নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

A learning Advocate!

মেহরাব হাসান খান

আমি H2O,,,,Solid,Liquid & Gas.How do you deserve me?

মেহরাব হাসান খান › বিস্তারিত পোস্টঃ

শেষ মৃত্যুর আগে

১৮ ই আগস্ট, ২০১৯ বিকাল ৫:০৯

ইদানীং লোকজনের কাজই হচ্ছে সবকিছু ফেসবুকে দেয়া।এইযে একজন লোক মার খেয়ে মুখ থুবড়ে পরে আছে, দৃশ্য হিসেবে বাজে হবার কথা। কিন্তু এতক্ষণে অবশ্যই ফেসবুকে ছবি,ভিডিও দেয়া শেষ।ক্যাপশন হবে 'গণপিটুনিতে ধর্ষক শিক্ষকের মৃত্যু!'
আমি কিন্তু মারা যায়নি, খিচখেয়ে পরে আছি।মনে হচ্ছে, উঠে দাঁড়ালেই আবার মার খাবো।আমাকে কেন মারা হল, আমার অপরাধ কি? আমি জানি না!

আমার সূরা পড়া উচিত, বিপদ মুক্তির সূরা! আত্তাহিয়াতু.... না, লা ইলাহা.....! আশ্চর্য কিছুতেই সূরা মনে করতে পারছি না।কানে পিনপিন শব্দ হচ্ছে।

আমি আজকেও প্রতিদিনের মত দিয়াকে পড়াতে এসেছি।গেট পাড় হয়ে ভিতরে ঢুকতেই দেখি আঙিনায় বেশ মানুষের জটলা, দিয়ার বাবা, কাকাসহ কিছু কম বয়সী ছেলেপেলে। আমি কিছু বলার সুযোগ পেলাম না, ধর শালারে বলেই আমাকে মারা শুরু করলো। প্রথম চড় দিয়েছে দিয়ার বাবা, হাতে কেলমা আছে বলতে হবে।এখনো কানে পিনপিন শব্দ হচ্ছে।

দুনিয়া থেকে দয়ামায়া উঠেগেছে।এখানে কয়েক জনের মন্তব্য শুনে এ বিষয়ে নিশ্চিত হলাম।অবশ্য বয়স্ক লোকজন কিছু বলছে না, এটা আশার কথা।তারা ভাবছেন। তারা যত ভাববেন আমার জন্য ভালো, সময় যাবে শাস্তি কম হবে!কিন্তু ছেলেপেলে আমাকে সহজে ছাড়বে বলে মনে হয় না।ইদানীং সুযোগ পেলে মানুষের জিঘাংসা জেগে উঠে, আরও সবাই মিলে খুন করলেতো কথাই নেই।মাফ! কোট-কাচারি করে লাভ নাই, গণপিটুনিতে মৃত্যু!

একজন অতিউৎসাহী বলছে,"পিডাইয়া মাইরা ফালাই।হালায় বাইচ্চা থাকলে আরও মাইয়ারে নষ্ট করবো। হালায় মাস্টার নামের কলঙ্ক!" আরেকজন অন্য পথে গেল, বললো,"মারমু কেন?হালার ধন কাইট্টা দেই।বাইচ্চা থাকুক।নিজের পাপের শাস্তি ভোগ করুক।মইরা গেলেতো, পাপের শাস্তি পাইলো না।কার মাইয়ার ইজ্জত নষ্ট করছে বুঝবো!" অত্যন্ত ভালো প্রস্তাব, মরে গেলেতো শাস্তি হাড়েহাড়ে টের পাওয়া যাবে না। ছেলেটার যুক্তি ভালো, পড়ালেখা করলে ভালো করতো!

এবার দিয়ার বাবা জামান সাহেব কথা বললেন,"তোমরা কি বল এসব?আমার মাইয়ার ইজ্জত নষ্ট করছে মানে?এগুলা কিছুই হয় নাই।একটু খারাপ আচরণ করছে আরকি!এর বেশি কিছু না।"
তিনি আগের মতই মাটির দিকে তাকিয়ে রইলেন।

দিয়ার কাকা বললেন,"ভাইজান, ইনার চোখ উপড়ে ফেলি, জিহবা কেটে দেই।আর কোন মেয়ের দিকে খারাপ চোখে তাকাতে পারবে না, খারাপ কথা বলতে পারবে না।" জামান সাহেব লম্বা করে শ্বাস নিলেন।

দিয়ার কাকাকে আমি অত্যন্ত দয়াশীল মানুষ বলে জানি।এইতো সেদিন তার পালা কুকুর মারা গেল, তিনি কুকুরের গায়ে হাত বোলাতে বোলাতে কাঁদছিলেন। আজ এই লোক এগুলা কি বলছে!অতি আশ্চর্য ব্যাপার। মানুষ চেনা বড় দায়!

