নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

A learning Advocate!

মেহরাব হাসান খান

আমি H2O,,,,Solid,Liquid & Gas.How do you deserve me?

মেহরাব হাসান খান › বিস্তারিত পোস্টঃ

সরি দীপান্বিতা

১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ রাত ২:২৯

ভিডিওগ্রাফার লোকটা আইরিনকে আলাদা পোজ দিতে বলছে, আইরিন না বুঝে বোকার মত তাকিয়ে আছে। লোকটা সাহস করে ওকে ধরে পোজ দেখিয়ে দিতে যাবে, আমি নিষেধ করলাম।
আমি বিরক্ত মুখ করে মঞ্চের সামনে দাঁড়িয়ে আছি।সবাই আমার প্রতি বেশ বিরক্ত, আইরিনের বাবা কাকারা কেউ চায়নি যে গায়ে হলুদ হোক।যেহেতু আমি এবাড়ির মেহমান তাই কেউ কিছু বলছে না।বড় কাকাতো বলেই ফেললেন,"সব ঐ কাইল্লা ছেলেটার দুষ, গায়ে হলুদের কি দরকার!হিন্দুয়ানী কামকাজ, আল্লাহ নারাজ হইবে।"
আমি গায়ে মাখলাম না।আইরিনের চোখেমুখে আনন্দ ঝরে পরছে, দেখতেও ভালো লাগছে!

পরিবারের লোকজন এক এক করে আইরিনের সাথে ছবি তুলতে যাচ্ছে। কেউ কেউ প্রশ্ন করছে,"কেক কখন কাটা হবে?" আইরিন বললো,"আমি জানি না, হাসান ভাই জানে।"
আইরিন আমাকে দু'একবার আমাকে ডাকলো,"হাসান ভাই কই?হাসান ভাই কই?তারে বল না, আমরা ভাইবোনেরা মিলে একটা ছবি তুলি।"

আমি দূরে গায়ে হলুদ মঞ্চের একটু দূরে আড়ালে অন্ধকারে দাঁড়িয়ে আছি।যাতে আইরিনকে দেখা না যায়, পাছে নজর লেগে যায়!আমার এই বোনটাকে আজ বেশ লাগছে, হুট করে কিশোরী থেকে আইরিন তরুণী হয়ে গেছে।বিয়ের আগে মন হয় সব বোনেরাই এমন বড় হয়!
না দেখেও বুঝতে পারলাম আমার পাশে সাদা শাড়িপরা একজন এসে দাড়ালো।
"এবাড়ির লোকজন আপনাকে একটু বেশিই পছন্দ করে।যদিও আপনি এবাড়ির কেউ না।কারণটা আমি জানি, আপনি ওদের ভাষায় কথা বলেন। আর ওদের সাথে কাজেও লেগে পরেন।আপনাকে ওদের থেকে আলাদা করা যায় না!"
"হ্যা, ফ্রিতে একটা কাজের লোক পায়।হা হা....।"

"আপনার সব লিখা পড়েছি।আপনি আনন্দের গল্প লিখতে পারেন না?"
আমি ফেসবুক চালাচ্ছিলাম, চোখ না তুলেই বললাম,"তাই নাকি?আসলে আমি বলতে পারিনা গল্পটা কিসের হবে!শুরু করি, কোনভাবে শেষ হয়ে যায়।সেটা আমার ইচ্ছেমতো হয় না।"

"ওহ, আচ্ছা।শুনুন আপনি চেষ্টা করবেন, একটা সার্থক প্রেমের গল্প লিখার।"
"আচ্ছা, আপনি প্লট দিন।চেষ্টা করে দেখি।"

