাগছে নাতো! ছেলেটার পরনে মেরুন পাঞ্জাবি, চারপাশে ছড়ানো লালচে মাকাল ফল, দূরে জোড়া শালিক ঠোকড়া-ঠুকড়ি করছে, সামনে ক্ষেত ছেয়ে আছে কাশফুলে, ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পরছে, খুব খেয়াল না করলে দেখা যায় না।শালিক জোড়া আর প্রেমিকযুগল একই ফ্রেমে মিলে একপ্রাণ! মনে হচ্ছিল একটু বাতাস এলেই মেয়েটির চুল আর বটগাছের পাতা নড়বে!এই ছবিটা দেখেই হয়তো কোন গীতিকার লিখেছেন,
"এক শালিকে ঝগড়া হয়
দুই শালিকে প্রেম!....."
উনি ছবির এলবাম আমার দিকে এগিয়ে দিলেন। নিতান্ত অনিচ্ছায় খুলে দেখলাম। প্রথমে একটা ফ্যামিলি ফটো, পরের একটা ছেলের সিংগেল ফটো। ছেলেটা কালোই হবে, টিকালো নাক, সরু হাত পা, চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা, বিভিন্ন পোজে ছবি তুলেছে। বোঝাই যাচ্ছে এই ছেলে ফটোজেনিক।আমাকে এই এলবাম দেখানোর কোন বিশেষত্ব চোখে পরলো না!
বন্ধ করে দিব, তখনি খেয়াল করলাম এলবামের শেষ ছবিটি আমার।আশ্চর্য! এটাতো আমি। ধূসর রঙের কোট পরে দাঁড়িয়ে আছি।কিন্তু আমার ছবি ইনি পেলেন কোথায়, আর আমার ধূসর কোটও নেই!আমার কোট দুইটি, কালো আর নীল।
উত্তেজনায় বাকি ছবিগুলা দেখলাম।
সবগুলো ছবিতে আমি আছি।আমার ছোটবেলার ছবি নেই।কলেজ লাইফ থেকে ছবি আছে।
এই ছবিতে আমি আর সত্যিকারের অবিকল এক!
ছেলেটা আমার মতই ছবিতে পোজ দিয়েছে, আমার মতই কপালের দিকে চুল কম, গায়ের রঙও আমার মত চকচকে কালো, ভিন্নতা কেবল উচ্চতায়!আমি কিছুটা বেটে আর ছেলেটা আমার চেয়ে লম্বা হবে।
ভদ্রলোক আমার উত্তেজনা, জিজ্ঞাসু চাহনি বুঝতে পারলেন।
"এটা তুমি না।আমার ছেলে মঈন, মঈন খান।আমিও তোমার মতই ধাক্কা খেয়েছিলাম।যেদিন তোমার ছবি দেখেছি। আমরা রিক্রুট করার সময় আবেদনকারীর ফেসবুক প্রোফাইল চেক করি।তোমার প্রোফাইল দেখে, অবাক হয়েছি!তুমি আর মঈন হুবহু একই!"
"উনি কোথায়?"
"মঈন নেই, মারা গিয়েছে।"
"আমি দুঃখিত।"
"না, না। দুঃখিত হবার কিছু নেই।মঈন পড়ালেখায় খুব ভালো ছিল।বাকি প্যারেন্টদের মত এগুলো নিয়ে মাথা ঘামাতে হয়নি।ময়মনসিংহ কমিউনিটি বেজড্ মেডিকেল কলেজ থেকে ডাক্তারি পড়েছে। ওর ছবি আঁকার হাত ভালো ছিল।শিল্পী হতে হলে গাজা খেতে হবে, এটা অঘোষিত নিয়ম। ছেলেটা এ নিয়ম কঠিনভাবে মানতো, তাই ডাক্তারি চর্চা করা হল না।আস্তে আস্তে সিরিঞ্জে ড্রাগ নেয়া শুরু করলো। সে ডাক্তার, তার ড্রাগ যোগার করতে অসুবিধা হয়নি। দীনার বিয়ের পর ড্রাগ নেয়ার মাত্রা বেড়ে গেল।দীনাকে সে ভালোবাসতো, আমাদের বলেনি! শেষে দেখা গেল, শরীরে আর কোন রগ বাকি নেই যেখান দিয়ে ড্রাগ নেয়া যাবে।"
"আপনারা চিকিৎসা করাননি?"
