নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ভদ্রলোকের কোমড়ে দড়ি বাধা থাকলেও দেখতে খারাপ লাগতো না।কিন্তু কোমড়ে দড়ির সাথে দুটি শিশুবাধা, শিশুকন্যা।একজন সাইকেল চালাচ্ছে, অন্যজন হাসিহাসি মুখে পিছনে বসে আছে আর ভদ্রলোক পিছনে পিছনে দৌড়াচ্ছেন।শুধু আমি না, আশেপাশের সবাই তাকিয়ে আছে।সবার চোখে একই প্রশ্ন 'হায় আল্লাহ, বেটায় মাইয়া দুইটারে বাইন্ধা রাখছে কেন?'
আমি উত্তরা শান্তা মরিয়ম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি'র নিচে কেয়ার জন্য অপেক্ষা করছি।ভোর ছয়টা থেকে অপেক্ষা করছি।কেয়া বলেছে সাড়ে ছয়টার মধ্যে চলে আসবে, এখন সাতটা বাজে। এখনো আসছে না, এমন হবার কথা না।আমি ভাবছি অন্যকথা,কাল রাত থেকেই মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে__
"তোমাদের মস্তিষ্কে বীর্য
আর মগজ অণ্ডকোষে"
এর মানে কি?মানে হতে পারে, আমরা সবকিছু সেক্স দিয়ে বিবেচনা করি।তা কিন্তু না।যেমন ধরুন, আপনি আপনার স্ত্রী,কন্যা আর মাকে অতি আবেগে জড়িয়ে ধরলেন, চুমু খেলেন।তিনক্ষেত্রেই কি সেক্স কাজ করবে, শরীরের প্রতিটি নিউরনে সাড়া পরবে?না, তা হবে না।তাহলে এই লাইন দুটো অবশ্যই মিথ্যে!
ভদ্রলোক এখনো মেয়েদের নিয়ে দৌড়াচ্ছেন।মেয়েদুটি জমজ, এদের এক লাইনে বর্ণনা করা যায়।এরা দেখতে অবিকল Frozen মুভির এনা আর এলছা'র মত।একজনের পরনে লাল জামা, আরেকজনের পরনে নীল জামা।এতক্ষণ যে মেয়েটা পিছনে বসে ছিল, সে সাইকেলে চালাচ্ছে।একটু জোরেই চালাচ্ছে, শান্তা মরিয়ামের সামনে থেকে উত্তরা পৌরসভা কার্যালয়ের সামনে দিয়ে LPS স্কুলের সামনে যাচ্ছে আবার ফিরে আসছে।ভদ্রলোক একটু হাপিয়ে গেছেন, বলছেন,"মা, একটু আস্তে চালাও।পরে যাবেতো।" মেয়েটা খিলখিল করে হাসছে, গতি কমাচ্ছে না।পিছনে তার বোন বিরক্ত মুখে বসে আছে।
আমি অভিভূত হয়ে বাপ মেয়েদের খেলা দেখছিলাম। এই আনন্দের জন্যই হয়তো মানুষগুলো খুব ঝামেলা জানার পরও বিয়ে করে,সংসার করে। কেয়া কখন এসে পিছনে দাঁড়িয়েছে দেখতেই পাইনি।
কেয়া বললো,"আশ্চর্য!লোকটা অমন সুন্দরী কন্যাদের বেধে রেখেছে কেন?মেয়ে দুটাতো গরু না যে বেধে রাখতে হবে। আর ওরাতো বড়ও হয়নি যে মানুষ উঠিয়ে নিয়ে যাবে!মুহিব, তুমি যাও বাজে লোকটাকে বল, এখনি যেন মেয়ে দুটার দড়ির বাধন খুলে দেয়।মন চাইলে তিনি নিজের গলায় দড়ি বেধে ঘাস খাক, বাচ্চা দুটোলে বেধে রেখেছে কেন?যাও, মুহিব।দাঁড়িয়ে আছো কেন?"
