নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
"লাইলি, ও লাইলি! মা'রে কিছু খাইয়া ল।ল হাসপাতালে যাই।দশদিন ধইরা জ্বরে মটকা দিয়া পইরা আছস।"
"কিছু খাব না খালা,তুমি বাতি নিভাও, ঘুমাও।এত রাতে হাসপাতালে যাবা কেমনে?"
"মারে খাইয়া ল, আমরা গরীব মানুষ। শইল আংগর সব।শইল নষ্ট হইলে কি কইরা খাবি!কিছু খাইয়া ল।ঊঠ!"
লাইলি বিছানা ছেড়ে উঠলো না।কাথা মুড়ি দিয়ে পাশ ফিরে শুয়েই রইল। রাহেলাও ঘুমানোর জন্য খড়ের বিছানায় শুয়ে পরলেন।
একটু পরই দরজায় ঠকঠক শব্দ হল। গলা কাশির শব্দ, এই শব্দ দু'একদিন পরপর রাতেই হয়।বাড়ির কর্তা মজিদ মিয়া রাতেই রাহেলার সাথে দেখা করতে আসেন।অন্য সময় রাহেলার দিকে তাকানো না।নিষেধ আছে, কঠিন নিষেধ!মনিরের মা কঠিন জিনিস!
রাহেলা ঘরে একাই থাকে, তখন সমস্যা হয় না।কয়েক দিন ধরে সমস্যা হচ্ছে, কারণ রাহেলার ভাগ্নি লাইলি বেড়াতে এসেছে।মেয়ে জ্বরে ভুগছে, তাই সে কিছু বলতেও পারছে না।
রাহেলা ও মজিদ বাড়ির উত্তর দিকে গোয়াল ঘরের পিছনে গেল।মজিদ খড় বিছিয়ে শোয়ার মত একটা জায়গা করলো।
রাহেলা শুয়ে বললো,"আপনে প্রতি রাতেই আসেন কেন?লাইলি কি মনে করে কে জানে!"
মজিদ নিঃশব্দে একটু হাসলো, বললো,"রাহেলা, লাইলি এই বাইতেই থাহুক।সমস্যা তো নাই।খালি একটু তর মত......"
রাহেলা রেগে উঠলো। বললো,"ছোট মাইয়া, ওরে তো ছাইড়া দেন।যা করার আমারে করেন, আমি ওরে বিয়া দিমু।"
মজিদ হাফ ছেড়ে পাশেই শুয়ে পরলো।লম্বা লম্বা দম নিচ্ছে।সে লাইলিকে চায়, সে নিশ্চিত ছিল যে রাহেলা রাজি হবে না।সকালে রাহেলা আর মনিরের মা পাশের বাড়ি ধান ভানতে গেলে, সে চুপিচুপি লাইলির ঘরে গিয়েছিল। মেয়েটা মরার মত পরে আছে, জ্বরে কাবু।তিনি তবুও গায়ে হাত দিয়েছেন। পরক্ষণেই মনে হল, থাক আল্লাহ নারাজ হবেন।তিনি কোন দিন মেয়ে লোকের ইচ্ছে আর টাকা ছাড়া কোন মেয়ের গায়ে ছানাছানি করেন নাই।
তবে লাইলি মাইয়াটা চালাক আছে।আগেরবার যখন বেড়াতে এসেছিল, তখন মজিদ চেষ্টা করেছিল।লোভ দেখিয়েছিল।শরীর টেপার কথা বলে তাকে ঘরে ডেকে নিয়েছিল।গায়ে একটু হাত ছোয়াতেই মেয়েটা দূরে চলে গেল।ছোট মাইয়া, বুঝলো কেমনে?মানে আগেও কেউ এমন করছে।মজিদ বলল,"দূরে যাস কেন?কাছে আয়, আলতা, শাড়ি,চুড়ি কিইন্না দিমুনে।"
সেদিন হাট থেকে শাড়ি, আলতা কিনে দিল। কথা ছিল, লাইলি রাতে বাইরে আসবে। লাইলি আসলো না।ডাকাও গেল না, রাহেলা বুঝে যাবে না!
