নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বড়রা মনে করে,বাচ্চারা কিছু বুঝতে পারে না।ভূল, আমরা সব বুঝতে পারি।এই যেমন আমি বুঝতে পারছি বাবা দরজা বন্ধ করে মাকে মারছে।মা নিশ্চয় খুব কষ্ট পাচ্ছে, কিন্তু বের হয়ে মা এমন ভাব করবে যেন তারা ঘরে এতক্ষণ গল্প করেছে।আজ অবশ্য বাবা মাকে বেশ করে মারতে পারবে না।কারণ আমি আগেই বাবার বেল্ট, বিছানার ঝাড়ু আর টয়লেটের ব্রাশ সরিয়ে ফেলেছি।
বাবা মাকে মারছে কারণ মামা কিছুতেই তালাকনামায় সই করবে না।বাবা যা বলেন মা তাই করে।এইতো সেদিন মাঝরাতে বাবা বললো,"মিনি যা, আমার সিগারেট এনে দে।" মা এনে দিল।অথচ আমি সন্ধ্যায় আইসক্রিম খেতে চাইলেও মা বলে,"রাইদ, কাল সকালে খেও। আব্বা, আমার অন্ধকার খুব ভয় লাগে।"
তালাকনামা কি আমি জানি না।তবে বুঝতে পারি খুব খারাপ কিছু।বাবা মাকে বকা দেন, ধলা মাগী। সেদিন আমাদের কাজের বুয়ার হাসবেন্ডও তাকে বকা দিয়ে বলেছে,"কাইল্লা মাগী টেহা দেস না কেন?"
"তালাকনামা" আর "মাগী" এই দুইটা শব্দের অর্থ জানতে হবে।কিন্তু আমার কাছে কোন বাংলা একাডেমি ডিকশনারি নেই।মুহিব মামাকে বললে এনেদিত। কিন্তু মামা গত পরশু চলে গিয়েছে, আর ফিরেনি।
মুহিব মামার গায়ের চামড়া গন্ডারের,মামার লজ্জা নেই, মামার কোন বুক-পিঠ নেই,মামা বসে অন্ন ধ্বংস করছে;এইসব বাবা প্রায়ই বলেন।আমার বাবাতো আইনজীবী, তাই তিনি কঠিন কঠিন শব্দ বলেন।এই জন্যই আমার একটা বাংলা ডিকশিনারি দরকার।
"দাদা, এই দাদা!পিপি করবো।"
এটা আমার ছোটবোন, অরু।ওর জন্যই যত সমস্যা।মেয়েটার সারাদিন খিদে আর পিপি লেগেই থাকে।আর সে যেখানে সেখানে "ভাউ" দেখে।সারাদিন ট্যাট্যা করে, "দাদা পিপি, দাদা ওখানে ভাউ, দাদা ভয় লাগে, দাদা দুদু খাবো, দাদা আমার মাম খাবো!"
আমি কিন্তু বিরক্ত হই না।কারণ, ও দেখতে Frozen'র এলছা'র মত।কি মায়া করে দাদা ডাকে!
কাল ও না থাকলে, আমি বাবাকে খুন করতাম।আমি একটা নতুন ব্লেড নিয়ে ঘুমন্ত বাবার পাশে ঘাপটি মেরে বসে আছি।মা পাশে ঘুমোচ্ছে। আমার মন্দ মন, ভালো মনের সাথে যুদ্ধ করছে।একজন বলছে, মেরে ফেল। মেরে ফেললেই মা শান্তি পাবে।ভালো মন বলছে, মারিস না রাইদ।তোর মা কষ্ট পাবে।আর তোর বাবা তোকে খুব ভালোবাসে।
মন্দ মন জিতে গেল,কারণ আর বাবা মাকে খুব মারে। আর মা যে জেদি, কিছুতেই তালাকনামায় সই করবে না।আমি ব্লেড দিয় পোছ দিব দিব, ঠিক তখনি অরু বলল,"দাদা, দাদা!তুই আমায় একা রেখে চলে এলি কেন?আমার ভয় লাগে।বিছানার নিচে ভাউ, শব্দ করছে হাউ হাউ!" বাবা জেগে গেল।আমাকে আর অরুকে কোল নিয়ে বললো,"কি ব্যাপার বাবা, ঘুম আসছে না।চল গল্প শোনাই।" আমি আর অরু বাবা কোলে গল্প শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পরলাম।ভেবে বসবেন না, আমার বাবা অনেক ভালো। আসলে মধুর আচরণ করে দুই ধরনের লোক- সাধু আর পিশাচ।আমার বাবা পিশাচ। মায়ের পিঠটাতো দেখেননি!
