নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কত জনকে কত কিছু আনতে বলি, কেউ আনে না।আমি সেদিন সবুজকে বলেছিলাম গ্রামে গেলে কাঁঠাল নিয়ে আসতে।এই ছেলেটা গুরুত্ব সহকারে একটা কাঠাল এনেছে। যাক এই সিজন আমি কাঠাল খেতে পারবো। আমি কাঠাল আনতেই রামপুরা যাবার জন্য বের হয়েছি। বাসা থেকে বের হতে না হতেই ঝুম বৃষ্টি।
আমি আজমপুর Smartex Outlet এর সামনে দাঁড়িয়ে আছি।এখানে সারা বছরই ৬০% ছাড় চলে, তবুও বিক্রি নেই।আমি দুই-চারবার ভিতরে গিয়েছি।পোশাকগুলো অনেক পুরনো আর ধুলোর স্তর পরে আছে।
আমার সামনে একটা মানিব্যাগ পরে আছে।উঠাবো কি উঠাবো না, ভাবছি।চরম কৌতূহল মানুষকে অনেক সময় বিপদে ফেলে। যেমন- ১৮৯৪ সালে এই এক পাদ্রী চার বছরের একটা ছেলেকে পানিতে ডুবে যাওয়া থেকে বাঁচালেন, পরবর্তীতে সেই ছেলেই তাদের পুরো জনগোষ্ঠীকেই হত্যা করেছিল, কিছু বাচিয়ে রেখে।ছেলেটিই এডলফ হিটলার!আমার জন্য অবশ্য অত ভয়াবহ আশংকা নেই, এটাতো একটা মানিব্যাগ। হয়তো কোন পকেটমার টাকা নিয়ে ফেলে গেছে।
কখনো যদি খালে কারেন্ট জাল পাতেন, খেয়াল করবেন কিছু মাছ হুদাই দৌড়ে এসে জালে আটকা পরে।আমি মুহিব অনেকটা তেমনি!
মানিব্যাগের ভিতরে একটা পাসপোর্ট, কিছু সৌদি রিয়াল আর একটা রুপসী মেয়ের ছবি।মেয়ে না বলে কিশোরী বলাই ভালো। চোখে দেয়া কাজল ছড়িয়ে গেছে, চুল উস্কখুস্ক, চাহনিতে লজ্জা আর উত্তেজনা থাকলেই মায়াবী চোখ দুটো জ্বলছে। জামার বুকের দিকে একটা বোতাম লাগাতেও ভুলে গেছে।কিশোরী মেয়েটির মুখ তামাটে কিন্তু বুক ফরশা।ফেলে দিবো, কি রেখে দিবো দোটানায় পরে গেলাম।
আমি রাইদা বাসে চড়লাম, রামপুরা যাবো। বাসে চড়তেই দেখলাম একজন মা তার কিশোর পুত্রকে কষে একটা চড় দিলেন, বলছেন,"হারামির বাচ্চা, স্কুলে যাবি না।বাপের মত কামলা হবি?"ছেলেটা যতটা লজ্জায় কুকড়ে গেল, তারচেয়ে বেশি বিব্রত হল মা যখন ইন করতে বলছে।সে কিছুতেই ইন করবে না।মা কান টেনে দিলেন।লাল গাল, লাল কান নিয়ে ছেলেটা মায়ের পাশ থেকে আমার পাশে এসে বসল।আমি বললাম,"ফরশা হবার এই এক যন্ত্রণা, একটি মার খেলেই দাগ পরে যায়।" সে হেসে আমার দিকে তাকালো।আমি বললাম,"এই তুমি পকেট থেকে হাত বের কর, আরাম করে বস।" ছেলেটার চোখমুখ আবার শক্ত হয়ে গেল।
হাইস্কুলের একটা ঘটনা মনে পরলো।ক্লাসে জসিম স্যার এলেন।খুব কঠিন ইংরেজি শিক্ষক, ইন না করে তার ক্লাস করা আর ৩২৬ ধারা মোতাবেক স্যারকে মারাত্মক আঘাত করা, সমতুল্য। আমি কোনমতে ইন করলাম, কিন্তু পকেটে হাত দিয়ে রাখলাম।স্যার ক্লাসে এসে আমাকেই ডাকলেন।
"Muhib, be a smart man. Be at ease. Keep your hand out of your pocket."
আমি চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলাম।আমার কিছুই করার নেই।আমার বাঘ কিছুতেই আমাকে মানছে না।
স্যার হুঙ্কার ছাড়লেন,"You pig, dick head! Can you hear me?" পাছায় চার-পাঁচটা বেত পরে গেল।আমি একটুও নড়লাম না।আমার কি করার আছে, আমি তখনো বাঘের খাচা পরা শিখিনি!
ছেলেটার অবস্থা মনে হচ্ছে আমার মতই।নাম জেনে বললাম,"রাইদ!মাকে বলবে ছোট প্যান্ট কিনে দিতে।" রাইদ চোখ বড়বড় করে বলল,"আমার লজ্জা করে।আপনি মাকে একটু বলবেন?"
