নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লতা কোরআন শরীফ পড়ার চেষ্টা করছে।এটা বাংলায় লিখা, সে যেভাবে পড়ছে সে নিজেই সন্তুষ্ট হচ্ছে না।কোরআন পড়তে হয় সুরেলা কণ্ঠে, সে পারছে না।তাকে বানান করে করে প্রায় রিডিং পড়তে হচ্ছে।সে আশাহত চোখে বারবার আমার দিকে তাকাচ্ছে, যদি আমি কোন সমাধান দিতে পারি।আমিও পড়তে পারি না, তবে ইংরেজিতে কোরআন পড়েছি।লতা সারাদিন ফেসবুকে পরে থাকে, সে ফেসবুকে পড়েছে 'কোনো মেয়ে যদি গর্ভবতি অবস্থায় ১ বার পাক কোরআন খতম দেয়, তবে তার সন্তান হবে নেক'কার'। সে চেষ্টা করে যাচ্ছে। দেখতেও ভালো লাগছে। আল্লাহ আল-খ'বীর, তিনি লতার মনের ইচ্ছে পূরণ করবেন।
লতা কাল থেকে কারো সাথে কথা বলছে না।আমার সাথেও না।ঘুমাচ্ছেও অন্যরুমে, ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে দিচ্ছে।এই সময়টাতে মেয়েরা অনেক সমস্যার মধ্যে দিয়ে যায়, তাই আমরা কেউ তাকে ঘাটাচ্ছি না।থাকুক সে নিজের মত।
ঘটনা ঘটেছে গত শুক্রবার রাতে।রাত ৩ টায় সে গোঙাচ্ছিল। আমি গায়ে স্পর্শ করে জাগিয়ে দিলাম।সে জেগেই আমার থেকে দূরে সরে গেল।চিৎকার করে বলছিল,"দূরে থাকো, কাছে আসবে না।একদম কাছে আসবে না।আমার ছেলেকে তুমি কিছুতেই খুন করতে পারবে না।"
সাইড টেবিল থেকে ফল কাটার ছুড়িটা হাতে নিয়ে ঘরের এক কোণে বসে আমার দিকে আতঙ্কিত চোখে থাকিয়ে রইল।দুঃস্বপ্ন দেখেছে।আমি পানির গ্লাসটা নিয়ে ওর হাত ধরার জন্য ধরার জন্য এগিয়ে গেলাম, ও আরও জোরে চিৎকার করে উঠলো,"কাছে আসবে না।আমি তোমাকে খুন করে ফেলবো। তু-তু-তুমি আমার ছেলেটাকে মেরে ফেলতে চাও।"
আম্মা আব্বা ছুটে এলেন।লতা আগের মতই প্রলাপ বকছে,"তোমরা কেউ আমার কাছে আসবে না।তোমরা সবাই আমার ছেলেটাকে মেরে ফেলতে চাও।আমি কিছুতেই তা হতে দেব না।"ছুড়িটা আমাদের দিকে উঁচিয়ে রইল। সারাটা সকাল ঘরের দেয়ালে গা এলিয়ে বসে রইলো,কিছু খেল না।খাবারে নাকি আমরা বিষ মিশিয়ে দিয়েছি। অহেতুক ভয়, অবশ্য এ সময়ে এমন ফ্যান্টাসি অস্বাভাবিক না। আমার শ্বশুর তাকে দুপুরের দিকে নিয়ে গেল।
লতা ক্রুদ্ধ চোখে আমার দিকে তাকিয়ে চলে গেল।
খুব সকালে আমার মোবাইল বেজে উঠল। লতা বাসায় নেই, কোথায় চলে গেছে।ফজরের আযানের পর থেকে তাকে খোজা হচ্ছে, পাওয়া যায়নি।
গত রাতেও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়েছে। সে তার মায়ের প্রতি বটি দাও উঁচিয়ে ছিল, তার মাও তার ছেলেকে মেরে ফেলতে চায়।ওর ছোটবোন কাছে আসতে চাইল, তার প্রতিও একই অভিযোগ! রাতে সে একটা ঘরে দরজা দিয়ে বসে রইলো। ফজরের নামায পড়ে আমার শাশুড়ী খোঁজ নিয়ে তাকে ঘরে পেল না।
আমি জানি ওকে কোথায় পাওয়া যাবে।
গুড়িগুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে।লতা পরিত্যক্ত কারখানার পাশে পুকুর পাড়ে বসে আছে।উঁচু সবুজ গাস আর তার শাড়ির নীল রঙ মিলে একাকার। একঝাঁক মশা ওর চারপাশে ঘুরঘুর করছে, এই আতঙ্কিত মেয়েটাকে বিরক্ত করার সাহস পাচ্ছেনা হয়তো। আমি অনেকক্ষণ ধরে পিছনে দাঁড়িয়ে আছি, ওর এদিকে খেয়াল নেই।ও পুকুরের দিকে তাকিয়ে আছে।পুকুরটা কচুরিপানায় ঢাকা।মাঝখানে অর্ধবৃত্তাকার একটু জায়গা ফাঁকা, সেখানে একদল লাল কার্প আর তেলাপিয়া ভেসে আছে।কেউ অক্সিজেন সংগ্রহ করছে না।মাছের দল এই আতঙ্কিত রূপবতী মেয়েটার দিকে তাকি আছে।এই মেয়েটার অনেক দুঃখ, একদল নিকৃষ্ট মানুষ তার ছেলেটাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করছে!