মা ঘর থেকে বের হয়ে হাসিহাসি মুখে বললেন,"রাইদ, আমরা কোর্টে বেড়াতে যাবো। যাও রেডি হও।"
কোর্টে কি হচ্ছে আমি জানি না।আমরা বাবার চেম্বারে বসে আছি।আমাদের সাথে ভাব জমানোর চেষ্টা করছেন শাওন, শাওন আন্টি!আজ নিশ্চয় উনার আনন্দের দিন।বাবা আজ উনাকে বিয়ে করবে। উনি দেখতে শাওনের মতই, ঠিকই ধরেছেন নিষাদের আম্মু শাওন।মা বলতেন, হুমায়ুন আহমেদ শাওনকে সত্যি খুব ভালোবাসেন True love।আমি উনার নীল হাতি, বোতল ভূত পড়েছি;আজেবাজে লিখা!
বাবাও নিশ্চয় শাওন আন্টির True love, তাহলে মায়ের কি হবে?অরুটা কি যে বোকা, চকলেট দিলেই নিতে হবে।অবশ্য শাওন আন্টি খারাপ না।আগে আমার জন্য কাচ্চি, পাস্তা নিয়ে আসতেন।তখন বাবা শাওন আন্টির একটা কেস লড়ছে!তাকে দেখেই কোলে ঝাপিয়ে পরতাম, এখন ভালো লাগে না।তাকে পেত্নী পেত্নী লাগে!বাবা এই কালো-মোটা মেয়েটার মাঝে কি দেখেছে কে জানে?অথচ মা কত সুন্দরী! সুবর্ণা মোস্তফা আর মাকে একইরকম দেখতে।
সুপ্রিম কোর্ট কি সুন্দর! চেনা খুব সহজ, শাহবাগ পাড় হয়ে মৎস্য ভবন, ডান দিকেই তাকালেই সুপ্রিম কোর্ট। অবশ্য আজ আমি ভাবছি অন্য কথা, কিভাবে বাবাকে খুন করা যায়?গুগলে অনেক পদ্ধতি দেখেছি।Mikey,Badlapur, Mom, Perfume:story of a murder, Wrong Turn মুভিগুলোতে দেখেছি কীভাবে খুন করতে হয়। আমার জন্য বেশ কঠিন। আমি ছোট তাই।কিন্তু আমি জানি, আমি পারবো, মাইকি'র মত বিদ্যুৎ দিয়ে বাথটাবেও মারতে পারি।তবে ব্লেড দিয়ে গলা কাটা সহজ।
মুহিব মামার সাথে আলোচনা করা যেত, কিন্ত একে মামা নেই; মামা আমার "ভালো মন"র মত।তাই মামা রাজি হত না।এতে অবশ্য ভালোই হয়েছে, সাক্ষী থাকবে না।
আমরা এখন বিচারক আংকেলের রুমে বসে আছি।উনাকে আগে থেকেই চিনি। মুহিব মামার সাথে একবার আমাদের বাসায় কেয়া আন্টি এসেছিলেন।তিনি বলেছিলেন,"রাইদ, তোমার দেখি ঘাড়ে তিল।যাদের ঘারে তিল তাদের ফাসি হয়।" বাবাকে খুন করার জন্য আমারও নিশ্চয় ফাসি হবে। তখন এই আংকেল বলবেন,"৩০২ ধারা মোতাবেক রাইদকে ফাসিতে মৃত্যু কার্যকরের আদেশ দেয়া হইলো।"
যেহেতু মা দুশ্চরিত্রা, মায়ের অন্য জনের সাথে অবৈধ সম্পর্ক আছে। তাই আমরা আর মায়ের সাথে থাকতে পারবো না।কিন্তু একটা আংকেল কাসুন্দি রেস্টুরেন্টে মাকে বলেছিল, তিনি মাকে এখনো ভালোবাসেন।মায়ের জন্য সারাজীবন অপেক্ষা করবেন।যেকোনো ভাবে মায়ের সাথে থাকতেন চান।মা হেসে উড়িয়ে দিলেন।বাবার এতএত প্রশংসা করলেন।অথচ সেদিন সকালেও বাবা মাকে আমার খেলার ব্যাট দিয়ে ইচ্ছেমতো পিটিয়েছে।
বিচারক আংকেল জিজ্ঞেস করলেন আমরা কার সাথে থাকতে চাই।আমিতো বাবার সাথেই থাকবো, নইলে তাকে খুন করবো কিভাবে?বোকা অরু মায়ের জন্য কান্না জুড়ে দিল।চকলেট, পুতুল, আইসক্রিম সব ছুরে ফেলে দিল।কলম দানী দিয়ে দিল শাওনের কপালে বাড়ি।শাওন এবার বুঝবে কেমন লাগে, কত ধানে কত মুড়ি!