"এই ধরুন, দীপান্বিতা নামের একটা মেয়ে বিয়েতে বেড়াতে এসে একটা শ্যামলা ছেলের প্রেমে পরে গেল।ছেলেটার সেটা খেয়াল করার সময় কই, সে বাচ্চাদের নিয়ে খেলায় মেতে আছে, নুজহা, মোহনা, অপরূপা,প্রহর, সাগর, সাজারুল, মালেকের সাথে কি নিয়ে মাঝেমধ্যে হাসতে হাসতে গড়িয়ে পরছে, আবার সব ভাবীদের সাথে বসে গল্প করছে, নয়তো কানে ইয়ারফোন গুজে বসে আছে।সে সব দেখতে পায়, কেবল দীপান্বিতা ওর সামনে অদৃশ্য! পারবেন মেয়েটার মনের কথা বুঝে একটা গল্প লিখতে?"
এখানে কথা বাড়িয়ে নেয়া যায় না।তাই আমি মালেককে ডেকে একটু এগিয়ে মঞ্চের কাছে চলে এলাম।

ছবি তোলা প্রায় শেষের দিকে। আমি সাগরদের ঘরের দরজার সিড়িতে বসে আছি।মালেক, প্রহর ওরাও চলে গেছে।সানু ভাবি, শিউলি ভাবি দুবার ছবি তুলতে ডাকলেন।আমি যাইনি, মনোযোগ দিয়ে নোবেলের গান শোনার চেষ্টা করছি।ছেলেটার গলা এত বাজে! লোকজন ওকে নিয়ে এত মাতামাতি করে কেন?আর কয়দিনের বৈরাগী হয়ে ভাতকে অন্ন বলা শুরু করেছে। বাংলাদেশে নাকি কোন ভালো ব্যান্ড নেই!তাহলে রেনেসাঁ, মাইলস্, সোলস, নগর বাউল, এলআরবি এগুলা কিরে ভাই? মাইলস্'র 'মন শুধু মন ছুয়েছে', 'নিঃসঙ্গতা', 'আগের জনম' এগুলা শুনছস বেটা?নোবেলকে মনে মনে একটা বিচ্ছিরি গালি দিলাম।

"আচ্ছা, আপনি সেভ করেন কেন?বাজে লাগে, হালকা দাড়িতে আপনাকে ভালো লাগে।তবে মোছ রাখবেন না।"
সাদা শাড়ি কথা বলছে, কখন এসে দাঁড়িয়েছে টের পাইনি।আমি কিছু বললাম না।

"শুনুন, কেক কাটার সময় কিন্তু আপনি যাবেন না।আপনার পাঞ্জাবী নষ্ট হবে।আকাশী-নীল পাঞ্জাবীতে আপনাকে দারুণ লাগে।মনে হয়, এক টুকরো আকাশ গায়ে দিয়েছেন।"
আমি হেসে বললাম,"আপনি দারুণ বলেছেনতো।গায়ে যেন পরে আছি এক টকরো আকাশ!আশ্চর্য দারুণ একটা লাইন!"

"তখন যে আমি জোক বললাম হাসলেন না কেন?মোহনা, নুজহা, আপরূপা কিছু বললেইতো হাসেন। হাসতে হাসতে শুয়ে পরেন।"
"তখন আপনার জোক নোংরা ছিল।ইদানীং জোকে হাসিও আসে না।বিরক্ত লাগে।"

"লিখবেন দীপান্বিতার গল্পটা?"
"সেটাওতো কষ্টের গল্পই হবে।"

"আপনি গল্পে দীপান্বিতা আর শ্যামলা ছেলেটাকে মিলিয়ে দিবেন। লেখদের অনেক ক্ষমতা, ওরা চাইলে যা ইচ্ছে ঘটিয়ে দিতে পারে।লিখুন না!"
"আচ্ছা, লিখে দিবো।"

"আমি জানি আপনি লিখবেন না।আপনার চোখেমুখে বিরক্তি। আপনি মনে মনে বলছেন, এই বিপদ কখন পিছু ছাড়বে।তাই না?আমি সব বুঝি।"
আমি হাসলাম।
"আপনি চাইলে, এই বিপদ থেকে উদ্ধার পেতে পারেন।একটা ইচ্ছে পূরণ করলেই হবে।আমি আপনার ফেসবুকে পরেছি, আপনি মানুষের ইচ্ছে পূরণ করতে পছন্দ করেন।"
"আচ্ছা, বলুন। চেষ্টা করে দেখি।"

