নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

A learning Advocate!

মেহরাব হাসান খান

আমি H2O,,,,Solid,Liquid & Gas.How do you deserve me?

মেহরাব হাসান খান › বিস্তারিত পোস্টঃ

পুতুলের ঘর

২৭ শে আগস্ট, ২০১৯ বিকাল ৪:২৮

ধানমণ্ডি ৩২ নাম্বার বাসার বারান্দা থেকে পুরো রাস্তাটা দেখা যায়।এই রাস্তায় এখন অনেক মানুষের আনাগোনা। আমি হুকুম দিয়েছি, আমার সাথে কেউ দেখা করতে এলে তাকে যেন সরাসরি আমার কাছে নিয়ে যাওয়া হয়।এ দেশের মানুষের বড় কষ্টের দিন চলছে, এরা আমার কাছে কিছু চায় না।শুধু দুঃখের কথা বলতে আসে;ছেলে,স্বামী, বাবা,ভাই, বোন হারানোর কথা জানাতে আসে।আমি কাউকে ফিরিয়ে দেইনা, সবার কথা আগ্রহ নিয়ে শুনি।এরা সবাই আমার আপনজন।
মানুষ জন কেঁদে কেঁদে হানাদার বাহিনীর অত্যাচারের ঘটনা বলে, আমার মন ভেঙে যায়।চোখ ঝাপসা হয়ে আসে।আহারে! মানুষগুলো কত কষ্টের মধ্যে দিয়ে গেছে।পাকিস্তানি জেলে আমি এদের চেয়ে ভালো ছিলাম।

বড় ছেলেকে বলেছি, ডাইনিং টেবিল আরও বড় করতে। অনেক মানুষ দেশের নানা প্রান্ত থেকে আসে, তাদের নিয়ে একসাথে খেতে বসা যায় এমন একটা টেবিল যদি বানানো যেত।আজও টেবিলে জায়গা হয়নি।প্রায় ১০০ জনের মত লোককে রাস্তায় দুপুরের খাবার দেয়া হয়েছে!দেশে খাবারের চরম অভাব।লোকজন খুব আগ্রহ করে ডালভাত খাচ্ছে,দেখতে ভালো লাগে।কে জানে, রেনু এত লোকের খাবার ব্যবস্থা করে কীভাবে?

দেশের অবস্থা খুব খারাপ, চারদিকে লাশ,ভাতের অভাব,আর স্বজন হারানোর আহাজারি তো আছেই।এর মাঝেও কিছু লোক ঠিকই খারাপ কাজ করছে, নিজের স্বার্থে মানুষ ঠকাচ্ছে। সেদিন একজন কৃষক এক খাচা সবজি নিয়ে এল, আমি কাকে যেন ২০ টাকা দিলাম যেন কৃষককে দেয়। একটু পর আমি নিচে নামলে কৃষক আমার কাছে এসে আমার হাত ধরে বললো,"শেখ সাব, আনাইছ আপনের লেইগা আনছি।টেকা লাগবো না, এই নেন আপনের ১০ টেকা।ফেরত না নিলে দিলে কষ্ট পামু।"
আমি তাকে দিয়েছি ২০ টাকা, সে পেয়েছে ১০ টাকা।অত্যন্ত দুঃখের বিষয়! দোতলা থেকে নিচতলায় আসতেই যদি এই নগন্য টাকা অর্ধেক গায়েব হয়ে যায়; তবে সারা দেশে দুর্নীতির অবস্থা সহজে অনুমেয়!

আজ টেবিলে খাবার পরিবেশন করছে অতি রূপবতী এক তরুণী, তাকে খুকি খুকি লাগছে।হবে হয়তো, হাসিনা বা রেহানার বান্ধবী। কিন্তু মেয়েটা ডাইনিংয়ে খাবার কেন পরিবেশন করছে?সে আসছে, সে হাসিনা রেহানার সাথে গল্পগুজব করবে!আর মেয়েদের এখানে আসাও নিষেধ। এখানে দেশের নানা সমস্যা নিয়ে আলোচনা হয়,মেয়েরা শুনলে মনে কষ্ট পাবে। মেয়েরা আসবে কেন?মেয়েটা এমনভাবে ভাত,তরকারি বেড়ে দিচ্ছে যেন সে এই পরিবারের মানুষ। অথচ আমি তাকে আগে দেখেছি বলে মনে পরছে না।

খাওয়া শেষ করে, হাসিনাকে বললাম পাইপে তামাক সাজিয়ে দিতে।পাইপ সাজিয়ে আনলো মেয়েটা।হাসিনা, রেহানাও সাথে এল।
খন্দকার মুশতাক আমাকে জানালো, মেয়েটার নাম পুতুল। মেয়েটাকে তার দুই পুত্রসহ পাক সেনারা ২জুলাই থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে বন্দি করে রেখেছিল।তাতে কি? এখন দেশ স্বাধীন।মেয়েটা নিজের স্বামীর ঘরে ফিরে যাক।
সমস্যা হল, মেয়েটার স্বামী এখন ভালো আচরণ করছে না।যোগাযোগ করছে না।

