নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

A learning Advocate!

মেহরাব হাসান খান

আমি H2O,,,,Solid,Liquid & Gas.How do you deserve me?

মেহরাব হাসান খান › বিস্তারিত পোস্টঃ

লালপদ্ম

৩০ শে জুলাই, ২০১৯ বিকাল ৩:৩৫

"আচ্ছা বলুনতো, বিয়ে করে যদি বৌ দেশেই ফেলে যাবে তবে বিয়ে করার দরকার কি?"
ইলা'র এই প্রশ্নের উত্তর আমার জানা নেই।আমি এখনো বিয়ে করিনি।তবে একজনকে ভালোবাসি, মুহিব।কখনো বলা হয়নি।

মুহিবের ধারণা প্রেমে পরাটা খালে পরার মত।যে যত গভীরে যাবে, সে তত কাঁদায় মাখামাখি হবে।নিজেকে উদ্ধার করতে পারবে না।শরীর, মন, মুখ কাঁদায় মাখামাখি, মুখ দেখাবার জো থাকবে না।এর চেয়ে কাউকে দেখে সাময়িক ক্রাশ খাওয়াটা খালে হাটুপানিতে নামার মত, সহজেই নিজেকে উদ্ধার করা যায়।এমন একটা মানুষকে আর যাইহোক প্রেম নিবেদন করা যায় না।
অথচ আমি ভেতরে ভেতরে মারা যাচ্ছি, বলে দিলেই হয়।কিন্তু আমি ইলা'র মত না, সব গড়গড় করে বলতে পারি না।

প্রায় ১ বছর আগে ইলা প্রথম কল দিয়েছিল।আমার মন সেদিন খুব খারাপ ছিল।মুহিবকে বাবার সাথে দেখা করতে বলেছিলাম, সে আসেনি।বাবা তার মিটিং, ইউএস যাওয়া বাতিল করে তার জন্য অপেক্ষা করেছে।
"হ্যালো আপা, একটু আজাদকে ডেকে দিবেন।উনি আমার স্বামী হন।"
"দেখুন, এখানে আজাদ নামে কেউ থাকে না।"

"আপা, রেগে যাবেন না।মানুষ দরকারেই অন্যজনকে বিরক্ত করে।উনি আপনাদের বাসায় দোতলায় থাকেন।ডেকে দিন না!দয়া করুন।"
"দেখুন, আপনি রং নাম্বারে ফোন করেছেন।আমাদের বাসায় কোন ভাড়াটিয়া নেই।"

"কিন্তু আজাদ আমাকে ঢাকা যাবার সময় এই ফোন নাম্বারই দিয়ে গেছে,বলেছে এটা বাড়িওয়ালার নাম্বার, বললেই ডেকে দিবে।"
"তার নিজের মোবাইল নেই, এই সময়ে এটা ভাবতেও অবাক লাগে।"

আমি রাগ করে ফোন রেখে দিলাম।কিন্তু খুব মায়া লাগলো। মেয়েটার গলা খুব মিষ্টি, বিরহে যদি গলা এত মিষ্টি হয় আনন্দে নিশ্চয় আরও মিষ্টি হবে।

এক সপ্তাহ পরে ইলা আবার কল দিল।অনেকক্ষণ কথা বললাম।মেয়েটাই হরহর করে কথা বললো, আমি চুপ করে শুনলাম।

"আপা আমি ইলা।আজাদের সাথে বিয়ে হয়েছে ৬মাস।কি যে ভালোবাসে আমায়!
আমার আব্বার কাছে বিয়ের প্রস্তাব দিল।আব্বাতো এলাকার চেয়ারম্যান, শুনেই না করে দিল। আজাদ কিন্তু আমার পিছু ছাড়লো না। প্রতিদিন স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতো। দেখলেই কথা বলতে আসতো।"
"ইলা, আপনি যে সুন্দর করে কথা বলেন;আপনি জানেন?"

"আপা, আমাকে আপনি করে বলবেন না।আমি ছোট, মাত্র ১০ম শ্রেনিতে পড়ি।"
"তাই, এত তাড়াতাড়ি বিয়ে করলে কেন?"

"না করে উপায় আছে!আজাদ প্রতিদিন স্কুলে সামনে দাঁড়িয়ে থাকে।আমায় বলে, বিয়ে না করলে আত্মহত্যা করবে।একদিন হাত কেটে এসেছে, হাত ব্লেড দিয়ে লম্বা লম্বা করে কাটা।দেখে সারারাত ঘুমাতে পারিনি।"
"হাত কাটা দেখে বিয়ে করে ফেললে?"