এবাড়িতে রাহেলা আছে প্রায় ১০ বছর।১৫ বছর বয়সে রাহেলার বিয়ে হয়ে গেল।দশ বছর সংসার করার পরও কোন সন্তান দিতে পারলো না।
ওর স্বামী বিরাট জোয়ান লোক, সারাদিন কামলা খেটে বাড়ি ফিরতো সন্ধ্যায়।খাবার খেয়ে আর জিরানোর নাম নেই।শুরু হত যুদ্ধ, কিন্তু কিছুই হচ্ছিল না।বড় পিরের পড়া তাবিজ, ময়লা বাবার পানি পড়া, বেড় শিমুলের মূল খাওয়া, অমাবস্যা-পূর্ণিমায় ব্রহ্মপুত্রে গোসল করে সহবাস, কিছুই বাদ গেল না।কিন্তু কোন ফল নেই, শাশুড়ী ছেলেকে আবার বিয়ে করালেন। বছর না ঘুরতেই তার সতীন ছেলে সন্তানের জন্মদিল।
স্বামী রাহেলাকে পছন্দ করতো, মাঝেমধ্যে রাতে ঘুমাতে আসতো। সতীন আর শাশুড়ী মিলে রাহেলাকে বাড়ি থেকে বের করে দিল।
লাইলি রাহেলার বোনের মেয়ে।লাইলিকে জন্ম দিয়েই বোন মারা গেল।চান্দের মত দেখতে বোনের মেয়ে লাইলি দেখতে ভালো না হলেও অত খারাপ না।লাইলিকে ওর বাবা রাহেলার কাছে রেখে গেল।বোনের শোক না কাটতেই লাইলির বাবা বিয়ে করে ফেললো। পাঁচ বছর বয়স হলেই লাইলিকে দূরে নান্দিনা গ্রামের মিয়া বাড়িতে কাজে দিয়ে দিল।ছয় মাস কারবারি কাজ, লাইলির বাবা ছয়মাস পরপর কেবল টাকা নিয়ে যায়।মেয়ের সাথে দেখাও করেন না।
শুরুর দিকে লাইলি বাপের বাড়ি যেত।ওর সৎমায়ের অত্যাচারে ওখানেও আর যায় না।রাহেলার কাছে বেড়াতে আসে।রাহেলো ওকে নিজের সন্তানের মত আদর করে বড় করেছে।নিজের বুকের রক্ত খাইয়ে বড় করা ভাগ্নির প্রতি ওর দরদ একটু বেশিই।
রাহেলা লাইলিকে ডলে গোসল করিয়ে, চুলে তেল দিয়ে দেয়। কিছুদিন থাকার পর,লাইলি চলেও যায়।কিন্তু ইদানীং আসলে আর যেতে চায় না।এইতো কয়েকদিন আগেই ওর বাবা মেরে নান্দিনা দিয়ে আসলো।
ভোর হতেই লাইলির জ্বর একটু কমলো, তবে তলপেট-কোমড় থেকে দু'হাটুর মাঝখান দিয়ে পায়খানার রাস্তা পর্যন্ত ভীষণ ব্যাথাটা রয়ে গেল। লাইলি একটু ভাতের ফ্যান খেল।
রাহেলা ভাগ্নিকে নিয়ে বেড়িয়ে পরলো, নকলা হাসপাতালে যাবে।তাড়াতাড়ি বেরিয়ে পড়লে দুপুরের আগেই ফিরতে পারবে।
লাইলি হাটতে পারছে না, দু'হাটুর মাঝখানে ব্যাথা নিয়ে হাটা যায় না।রাহেলা ওকে জড়িয়ে ধরে আস্তে আস্তে হেটে যাচ্ছে।লাইলি একেবারে পাতলা শরীরের, তবুও রাহেলার কষ্ট হচ্ছে।একটা শরীরের ভার নিয়ে ৩-৪ কিলোমিটার হেটে যাওয়া চাট্টিখানি কথা নয়।রাহেলা টের পেল, লাইলির শরীর ঠিক মেয়েদের মত নরম না।কেমন কম বয়সী ছেলেদের মত,বয়ঃসন্ধিকালে ছেলেদের শরীর যেমন হয় অমন!
কোমড়ে মাংসের বালাই নেই।বুকের দিকটা কেমন মিশে গেছে, মুখের কোমল ভাব নেই।অথচ আগেরবার গোসল করানোর সময়ও দেখেছেন, কচি বুক!আজ এমন মনে হচ্ছে কেন?
রাহেলা লাইলিকে নিয়ে পাঠাকাটা বাজারের আগে যে স্টিল ব্রিজটা পরে ঐটার উপর বসলো। বললো,"মারে, তুই কি কিছু লুহাইতাছস?তর কি অইছে আমারে ক।"
লাইলি হাসলো,"গোপন কথা শুইনা কি করবা, খালা।গোপন কথা গোপনই থাক।আর তুমিও কম গোপন কর না!"
"তর কাছে কিয়ের গুপন!তুই কি জানবার চাস ক, আমি তরে সব কমু।তয় তুইয়ো কিছু লুহাইতে পারবি না।"
"তুমি সব কইলে, আমিও কমু।তয় সত্য কথা কইবা।মজিদ মিয়া তোমারে রাতে ডাকে কেন?"