আমাকে যেত হল না।ভদ্রলোক নিজেই এলেন।কোমড়ের দড়িখুলে ফুটপাতে বসে বড়বড় শ্বাস নিচ্ছেন। দুই মেয়ের একজন বিরক্ত মুখে তাকিয়ে, অন্যজনের মুখ হাসিহাসি। তিনি তিনটা ডাব কাটতে বললেন। আমরাও দুটা ডাবের কথা বললাম। কেয়া একমনে কথা বলে যাচ্ছে কেন তার দেরি হয়েছে।আমি কিন্তু তাকে আগেই মাফ করে দিয়েছি।
"মুহিব শোন কি হয়েছে, ঘুম থেকে উঠে গোসল করবো দেখি গিজারে পানি গরম হচ্ছে না।কফি খেতে গিয়ে জামায় ফেলে দিলাম।গাড়ি বের করতে বললাম, দেখা গেল গাড়িতে তেল নেই।বল কেমন লাগে!এজন্য দেরি হয়ে গেল।"
আমি খুব আগ্রহ নিয়ে শুনছি।সুন্দরীদের সব কথা মনোযোগ দিয়ে শুনতে হয়, আগ্রহ না থাকলেও আগ্রহের অভিনয় করতে হয়।আর কেয়া কথা শুনেও আমি সারাজীবন কাটিয়ে দিতে পারবো। মাঝে মাঝে মনে হয়, কেয়াকে বলে দেই "কেয়া, আমি তোমায় অনেক ভালোবাসি। যেদিন তোমার সাথে দেখা হয় না, আমার কেমন জানি লাগে।তোমায় বলে বোঝাতে পারবো না।"
কিন্তু শেষ পর্যন্ত বলতে ইচ্ছে করে না।ও যতক্ষণ বাইরে থাকে ওর সাথে থাকে একটা জাগুয়ার, যেটার একদিনের তেল কেনার টাকাও আমার কাছে নেই।কোনদিন হবে সে আশাও ক্ষীণ। আমি এখন পর্যন্ত চারটা চাকরিতে আবেদন করেছি, আমার রেজাল্ট এলএলবি'তে ৩.৮৫, এলএলএম'এ ৩.৯২ থাকার পরও আমাকে ডাকেনি!শুধুশুধু এই মেয়েটাকে বিপদে ফেলে দেয়ার মানে হয় না, আমি অনেকবার ভেবেছি কেয়ার সাথে আর দেখা করবো না।কিন্তু পারি না।
ডাব কাটা শেষ, আমি চুমুক দিলাম।ভদ্রলোক উদ্বিগ্ন চোখে আমাকে প্রশ্ন করলেন,"আমার মেয়ে দুটোকে দেখেছেন?" কি আশ্চর্য মেয়ে দুটো এখানেই ছিল।কোথায় গেল? আমি, কেয়া, ভদ্রলোক, ডাব বেচা মামা, সবাই আছেন কেবল মেয়ে দুটো নেই।আছে হয়তো ধারে কাছেই সাইকেল চালাচ্ছে।
না, তাদের পাওয়া গেল না।আমি, কেয়া, ডাব বিক্রেতা, শান্তা মরিয়মের একদল শিক্ষার্থী সবাই খুজছি।পাওয়া যাচ্ছে না। ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, LPS স্কুল, BNCC ভবনের ভিতর, কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল, স্বপ্ন সুপার সপ, কোথায় খোজা হয়নি?সব দেখা শেষ, তাদের পাওয়া গেল না।কেয়া ভদ্রলোকের কলার ধরে বললো,"আপনি একটা রাম বলদ।আপনি কেন, মেয়ে দুটার কোমড়ে বাধন খুলে দিলেন? আপনি জানেন না, মেয়েদের জন্য এই শহর কত ভয়ংকর?" ভদ্রলোক, কেয়া কাঁদছে।
এর মধ্যেই একজন মহিলা এসে ভদ্রলোকের গালে দুটো চড় বসিয়ে দিলেন,"তুই এখন আমার মেয়ে দুটোকে এনে দে।আমি কতবার বললাম, আমার মেয়ে দুটো খুব কৌতূহলী। তাদের নিয়ে বাইরে যেও না।তুমি জানো, মেয়েদের জন্য কৌতূহল কত ভয়াবহ। না, সে মেয়েদের এই নোংরা সমাজে টিকে থাকার জন্য প্রস্তুত করবে। যাও এখন কর প্রস্তুত, দাও টিকে থাকার ট্রেনিং।আমি জানি না, আমি আমার মেয়ে দুটোকে চাই।হাসান, আমার মেয়ে দুটোর কোন ক্ষতি হলে আমি তোমায় খুন করবো।"
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রগুলো আবার নতুন উদ্যমে একই জায়গা আবার খোজা শুরু করলো। বাচ্চা মেয়েদুটো যাবে কোথায়?একটা ছেলে কোনভাবে একটা হাত মাইক জুটিয়ে ফেলেছে, সে ডাকছে,"ইলা, ইরা তোমরা যেখানেই থাকো।ফিরে এসো।তোমাদের বাবা-মা তোমাদের জন্য কাঁদছে।
ফিরে এসো ইলা, ইরা।"
আমি LPS স্কুলের পাশে যে চারতলা কাচা বাজার আছে সেখানে খুজছি।খুজতে খুজতে ছাদে চলে এলাম, ছাদটা রক্তাক্ত। এখানে সেখানে তাজা রক্তের দাগ,পাশেই পরে আছে এক টুকরো লালচে কাপড়।মনটা অজানা সন্দেহ দুলে উঠলো, মেয়ে দুটার সাথে খারাপ কিছু হয়নিতো?হতে পারে মেয়েদুটোকে অত্যাচার করে ছাদ থেকে নিচে ফেলে দেয়া হয়েছে। আমি উৎকণ্ঠা নিয়ে ছাদ থেকে নিচে তাকালাম। ভয়াবহ দৃশ্য দেখলাম!
