নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
"একই অঙ্গে কত রূপ" কথাটি নদীটার সাথে বেশ যায়।নদীতে ভরা স্রোত, কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে ঠিক মাঝখানে কিছু পানা ভেসে আছে।কয়দিন আগেও ভেসে থাকতো পলিথিন বা ব্যবহৃত কনডম।জাল ফেলে মাঝ ধরা হচ্ছে, ঐপাড়ে ছেলের দল পানিতে ঝাপিয়ে পরছে, একজন মহিলা গাই দুয়াচ্ছে।প্রত্যন্ত গ্রামের দৃশ্য, জীবনানন্দ দাস বা জসীম উদ্দিন হলে এই দৃশ্যেই দারুন কবিতা লিখে ফেলতেন।রেল ব্রিজ দিয়ে পাড় হবার সময় বাচ্চারা দাঁড়িয়ে মুগ্ধ হয়ে নদীর স্রোত দেখছে।অথচ কয়দিন আগেও তারা নাক ধরে এই ব্রিজ পাড় হত।আজ তুরাগ নদী পূর্ণ যৌবনপ্রাপ্ত!জোড়ায় জোড়ায় তরুণ-তরুণী বসে আছে।কেবল আমার জোড়া নেই!
আমি অপেক্ষা করছি কখন ৩টা বাজবে, কেয়ার বাবা আমার সাথে কথা বলতে চান।আমার কোন ইচ্ছে ছিল না।কেয়ার অত্যন্ত আগ্রহ, তাই চলে এসেছি। কেয়া পইপই করে বলে দিয়েছে আমি যাতে ঠিক সময়ে যাই।
উত্তরা রবীন্দ্র সারণী রোডে কাবাব ফ্যাক্টরির পাশ দিয়ে ডান দিকে মোড় নিলেই সোজা যে সাদা রঙের বাড়িটা চোখে পরবে সেটা কেয়ার বাবা কে. জামান সাহেবের অফিস।সম্ভবত এখানে কেউ গাড়ি ছাড়া আসে না, কারণ গাড়ি ঢোকার গেটটাই খোলা। সেখানে দারোয়ান বিরক্ত মুখে দাঁড়িয়ে আছে। আমি ঢুকতে চাইলাম।লোকটা বললো,"ভাই ঝামেলা করবেন না।যান, যান এইখান থেকে।এইখানে চান্দা পাবেন না।"
আমি অনুরোধ করে বললাম,"দাদা, আমায় যেতে দিন।উনি আমার জন্য অপেক্ষা করছেন।" দারোয়ান বিন্দুমাত্র বিচলিত হল না।
একটুপর অফিসার গোছের ক্লিন শেভড,কোট-টাই পরা এক ভদ্রলোক আমাকে ভিতরে নিয়ে গেলেন। লিফটের আয়নায় একটা অদ্ভুত চেহারা দেখে আশ্চর্য হলাম, কিন্তু আমি আর ভদ্রলোক ছাড়া আর কেউ না।তাহলে কি বিম্বটা আমার? মাত্র দুমাস চুল দাড়ি না কাটলে, গোসল করলে না এমন হয়ে যায়? কেমন অর্জুন রেড্ডি'র মত লাগছে!
আমি ১৫ মিনিট লেট, যদিও আমার কারণে না।দারোয়ান আমায় ঢুকতে দেয়নি।অবশ্য এই কারণে সাধারণ ক্ষমা পাওয়া যাবে কিনা, বোঝা যাচ্ছে না।আমি এই ঘরেও এক ঘন্টা ধরে অপেক্ষা করছি।আমার ডাক পরছে না।কেয়াকে বলেছি তাকে আইচি হাসপাতালে সামনে থেকে ফুচকা খাওয়াবো, তুরাগে নৌকায় ঘুরবো। পাঁচটায় আসতে বলেছি, এখন ৪.৩০ বাজে।
এই ঘরটা সম্পূর্ণ সাদা, সোফাও সাদা ভেলভেটের।সব কিছুর মধ্যে আশ্চর্য শান্তি শান্তি ভাব।তবে দেয়ালের একটামাত্র পেইন্টিংএ নীল-সবুজের মিশ্রণ!নদীতে নীল আকাশের ছায়া পরেছে, পাড়ে ঘন বন আর পানিতে পা ডুবিয়ে দুইজন নেংটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে;একজনের হাতে সাদা শাপলা!নদীতে শাপলা ফোটে না, তবে হাতে শাপলা না থাকলে এই চিত্র হত অসম্পূর্ণ।ছেলে দুটি হাসছে।শিল্পী তাদের চাম্পা কলার মত ছোট নুনু আর সাদা দাঁত অত্যন্ত যত্ন করে এঁকেছেন। ছবির কোণায় ছোট করে লিখা "আমিন"।