আমি লতার পাশে বসলাম। গায়ে হাত রাখতেই কেপে উঠলো, আমার দুহাত ধরে বললো,"সাব্বির, আমার ছেলেটাকে কেন ফেলতে চাও।আমার ছেলেটা আমার পিছনে লুকিয়ে থাকে তোমরা ছুড়ি নিয়ে তাকে খুন করতে আসো, আমার ছেলেটা মা মা বলতে ডাকে।বলে,"আমাকে বাঁচাও মা!ওরা আমাকে মেরে ফেললো।" আমার ছেলেটাকে তোমরা মেরো না।আমি ওকে নিয়ে দূরে চলে যাবো, অনেক দূরে।" আমি লতার চোখের দিকে তাকাই, দুচোখে আতঙ্ক নেই, আছে করুণার আবেদন।
লতাকে ফিরিয়ে আনলাম। তবে কথা দিত হল,ও একা ঘরে থাকবে।নিজে রান্না করে খাবে। আমরা তাকে বিরক্ত করি না, ও আছে নিজের মত।তবে আমরা কথা বলার চেষ্টা করলে, আতঙ্কে জড়সড় হয়ে যায়।
আমার আব্বা দেশের সবচেয়ে বড় সিজারিয়ান কাওসার আজাদ শুভ্র'র সাথে কথা বললেন। অতি সজ্জন লোক, তার হাতে এখনো একজন লোকও মারা যায়নি। লতার সাথে খুব খাতির হয়ে গেল,লতা তাকে মামা ডাকে।তিনিই লতার খোঁজ খবর আমাদের দেন, লতার কেবিনে আমাদের যাওয়া নিষেধ। লতা ডা. শুভ্রকে বললেন,"মামা, আপনাকে আপনার মেয়ের মাথায় হাত রেখে কসম কাটতে হবে।আপনি যেকোনো মূল্যে আমার ছেলেটাকে বাঁচাবেন।" ডা. শুভ্র হাসছিলেন, প্রশ্রয়ের হাসি।অতি ছেলেমানুষী কথা, পাত্তা দেয়ার মানে হয় না। কিন্তু পরের দিন দেখা গেল, ওর কেবিনে বেণি দুলিয়ে একটা মেয়ে শিশু ঘোরাঘুরি করছে। ডা. শুভ্র মেয়ের মাথায় হাত রেখে কসম কাটছেন।আহ!কি সুন্দর দৃশ্য।
আমি অপারেশন থিয়েটারে লতার হাত ধরে বসে আছি।খুব প্রবলেম হচ্ছে, লতা অজ্ঞান হয়ে গেছে!আমি হাত ছাড়িয়ে নিতে চাইলাম, ও হাত শক্ত করে ধরে আছে। ডা. শুভ্র খুব ঘামছেন, বাচ্চা কিছুতেই বের করা যাচ্ছে না। তবে কোন হেলথ্ ইস্যু নেই।কম বয়সী মেয়ে সহকারী ভ্যাট 69'এর বোতল থেকে এক গ্লাস তরল ঢেলে এগিয়ে দিতেই, ডা. শুভ্র একচুমুকে গিলে ফেললেন।
আমি হতভম্ব, এখানে হচ্ছেটা কি!আমি হাত ছাড়িয়ে দাঁড়ালাম, ডাক্তারদের গ্রুপটাকে দূরে সরিয়ে দিলাম।