আমি আন্টিকে বলে বিমানবন্দর নেমে পরলাম।
বৃষ্টি থেমেছে।কেয়া থাকলে বলতো,"মুহিব, তুমি একটা রাম ছাগল।ঠিক তাও না।ছাগলেরও বুদ্ধি আছে, তোমার তাও নেই।তুমি ঘিলু শুন্য।" ইদানীং কেয়া সুযোগ পেলেই এই একই কথা বলে।
আমি বিমানবন্দরে ১নং টার্মিনালে দাঁড়িয়ে আছি।এখানে মনে হয় না রিয়াদকে পাওয়া যাবে। এই পাসপোর্ট-মানিব্যাগের মালিকের নাম রিয়াদ। এখানে যারা দাঁড়িয়ে আছে সবাই সম্ভ্রান্ত, এদের পাসপোর্ট নিরাপদে রাখার আলাদা লোক আছে।কোট-টাই পরে পিছনে দাঁড়িয়ে থাকে।এরা প্রায়ই বিদেশে যায়, পরিবারের দুএকজন লোক নিতান্ত অনিচ্ছায় বিদায় জানাতে আসে।
আমি ২ নং টার্মিনালের দিকে হাটলাম। লোকজন আলাদা আলাদা গ্রুপে জটলা করে আছে।প্রতিটি গ্রুপে কমবয়সী-বুড়ো মিলিয়ে প্রায় ৫-৯ জনের জটলা।মেয়েরা কাঁদছে, খুব চেষ্টা চলছে যাতে চোখে পানি আসে কিন্তু আসছে না,শিশুগুলো অবাক হয়ে চারপাশ দেখছে।তাদের উৎসুক চোখ প্লেন খুজছে, এত উঁচু প্রাচীর পেড়িয়ে নিশ্চয় দেখতে পাবে না। সবচেয়ে মুরুব্বি পুরুষ লোকটি মাঝেমধ্যে জোরে হাক দিচ্ছে,"এত প্যানপ্যানানি কিয়ের?বিদেশ যাইতাছে টেকা কামাইবো।আবারতো ফিইরাই আইবো।কান্দা বন্ধ।" কিন্ত মেয়েরা আবার নতুন উদ্যমে কান্নাকাটি করছে।
দূরে চার জনের একটা গ্রুপে কোন কান্নাকাটি নেই।তারা গা-ছাড়াভাবে দাঁড়িয়ে আছে, ইতিউতি করছে।পাঞ্জাবী পরা দলপতি ছেলেটার গালে একটা চড় কষালেন।দেখাদেখি দলপত্নীও কিশোরী মেয়েটার গালে একটা চড় কষালেন। কিশোরী মেয়েটা দূরে সরে গেল।হাতে মেহেদী, পরনে লাল টকটকে শাড়ি,মুখে ঝিলমিল দেয়া। দেখতে খারাপ লাগছে না, বিষাদ সিন্ধুতে জুলেখার সাজও এমনি ছিল। এরা আলাদা হলেও এদের কষ্ট একই, পতি বিচ্ছেদ!
দলপতি, দলপত্নী একযোগে ছেলেটাকে বকছে,"হারামির বাচ্চা!নতুন বৌ পেয়ে দুনিয়া ভুলে গেছস?আর কিছুর খেয়াল নাই।যাহ, অহন সৌদি যা।" দলপত্নী আরও একধাপ এগিয়ে বলছে,"এইটা ঐ কাইল্লা বৌয়ের কাম।ইচ্ছা কইরা লুহাইয়া রাখছে পাসপোট! যাতে অর ভাতার-লাং লইয়া দরজা দিয়া ফুর্তি করবার পারে।"
ছেলেটা কিশোরী বৌয়ের দিকেই পিটপিট করে তাকাচ্ছে। আমি কিশোরী মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করলাম,"আপনার জামাইয়ের নাম কি রিয়াদ, রিয়াদ মাহমুদ?" মেয়েটা তওবা করে বললো," জামাইয়ের নাম লওন মানা।তয় হের নাম ঐডাই।"
আমি পাসপোর্টটা দেখালাম। এক মুহুর্তেই কিশোরী চোখদুটি ছবির মত জ্বলে উঠলো।পাসপোর্ট কেড়ে নিয়ে ছুটলো ছেলেটার দিকে।
চারজন লোক একযোগে হাউমাউ করে কাঁদছে।২নং টার্মিনালের প্রতিটি মানুষ, আলাদা আলাদা গ্রুপে যে মেয়েগুলো এতক্ষণ কাঁদছিল, সবাই কান্না থামিয়ে এদিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
দলপতি কান্না থামানোর চেষ্টা করে পারছেন না।ভারী গলায় জিজ্ঞেস করলেন,
"বাপজান, আপনের নাম?"
"জ্বী, আমি মুহিব, মুহিব।"
"আমি জানি, আপনি মুমিন, মুমিন ফেরেশতা। আমি হাজারবার ইন্না-লিল্লাহ পড়ছি।আল্লাহপাক ফেরেশতা পাডাইছে।না পাডাইয়া পারবো, জীবনে পাপ করছিনি!"
৩০ শে জুলাই, ২০১৯ দুপুর ২:২১
মেহরাব হাসান খান বলেছেন: ইয়ে মানে, শেষ দুই লাইন বুঝিনি।
২| ৩০ শে জুলাই, ২০১৯ রাত ৯:৪৩
মা.হাসান বলেছেন: কারেন্ট জালে মাছ ধরা দেখা হয় নি, তবে গল্প ভালো লাগলো।
৩১ শে জুলাই, ২০১৯ সকাল ৮:০২
মেহরাব হাসান খান বলেছেন: কখনো গ্রামে গেলে চেষ্টা করবেন, অত্যন্ত সহজ।
পড়ার জন্য ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১| ৩০ শে জুলাই, ২০১৯ সকাল ৯:১৪
রাজীব নুর বলেছেন: রাইদা বাসে করে সেদিন পোস্তগোলা গেলাম।
দিনে দিনে বহু বাড়িয়াছে দেনা, শুধিতে হইবে ঋণ ।
বাজিবে হয়তো করুন সুরে ভি আই পি দের বীণ।