"চেষ্টা কম করা হয়নি!আসলে কি, বোকা লোক খারাপ হলে তাতে সমাজের ক্ষতি হয় না, তাকে ঠিক করা যায়।কিন্তু শিক্ষিত লোক খারাপ হয়ে গেলে সমাজের বিরাট ক্ষতি, কারণ তাকে সুপথে আনা যায় না।"
আমার মাথা ব্যাথা করছিল। আমি চলে আসতে চাচ্ছিলাম। আমি আর নিতেও পারছিলাম না।
"তোমাকে অনেক বিরক্ত করলাম।আর বেশি সময় নিবো না।মাত্র ৩০ মিনিট।আমার সাথে একটু হাসপাতালে যাবে? মঈনের আম্মু হাসপাতালে, ডাক্তার বলেছে......."
উনি কথা শেষ করতে পারলেন না।আশ্চর্য! কোট টাই পরা লোকের কান্না আর রাস্তা বা বস্তির লোকের কান্নায় খুব বেশি একটা তফাৎ নেই।যদিও ইদানীং ভিক্ষুকেরা কান্নায় বেশ দক্ষতার পরিচয় দিচ্ছে!
আমি ল্যাবএইড হাসপাতালের ১৪৩ নাম্বার রুমে দাঁড়িয়ে আছি।আমার সামনে বিছানায় অবচেতন অবস্থায় শুয়ে আছেন একজন মহিলা। এই বয়সেও তার সুন্দর মুখশ্রীর কিছুটা আঁচ করা যাচ্ছে।উনার নাকে নল, মুখে অক্সিজেন মাস্ক, মুখের চামড়া কুচকে ভেঙে গালে ঢুকে গিয়েছে, চোখের নিচে কালি পরেছে, ঠোঁট ফেটে গিয়েছে, চোখ বন্ধ তবুও মুখের স্নিগ্ধতা যায়নি। মঈন এত কালো কেন হয়েছিল, কে জানে?
আমার আম্মাও সুন্দরী ছিলেন।অসুস্থ অবস্থাতেও রূপের পুরোটা বোঝা যেত, রূপের জৌলুশ এতটুকু কমতো না।
আমার নানী আম্মাকে বলতেন,"মিনি, তোর পুলাপান তোর রূপের ছিটেফোঁটাও পায়নি।তিনটাই কাইল্লা, নাক বোচা, দাত উঁচু! ছিঃসবগুলা বাপের মত।মাইয়াডাও কাইল্লা হইছে, এইডারে বিয়া দিবি কেমনে?"
ভদ্রলোক আমার হাতটা মহিলার কপালে স্পর্শ করালেন। ত্রিশ সেকেন্ডের মধ্যেই উনি চোখ খুলে, আমার হাত ধরলেন। উনার চোখের জল গড়িয়ে পরছে।
"মঈনরে, তোর নাম রেখেছিলাম আমার বাবার নামে।যদি জানতাম, নামেই তুই আব্বার মত জেদি হবি তবে তখনি মুখে লবণ দিয়ে মেরে ফেলতাম।হাহা...
দূরে বসলি কেন, বিছানায় বসনা।
শোন, দীনার কথা আমাকে বললি না কেন?মেয়েটা হিন্দু বলে? আমাদের কোন আপত্তি ছিল না।আপত্তি থাকবে কেন?