আমি সেদিন বিকেলে বারান্দায় দাঁড়িয়ে ঘোষণা দিলাম,"তোমরা সকল বীরঙ্গনাদের ঘরে ফিরিয়ে নাও।কোন সমস্যা হলে, তাদের পিতার নামের স্থানে লিখে দাও শেখ মুজিবুর রহমান, আর ঠিকানা ধানমণ্ডি ৩২ নম্বর বাসা।দেশ স্বাধীন করায় তাদের অবদানের মূল্য দেয়ার সামর্থ্য আমার নেই।এটা অতি নগন্য চেষ্টা মাত্র।"

পুতুলের স্বামী আর্মি অফিসার, লোকটা নাকি আমার পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিল রেডিওতে। নিশ্চয়ই চমৎকার লোক হবার কথা।দেশপ্রেমিক! এরা খুব কথা রাখে। আর দেশ স্বাধীনের জন্য জীবন বাজী রেখেছে আর নিজের পরিবারকে গ্রহণ করছে না, এমন হয় কি করে?আমি তাকে খবর দিয়ে আনার ব্যবস্থা করলাম।পুতুলের পুত্র দুটাও অত্যন্ত সুদর্শন, দেখলেই আদর করতে ইচ্ছে করে। তারা অল্প সময়েই রাসেলের সাথে ভাব জমিয়ে ফেলেছে।ওরা একসাথে মুক্তিযুদ্ধ মুক্তিযুদ্ধ খেলছে।

আমার ধারণা ভূল।আমার সামনে পায়ে পা উঠিয়ে যে আর্মি অফিসার বসে আছে, সে উদ্ধত।তবে সে অত্যন্ত সুদর্শন।
পুতুল আর তার স্বামী পাশাপাশি বসে আছে।আল্লাহ এই সুদর্শন পুরুষ আর রূপবতী মেয়েটার জোড়া নিজে তৈরি করে দিয়েছেন।তাদের ছেলে দুটি দূরে দাঁড়িয়ে আছে, বাবাকে মনে হয় খুব ভয় পায়।
ছেলেটার চোখে রঙিন সানগ্লাস।এখানে রোদ নেই, ঘরের মধ্যে সানগ্লাস পড়ার দরকার কি?

আমি বললাম,"তুমি আমার হয়ে স্বাধীনতার ঘোষণা রেডিওতে দিয়েছ, এতে আমি কৃতজ্ঞ।তোমাদের জন্যই দেশ স্বাধীন হয়েছে। আর তুমি ঘরে সানগ্লাস পরে আছ কেন?তোমার মুখ অর্ধেক ঢেকে আছে।"
"আপনিওতো শুরু থেকেই পাইপ টানছেন, কই আমিতো অসুবিধার কথা বলছি না।আমি সানগ্লাস পরে আছি, এতে কোন সমস্যা হবার কথা না।"

উদ্ধত কথাবার্তা, এর সাথে বাড়তি কথা না বলাই ভালো। আমি সরাসরি আসল কথা বললাম।সে একটু ইতস্তত করছে।যেহেতু আমি দেশের প্রেসিডেন্ট তাই সরাসরি না বলতে পারছে না।

আমি জানি, আর্মি অফিসারদের অনেক লোভ, ক্ষমতার লোভ।এই লোভেই কাজ হল।এই কম বয়সী আর্মি অফিসারের র‍্যাঙ্ক বাড়িয়ে দেয়ার কথা বললাম। বললাম যে তাকে আগামী বছরের জুন মাসে কর্নেল পদে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ডেপুটি চিফ-অফ-স্টাফ (উপসেনাপ্রধান) নিযুক্ত করা হবে।
একটা পদ দিয়েও যদি পুতুলের ঘর রক্ষা করা যায়, তাতেই ভালো। আর ছেলেটাও মনে হয় অযোগ্য না।
এবার সে স্ত্রী পুত্রকে ফিরিয়ে নিতে রাজি হল।

অফিসার খুশি মনে নিজের স্ত্রী, দুই পুত্র নিয়ে আমার বাসা থেকে বেড়িয়ে যাচ্ছে। হাসিনা, রেহানা বারান্দা থেকে হাত নাড়িয়ে বিদায় জানাচ্ছে।

একজন সুদর্শন আর্মি অফিসার, একজন অত্যন্ত রূপবতী মেয়ে আর তাদের দুজন চমৎকার ছেলে সন্তান হাত ধরাধরি করে শতশত মানুষের ভীড় ঠেলে এগিয়ে যাচ্ছে, দেখতেই ভালো লাগছে।পুতুল বারবার আমার দিকে ফিরে তাকাচ্ছে, ওর চোখে অশ্রু। আনন্দ অশ্রু।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে আগস্ট, ২০১৯ রাত ৮:৪৩

রাজীব নুর বলেছেন: মনে হলো যেন হুমায়ূন আহমেদ এর দেয়াল উপন্যাসের অংশ পড়লাম।

২৭ শে আগস্ট, ২০১৯ রাত ৯:২৩

মেহরাব হাসান খান বলেছেন: দেয়াল পড়েছি অনেক আগে।কাহিনী মনে নেই।
এমন কোন অংশ ছিল নাকি?

২| ২৭ শে আগস্ট, ২০১৯ রাত ১০:৩৪

জুনায়েদ বি রাহমান বলেছেন: পড়লাম। ভালো উপস্থাপন।

২৮ শে আগস্ট, ২০১৯ বিকাল ৫:১৫

মেহরাব হাসান খান বলেছেন: ধন্যবাদ, সাথে থাকুন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.