নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমাদের বারান্দায় এখনো মৌমাছি আসে, প্রজাপতি উড়াউড়ি করে।ঘাস ফুল ঝাঁক বেধে ফুটে থাকে লাল,হলুদ, সাদা আর লাল-সাদা মিক্সড। ক্যাকটাসেও লাল চার পাপড়ির ফুল ফোটে, ঢোল মানিকের লতা টব ছাড়িয়ে বাইরে ছড়িয়ে যাচ্ছে আর মানি প্ল্যান্টের লতাতো বারান্দা ছাড়িয়ে নিচেই নেমে গেছে!তবে অর্কিডে লাল ফুল ফোটার কথা, ফুটে আছে কড়া নীল রঙের ফুল।এত সুন্দর ফুল কিন্তু ঘ্রাণ নেই।
আয়নার কোণে লাল, নীল টিপ ঠিকই আছে;ড্রেসিং টেবিলে সাজানো আছে বিভিন্ন রকমের চুড়ি আর সব রঙের রেশমি চুড়ি।তমা ওসব চুড়ি আর পরে না, কপালে টিপও দেয় না।আগের মত অফিসে যাবার আগে ড্রেসিং টেবিলের সামনে তমার অনেক সময় নষ্ট হয় না।
তমাকে এখন রান্নাঘরে বেশি সময় দিতে হয় না,সে চট করেই অফিসে যেতে পারে।আমাকেও শুনতে হয় না,"তোমাদের জন্য রান্না ঘরে থেকে থেকে আমি কালো হয়ে যাচ্ছি।আমি দেখেই করছি, অন্য মেয়েরা দেখ গিয়ে সারা দিন সিরিয়াল দেখে।"
কালো কফি মগ বা টেবিলের উপর বাড়তি গুড়া দুধ আর চিনি পড়েই আছে।ওগুলো নিয়ে কেউ টানাটানি করে না।আমরা শান্তভাবে কফি খাই।টিভি রুমে রিমোট নিয়ে আর কাড়াকাড়ি হয় না, কেউতো টিভি রুমে ঘুমিয়ে পরে না।আমাকে মাঝরাতে কাউকে বিছানায় দিয়ে আসতে হয় না!
এখনো ঝমঝমিয়ে রাত দুপুরে মেঘ নামে, পৃথিবী ঝাকিয়ে চাঁদের আলো ঠিকরে পরে, তবে কেউ ডাকে না,"চল ছাদে যাই, বৃষ্টিতে ভিজি।চল ছাদে যাই, চাঁদের আলো খাই।" গাছে পানি কষ্ট করে আমাকেই দিতে হয়।
এখন আর কেউ বলে না,"চল না, জাহাঙ্গীরনগর যাই।বিশুদ্ধ অক্সিজেন নিয়ে আসি।বটে ইচ্ছেমতো ভর্তা-ভাত খাবো।"
তমার ওসবে খেয়াল নেই।ও বৃষ্টি এলেই ছাদে যায়, একা একা ভিজে, কাঁদে কিনা বোঝা যায় না।পূর্ণিমা রাতে বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকে, আমাকে ডাকেও না।হাসনাহেনার ঘ্রাণ, কামিনী ফুলের ঘ্রাণ চারপাশ আলোড়িত করে কিন্তু এতে যে বেশি আনন্দিত হত, সে নেই!
বারান্দায় ফুল ফুটলে যে আনন্দিত হত, সে নেই!মগ ভরা না হলে সে কফি খেত না, কাড়াকাড়ি করে টিভির রিমোট নিত আর আধা রাত টিভি দেখতো; সে নেই!