আমি মায়ের কানে কানে বললাম,"মা তুমি ভয় পেও না।মুহিব মামা তোমাকে বিয়ে করবে।আর মামা যদি কেয়া আন্টিকে বিয়ে করে, তুমি কাঁদবে না।আমি বড় হয়ে তোমায় বিয়ে করবো।আর আমি তাড়াতাড়ি তোমার কাছে ফিরে আসবো।"
মা একটু হাসলেন। মা তো হাসবেনই। মা তো জানে না, আজ রাতেই বাবাকে খুন করবো। ব্লেড দিয়ে আস্তে একটা পোছ!
২৭ শে জুলাই, ২০১৯ রাত ৯:৪৪
মেহরাব হাসান খান বলেছেন: @রানার ব্লগ ছেলেটা পড়ে বলেছিলেন, অনুকরণ। তাই ভাবলাম, আবার লিখি। ধন্যবাদ
২| ২৭ শে জুলাই, ২০১৯ রাত ১১:৫৪
কানিজ রিনা বলেছেন: গল্পটা আসলে অনেক সংশারে সত্যি ঘটে।
যেমন হুমায়ুন উদাহরন টেনেছেন।
এমন ঘটনা আমাদের দেশে অহরহ ঘটছে।
অন্তত দশটা পরিবারের একটি এমন ঘটনা
ঘটেই চলেছে। কারন বেশীর ভাগ পুরুষরা
এক নারীতে খুশিনা।
আজকাল আবার আধুনিক বিজ্ঞান সম্যত্ব
ঔষধ বেড়িয়েছে যা কিনা বুইড়া পুরুষের
পুরানো যৈবন ফিরে আসে। ধরুন ইয়াবা
নানান পদের ভায়াগ্রা। তাইতো আজকাল
বুইড়া ভামেরা শিশু ধর্ষনে এগিয়ে আছে।
অত্যান্ত সাহস দেখিয়ে গল্পটা লিখেছেন।
আন্তরিক ধন্যবাদ।
২৮ শে জুলাই, ২০১৯ সকাল ৭:৪৩
মেহরাব হাসান খান বলেছেন: দেখুন, গল্পতো গল্পই!আমি কেবলই শাওন নামটা চেহারার বর্ণনা জন্য ব্যবহার করেছি।এর বেশি না।
৩| ২৮ শে জুলাই, ২০১৯ রাত ১২:৪৯
মুক্তা নীল বলেছেন:
খুব সুন্দর একটি গল্প লিখেছেন বাস্তব ঘটনাকে আড়াল করে।
প্রায় সংসারে এই শাওনের মত মেয়েরা প্রবেশ করে ভেঙে দিচ্ছে সবকিছু । তবে দোষ বেশি রাইদ এর বাবাদের ।
এই লোকটা ও শাওনকে প্রকৃতি কখনো ছাড় দেবে
না । তারপরও সব মিলিয়ে অনেক ভালো লাগা।
২৮ শে জুলাই, ২০১৯ সকাল ৭:৪৬
মেহরাব হাসান খান বলেছেন: আচ্ছা, শাওনরা কিন্তু শুধুই ভাঙে না।একটা নতুন সংসারও তৈরি করে, সেটা অবশ্যই কম সার্থকতা না?
৪| ২৮ শে জুলাই, ২০১৯ সকাল ৮:৫৮
রাজীব নুর বলেছেন: এ যুগের পুলাপান খুব পাকনা।
এরা সব বুঝে।
২৮ শে জুলাই, ২০১৯ দুপুর ১:৩৭
মেহরাব হাসান খান বলেছেন: হ্যা। আসলে সবাই পাকনা। আল্লাহ রুহু আগেই তৈরি করেছেন।শুধু কাউকে আগে পাঠান, কাউকে পরে।
৫| ২৮ শে জুলাই, ২০১৯ দুপুর ২:৫৫
নীল আকাশ বলেছেন: জীবন বড়ই কঠিন হয়ে যাচ্ছে!
২৮ শে জুলাই, ২০১৯ বিকাল ৪:২০
মেহরাব হাসান খান বলেছেন: আসলে জীবন একই রকম আছে। সমস্যায় জর্জরিত, কোন সমস্যা সমাধান না হতেই আরেকটা হাজির। কোন সমস্যাই সমাধান করা হয় না।
©somewhere in net ltd.
১| ২৭ শে জুলাই, ২০১৯ রাত ৯:৩৫
আহমেদ জী এস বলেছেন: মেহরাব হাসান খান,
সুন্দর গল্প হয়েছে। এবং লিখেছেনও দারুন সাজিয়ে।