রেললাইনের পাশে একটা ময়লার ডিবি, তাতে একটা পাখির বাসা। দাঁড়কাকের বাসা, কাক মাথার উপর কা...কা করছে। ময়লার মাঝে একটি লালপরী, একটি লালপরী বসে আছে। তারা কাকের বাচ্চার গায়ে হাত বুলাচ্ছে,মুখে খাবার তুলে দিচ্ছে।কোন কারনে কাকের বাচ্চাটির বাবা-মা এটা পছন্দ করছে না।তারা কা..কা করে অপছন্দের জানান দিচ্ছে।
লালপরীটা নীলপরীকে বলছে,"ইলা, চল ফিরে যাই।শোন মাইকে আমাদের ডাকছে।চল যাই, বাবা আমাদের জন্য কাঁদছে।অনেকক্ষণ হয়েছে, আম্মু কিন্তু আমাদের মারবে।"
পরীদুটো একসাথে আমার দিকে ফিরে তাকালো।নীলপরীটা বললো,"তুমি কি মেয়েধরা? আমাদের ধরে নিয়ে মেরে ফেলবে?"
"তুই চুপ করতো, দেখছিস না তিনি কাঁদছেন।মেয়েধরা কি কখনো কাঁদে নাকি?"
ভদ্রলোক, উনার স্ত্রী মেয়েদের জড়িয়ে ময়লার উপরে পা ছড়িয়ে বসে কাঁদছেন।দেখতে খারাপ লাগছে।আর কান্না সংক্রামক, অতি দ্রুত বাকিদের মধ্যে ছড়িয়ে গেল।শিক্ষার্থী, ডাব বিক্রেতা মামা, পথচারী সবার চোখ ছলছল করছে।অনেকে কৌতূহল নিয়ে প্রশ্ন করছে,"এরা ময়লায় বইসা কান্দে কেন?" "বড় লোকের বেটার মাথা খারাপ হইছেনি?" "ভাই এইখানে কি শুটিং চলে?"
মাথার উপর কাকের সংখ্যা বেড়েই চলছে।তারা আশ্চর্য, মানুষ কখনো এই নোংরা পরিবেশে আসে না।দু'একজন লোক এসে ময়লা ফেলেই চলে যায়।আজ কেন এই ময়লার উপর এত মানুষ জড় হয়েছে?নিশ্চয়ই তার ছোট বাচ্চাটাকে ধরে নিয়ে যাবে, রান্না করে খেয়ে ফেলবে।মানুষ জাতি সর্বভূক, এরা ছোট বাচ্চা থেকে শুরু করে বড় মানুষ সব খেয়ে ফেলতে চায়! দাঁড়কাকের দল উদ্বিগ্ন। বাচ্চাটাও এখন কা..কা করে নিজের ভয় জানান দিচ্ছে।
আমি কেয়ার হাত ধরে ভীড় ঠেলে বেড়িয়ে এসেছি।কেয়া কাঁদছে, কাঁদতে কাঁদতে হেচকির মত উঠে যাচ্ছে।কেয়া শক্তকরে আমার হাত ধরে বললো,"মুহিব শোনো, আমাদের মেয়েদের সবসময় শেকল দিয়ে বেধে রাখবো। একমুহূর্ত আড়াল হতে দেব না।"
২৮ শে আগস্ট, ২০১৯ রাত ৯:১৬
মেহরাব হাসান খান বলেছেন: আরে নাহ, বানিয়ে বানিয়ে লিখা।
তবে সকালে ঐদিকে গেলে দেখতে পাবেন, একজন বাবা মেয়েদের সাইকেলের পিছনে দৌড়াচ্ছে। এতটুকুই সত্য।
২| ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৪:২০
শুভ্রনীল শুভ্রা বলেছেন: এভাবে শেকল দিয়ে বেঁধে রেখে কতদিন ই বা তাদের নিরাপদ রাখা যাবে! সবাই মেয়েদের বেঁধে রাখলে দেখবেন তখন ডাকাতি স্টাইলে হানা দিয়ে ছিনিয়ে নেয়া হচ্ছে। ওর চেয়ে বরং চলুন আমাদের ঘরের ছেলেটিকে শিক্ষা দেই - ''মেয়েদের মেয়ে ভাবার আগে মানুষ ভাবতে শিখ, বাবা। ওরা তোমার বোনের মতোই অন্য কারো বোন। তুমি তোমার বোনকে যেমন সম্মানের চোখে দেখতে চাও, অন্য মেয়েদের ও সেভাবে সম্মান কোরো।''