"মারে, তর খালুর বাইতে থেইকা বাইর কইরা দিল।এমন সোন্দর চেহারা সুরত আমার, গায়ে যইবন!কেউ কামে নেয় না।মজিদ সাবের বৌ কাম দিল, নতুন শাড়ি দিল, কইল খালি চুরি না করলেই অইব।আর শইল ঢাইকা রাখতে অইব।অমন মাডির মানুষের কপালে জুটছে একটা খাচ্চোর জামাই!একদিন রাইতে আমার ঘরে হাজির, এই বাইতে কামে থাকতে অইলে এই কাম করন লাগবো। আমি কিছু কই নাই, কি কমু!শইলের খিদা বড় খিদা।আর আমার অসুবিদা কি, আমিতো বাঞ্জা!"
"তয় আমার কথা শুনো।আমার ঘটনাও তোমার মতই।মানুষ দেখে শরীলটা।এইযে অভাবে পইরা তাগর বাড়িতে কাম করি, তাগরে কোন দয়া লাগে না, মায়া হয় না।
এক রাতে ঘুমাইতাছি, মাঝ রাইতে জাগনা হইলাম।দেখি বড় মিয়া আমার উপরে বইসা আছে।আমি চিৎকার করমু, উনি কইলেন, তরে আলতা চুড়ি কিইন্না দিমু। কাকায় বুক ছানাছানি করলো পায়জামা খুলার আগেই কাকি জাইগা গেল।কাকায় চইলা গেল।পরদিন সকাল থেইকা বুকে ব্যাথায় মইরা যাই।"
রাহেলা লাইলিকে জড়িয়ে ধরলেন। আহারে! মেয়েটা এই বয়সেই কি অত্যাচারের মধ্যে দিয়ে গেছে।
"ও খালা, ঘটনা শেষ না।আগে শুইনা লও।
হের পরদিন কাকায় আবার আইলো।এইবার আলতা চুড়ি, লাল ফিতা নিয়া আইছে!
সেদিন রাতে কাকায় পায়জামা খুইলা, খুব ব্যাথা দিছে।কিছু কইনাই।আমার লোভ লাগছে, আলতা চুড়ির লোভ।তুমার কাছে টেকা নাই, আব্বায়তো জীবনে কিইনা দিব না।এগুলার লোভে চুপ কইরা থাকলাম।
এই অত্যাচার চলতেই থাকলো। আর সহ্য হয় না।আবার কাকার লগে যোগ দিল কামাল ভাই।কলপাড়, বাগানে, একলা ঘরে যেহানে পায় শইল-বুক ছানাছানি করে। অমন ছোটপুলাও আমারে ছাড়লো না।ওইপুলারে আমি নিজে হেদিনও লেংটা কইরা গোসল করাইতাম।দুধের শিশু! পুরুষই হয় নাই।আর তার কি তেজ,যদি তুমি দেখতা!
আমার বাচন নাই, কাকায় বুড়া মানুষ হেয়তো ছাইড়া দেয়।কামাল ভাই ছাড়তে চায় না।মায়া বড়ি খাই, একদিন তাদের কইলাম, আমি এগুলা করবার চাই না।
পরেরদিনই কামাল ভাই হের টেকা হারাইছে কইয়া আমারে পিটাইলো।কেউ বুঝলো না, আমি বুঝলাম!
কতবার পলাইয়া আইছি, তুমি আব্বায় আবার ঐ মিয়া বাড়ি পাঠাইছ।
পরে আল্লার কাছে নামাজ পইড়া দোয়া করা শুরু করছি।আল্লা ছাড়া আমারে কেডা বাচাইব!"
রাহেলা খুব কাদলেন।তিনি নিজেকে ধিক্কার দিলেন, কেন যে আগে জানতে চাননি?বললেন,"তোকে আর ঐবাড়ি কামে যাইতে অইব না।আমি তোরে বিয়া দিমু।"
"আমারে কে বিয়া করবো?দেহ না, আমার গায়ে কিছু আছে!আমার শইল এখন বেটা ছেলের শইল।"
লাইলি শব্দ করে হাসলো।
ওরা ডাক্তার দেখিয়ে ফিরতে দুপুর গড়িয়ে গেল।রাহেলা বাড়ি ফিরেই লাইলিকে গোসল করিয়ে, ওষুধ খাইয়ে দিল।লাইলিকে বিছানায় শুইয়ে দিল, মেয়েটার আবার জ্বর এসেছে, হাটুর মাঝখানে ব্যাথাটাতো আছেই।
রাহেলা কাজে লেগে গেল।বাড়িতে নতুন ধান উঠেছে, ধান সিদ্ধ কর, শুকাও আবার ডুলিতে উঠাও কাজের কি শ্যাষ আছে!
