নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

A learning Advocate!

মেহরাব হাসান খান

আমি H2O,,,,Solid,Liquid & Gas.How do you deserve me?

মেহরাব হাসান খান › বিস্তারিত পোস্টঃ

চরিত্রহীন

২০ শে আগস্ট, ২০১৯ বিকাল ৪:৩৮

দুনিয়ার সবাই ভং ধরে থাকে।এই যেমন ধরুন, হুমায়ুন আহমেদ গুলকেতিনকে ভালোবাসার ভং ধরেছিলেন। সেই ভং বেশিদিন টিকিয়ে রাখতে পারেননি। আমার কথায় বিরক্ত হতে পারেন, কিন্তু ঘটনা সত্য। গুলকেতিনকে ভালোবাসার কথা ইনিয়েবিনিয়ে বইয়ে লিখেছেন। কারণ মিথ্যা ভং প্রমাণের একটা বিষয় থাকে! হুমায়ুন ফরিদিও ভং ধরেছিলেন। আসলে সমস্যাটা নামের।সাকিব খান, তাহসান খানের ক্ষেত্রেও ভং-তত্ত্ব প্রযোজ্য।থাক সেই কথা!

আমার নামও হুমায়ুন, হুমায়ুন কবীর।নামের শুরুতে হুমায়ুন থাকলেও আমি ভং ধরি না।রাগ উঠলে ইচ্ছেমত বৌ পিটাই, মন ভালো থাকলে সাথে নিয়ে সিনেমায় দেখতে, রেস্টুরেন্টে খেতে যাই, কেনাকাটা করতে যাই, বা ঘুরতে যাই।একটু ভুল বলেছি, আমার বৌদের নিয়ে এই কাজগুলো করি।বৌদের বললাম, কারণ আমি ধর্মমতে চারটা বৌয়ের কোটা সফলতার সাথে পূরণ করেছি।আমার বৌ তিনজন অত্যন্ত ভালো, তবে শেষের জন একটু নখরা করে।সেটাও খারাপ লাগে না, আনন্দ লাগে।এই আনন্দের দরকার আছে।

আপনারা আশ্চর্য হচ্ছেন, আমি কিভাবে চারজনকে সামলাই?কেউতো একজনকেই সামলাতে পারে না, ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়।আমার সমস্যা হয় না,কারণ এরা সবাই গার্মেন্টসে কাজ করে।এদের মগজে আছে শুধু কাজ আর কাজ!যে কোনোভাবে দিনে নির্দিষ্ট পরিমাণ কাজ করতে হবে।এরপর বাসায় এসে তাড়াহুড়ো করে রান্না করে খেয়েই ঘুম!আনন্দ, শারীরিক চাহিদা এদের অতটা নেই;রাতে এদের একটাই চিন্তা, আবার সকালে কাজে যেতে হবে।দেরি করলেই বেতন কাটা।আর বেতন পেয়ে এরা কি করবে তাও জানে না, আমার হাতে সব টাকা দিয়ে দেয়াকে দায়িত্ব মনে করে।একটু খেয়াল করে দেখবেন, বেশিরভাগ নারী পোশাক শ্রমিকের স্বামী কিছু করে না।খায় ঘুমায় আর চায়ের দোকানে আড্ডা মারে।

আমি কিন্তু বসে খাই না।একটা কাজও করি, অত্যন্ত পূন্যের কাজ।নিজের বৌদের কাছে ইজ্জতের একটা বিষয় আছে না! এতক্ষণে বুঝতেই পারছেন, আমি পড়ালেখা জানা লোক।কোনভাবে উকালতি পাস করে ফেলেছি, কিন্তু বটতলার উকিল হইনি।এজন্যই হয়তো বৌগুলা আমারে বেশ ভয় পায়। যাইহোক, যাদের নিয়ে এত প্যাচাল তাদের পরিচয় দেয়া জরুরি।

বড় বৌয়ের নাম সেতারা।অত্যন্ত মোটা, ও গার্মেন্টস'এ পরিচ্ছন্নতার কাজ করে।ওর কাজ বাসায় ফিরেই লম্বা ঘুম দেয়া আর ভুসভুস করে নাক ডাকা।তবে রান্না অত্যন্ত ভালো। খেয়ে তৃপ্তি পাই।সেতারা বন্ধ্যা, দ্বিতীয় বিয়েটা ও নিজেই করিয়েছে। আমার চোখ খুলে দিয়েছে!