পৃথিবীটা সব মানুষের জন্য নিরাপদ স্থান হোক।
০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:০৪
মেহরাব হাসান খান বলেছেন: এখানেও রোল প্লে মেয়েটাকেই করতে হবে।প্রতিটা মেয়ে যদি নিজের হেনস্ত হবার ঘটনা নিজের ছেলেকে বলে, কোন ছেলে অমন করবে না।আরেকটা সমাধান হল বই পড়া।
তবে এই গল্পে কিন্তু বাচ্চা দুটো নিরাপদেই ছিল।গল্পের প্লট কিন্তু মেয়েদের সম্মান-অসম্মান করা ছিল না।
৩| ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:৪৯
শুভ্রনীল শুভ্রা বলেছেন: ধন্যবাদ লেখক, আপনার উত্তরের জন্য। অবশ্যই মায়েদের মুখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে, তাদের ছেলেদের সঠিকভাবে বুঝাতে হবে, একদম সত্য বলেছেন। আমি আপনার সাথে একমত। কিন্তু পরিবারের সবাই ইতিবাচক হলে সন্তানরা বখে যাবার সম্ভাবনা কম থাকে। সেক্ষেত্রে বাবার ভূমিকাও গৌণ নয়। আর হ্যাঁ, আমাদের সমস্যা হলো, আমরা বই পড়তে অতটা অভ্যস্ত নই। ভালো বই পড়ার সুন্দর অভ্যেসটিই একজন মানুষকে ইতিবাচকভাবে বেড়ে উঠতে সাহায্য করে।
আমি আপনার গল্পের প্লট বুঝতে পেরেছি।তবে আমার মন্তব্যের মাধ্যমে এটুকুই বুঝাতে চেয়েছি যে আমরা যদি এভাবে ইতিবাচক চিন্তা -চেতনার সুশিক্ষা টা দিতে পারি তবে মেয়েদের জন্য নিরাপদ একটা পৃথিবী গড়ে উঠবে যেখানে আপনার - আমার আদুরে কন্যারা প্রাণ খুলে হাসবে, গাইবে, প্রবল প্রাণ প্রাচুর্য নিয়ে বিশ্বটাকে জয় করবে। যদি আমরা সুন্দর মানসিকতা ধারণ করতে পারি তবে ''মেয়ে দুটার সাথে খারাপ কিছু হয়নিতো'', ''মেয়েদুটোকে অত্যাচার করে ছাদ থেকে ফেলা দেয়া হয়েছে'' এই জাতীয় উৎকণ্ঠায় ভুগতে হবেনা হয়ত।
০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৯ রাত ৯:৩২
মেহরাব হাসান খান বলেছেন: আমরা সবাই দায় এড়াই।বাবা টিচার দিয়ে ভাবেন, সন্তান মানুষ হবে।টিচার অনেক টপিক এড়িয়ে যান। মায়েরা সন্তানের সাথে দূরত্বটা ঠিক কমাতে পারে না।আর ভালো রেজাল্ট ভালো রেজাল্ট করে বই পড়ার অভ্যাস তৈরি হয় না।
আর ছেলেগুলো মানুষ হবার আগেই পুরুষ হয়ে যায়, ফেসবুকের কল্যাণে! যত দিন যাচ্ছে মেয়েদের জন্য দুনিয়া কঠিন,হিংস্র হয়ে যাচ্ছে।
আমি আমার ছাত্রদের বই পড়ার কথা বলি, অভিভাবকেরা খুব রিরক্ত হন!
©somewhere in net ltd.
১| ২৮ শে আগস্ট, ২০১৯ রাত ৯:০৩
রাজীব নুর বলেছেন: বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে লিখেছেন নাকি??