ধান সিদ্ধ করতে করতে রাত পেড়িয়ে গেল।
শেষ রাতে রাহেলা খেয়ে ঘুমাতে গেল।
লাইলির কপালে হাত রাখলো, একদম জ্বর নেই।লাইলি জেগেই ছিল, কিছু বলছে না।রাহেলা ভাগ্নির কপালে চুমু খেয়ে ডাকলেন,"লাইলি, ও লাইলি।খিদা লাগছে তর, ভাত খাবি?"
লাইলি উঠে বসলো, বলল, খিদা লাগছে খালা।ভাত দেও।
রাহেলা চমকে গেল। একি!এত ছেলেদের গলা।
"চমকাইলা খালা?আমার খালি গলা বদলায় নাই।সব বদলাইছে।আমি আর মাইয়া নাই।পোলা হইছি।আল্লায় আমার ইচ্ছা পূরণ করছে, আমিতো এতদিন এই দোয়াই করছি!খালা, তুমি আমারে আর লাইলি ডাকবা না, লালন ডাকবা।আমি আর মাইয়া নাই, আমি তোমার পোলা লালন।কি বিশ্বাস কর না, তোমার হাত দেও।"
রাহেলা লাইলির শরীর হাত দিয়ে দেখছে।ঘরে কুপি বাটি জ্বলছে, নিবুনিবু আলো আর ঝাপসা চোখে রাহেলা প্রায় কিছুই দেখতে পাচ্ছিল না।তবে হাত দিয়ে বুঝতে পারছে, লাইলি বুক ছেলেদের মত সমান।দু'হাতের পেশিও শক্ত হয়ে গেছে।
লাইলি রাহেলার হাত নিয়ে গেল দু'হাটুর মাঝখানে।
ওখানে মেয়েদের মত কিছুই নেই, পুরুষদের মত লম্বা একটা মাংসল দণ্ড!নেতিয়ে আছে।
রাহেলার অবিশ্বাস করার সুযোগ কই?
রাহেলা বিছানা ছেড়ে ঘরের দরজা খুলে দিল।
আজ ভরা পূর্ণিমা, জ্যোৎস্নায় কুপি বাতির আলো কিছুটা ম্লান হয়ে গেল।এই চাঁদের আলো একটা ঘোর তৈরি করে।এই ঘোরে কেউ পরেছেতো মরেছে!
এই ঘোরে পরেছিলেন গৌতম বুদ্ধ, তিনি গৃহত্যাগী হয়েছেন।কত সাধু-সন্যাসী এই আলোয় মোহিত হয়ে সারাজীবনের অর্জন শরীরের ঘামে বিসর্জন দিয়েছেন! সে তুলনায় একটা মেয়ের এই শারীরিক পরিবর্তন কিছুই না, প্রকৃতির খেয়াল মাত্র!
এটা বোঝার ক্ষমতা রাহেলা কেন, দুনিয়ার কারও নেই।
০৫ ই অক্টোবর, ২০১৯ সকাল ১০:৪৮
মেহরাব হাসান খান বলেছেন: ধন্যবাদ।
ভালো আছেন নিশ্চয়ই।
২| ০৫ ই অক্টোবর, ২০১৯ দুপুর ১:৫৭
রাজীব নুর বলেছেন: গল্পে কোঠাও একটা সমস্যা আছে। সমস্যাটা ধরতে পারছি না।
০৫ ই অক্টোবর, ২০১৯ বিকাল ৫:২০
মেহরাব হাসান খান বলেছেন: আপনি না পারলে আমিও পারবো না। লিখা শেষ হলেই আমি হাত ধুয়ে ফেলি!
৩| ০৬ ই অক্টোবর, ২০১৯ রাত ২:২৮
জুনায়েদ বি রাহমান বলেছেন: গল্পে সমসাময়িক খবিশ মানুষদের খবিশি এবং নিন্ম বিত্তের কুসংস্কার বা ভুল ভাবনা ফুটে উঠেছে।
০৬ ই অক্টোবর, ২০১৯ রাত ২:৪২
মেহরাব হাসান খান বলেছেন: অত চিন্তা ভাবনা করে লিখিনি।একটা প্লট ছিল, কিছুতেই শেষ করতে পারছিলাম না।
ধরেবেধে শেষ করলাম আরকি!
যাইহোক কিছু খুজে পেয়েছেন, এটাই কম কি?
ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১| ০৫ ই অক্টোবর, ২০১৯ ভোর ৫:৩৩
ইসিয়াক বলেছেন: ভালো লেগেছে।