শোন বলি,পাস করেই তোর বাবার ব্যাংকে চাকরি হয়ে গেল।সে ব্যাংকে চাকরি করবে না।বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হবেন, চাকরি ছেড়ে দিয়ে বেকার বসে রইল।
তোর নানা এই বেকার ছেলের সাথে কিছুতেই আমাকে বিয়ে দিবে না, আরও ছেলের বাবা-মা নেই।মানুষের বাড়ি জাইগীর থেকে পড়াশোনা করেছে।বিয়ে দেয়ার প্রশ্নই আসে না।আমরা পালিয়ে এসছিলাম।কি যে কষ্ট করেছি! তোর আব্বা আর আমি ময়মনসিংহ কলেজ রোডে জলিলের মেসে একটা রুম নিয়ে থাকতাম।তোর বাবা ঠিকমতো ভাড়া দিতে পারেনি, জলিল ভাই সারাক্ষণ যদিও গালমন্দ করতো, বের করে দেয়নি! কই?আমিতো চলে যাইনি!
মনে আছে তোর? জিলা স্কুলের সামনে শরৎচন্দ্রের মত দেখতে একজন লোক দাঁড়িয়ে থাকতো।তোর সাথে কথা বলতে আসতো, তোর জন্য চিকেন ফ্রাই,ফ্রেঞ্চ ফ্রাই নিয়ে আসতো!তুই বলতিস, ছেলেধরা!উনিই তোর নানা।তোর বাবাকে পছন্দ করেন না, আর তার ছেলে নাতির জন্য দিওয়ানা।তাকে শিক্ষা দেয়ার জন্যই আমরা তোকে নিয়ে ঢাকা চলে এলাম।"
আমরা তিনজন শব্দ করে হাসলাম।উনি বিছানা থেকে নেমে নিজে আপেল, পেপে কাটলেন। নার্স সাহায্য করতে চাইলে নিষেধ করলেন। কে বলবে, ইনি একটু আগেও অবচেতন ছিলেন। খাবারগুলো আমায় দিয়ে আবার কথা শুরু করলেন।
"হ্যারে মঈন, দীনার কথা বলিসনি কেন?মেয়েটা হিন্দু বলে! দেখতি মেয়েটা ঠিক মানিয়ে নিতো। না বলে বিয়ে করে ফেললি না কেন?সাহস হয়নি বুঝি! ভালোবাসার অনেক শক্তি, দেখতি দীনা মানিয়ে নিত।"
আমি চুপ করেই রইলাম।
"শোন মঈন, তোর যা ইচ্ছে কর।ছবি আঁক, উপন্যাস লিখ, ছবি বানা আমাদের কোন আপত্তি নেই।কিন্তু গাজাটা যদি....."
"ছেড়ে দিয়েছি,মা।আর কখনো ছোবো না।"
বুকের উপর থেকে ভার নেমে গেল।অনেকদিন মা বলে ডাকা হয়নি!
উনি আমার দাঁত দেখলেন। মুখের ঘ্রাণ নিলেন, শরীরে হাত বুলিয়ে দেখলেন।
আম্মাও এমন করতেন। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ম সেমিস্টার। সারাদিন ৫টা টিউশন, ক্লাস শেষে বাসায় ফিরেই পড়তে বসতাম। রাত তিনটা বেজে যেত, আর ঘুম আসতে চাইতো না।আম্মা চুলে বিলি কেটে দিতেন, পিঠে হাত বুলিয়ে দিতেন।কখন ঘুমিয়ে পরতাম, টেরই পেতাম না!
"এই বোকা, কাঁদিস কেন?আশ্চর্য হই!এমন সাহসী বাবার ছেলে তুই এত ভীতু, ছিচ-কাঁদুনে কেন?
এই!তুই কি চাকরির ইন্টারভিউ দিতে গিয়েছিলি?কিসের চাকরি? আবার প্র্যাকটিস শুরু করবি?