মেঝো বৌ নিশার কোন গুণ নেই।দেখতেও ভালো না।আর মুখের ভাষা শুনলে আপনার কান পচে যাবে।তবে আমারে বেশ মানে, কারণ সেতারা ওকে প্রতিদিন মনে করিয়ে দেয়, আমি ওকে বিয়ে করেছি এটা ওর চোদ্দগুষ্টির কপাল। তিনটা পুত্রের জন্ম দিয়েছে ও, তিনটাই মৃত হয়েছে!এই দোহায় দিয়েই আমি ৩য় বৌ ঘরে এনেছি।

খায়রুন, অত্যন্ত রূপবতী। ওর সবই ভালো। জৈবিক চাহিদা অনেক বেশি, তবে গায়ে বিচ্ছিরি গন্ধ।রাতে বিছানায় আসার আগেও গোসল করে আসে, গায়ে সেন্ট মাখে, তবুও আমার ঘিন্না লাগে।তাই বলে আমি ছাড় পাই তা না।ওকে অবশ্যই শান্ত করতে হয়। ওর ঘরে একটা ছেলে, একটা মেয়ে।

চতুর্থজন সুমি, একটু কম বয়স, খাইরুনের মত সুন্দরী না হলেও চলে আরকি।তবে নখরা একটু বেশি করে।গায়ে হাত দেয়ার আগে তোয়াজ করতে হয়।আমার তোয়াজ করতে ভালো লাগে, এর কাছে শারীরিক আনন্দ বেশি পাওয়া যায়।এখন বুঝি গান্ধীজি কেন ষোড়শী মেয়ে পছন্দ করতেন!

আমি শুধুশুধু এগুলা প্যাচাল পারছি তা না, আমি একজনের জন্য অপেক্ষা করছি সে আসছে না।আমার হাতের ব্যাগে একটা ৬ মাসের ছেলে বাচ্চা, অত্যন্ত শান্ত। চোখ খুলে আছে কিন্তু কাঁদছে না, কান্না যে শুরু করবে না এর নিশ্চয়তা কি? বাচ্চাপুলাপান শালিকের মত, সারাদিন খিদা লেগে থাকে।যখন তখন শালিকের ছাও খাবার জন্য ক্যাচক্যাচ শুরু করে; এই বাচ্চাও হয়তো দ্রুতই কান্না শুরু করবে, আকাশ বাতাস ফাটিয়ে কান্না। অনেক সময় হয়ে গেল, প্রায় দু'ঘন্টা ধরে অপেক্ষা করছি। কোন খবর নেই। আজ মনে হয় কপালে খারাপি আছে।

মাগরিবের আযান দিলো, চারপাশ অন্ধকার হয়ে গেল।অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে আছি, সবাই সন্দেহের চোখে তাকাচ্ছে। আমি বাচ্চাটার মুখে আঙুল দিয়ে রেখেছি, শিশুটা সেটাই চুষছে।
এশার আযানের পর অতি অভিজাত দম্পতি এলেন।অতি অভিজাত কারণ তারা এসে দেরির জন্য ক্ষমা চাইলো, এমন ভদ্রতা ইদানীং দেখা যায় না।

চান্দিছিলা লোকটা যা বলছেন, আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পরার যোগাড়।ইনি তার স্ত্রীকে বললেন,"বীণা, এই বেবিটা আমরা নিলে সবাই সন্দেহ করবে।আমরা কালো, আর বাচ্চা ফরশা।বেবিতো বাবা-মায়ের মতই হয় নাকি?"
ইনি বাচ্চাটা নিবে না, কারণ বাচ্চাটা অত্যন্ত ফরসা।উনারা কালো, তাই নিজেদের বেবি মনে হবে না।বাজে অযুহাত!তবে মহিলার কোন আপত্তি নেই।
মন চাচ্ছে, হারামজাদা টাকলার মাথায় গাট্টা মেরে বলি, তুই একটা বলদা আক্কু। আমি গান্ধীজির পথ অবলম্বন করলাম, শান্তভাবে বললাম," স্যার, নিয়ে যান।১০ হাজার টাকা কম দিয়েন।" টাকলা কপাল কুচকে তাকালো। আমি আবার বললাম,"ঠিক আছে, ২০ হাজার কম দিবেন।এর কম আর হবে না, আমি মাছ বিক্রি করছি না।" ভদ্রমহিলা ছলছল চোখে তাকিয়ে রইলেন। আহারে দুইচোক্ষে কি মায়া!

বাচ্চা বিক্রির ১০ বছরের ক্যারিয়ারে আমাকে ৩বার এই কঠিন সময়ের মধ্যে যেতে হয়েছে। আমি ঠান্ডা মাথায় খুন করেছি।তবে আল্লাহর কাছে মাফ চেয়েছি, তওবা করেছি।আল্লাহ মাফ করবেন, তিনি পরম ক্ষমাশীল। ঘটনা বললে বুঝবেন, আমার কিছু করার ছিল না।

খুব বেশি আগের ঘটনা না।সেবার ফারাজ তার ইংরেজ বান্ধবীকে বাচাতে শহীদ হয়েছে। দেশে কড়াকড়ি। আমি কালো পলিথিনে বাচ্চা নিয়ে বনানী লেক পাড় দাড়িয়ে আছি।ক্রেতা নিতে এলো না, এই বাচ্চা এখন কি করি? আমার কিসের ঠেকা আমিতো টাকা পাইছি।বাচ্চাটাও চিৎকার শুরু করলো।আমি বাচ্চাটার মুখে কাপড় গুজে লেকের পানিতে ফেলে দিয়েচি। থাক বাকি দুইটা আর মনে করতে চাই না,ভুলে গিয়েছি।