"না, আরেকদিন চাকু নিয়ে স্কুলের গেটে আসলো। আমার জন্য হাত-পায়ের রগ কেটে মারা যাবে।আজই শেষ।স্কুলের পাজি ছেলেছোকরা, দারোয়ান মিলে তাকে মারলো।হেডমাস্টার ওর বাবাকে ডেকে, ওকে বাড়ি পাঠিয়ে দিল।"
"ঠিক কাজই করেছে।"

"আপা, আপনার কথা শুনে মনে হয় না আপনি এতটা নির্দয়।"
আমি চুপ করে থাকলাম।

"এর পরেরদিন, সে আমাদের বাড়ির সামনে যে বকুল গাছটা আছে সেখানে এল।হাতে দড়ি, তাকে বিয়ে না করলে গলায় দড়ি দিবে!আপনি বলেন, অমন একটা মানুষকে বিয়ে না করে থাকা যায়?আমি সব ছেড়ে তাকে বিয়ে করে তাদের বাড়ি চলে এলাম।"
"বেশতো!"

"একমাস যেতে না যেতেই তার বাবা মা আমাকে মারধর শুরু করলেন, আমাদের বাড়ি থেকে ৬ লাখ টাকা আনতে বললেন।বলেন আপা, আমি যাদের ছেড়ে চলে এসেছি তাদের কাছে কেমনে টাকা চাই।আমার আব্বা রাস্তায় দেখা হলে, দেখেও না দেখে অন্যদিকে চলে যান।আব্বা কোনদিন আমি ভাত না বেড়ে দিলে খাননি।"
"তারপর কি হলো?"

"কিছুদিন পর থেকে আজাদও আমাকে মারতে শুরু করলো। তার বিদেশ যাবার জন্য টাকা দরকার। জানেন আপা, খুব মারতো।গায়ের এখানে সেখানে সিগারেটের ছ্যাকা দিত।"
"তুমি ফিরে যাচ্ছ না কেন?শোন ইলা, তুমি কালই বাবার কাছে ফিরে যাবে।"

"আমি আব্বার কাছে ফিরে গিয়েছিলাম।আব্বা আমাকে দেখেই বললেন,'আজ এসেছিস ভালো। পরেরবার আবার আসলে তোকে কেটে ব্রহ্মপুত্রে ভাসিয়ে দিবো।' আম্মাও কথা বললো না।যেন আমি অপরিচিত কেউ, পাপী, কুষ্ঠরোগী। । আমার সাথে কথা বললেও তার কুষ্ঠ হবে।"
লাইন কেটে গেল।বারবার কল করেও আর পেলাম না।

তারপর বিশ্ববিদ্যালয় পরিক্ষা, ভাইভা, এসাইনমেন্ট, প্রেজেন্টেশনের ঝামেলায় সব ভুলে গেলাম।ঝামেলা শেষ হলেই মন হল।মুহিবকে বললাম, মুহিব ফেচফেচিয়ে কাঁদলো।মেয়েটার কত কষ্ট, অথচ সে আমাকে কখনো দেখতে পায় না।আমি যেন অদৃশ্য! তার ধারণা, আমাদের অবশ্যই মেয়েটাকে বাচাতে হবে।আমি যেন ইলার ঠিকানা জেনে নেই।একটা মানুষের মনে এত মায়া-ভালোবাসা থাকতে পারে?নাকি সব মেকি?কই, আমার জন্যতো কোন মায়া-প্রেম নেই!

আমি বাসায় এসেই ইলাকে ফোন দিলাম।ধরলো একজন বৃদ্ধ মহিলা, বললো তাদের বাড়ি ইলা নামে কেউ নেই।

ইলাই ২ ঘন্টা পর ফোন দিল।
"আপা, ভালো আছেন?আপনাকেতো পাওয়াই যায় না।এর মাঝে কত কিছু ঘটে গেল।"
"তুমি ভালো আছো,ইলা?"