বাবার কথায় কিছু করতে হবে না।আমি কথা বলবো। তুই যা ইচ্ছে কর।শুধু চোখের সামনে থাকিস।
যা, বাসায় যা।আমি দেখি, ডাক্তার কবে আমায় ছুটি দেয়।"
আমি রুম থেকে বের হচ্ছিলাম।তিনি আবার ডাকলেন,"মঈন, তোর গল্পের খাতাটা কাল দিয়ে যাবি।সেদিন ছুড়ে ফেলেছিলাম,রাগ করিস না।এখন পড়ে দেখবো। দেখি কেমন লিখিস!"
প্রায় দৌড়ে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলাম।
ভদ্রলোককে কোথাও দেখা গেল না।
উনাকে ওয়েটিংরুমে পাওয়া গেল।
অামায় দেখেই ছুটে এলেন।
"মেহরাব, শোনো, জানি ও একটু বেশি কথা বলে।অন্যের কথা শোনা বেশ কষ্টের কাজ।বিশ্বাস কর, ইলা মানুষ হিসেবে অনেক ভালো। নিজের ডাক্তার ছেলেকে নেশায় নষ্ট হয়ে যেতে দেখেছেতো, তাই একটু বেশি কথা বলে!
আমরা ছেলেটাকে কম অত্যাচার করিনি, ওর আঁকা ছবি, গল্পের খাতা পুড়িয়ে দিয়েছি।ছেলেটা সহ্য করতে পারেনি।
ডাক্তার বলেছে, তুমি যদি ৪-৫ দিন এমনভাবে আসো, গল্প কর তাহলে ইলা,মানে মঈনের আম্মু ঠিক হয়ে যাবে।আসবে তুমি?
না করো না, মেহরাব! আমি প্রতিদিনের জন্য তোমায় ১০ হাজার, না তুমি যত টাকা চাও তাই দিবো!"
"একটা ছেলে নিজের মায়ের কাছে অাসবে, সেই সময়টাকেও টাকা দিয়ে কিনে ফেলতে চান?আশ্চর্য! আর কত মঈন চলে গেলে আপনাদের শিক্ষা হবে বলুনতো?"
০৭ ই অক্টোবর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:১১
মেহরাব হাসান খান বলেছেন: বাহ! তিনজন নিশ্চিত পাঠক পেলাম।
উৎসাহ দেয়ার জন্য ধন্যবাদ!
২| ০৭ ই অক্টোবর, ২০১৯ বিকাল ৫:২৮
প্যারাসিটামল খবিশ বলেছেন: অসাধারন
০৭ ই অক্টোবর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:১২
মেহরাব হাসান খান বলেছেন: ধন্যবাদ।
আর আপনার নামটা ভয়ানক সুন্দর।
৩| ০৭ ই অক্টোবর, ২০১৯ বিকাল ৫:৪২
ইসিয়াক বলেছেন: আমি বিমোহিত !!!!!
০৭ ই অক্টোবর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:১২
মেহরাব হাসান খান বলেছেন: স্বাগতম! স্বাগতম!
৪| ০৭ ই অক্টোবর, ২০১৯ বিকাল ৫:৪৩
সেলিম আনোয়ার বলেছেন: সুন্দর।+
০৭ ই অক্টোবর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:১৪
মেহরাব হাসান খান বলেছেন: মিথ্যে সবসময়ই সুন্দর।
আচ্ছা, এই + চিহ্ন দিয়ে কী বোঝান বলুনতো?
৫| ০৭ ই অক্টোবর, ২০১৯ রাত ৮:৫৮
রাজীব নুর বলেছেন: জীবনে বহু ইন্টারভিউ দিয়েছি।
আমার প্রচন্ড মেজাজ খারাপ হয়। ইচ্ছা করে ওদের জুতা পিটা করি। অথচ হাসি হাসি মুখ করে বসে থাকি। এমন ভাব করি প্রশ্ন কর্তা পৃথিবীর সেরা প্রশ্ন করেছেন। তার প্রতিভায় আমি মুগ্ধ!!