"কেউ লতাকে স্পর্শ করবেন না।একটা মেয়ে মারা যাচ্ছে আর আপনারা মদ গিলছেন।"
এরা কেউ আমার দিকে তাকিয়ে নেই।সবার চোখ আমার পিছনে লতার পায়ের দিকে।আমিও ঘুরে তাকালাম।
একটা সরীসৃপ লতার পা জড়িয়ে বেড়িয়ে আসছে।সারা গা নীলাভ, কপালে একটা টকটকে লাল রঙের চোখ।গায়ে লোম নেই, তবে মাথার চুল অনেক লম্বা। ছোটছোট অগণিত পা দিয়ে আস্তেধীরে লতা বুকের দিকে চলে গেল।ওর মাথার দিকেও একটা মায়াবী লাল চোখ। এটা লতার মুখ স্পর্শ করে স্পষ্টভাবে বলছ,"মা মা, ওঠো।আমাকে বাঁচাও, ওরা আমাকে মেরে ফেলবে।মা,ওরা আমাকে মেরে ফেলবে।"
ওর লম্বা চুলে লতার পুরো মুখ ঢেকে আছে।
সন্ধ্যায় লতার জ্ঞান ফিরলো।সে স্বাভাবিকভাবে উঠে দাঁড়ালো, অনেক সময় নিয়ে গোসল করলো। হাসিহাসি মুখে খাবার খেল, আজ ওর শরীরের উপর দিয়ে এত ধকল গেল তা বোঝা যাচ্ছে না! রাত ৮ টার দিকে ওর কাছে ওর শিশু ছেলেকে নিয়ে যাওয়া হল।ও অত্যন্ত আগ্রহ করে দেখল, কোলে নিয়ে প্রথম কথাটা বললো,"সাব্বির, আমার মৃত মেয়ের লাশটা দেখতে চাই।"
আমি ওর হাত ধরলাম, বললাম,"লতা,তুমি জানো তোমার ছেলে হবে, হয়েছেও।মৃত মেয়ে কোথা থেকে এল?"
লতা ডা. শুভ্র'র রুমে বসে আছে।ডা. সাহেব কিছুটা বিব্রত। তবে দ্রুতই সামলে নিয়েছেন, হাসিহাসি মুখে একবার আমার দিকে আরেকবার লতার দিকে তাকাচ্ছেন।
"মামা, আপনি এদের সাথে জড়িয়ে আমার মেয়েটাকে মেরে ফেললেন।কেন?"
ডা. শুভ্র হেসে বললেন,"কি বল, মা!তোমার ছেলে হয়েছে। তুমি জানতে ছেলে হবে।কি সুন্দর একটা ছেলে হয়েছে।" উনি দরদর করে ঘামছেন, দুফোঁটা ঘাম প্যাডে পরে গেল।
"কেন মিথ্যে বলছেন?আমি দেখেছি, আমার পিঠের দিকে রক্ত লেগেছিল। আমার মেয়েটা আমার পিছনে লুকিয়েছিল, বাঁচতে চেয়েছে! আমি ঘোরের মধ্যেও অনুভব করেছি,তার চুলে আমার পুরো মুখ ঢেকে গিয়েছিল। আপনারা তাকে মেরে ফেললেন!"