টিপ, চুড়ি সব আছে শুধু ওগুলো পরার মানুষটা নেই। এখন আর সময়ে অসময়ে কারও এটাসেটা খেতে ইচ্ছে করে না।
আমরা তিনজন একসাথে চাঁদ দেখি না, বৃষ্টিতে ভিজি না, কারও বৃষ্টি এলেই ইলিশ পোলাও খেতে ইচ্ছে করে না।।তমা এখন কাউকে কাজল, চুড়ি, লাল শাড়ি পরিয়ে বৌ সাজিয়ে দেয় না।
এখন আমাকে জাহাঙ্গীরনগর যেতে হয় না, ছুটির দিন আমি ঘুমিয়ে কাটাই, কাকে নিয়ে যাবো?
তাকে আল্লাহ নিজের কাছে নিয়ে গেছেন, খুব তাড়াতাড়ি নিয়ে গেছেন!
এটাও ঠিক কথা না, তাকে আমি খুন করেছি।আমার মেয়ে ইসমামকে আমি নিজে খুন করেছি।
সেদিন আমি তাকে নিয়ে স্কুল থেকে ফিরছিলাম, সে তর্ক জুড়ে দিল, একা একা রাস্তা পার হবে।এ আর এমন কি?আমার মেয়ে ফাইভে পড়ে, বড় হয়ে গেছে।পারবে, না পারার কোন কারণ নেই।
আমি জসিমউদদীন সিগনালে দাঁড়িয়ে রইলাম, মেয়ে বীরের মত রাস্তা পাড় হচ্ছে।আমার দিকে ফিরেও তাকাচ্ছে না।হুট করে কিছু একটা হয়ে গেল! রাস্তায় লেপ্টে আছে স্কলাস্টিকা স্কুলের ড্রেস আর স্কুল ব্যাগ, ওর হাতের একুরিয়ামের এঞ্জেল মাছটাও রাস্তায় লাফাচ্ছে, কিন্তু আমার মেয়েটাকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না।আশ্চর্য! ওকে দেখা যাচ্ছে না কেন?আমি দৌড়ে রাস্তায় চলে গেলাম, কই আমার মেয়েটাতো নেই, এতো রাস্তায় লেপ্টে থাকা মাংস আর রক্ত!
আমি এখন ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করি না, চোখ বন্ধ করে রাস্তা পার হই।কই আমাকেতো রাজপথ গিলে ফেলতে পারে না!আর আমার মেয়েটাকে আমি নিজেই খুন করলাম।
এখনো আমরা দুজন কাঁদি, কেউ জিজ্ঞেস করে না,"ছি!বড় মানুষ হয়ে কাঁদছো, তোমাদের লজ্জা করে না।"
আজ সেই দিন,এই দিনে আমি মেয়ে ইসমামকে নিজে খুন করেছি।
আজ সকাল থেকে আকাশ ঝাকিয়ে বৃষ্টি হচ্ছে।সূর্য আর কালো মেঘের প্রতিযোগিতা সারাদিন ধরেই চলছে, সূর্য কোনভাবেই কালোমেঘের সাথে পারছে না।কালো মেঘও আমাদের সাথে দুঃখে একাত্মতা প্রকাশ করেছে।
আমি আর তমা আমাদের চোখ বেধে ফেললাম, শক্ত করে হাত ধরলাম।আমরা জসিমউদদিন মোড় পাড় হচ্ছি, অনন্তকাল ধরে পাড় হচ্ছি।
২৪ শে আগস্ট, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:৫০
মেহরাব হাসান খান বলেছেন: তখন স্কুলে পড়ি, একজন বাবাকে রাস্তায় খুব কাদতে দেখেছিলাম।আমি এখানে শুধু শহুরে ভাব যোগ করেছি।
২| ২৪ শে আগস্ট, ২০১৯ রাত ৮:৫৮
রাজীব নুর বলেছেন: আসলে মানূষের জীবনে অতীত খুব মূল্যবান ।
২৪ শে আগস্ট, ২০১৯ রাত ৯:২০
মেহরাব হাসান খান বলেছেন: অতীত নিয়েই আমাদের বর্তমান।
©somewhere in net ltd.
১| ২৪ শে আগস্ট, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:২৫
ভুয়া মফিজ বলেছেন: কষ্টের গল্প......বুক ফেটে যাওয়ার গল্প!