সুন্দর গল্প। বাস্তব গল্প।
০৭ ই অক্টোবর, ২০১৯ রাত ৯:১৬
মেহরাব হাসান খান বলেছেন: ইয়ে মানে, এটাও বানানো।
এখনো ইন্টারভিউ দেয়ার সৌভাগ্য হয়নি।আমি সদ্য পাস করেছি!
৬| ০৭ ই অক্টোবর, ২০১৯ রাত ৯:৪৮
মা.হাসান বলেছেন: মারাত্মক লেখা। সন্তানের সাথে অভিভাবকের দূরত্ব কেন থাকবে? প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে বেড়েই চলছে।
০৮ ই অক্টোবর, ২০১৯ দুপুর ১:১১
মেহরাব হাসান খান বলেছেন: এটাই নিয়ম। আমার দাদার সাথে বাবার দূরত্ব ছিল, বাবার সাথে আমার আর আমার সাথে আমার পরবর্তী প্রজন্মের দূরত্ব থাকবে।
৭| ০৭ ই অক্টোবর, ২০১৯ রাত ১০:০২
ইসিয়াক বলেছেন: লেখক বলেছেন: বাহ! তিনজন নিশ্চিত পাঠক পেলাম।
উৎসাহ দেয়ার জন্য ধন্যবাদ!
সম্মানিত বোধ করছি ।মেহরাব ভাই।
০৮ ই অক্টোবর, ২০১৯ দুপুর ১:১২
মেহরাব হাসান খান বলেছেন: সম্মানিত তো আমি! ইদানীং লোকজন আমার কথা আগে বলে দেয়! হাহা
৮| ০৮ ই অক্টোবর, ২০১৯ সকাল ৭:৫৩
মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:
একবার এক চাকরির ইন্টারভিউতে ( প্রথম শ্রেনীর ক্যাডার পদে) আমাকে জিজ্ঞেস করলেন- আপনি কি মনে করেন যে বিচার বিভাগ আলাদা করার প্রয়োজন?
আমি বললাম- ( যেহেতু কারণগুলো পড়েই গিয়েছিলাম। তাই বলতে কষ্ট হয়নি...)
উনি আমাকে অবাক করে দিয়ে বললেন- আপনি তাহলে ম্যাজিস্ট্রেটদেরকে কি করবেন?
ভাবখানা এই যে আমি প্রধানমন্ত্রী । আমি ইচ্ছে করলেই বিচার বিভাগ স্বাধীন করতে পারি, ম্যাজিস্ট্রেটদেরকে কিছু করতে পারি।
২০০৩ সালের ঘটনা। পিএসসির সেই মেম্বার সাহেব হয়তো এখন আর বেঁচেও নেই।
০৮ ই অক্টোবর, ২০১৯ দুপুর ১:১৪
মেহরাব হাসান খান বলেছেন: আমি আপনার দলের নতুন সদস্য! যদিও এখনো মাঠে নামিনি, সুযোগ খুজছি।
দোয়া করবেন।
৯| ০৮ ই অক্টোবর, ২০১৯ বিকাল ৫:০০
মাহের ইসলাম বলেছেন: বরাবরের মতোই অসাধারণ লিখেছেন।
আপনার প্রতিভায় ঈর্ষান্বিত বোধ করছি।
শুভ কামনা রইল।
১৪ ই অক্টোবর, ২০১৯ বিকাল ৫:২২
মেহরাব হাসান খান বলেছেন: ধন্যবাদ।
আপনাদের শুভ কামনাতেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
ঈর্ষা করছেন শুনে লজ্জা লাগছে!