যাইহোক, আমার অপরাধ আমি কিছুটা হলেও আচ করতে পারলাম। কিন্তু ওসব করাতো দূরের কথা,আমি দিয়াকে নিয়ে ওসব ভাবিওনি!
আমি টিউশনি করিয়েই বিশ্ববিদ্যালয় পাস করেছি আর নিজের বোনকেও এই টাকা দিয়েও পড়াচ্ছি।বলা যায়, এই টিউশনির টাকা দিয়েই আমাদের সংসারের অর্ধেক খরচ চলে। আমি মেয়ে মানুষ পড়াইনা, পড়াতে ইচ্ছা করে না।ক্লাস সেভেন থেকে টেন পর্যন্ত মেয়েরা অত্যন্ত ভয়ংকর। এরা অকারণে প্রেমে পরে।দিয়ার বাবা এলাকার বেশ প্রভাবশালী লোক, তাই আমার ইতস্ততভাবকে তিনি পাত্তা দেননি।আর আমিও না করতে পারিনি।কিছুলোক থাকে যারা ঢেকি না, আস্ত ঢেকিঘর গিলে ফেলে!

আর ফলাফল আপনাদের সামনে!আমি মার খেয়ে পরে আছি, চড় খেয়ে প্রস্রাব করে দিয়েছি।আবার মার খাবার আতঙ্কে উঠতে বা কথা বলতেও ভয় পাচ্ছি!যদিও আমার কোন অপরাধ নেই।আমি ভালো লোক, অন্যরা কি ভাবছে সেটা তাদের ব্যাপার।

আমি 'লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতুম মিনাজ জলিমিন' ২১ বার পড়ে ফেললাম। বিপদমুক্ত হবার কথা না, কারণ আমি নাপাক। আমার আরও পাপ হচ্ছে।নাপাক অবস্থায় আল্লাহর কালাম উচ্চারণ করাও পাপ।তবে লোকনাথকে স্মরণ করা যায়, তিনি বলেছেন,"জলে,জঙ্গলে, আকাশে,পাতালে যেখানে বিপদে পরবে আমায় স্মরণ কর।" এতে কাজ হবার কথা।কারণ এখানে ওযুর কথা বলা হয়নি, মন পবিত্র থাকলেই হল।আমি যীশুর কাছেও সাহায্য চাইতে পারি,"Jesus, save me, protect me." পশ্চিমা দেশে পানির বড় অভাব, ওরা শৌচকাজে টিস্যু ব্যবহার করে। আর আমার মনতো পবিত্র, আমিতো অপরাধ করিনি!আল্লাহ নিশ্চয়ই আমার পরিক্ষা নিচ্ছেন।হায় আল্লাহ, তুমি এত কঠিন পরিক্ষা না নিলেও পারতে!

আমি একটু মাথা তুলে বসলাম, এখানে সবাই সম্মানিত লোক।বুঝিয়ে বললে, হয়তো বুঝতে পারবে।
"আপনারা শোনেন, আমি কোন দোষ করিনি......."
কথা শেষ করার সুযোগ পেলাম না, ছেলের দল তেড়ে এল।আবার শুরু হল এলোপাথাড়ি কিল,ঘুসি, লাথি।
"হারামজাদা চোরের মার বড় গলা।হালারে পিডা, হাড্ডিগুড়া কইরা ফালা!"
আজবতো! অপরাধীকে আত্মপক্ষ সমর্থন করার সুযোগও দেয়া হচ্ছে না।ঘোরতর অন্যায়-অবিচার। আমার মুখথুবড়ে পরে থাকাই শ্রেয়তর!

"কাকা, কিছু কন।হালারে ধন কাটমু?চোখ উপড়াইয়া ফেলমু?নউলে হুকুম দেন, লেংটা কইরা সারা উত্তরখান ঘুরাই।মাইনশে দেহুক, জামান সাবে ধর্ষণকারীর কেমুন বিচার করে!"
"দুলাভাই, কিছু বলেন। থাক আপনের কিছু বলার দরকার নেই।আমি এই মাস্টাররে মেরে কেটে তুরাগে ভাসিয়ে দিব।আর ভাগ্নির সাথে নোংরামি?" কথা বলছে দিয়ার মামা শ্রাবণ। কিছুদিন আগেই তাকে রিহ্যাবে রেখে আসা হয়েছিল। সব ব্যবস্থা করেছি আমি, ছেলেটা মাত্র একাদশ শ্রেনিতে পড়ে, এই বয়সেই গাঞ্জা, ইয়াবা খাওয়া শুরু করেছিল।এখন দেখুন, ছেলেটা পরিবারের সম্মানের কত গুরুত্ব দিচ্ছে! শ্রাবনের কথা মত ছোটপুলাপান আমার গায়ে হিসি করলো।
জামান সাহেব কিছু বলছেন না।এটা আশার কথা।


