নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
হাসান সাহেব তন্নতন্ন করে রক্তজবা গাছ খুজলেন।পেলেন না, দরকারের সময় কিছুই পাওয়া যায় না।অথচ এই নার্সারিতেই সবসময় তিনি আসতে-যেতে জবা গাছ দেখেন। দেখা যাবে, তিনি পোলাওয়ের চাল নিয়েগেছেন, বাসায় তেল বা গরম মশলা নেই।পোলাও রান্না হবে না।বুলবুল পোলাও পছন্দ করে।বকুলের পছন্দ রক্তজবা।যেদিন তিনি পুকুর পাড়ের জবাগাছ কেটে ফেললেন, বকুল সারাদিন ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদলো।দুদিন কিছুই খেল না।অত্যন্ত মায়াবতী এই মেয়েটার হাতে সকালে চা না পেলে সারাদিন শূন্য শূন্য লাগে।বকুলের মায়ের অবশ্য সন্তানের রাগ-অভিমান নিয়ে মাথাব্যাথা নেই।
হাসান সাহেব প্রতিদিনের মতই তার মায়ের ঘরে উঁকি দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,"মা, ভালো আছো?শরীর ভালো?" ছফিনা বেগম চিৎকার করে বলবেন,"হ বালা আছি।দিন দিন খুকি অইতাছি।প্রত্যেক দিন ঢং করস, বালা লাগে না!" প্রতিদিন তিনি একই উত্তর দেন, তবু হাসান সাহেব বাড়ি ফিরেই খোঁজ নেন, অফিসে যাবার সময় মাকে জানিয়ে যান।
হাসান সাহেব প্রতিদিন রাত ৮টার খবর দেখেন আর হা-হুতাশ করেন, দেশ রসাতলে যাচ্ছে; এদেশের ভবিষ্যৎ নেই। সপ্তাহে দুদিন বৃহস্পতি-শুক্রবার রাত ৯টায় মীরা আর অরুণকে পড়াতে বসেন। আজ শুক্রবার, মীরা আর অরুণ জোরেশোরে পড়ছে যাতে বাবা বুঝতে পারে পড়াশোনা ভালো চলছে।
ওরা দুজন জমজ। অরুণ আতঙ্কে একটু কেঁপেকেঁপে উঠছে, সে গতকাল স্কুলে ফুটবল খেলতে গিয়ে প্যান্ট ছিড়ে ফেলেছে। আগেও ছিড়েছে, মা সেলাই করে দিয়েছেন।তার কি করার আছে, প্যান্ট হাটুর কাছে টাইট হয়ে গেছে!সে পঞ্চম শ্রেণিতেও একই প্যান্ট পরেছে। আজ মা বাসায় নেই, রাগ করে মামাবাড়ি চলে গেছেন।বলে গেছেন আর আসবে না, প্রতিদিন শুধু ভাত মা খেতে পারেন না।মার নাকি শুধু ভাত খেতে খেতে কলজে পচে গেছে।
অরুণ ফিসফিস করে মীরাকে বলল," নিশ্চয়ই বাবা জেনে গিয়েছে, আমার প্যান্ট ছিড়ে গেছে! বাবার কাছেতো কিছুই গোপন থাকে না!" মীরা সাহস দিয়ে বললো," ভয় পাস না।'লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতুম মিনাজ জলিমিন' ২১ বার পড়। আল্লাহ তোরে বাঁচাবে।"
"আমিতো আজকে নামাজও পড়ছি।তয় আত্তাহিয়াতু পারি না।মীরা, আল্লায় আমার দোয়া কবুল করবনি?"
মীরা উত্তর দেয়ার সুযোগ পেল না।হাসান সাহেব পাটিতে বসেছেন।পড়া ধরবেন। তিনি উপপাদ্য ২ আর Your Favourite Person প্যারাগ্রাফ লিখতে বললেন। অরুণ ভাবছে, এই দুইটাই সে পারে না। উপপাদ্য কেন মুখস্থ করতে হবে সে ভেবে পায় না।অথচ মীরা গড়গড় করে লিখছে।বুবু ধারেকাছে নেই, আম্মা বাসায় নেই, তাকে কে বাঁচাবে আল্লাহ জানে!দাদা বারান্দায় বসে আছে কিন্তু সে কখনো মার ফেরাতে আসে না। অরুণ My favourite person is my father এই এক লাইন লিখে বসে আছে;আর পারে না।মীরাও বসে আছে, সে উপপাদ্য লিখতে পারছে না। তার জ্যামিতি বক্সও অরুণ হারিয়ে ফেলেছে।
হাসান সাহেব অরুণকে খুব মারছেন।অরুণ "ও আল্লাহ, ও বুবু, ও দাদি" বলে চিৎকার করছে। ছফিনা বেগম হাসান সাহেবকে গালি দিচ্ছেন,"হারামজাদা, পুলাডারে মারস কেন?তুই কি চ্যাটের ছাত্র আছিলি, তিনবারে ম্যাট্রিক পাস দিছস।খবরদার পোলারে মারবি না।" হাসান সাহেব কথা শুনছেন না।
মীরা বকুলকে জড়িয়ে বললো," ও বুবু, অরুণ কি মারা গেছে?অরুণ মারা গেলে কি আমিও মারা যাবো?বুবু, ও বুবু!"