১০| ১০ ই অক্টোবর, ২০১৯ রাত ৮:৪৪
ৎৎৎঘূৎৎ বলেছেন: আজ না লিখে পারলাম না। আমার হুমায়ুন আহমেদ প্রচুর পড়া আছে। বলতে পারেন নন্দিত নরকে থেকে যখন নামিবে আধার পর্যন্ত। আর আপনার লেখায় স্যারের থিম আর লেখার নগ্ন অনুকরণ রয়েছে। তবে আপনি একজন ভাল লেখক স্বীকার করতেই হচ্ছে। কিন্তু স্যারের ঘোর থেকে বেরুতে পারছেন না নতুবা আপনার অনুকরণ করতেই ভাল লাগছে বলে বোধ করি। স্যারের লেখার মত যদিও আপনার লেখা আমি প্রায় সব পড়ে ফেলেছি তারপরেও বলি, এটা মাঝে মাঝে হতাশ করে আমার মত পাঠকদের যারা হুমায়ুন আহমেদের প্রায় সব বই পড়ে ফেলেছে। প্লিজ, একটু অন্য ধাচে চেষ্টা করুন। কারন আমাকে আপনার লেখা পড়তে হবে। না পড়ে উপায় না থাকলে পাঠকেরা লেখকদের পেছনে পড়ে যায়। ধন্যবাদ আপনাকে।
১৪ ই অক্টোবর, ২০১৯ বিকাল ৫:৪৫
মেহরাব হাসান খান বলেছেন: আমিও পড়া শুরু করেছিলাম হুমায়ুন আহমেদ দিয়েই। অনেক পড়েছি। এখনো পড়ি।
আমি জানি, অনেকেই আগে বলেছে আমি অনুকরণ করছি।
আসলে কি তাই? আসল কথা, আমার জন্য লিখার কিছুই বাকি নেই! সবাই সব লিখে ফেলেছে। আমি কি করছি, ঐগুলোই নতুন করে লিখছি।হয়তো মাঝেমধ্যে নগ্ন অনুকরণ হয়ে যাচ্ছে, বা প্রতিবারই হচ্ছে!
আমি যতই আলাদা লিখি, কারও না কারও সাথে মিলে যাবেই। এজন্য এখন আর হীনমন্যতায় ভুগিনা। মাথায় আজেবাজে যাই আসে লিখে ফেলি।
না লিখলে মাথা কিড়কিড় করে!
১১| ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৯ রাত ২:১৯
মোঃ মঈনুল ইসলামঢ় তুষার বলেছেন: দারুণ লাগল কিন্ত সমস্যা হলো ইদানিং আঁকাআকি করার জন্য মন উশখুশ করতেছে।গল্প পড়ার পরে নিজেকে মঈন নামে কেউ ডাক দিলেই কেমন অনুভূতি হবে সেটাই চিন্তার বিষয়।
২৩ শে অক্টোবর, ২০১৯ রাত ৮:৫৩
মেহরাব হাসান খান বলেছেন: দারুণ লাগারই কথা।
আপনার আকা ছবি কোথায় দেখা যাবে?
১২| ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ২:১৮
রায়হান চৌঃ বলেছেন: অসাধারণ লিখেন, আপনারা আছেন বলেই সামু আজ ও টিকে আছ। তা না হলে চিচকে নেতার ভারে সামুর ভাত কবে উঠে যেত। চালিয়ে যান...
আর আমি ও রোজ, খুজে খুজে লিখা গুলো পড়ে নিব। ভালো থাকবেন।
০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ১২:২২
মেহরাব হাসান খান বলেছেন: এত দিন আগের লিখা পড়েছেন, এটা দেখেই আনন্দ লাগছে। ধন্যবাদ।
আসলে কি জানেন, সামুর ভাত ঊঠে যাওয়া অত সহজ হবে না!
হ্যা, লিখে যাবার চেষ্টা করছি। দোয়া করবেন।
©somewhere in net ltd.
১| ০৭ ই অক্টোবর, ২০১৯ বিকাল ৫:০৬
কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: উফ কী যে লিখেন আপনি.... মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে পড়ি
আর কী মন্তব্য করবো বলুন