জামান সাহেবের ছোটমেয়ে তোয়া, ৬ বছর বয়স, অত্যন্ত মায়াবতী। দুঃখী দুঃখী চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।বাবাকে প্রশ্ন করলো,"বাবা, স্যারকে মারছো কেন?স্যার কি করেছে?"
আজ আমি মারা গেলেও এইভেবে শান্তি পাব, কেই একজন আমার হয়ে কথা বলেছে।আমার অপরাধ জিজ্ঞেস করেছে! তোয়া আবার বললো,"বাবা স্যার কি মারা গেছে?নড়ছে না তো?" আহারে কি মায়াবতী মেয়ে!

আমি নাপাক অবস্থাতেই আবার ২১বার 'লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতুম মিনাজ জলিমিন' পড়লাম।নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক খুশি হয়েছেন। নজির হিসেবে দেখলাম দিয়া আর দিয়ার আম্মু আন্টি বাসায় ফিরেছে।
বুড়ো ধরনের একজন লোক বলল,"জামান, মাইয়ারে দাড়া করাও।অপরাধের সাক্ষী, সবাই শুনুক কি হইছে।সাক্ষী ছাড়া একজনকে শাস্তি দেয়া ঠিক না।"
অত্যন্ত ভালো যুক্তি।আগেই বলেছি, যত সময় যাবে মানুষের মনে দয়া হবে,মানুষ যুক্তি দিয়ে চিন্তা করবে!

চার-পাঁচজনের একটা দল ভেতরের দিকে চলে গেল।হয়তো দিয়ার কাছে আসল ঘটনা শুনতে যাচ্ছে।আমি জানি, দিয়া মিথ্যা বলবে না!দিয়া আমার ছাত্রী।

জামান সাহেব আমার পা ধরে বসে আছেন।আমার গায়ে প্রস্রাবমাখা,দুর্গন্ধযুক্ত; সেদিকে তার খেয়াল নেই।তিনি বলছেন,"স্যার আমি অত্যন্ত ভুল করেছি।কাল আপনি চলে যাবার পরেই দেখলাম, দিয়া বিছানায় শুয়ে কাঁদছে।আমি নয়ছয় মিলিয়ে........!আমায় ক্ষমা করুন, আমি ভুল করেছি বড় ভূল!আমি জানতাম না, দিয়া মাইগ্রেনের ব্যাথায় ফুপিয়ে কাঁদছে।আমি নিকৃষ্ট!কত খারাপ কিছু ভেবেছি! আপনি আমায় ক্ষমা করুন।" জামান সাহেব কেঁদে ফেললেন।

সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।একজন অপরাধ করে ক্ষমা চাচ্ছে, এর চেয়ে সুন্দর দৃশ্য আর কি হতে পারে? অথচ কেউ ছবি তুলছে না, ভিডিও করছে না!
আমি চেচিয়ে বললাম,"এই!তোমরা ছবি তোল, ভিডিও কর।ফেসবুকে দাও।এই শ্রাবণ, ছবি তুলুন, ভিডিও করুন।" কেউ আমার কথা শুনছে বলে মনে হল না।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই আগস্ট, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:১২

চাঁদগাজী বলেছেন:


চলে। প্লট আছে, চলে

১৮ ই আগস্ট, ২০১৯ রাত ৮:২২

মেহরাব হাসান খান বলেছেন: একটা সুক্ষ্ম প্লট ছাড়া লেখা যায় না।

২| ১৮ ই আগস্ট, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৪২

রাজীব নুর বলেছেন: টিউশনি আছে বলেই অসংখ্য ছেলেরা টিকে আছে।
ঢাকা শহরের মানূষের মধ্যে মায়া মমতা খুব কম।

১৮ ই আগস্ট, ২০১৯ রাত ৮:২৫

মেহরাব হাসান খান বলেছেন: আমি নিজেও টিকে আছি।
মায়া মমতা কম, এটা সমস্যা না। এটা সমস্যা যে, মানুষগুলো নির্দয়!

৩| ১৮ ই আগস্ট, ২০১৯ রাত ৮:৩৯

মাহের ইসলাম বলেছেন: আবারও ভালো লাগা।

সুন্দর করে প্লটটা তুলে ধরেছেন।

শুভ কামনা রইল।

১৮ ই আগস্ট, ২০১৯ রাত ৮:৪৮

মেহরাব হাসান খান বলেছেন: কিছু মানুষ সব কিছুতেই মুগ্ধ হয়। আপনি নিশ্চয়ই তাদের দলে!
আমি আপনার মুগ্ধতা ধরে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করবো; ফেল করলে, ক্ষমা করবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.