"চলুন না ঐপথের দিকে হেটে আসি।দেখুন না, আপনার চন্দ্রগ্রহণ গল্পের মত আকাশে রুপোর থালার মত চাঁদ। মনে করুন, আজ চন্দ্রউৎসব। যদিও এটা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় নয়, মহামতি আহানের চন্দ্রগীতও নেই, নেই অতিথি পাখির ডাক।তাতে কি?দেখবেন, আছে ঝিঝিপোকা, পানকৌড়ি আর পেচার ডাক, কেমন লিলুয়া বাতাস বইছে।যাবেন?চলুন না।শুধু যদি হাতটা ধরেন!তাতেই......"
আমি কিছুই বললাম না। শুরু থেকেই লাই দেয়া উচিত হয়নি,ভুল করেছি।বিরাট ভুল!

আমি গায়ে হলুদ মঞ্চের দিকে চলে এলাম, যাই কেক কেটে ফেলি।আইরিন অনেকক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছে, ছবির জন্য পোজ দিচ্ছে।ওর কি কোমড় ব্যাথা করে না, মেয়েটি পারেও!

লাইট অফ করে স্পার্কিং ক্যান্ডেল জ্বালিয়েছি। চিরচির শব্দে বাজি ফুটে চারপাশ হালকা আলোকিত। বাচ্চারা ছাড়া বাকিরা বেশ ক্লান্ত, বাচ্চারাই চারপাশে ঘিরে আছে।মালেক,সাগর, সিয়াম,টুনি, প্রহর এরা পার্টি স্প্রে ছিটানো শুরু করলো। কেউ একজন হয়তো আমার পিঠে অলতো করে চাদর বিছিয়ে দিল।
চারপাশ অন্ধকার, স্প্রে আর জরির বোমা ফোটানোর শব্দ ছাড়া আর কিছুই শোনা যাচ্ছে না।কেউ আমার হাত ধরলো, না দেখেও বুঝলাম এটা দীপান্বিতা!
বিরক্ত হয়ে বললাম,"আপনিতো বেশ বিরক্ত করছেন!"

চারপাশে আলো জ্বলে উঠলো। আমার পিঠ থেকেও সরে গেল সাদা আঁচল।এক মুহুর্তে আমার পিঠ, শরীর, চুল, মুখ স্প্রের ফেনা, ঝিলমিল আর কেক'এ ভরে গেল।জন্মদিনের কেকটা না হয় গায়ে মাখার জন্য, তাই বলে গায়ে হলুদের কেকটাও গায়ে মাখতে হবে?
আমি চশমা ছাড়া দেখতে পাই না, আমার চশমা মাখামাখি। চশমা খুলে ঝাপসা দেখলাম, দীপান্বিতা চলে যাচ্ছে।

গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান শেষে, আমি দোকানের চাঙে কানে ইয়ারফুন গুজে বসে আছি।বাজছিল তৌসিফের "এক পলকেই ভালোবেসে ফেলেছি তোকে....."
মনে পড়ে গেল, ঠিক এমনি একটা বিয়েতে সায়মা একটা সাদা আনারকলি পরেছিল।ওকে দেখতে খুব ভালো লাগছিল, প্রতিদিনই ভালো লাগে, সেদিন একটি বেশিই লাগছিল। সারাক্ষণ দেখেও চোখ ভরলো না, ছুয়ে দেখতে ইচ্ছে করছিল।কিন্তু সায়মা কিছুতেই আমার হাত ধরবে না।একবার আমি জোর করেই ধরার চেষ্টা করলাম, ও সরে গেল!নিজেকে অনেক ছোট মনে হয়েছিল।
আবার যেদিন ও শেষবার দেখা করার জন্য এল।ওর সাথে আর দেখা হবেনা, ও বিয়ে করে আমেরিকা চলে যাচ্ছে।
আমি শেষবার হাত ধরতে চাইলাম, ও বিরক্ত হল।
আমি ওর হাত অনেকবার ধরেছি, ঘন্টার পর ঘন্টা হাত ধরে বসে থেকেছি।কিন্তু ঐ দুদিনের জন্য আক্ষেপ হয় এখনো!
ভাবলাম দীপান্বিতাকে কষ্ট দেয়া ঠিক হয়নি।আমি সকালে ওকে বুঝিয়ে বলবো।