আমি কে. জামান সাহেবের রুমে বসে আছি ২০ মিনিট হল।তিনি আমার দিকে এখনো তাকাননি,মনোযোগ দিয়ে ফাইল দেখছেন।পা নাচানো, কাশি দেয়া ঠিক হবে কিনা বুঝতে পারছি না।আমি পা নাচানো শুরু করতেই আমার দিকে তাকালেন!এবং চমকে বললেন,"এই ছেলে শোনো, তোমাদের এমাসের চাদা আমি দিয়েছি।শুধুশুধু বিরক্ত করবে না।" এই যে আমাকে সবাই চাদাবাজ-গুন্ডা ভাবছে এর দায় বাংলা সিনেমা পরিচালকদের।তারা গুন্ডা-চাদাবাজদের লম্বা চুল-দাড়িওয়ালা, কালো এইরূপে উপস্থাপন করে।
তিনি আমার বললেন,"কি ব্যাপার তুমি যাচ্ছো না কেন?আজ আমি মেজাজ খারাপ করতে চাচ্ছি না।আজ আমার মেয়ের বন্ধু আমার সাথে দেখা করতে আসবে।"
"জ্বী স্যার, আমি,আমিই কেয়ার বন্ধু!যার আজকে ৩টায় আসার কথা।"
কে. জামান সাহেব ধাক্কার খেলেন, অনেকটা শিশুদের মত! শিশুটি রাতে স্বপ্ন দেখে বাবা তার পছন্দের খেলনা এনেছে।ভোরে উঠে আগে খেলনা খোজে, খেলনাটা টেবিলের উপরে রাখা।ধরবে কি ধরবে না ভাবছে, যখন খেলনাটা ধরবে সিদ্ধান্ত নেয় তখন দেখে, খেলনাটা নেই! তিনি বাচ্চাদের মত কাদলেন না, সামলে নিলেন।
"তুমি মুহিব?"
"জ্বী, আমি মুহিব।"
উনি চোখ সরু করে আমায় দেখছেন।ইচ্ছে হল, উঠে দাঁড়াই যাতে তিনি আপাদমস্তক দেখতে পারেন।উনি আশাহত হলেন,ভেবেছিলেন কোট-টাই,চকচকে স্যু পরা কোন সুদর্শন ছেলে আসবে।অথচ এল কিনা, জংলী টাইপের দলামলা শার্ট পরা একটা নোংরা ছেলে।উনি নিশ্চয়ই দূর্গন্ধ পাচ্ছেন, আমি এক সপ্তাহ গোসল করি না।বাসায় মটর নষ্ট, যখন মটর ঠিক হল ওয়াশার পাইপ লিক করলো!
উনি আমার চোখের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলেন।
"মুহিব,তুমি কি করছো?"
"জ্বী, টিউশনি করাই আর আজেবাজে মিছেমিছি গল্প লিখি।"
"ঠিক তা না, তোমার পড়ালেখাতো শেষ।ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?"
"জ্বী, ২০২০ সালের মধ্যে ১০০টা গল্প লিখে ফেলা।"
"মানে?"
"জ্বী, মানে গল্প-ছোট গল্প লিখা।আমি অবশ্য ৫১টা গল্প লিখে ফেলছি।"
রুমে ১৬°সে. তাপমাত্রায় এসি চলছে, তিনি ঘামছেন।কপাল থেকে ঘাম গাল বেয়ে থুতনিতে জমে টপটপ করে পরছে।উনি এতক্ষণে আমায় অবস্থা আচ করতে পারলেন।
"মুহিব, কি দেখে আমার মেয়েটা তোমায় পছন্দ করেছে বলতো?সে বলেছে, তোমার সাথে কথা বললেই তোমাকে ভাল লাগবে।আমি অত্যন্ত বিরক্ত হচ্ছি।তবে অবাক হয়েছি, তোমার স্পর্ধা দেখে।আমি হতাশ।"
"হয়তো আমার কিছু নেই এটাই তাকে আমার প্রতি করুণা করতে বাধ্য করছে।"
"মুহিব, শোনো। তোমার মত ছেলেদের কাজ হচ্ছে, সুন্দরী বড়লোক মেয়েদের পটিয়ে প্রেম করা আর ভুলিয়ে-ভালিয়ে একটা খারাপ ভিডিও তৈরি করর ফেলা।তারপর তাদের ব্ল্যাকমেইল করা।ঠিক না?"