"আমার আবার ভালো আর মন্দ?আপা আমি মরতে চাই।কিন্তু এখন মরে আমিতো খুনি হয়ে যাবো। আমার পেটে আজাদের বাচ্চা।"
"মরে যাবার কথা চিন্তাও করবে না।"

"তাহলে কি করবো, আপনি বলেন।এরা আজাদের জন্য আবার পাত্রী দেখছে।আপনি জানেন, আমি ৩দিন ধরে শুধু পানি খেয়ে আছি।অথচ আমাদের বাড়ি আমি তিনটা তরকারি ছাড়া ভাতই খেতাম না, ঠান্ডা ভাত খাওয়াতো অসম্ভব!"
"ইলা তুমি আবার বাবার কাছে ফিরে যাও।"

"না আপা!আমি ওদের কাছে মরে গেছি।আচ্ছা, আপা ঢাকা আসলে আমি কি গার্মেন্টসে চাকরি পাবো? না হলে, কোন খারাপ পাড়ায় চলে গেলাম?আমার চেহারা কিন্তু ভালো।"
"ইলা, চুপ কর।তোমার সব সমস্যা দূর হবে।"

"না, আপা হবে না।এরা বলেছে, কালই এদের বাড়ি থেকে চলে যেতে।কোথায় যাবো আমি?আমি মরতেও পারবো না, বেচে থাকারও ইচ্ছে নেই।"
"আজেবাজে চিন্তা বাদ দাও।আচ্ছা, তোমার ঠিকানাটা বলতো।"

"ঠিকানা দিয়ে কি করবেন?আমি এখন ছাই ফেলার ভাঙা কুলা, দয়া দেখিয়ে লাভ নেই।এখন আমার একটাই ইচ্ছে আজাদকে জানানো, আমার পেটে তার বাচ্চা।তাও মনে হয় পারবো না। কেমন হারামি, ভাবুন আপা। তার এত ভালোবাসা, এখন কই গেল?আমার কথা কি তার একটুও মনে হয় না!হয়তো তার বাবা-মার সাথে কথা বলে।"
"ইলা, তুমি চিন্তা করো না।সব ঠিক হয়ে যাবে।তুমি তোমার বাবার কাছে চলে যাও।"
ইলা কিছু না বলেই ফোন রেখে দিল।

আমি আর মুহিব দুধেরচর গ্রামের জামাল চেয়ারম্যানের বাড়ির ঊঠোনে বসে আছি।ইলাকে আজাদদের বাড়িতে পাওয়া যায়নি।তাকে সকাল থেকেই খুজে পাওয়া যাচ্ছে না। জামাল সাহেব তার স্ত্রী আপ্যায়নের চূড়ান্ত করলেন, কিন্তু ইলাকে নিয়ে কোন কথা বলতে চান না।ইলা তাদের কাছে মরে গেছে।

হয়তো ইলাদের জীবনটাই এমন, বাবার বড়িতে থেকে মরে স্বামীর বাড়ি যায়।স্বামী মারা গেলে আর একবার মরে, এবং এরপর থেকে যে যেভাবে পারে তাকে প্রতিনিয়ত খুন করে!ভাই,ছেলে,কন্যা, পুত্রবধূ, সবাই!

ইলাকে সন্ধ্যায় খুজে পাওয়া গেল।শিকদার পাড়া ব্রহ্মপুত্র নদীর ঘাটে, চারপাশ প্রায় অন্ধকার কিন্তু অতদুর থেকেও ইলার ফরশা মুখখানা দেখা যাচ্ছে।পরনে টকটকে লাল শাড়ি।নদীতে পদ্ম ফোটে না, ইলার দেহখানা ঠিকই লাল পদ্মের মত ভেসে আছে।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে জুলাই, ২০১৯ বিকাল ৫:০৪

রাজীব নুর বলেছেন: ইলার জন্য কষ্ট হচ্ছে।

৩০ শে জুলাই, ২০১৯ রাত ৯:২০

মেহরাব হাসান খান বলেছেন: ইলাদের জন্য কষ্ট না হয়ে উপায় নেই।

২| ১৩ ই আগস্ট, ২০১৯ দুপুর ২:৫৫

মাহের ইসলাম বলেছেন: আপনার লেখা দেখি খুব সুন্দর।
সহজ করে লেখেন। কিন্তু বক্তব্য ফুটে উঠে পরিষ্কারভাবে।
ভালো লেগেছে, এই গল্পটাও।

আশ্চর্য হয়েছি, এখানে কমেন্ট কম দেখে। এমনকি, পাঠকও কম।

আশা করি, দিন বদলে যাবে।
শুভ কামনা রইল।

১৩ ই আগস্ট, ২০১৯ বিকাল ৪:১৯

মেহরাব হাসান খান বলেছেন: এইতো পঠক একজন বাড়লো! আসলে লিখে আনন্দ পাই, তাই লিখি।
আপনাকে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.