"লতা, তোমার বিশ্রাম দরকার। তুমি ক্লান্ত, যাও বিশ্রাম নাও।দেখবে,ভালো লাগছে।"
"আমার কথার জবাব দিন।কিভাবে মেরেছেন তাকে, ইনজেকশন দিয়ে, নাকি কেটেছেন? ছুড়ি দিয়ে কুচিকুচি করে কেটেছেন। নিশ্চয়ই সাব্বির, আমার শ্বশুর, আমার আব্বাও ছিল!আমি জানতাম এমন হবে।আমি আমার মৃত মেয়েটাকে দেখতে চাই।"
আমি, ডা. শুভ্র দুজনেই চুপ করে আছি।আমাদের পরিবারের লোকজন দূরে দাঁড়িয়ে আছে।
রাত ১ঃ৩০,বাইরে টমাস আলভা এডিসন আর সৃষ্টিকর্তার দারুণ ফাইট চলছে। শেষে সৃষ্টিকর্তা জিতে গেলেন।বিদ্যুৎ চলে গেল, চাঁদের আলোয় চারদিক আলোকিত।এত তীব্র আলো! এই আলোতে পেপার পড়া যাবে।চাঁদের আলো বারান্দার গ্রিল ভেদ করে কিছুটা লতার কোলে পরেছে, ওর মুখ দেখা যাচ্ছে না।
রুমে দোলনায় ছেলেটা একস্বরে কাঁদছে, ওদিকে লতার খেয়াল নেই।আমি মৃদুস্বরে ডাকলাম,"লতা।" ও আমার দিকে তাকালো।আশ্চর্য! ওর চোখ লাল, টকটকে লাল।চোখ দুটো জ্বলছে!
২২ শে আগস্ট, ২০১৯ রাত ৮:৫৮
মেহরাব হাসান খান বলেছেন: শেষ।
ছোট গল্পতো।
শেষ লাইনটার জন্য আফসোস!
২| ২২ শে আগস্ট, ২০১৯ রাত ৮:২২
রাজীব নুর বলেছেন: চমৎকার গল্প।
হুমায়ূন আহমেদের এরকম একটা গল্প আছে। জ্বিন কফিল নাম।
২২ শে আগস্ট, ২০১৯ রাত ৯:০০
মেহরাব হাসান খান বলেছেন: ধন্যবাদ, অনেক দিন পর সোজাসুজি চমৎকার বললেন।
আমি যা লিখতাম, উনি তা আগেই লিখে ফেলেছেন। এজন্য আফসোস হয়।
গল্পটা কি মিলে গেছে? আমি ঐটা পড়িনি।
৩| ২৩ শে আগস্ট, ২০১৯ রাত ১:৩৪
Borhan Sorkar বলেছেন: কোথায় যেন পড়েছিলাম, অসাধারণ লেখা,
সম্ভবত হুমায়ুন স্যারের কোনো লেখার সাথে সেই যাইহোক ভালো হয়েছে!!
২৬ শে আগস্ট, ২০১৯ রাত ১:২৬
মেহরাব হাসান খান বলেছেন: মিলে যাবার কথা না।
আবার মিলতেও পারে, উনি এমনকোন প্লট নেই যে লিখেননি।
আমি উনার লেখা পড়ি, যাতে না মিলে যায়। এখন দেখা যায়, আমি যা এখন লিখার কথা ভাবি, উনি তা আগেই লিখেছেন। লিখার কিছুই বাকি নেই।
৪| ২৩ শে আগস্ট, ২০১৯ বিকাল ৩:০৩
নীল আকাশ বলেছেন: একই থীমে মিসির আলির একটা বইতে একই ঘটনা বলা হয়েছিল। হুমায়ুন আহমেদ ছোট করে লিখেছিলেন তবে আপনি বেশ বড় করে বিষদ ভাবে লিখেছেন।
লেখার ফ্লো ভাল হয়েছে। গল্পটাও আমার ভাল লেগেছে।
ধন্যবাদ।
২৬ শে আগস্ট, ২০১৯ রাত ১:২৩
মেহরাব হাসান খান বলেছেন: আপনাকে ধন্যবাদ।
তবে দুঃখ লাগছে, লোকটা আমি যা লিখতাম সব আগেই লিখে গেছেন।
আমি আসলে বোঝাতে চেয়েছি প্রকৃতি পরিবর্তন চায়, আর এজন্য সে বিভিন্নভাবে চেষ্টা করতে থাকে। এখানে লতাকে আগেই সাবধান করছিল।
৫| ২৫ শে আগস্ট, ২০১৯ রাত ৮:৩৩
দৃষ্টিসীমানা বলেছেন: ভাল লাগল ।
২৬ শে আগস্ট, ২০১৯ রাত ১:২৭
মেহরাব হাসান খান বলেছেন: ধন্যবাদ, পড়তে থাকুন। আমি আপনার ভালো লাগা টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করবো।
©somewhere in net ltd.
১| ২২ শে আগস্ট, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:৫৬
তারেক ফাহিম বলেছেন: শেষ?
হিমু স্টাইল লিখা।