"ঠিক, আপনি আমায় চিনতে পেরেছেন।"
"তুমি আমার বোকা মেয়েটাকে ছেড়ে দাও।আমি তোমায় ১০ লাখ টাকা দিচ্ছি।প্লিজ,আমার মেয়েটাকে ছেড়ে দাও।"
ভদ্রলোক কেদে ফেললেন, মেকি কান্নায় শরীর কাপে না।উনার শরীর কেঁপেকেঁপে উঠছে।আমি চুপ করে রইলাম।
তিনি আমার সাথে অফিসের ক্যাশ ডিপার্টমেন্ট পর্যন্ত এলেন।আমাকে টাকা দিয়ে বললেন, আমি যাতে আর কেয়ার সাথে দেখা-কথা বলার চেষ্টা না করি।
আমি টাকার ব্যাগ নিয়ে গেটে দাঁড়িয়ে আছি, ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে।গেটের বিপরীতে লেক ব্রিজের উপর যে নার্সারী সেখানে গোলাপি জামদানীপরা একটা মেয়ে ভিজছে, কেয়া! আমায় দেখেই দৌড়ে এল।
আমার হাত ধরে হরহর করে বললো,"আমি এক ঘন্টা ধরে তুরাগের পাড়ে বসে আছি।তুমি এলে না, তাই এখানে অপেক্ষা করছি। চল।"
আমি আর কেয়া সাপ্পোরো মেডিকেল হাসপাতালের সামনে তুরাগ নদীর ঘাটে বসে আছি।কেয়া ফুচকা খাচ্ছে, ওর গোলাপি জামদানী ভিজে একাকার চুইয়ে পানি পরছে।
কেয়া হয়তো এতক্ষণ খেয়াল করেনি, আমার হাতে একটা ব্যাগ।কেয়া আমার কাধে মাথা রেখে বললো,"আমার আব্বা এমনি, সবকিছু টাকা দিয়ে কিনে ফেলতে চায়।আব্বার সাথে কি কথা হল, এটা নিয়ে না হয় আমরা অন্যদিন কথা বলবো।"
আমার একটা সিগারেট খেতে ইচ্ছে হল, যদিও আগে খাইনি। একটা অত্যন্ত রূপবতী গোলাপি শাড়ি পড়া মেয়ে আর একটা চাদাবাজ ছেলে নৌকায় ঝুম-বৃষ্টিতে ভিজছে, মাঝেমাঝে জ্বলছে লাল আলো। অত্যন্ত চমৎকার দৃশ্য হবার কথা।
আমি দৃশ্যটা সুন্দর করতে পারছি না। সিগারেট নিভে যাচ্ছে।হে সিগারেট ব্যবসায়ী, তোমরা অনেক ফ্লেভার তৈরি করেছ, কিন্তু ওয়াটারপ্রুফ সিগারেট তৈরি করতে পারনি।তোমাদের তিরস্কার!
১৩ ই আগস্ট, ২০১৯ বিকাল ৪:১৬
মেহরাব হাসান খান বলেছেন: সবসময় লিখা আসে না। আর এটা কিন্তু আমি না।বানিয়ে বানিয়ে লিখা গল্প।
২| ১৩ ই আগস্ট, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৩৪
মাহমুদুর রহমান জাওয়াদ বলেছেন: সহজ সরল সুন্দর লেখা।
১৪ ই আগস্ট, ২০১৯ দুপুর ১২:১৬
মেহরাব হাসান খান বলেছেন: ধন্যবাদ
৩| ১৩ ই আগস্ট, ২০১৯ রাত ৮:৪১
রাজীব নুর বলেছেন: মুহিব যেন বাংলা সিনেমার নায়ক।
১৪ ই আগস্ট, ২০১৯ দুপুর ১২:১৭
মেহরাব হাসান খান বলেছেন: মুহিবকে নায়ক হিসেবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করিনি।
৪| ১৩ ই আগস্ট, ২০১৯ রাত ৯:১৫
ইসিয়াক বলেছেন: বেশ তো
১৪ ই আগস্ট, ২০১৯ দুপুর ১২:১৮
মেহরাব হাসান খান বলেছেন: ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১| ১৩ ই আগস্ট, ২০১৯ দুপুর ২:৫০
মাহের ইসলাম বলেছেন: খুব সুন্দর লিখেছেন।
সহজ, সাদামাটা কিন্তু অল্প কথায় গোছানো লেখা।
আমার খুব ভালো লেগেছে।
২০২০ আসতে অনেক দেরী।
মাত্র ৪৯ টা কেন লিখবেন ?
আরো বেশি লিখুন।