আজ HSC রেজাল্ট দিবে।হাসান সাহেব ম্যানেজারের কাছ থেকে কিছু টাকা ধার করে দুপুরে ছুটি নিয়ে বাসায় ফিরলেন। এক পাতিল দই, এক কেজি মিষ্টি আর এক কেজি গরুর মাংস কিনেছেন।সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, বিকালে বুলুর মাকে আনতে যাবেন।ছেলেমেয়ে এ+ পেয়েছে শুনে খুশিতে অবশ্যই ফিরে আসবে। বকুল, বুলবুল, মীরা সবাই অত্যন্ত বুদ্ধিমান। গবেট কেবল অরুণ! তার ঘরে এমন গবেট কিভাবে জন্ম নিল, তিনি ভেবে পান না!
বকুল দাদির ঘরে বসে আছে।সে গোল্ডেন এ+ পেয়েছে। কিন্তু বুলবুল ICT'তে ফেল করেছে।সে দরজা বন্ধ করে বসে আছে।কিছুতেই দরজা খুলছে না। মীরা অরুণ বাবার হাতের দই মিষ্টির দিকে তাকিয়ে আছে, আজ এগুলো আর খাওয়া হবে না!
হাসান সাহেব বুলবুলের ঘরের দরজায় লাথি মারছেন।বকুল ভাবছে, সে পাস না করে ভাইয়া পাস করলেই ভালো হত, বাবা খুশি হত। PSC, JSC'তে বুলবুল গোল্ডেন এ+ পেয়েছে, বাবা খুব খুশি হয়েছিল।ধার করে খাসি জবাই করেছিলেন, সব আত্মীয়-স্বজন বাসায় এসেছিল।সে সাধারণ এ+ পেয়েছে। অথচ SSC'তে সে গোল্ডেন পেল, বুলবুল পেল না।বাবা কোন উচ্ছ্বাস প্রকাশ করলেন না,কেমন গম্ভীর হয়ে থাকলেন!এই যে আজও সে গোল্ডেন পেয়েছে, বাবা ভালো করে জিজ্ঞেসই করলেন না।ভাইয়াটাও পাজি, সবগুলায় লেটার আর ICT'তে কেউ ফেল করে?
অরুণ মীরা জড়াজড়ি করে কাঁদছে।পাশেই বকুল বসে আছে, সে নিঃশব্দে কাঁদছে।হাসান সাহেব নকলা হাসপাতালের ইমারজেন্সি বিভাগের বারান্দায় এমাথা থেকে ওমাথা হাটছেন।বুলবুল দু'হাতের রগ কেটে ফেলেছে। ডক্টর সাঈদ তাকে ডেকে পাঠালেন, ছেলে কথা বলতে চায়।
বুলবুল বাবার হাত ধরল।
"বাবা বিশ্বাস কর আমি একা খুব চেষ্টা করেছি, ICT কিছুই বুঝিনি;এলগরিদম,বাইনারী, ওয়েবসাইট তৈরি! তোমার কাছে লজ্জায় প্রাইভেট পড়ার কথা বলতে পারিনি। হলে স্যার বললেন, দেখে দেখে লিখে দিতে!আমার মন সায় দেয়নি।" হাসান সাহেব ঠান্ডা গলায় বললেন,"তুই হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরবি না।"
হাসান সাহেব আবার বারান্দায় পায়চারি শুরু করলেন। অরুণ, মীরা, বকুল আগের মতই দূরের চেয়ারে বসে আছে, ফুপিয়ে কাঁদছে।
সচরাচর ডাক্তার রোগীর আত্মীয়-স্বজনের সাথে কথা বলে না।দরকারী কথাগুলা বলে নার্স বা তার সহকারী। ডক্টর সাইদ সহজভাবে হাসান সাহেবকে বললেন,"শুনুন, বুলবুল মারা গিয়েছে। আপনার ছেলেমেয়েদের কাছে যান, তাদের সান্ত্বনা দিন।মনকে শক্ত করুন।"
হাসান সাহেব ভেউভেউ করে কেঁদে ফেললেন।
"ও ডাক্তার, আমার ছেলেটা খুব সহজ-সরল বোকা ছিল।জীবনে কোন ক্লাসে সেকেন্ড হয় নাই।কি হতো পরিক্ষায় একটু দেখে লিখলে?"
১৩ ই আগস্ট, ২০১৯ দুপুর ১:৪১
মেহরাব হাসান খান বলেছেন: আরে না।বানিয়ে লিখা, মিথ্যা গল্প। আর আমার বয়সও কম, সদ্য মাস্টার্স করা যুবক।
©somewhere in net ltd.
১| ০৯ ই আগস্ট, ২০১৯ দুপুর ১২:৫১
রাজীব নুর বলেছেন: এই হাসান সাহেব কি আপনি নিজেই?