আমি দিয়া বাড়ি বটতলা থেকে, লেকপাড়ের দিকে গেলাম।কিছু করার নাই, প্রথম ঘটনার পুনরাবৃত্তি করতে হবে।

লেকপাড়ের পূর্ব দিকে ব্রিজের নিচে কেউ অতটা আসে না।সবাই অখাদ্য ফুচকার দোকানগুলোর দিকেই জটলা করে থাকে।অথচ এদিকে কি শান্তি শান্তি ভাব, হালকা বাতাস বইছে।মানুষের গায়ের নোংরা সেন্টের ঘ্রাণ পাওয়া যাচ্ছে না,মাটির ঘ্রাণ পাওয়া যাচ্ছে, সোদা মাটির ঘ্রাণ।আমি বাচ্চাটাকে ব্যাগ থেকে বের করলাম, এক টুকরা কাপড় পেচিয়ে গোল করলাম।এখন মুখে গুজে, পানিতে ফেলে দিলেই খেলা শেষ!

আজ বড় বৌ সেতারার বাসায় ইদ লাগছে।নিশা, খায়রুন, সুমি সবাইকে দাওয়াত করা হয়েছে।নিশা রান্না ঘরে, কাচ্চিবিরিয়ানি রান্না হচ্ছে। খায়রুন আহলাদি গলায় বলছে,"বুবু দেখ, পোলাডা রিয়া, রিয়ানের চাইতে সোন্দর।" সুমির ওদিকে খেয়াল নেই, সে আয়নার সামনে সাজুগুজু করছে।
সেতারা ছেলেটার সব আচরণে অভিভূত হচ্ছে, আমায় ডেকে বললো,"এইযে হুনছেন, দেহেন পোলাডা কত ভালা।মুহে আঙুল দিছি, চুকচুক কইরা খাইতাছে।আহারে, খিদা লাগছে বাজান।অহনি খাওন দিতাছি।"
আমার ছেলে রিয়ান দৌড়ে এল,"আব্বা, আমারে আর ভাইরে একলগে মুসলমানি করাইয়ো।একটা হুন্ডার কিইন্না দিয়ো।একলগে ইস্কুলে যামুনে।"

সবাই একসাথে কাচ্চিবিরিয়ানি খাচ্ছি।সেতারা ছেলেটাকে নিয়ে পরে আছে, একমনে কথা বলছে।মোবাইলটা বেজে উঠলো, একটা ফরশা ছেলে চাই।শান্ত হতে হবে, কান্নাকাটি কম করবে।টাকা দিবে ২ লাখ!

আমি সেতারার দিকে তাকালাম।সেতারা কি বুঝলো জানি না, বললো,"আমি এই পোলা দিমু না।এই পোলা আমার।আল্লায় আমার কাছে পাডাইছে।"
এই কালা হাতি কয় কি?
অতি আশ্চর্য! নিশা, খায়রুন, সুমি সবাই সেতারার পক্ষে। আরে তরা চাইর সতীন, তোদের মধ্যে থাকবে কাইজ্জা-ঝগড়া।কি যন্ত্রণা, বলেনতো।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে আগস্ট, ২০১৯ বিকাল ৪:৫৮

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: Great

২০ শে আগস্ট, ২০১৯ রাত ৮:২৩

মেহরাব হাসান খান বলেছেন: ধন্যবাদ

২| ২০ শে আগস্ট, ২০১৯ বিকাল ৫:১৩

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ভালো লিখেছেন।

২০ শে আগস্ট, ২০১৯ রাত ৮:২৩

মেহরাব হাসান খান বলেছেন: চেষ্টা করছি।

৩| ২০ শে আগস্ট, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:০৩

জুনায়েদ বি রাহমান বলেছেন: মারাত্মক কাহিনী!

২০ শে আগস্ট, ২০১৯ রাত ৮:২৪

মেহরাব হাসান খান বলেছেন: একটা সহজ পাঠের গল্প।

৪| ২০ শে আগস্ট, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:১৬

তারেক_মাহমুদ বলেছেন: দারুণ হয়েছে গল্পটা বেশ ব্যাতিক্রমী।+



২০ শে আগস্ট, ২০১৯ রাত ৮:২৪

মেহরাব হাসান খান বলেছেন: চেষ্টা করলাম আরকি

৫| ২০ শে আগস্ট, ২০১৯ রাত ৮:৪৩

রাজীব নুর বলেছেন: হুমায়ূন আহমেদ গুলতেকিনকে অবশ্যই ভালোবাসতেন। এখানে তার কোনো ভং নেই।
কিন্তু শেষ জীবনে এসে ভুল বুঝাবুঝির কারনে দূরত্ব হয়েছে। কিন্তু ভালোবাসাটুকু সত্যিই রয়ে গেছে।

২০ শে আগস্ট, ২০১৯ রাত ৯:১৭

মেহরাব হাসান খান বলেছেন: হ্যা, অবশ্যই।
আপনি ভালো তাই সবার ভালোটাই চোখে পরে, আমার উল্টোটা হয়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.