সকাল হতেই ওকে খুজলাম,পেলাম না। আইরিনকে দীপান্বিতার জিজ্ঞেস করলাম, ও যেন আকাশ থেকে পরলো।দীপান্বিতা কে?
মোহনা, অপরূপা, নুজহা এমনকি ভাবিরাও কেউ এই নামে কাউকে চেনে না।
যেই মিনমিন করে বললাম,"যে মেয়েটা হলুদের অনুষ্ঠানে সাদা শাড়ি পরেছিল সে মেয়েটা।ও বললো, ওর নাম দীপান্বিতা।"
সবাই আবার অবাক হল, গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে কেউ সাদা শাড়ি পরে নাকি?
অপরূপা, নুজহা, সাগর হাসাহাসি করলো, আমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে।চশমা পরা চার চোখেও ভালো দেখতে পাচ্ছি না!

বিয়ের দিন খুব মন খারাপ থাকলো, মনে মনে দীপান্বিতাকে খুজছিলাম। যদি হুট করে কেউ কথা বলা শুরু করে।রাত বলে চেহারাটাও ভালো করে দেখা হয়নি!আইরিন দু'একবার কিছু বলতে চাইলেও শিউলি ভাবি ওকে কিছু বলতে দিল না।
খুব খারাপ লাগছে, ওকে বলা হল না,"সরি দীপান্বিতা!ন্যাড়া দু'বার বেল তলায় যায় না।"

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ রাত ৩:২০

জুনায়েদ বি রাহমান বলেছেন: বুঝা যাচ্ছে, লেখক প্রেমের সফল, সার্থক গল্প লিখবার চিন্তাভাবনা করছেন।

গল্প ভালো লেগেছে।

১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ সকাল ৯:০৯

মেহরাব হাসান খান বলেছেন: না ভাই, চাইলেই লেখা যায় না। আনন্দের গল্প লিখবো বলে শুরু করি, পরে অন্যরকম হয়ে যায়।
যাইহোক আশা করি, ভালো আছেন।

২| ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ভোর ৬:১১

ইসিয়াক বলেছেন: ভালো লেগেছে ।
সু প্রভাত ।

১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ সকাল ৯:১১

মেহরাব হাসান খান বলেছেন: আপনাকেও সুপ্রভাত।
বেশ কয়েক দিন পর, কথা হল, আশা করি ভালো আছেন।

৩| ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ সকাল ৯:১৪

ইসিয়াক বলেছেন: লেখক বলেছেন: আপনাকেও সুপ্রভাত।
বেশ কয়েক দিন পর, কথা হল, আশা করি ভালো আছেন।

হ্যাঁ মেহরাব ভাই আল্লাহর অশেষ রহমতে অনেক অনেঅ ভালো আছি ।
শুভকামনা রইলো ।
ভালো থাকবেন ।
ধন্যবাদ

১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ সকাল ৯:২২

মেহরাব হাসান খান বলেছেন: আপনিও ভালো থাকুন।

৪| ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ সকাল ৯:১৭

রাজীব নুর বলেছেন: গল্পের যে দিকটা আমার ভালো লেগেছে তা হলো- সহজ সরল ভাষার ব্যবহার। কোনো ভনিতা নেই।

১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ সকাল ৯:২৫

মেহরাব হাসান খান বলেছেন: চেষ্টা করছি, ভণিতা, অযথা অলংকরণ না করতে।
আজেবাজে লিখতে লিখতে একদিন ভালো লিখবোই!
আপনি অবশ্যই ভালো আছেন, ভালো মানুষ সব সময় ভালো থাকে!

৫| ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ রাত ১০:০৮

দৃষ্টিসীমানা বলেছেন: ভাল লাগল ।

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ রাত ১০:১৭

মেহরাব হাসান খান বলেছেন: ধন্যবাদ।
সাথেই থাকুন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.