নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সেদিন তাপমাত্রা ৪০ডিগ্রি পেড়িয়ে গেল।শেষ বিকেলে আমি শেওড়া থেকে টিউশনি শেষ করে বাসায় ফেরার জন্য দৌড়ে BRTC'তে চড়লাম।তাড়াহুড়ো করায় একটা মেয়ের সাথে একটু ধাক্কা লাগলো।
"এই যে! আপনার গা থেকে বিচ্ছিরি ঘামের গন্ধ আসছে।গা ঘেঁষে দাড়াবেন না।"চোখ দিয়ে গুলি করা গেলে, মেয়েটা এতক্ষণে আমাকে খুন করে ফেলতো।আমি বেশ দূরে চলে গেলাম।
নিকুঞ্জ পাড় হতেই মেয়েটি প্রায় আমার পিঠ ঘেঁষে দাড়ালো। আমি চমকে দূরে সরে যাচ্ছি দেখে বললো," শুনুন, কেউ হয়তো আমার জামা কেটে দিয়েছে। একটু দেখবেন।"
মেয়েটির জামা পিঠের দিকে কাটা, বেশ বড় চকচকে কালো তিলটা দেখা যাচ্ছে।
মেয়েটির ওড়না নেই, আমি আমার শার্ট খুলে তাকে দিলাম। যে ঘামের দুর্গন্ধ একটু আগে তার সহ্য হচ্ছিল না, এখন ঘাম মাখা শার্টটাই বেশ যত্নে পরলো।কোন ইতস্তত নেই, একবারও জিজ্ঞেস করেনি শার্ট ছাড়া আমার লজ্জা লাগছে কিনা?
আমাকে বাসার ঠিকানা বলে, সে আজমপুর নেমে গেল।একবার পিছনে ফিরেও তাকালো না।যেন তাকে শার্ট দেয়া আমার দায়িত্ব ছিল, আর ঘামে ভেজা শার্ট দিয়ে আমি দায়িত্বে অবহেলা করেছি।
পিয়ার সাথে আমার এমন বিদঘুটে ঘটনার মাধ্যমেই পরিচয়।
আমার তিনটা ভালো শার্ট। আমি বদলিয়ে বদলিয়ে পরি।শোভন নামে ছোট একজন ছাত্র আছে, এক শার্ট বারবার দেখলেই বলে,"স্যার, আপনার কি একটাই শার্ট? আপনি কি গরীব?"
তাই আমি গত শুক্রবার পিয়াদের বাসায় আমার শার্ট আনার জন্য গিয়েছিলাম।
ওদের বসার ঘরটা উচ্চবিত্তলোকদের ঘর যেমন হয় তেমনি।দামী আসবাব, শোপিস, এন্টিক আর তেলচিত্রে ঠাসা।তবে একটা ব্যতিক্রম, দেয়ালে রাধা-কৃষ্ণ যুগলের একটা তেলচিত্র! আশ্চর্য এই যে এখানে কৃষ্ণের ইচ্ছে পূরণ করা হয়েছে, তাকে ফরশা আকা হয়েছে।কৃষ্ণ সারা জীবন দুঃখ করেছে,"রাধা কিউ গোড়া ম্যা কিউ কালা?" মুসলিম লোকের বাড়িতে রাধা-কৃষ্ণের এই ছবি দেখলে ধর্ম মন্ত্রী গর্ব করে বলতেন, এই সরকারের আমলেই কেবল এটা সম্ভব।
"আমার নাম পিয়া।আপনার খুব খিদে পেয়েছে নিশ্চয়?"
"না। কিভাবে বুঝলেন।"
"আপনি ঠান্ডা চা আর পুতানো চানাচুর খুব আগ্রহ করে খাচ্ছেন তাই।"
"ও!আমার শার্টটা কি ফেরত পাওয়া যাবে?"
"যাবে, কিন্তু আজ না।আমি কাচ্চি রান্না শিখছি, আপনি আগামী শুক্রবার আবার আসবেন। কাচ্চি খেয়ে, শার্ট নিয়ে যাবেন।"
"ঠিক আছে।আমি যাই, পড়াতে যেতে হবে।"
"আপনার নাম কি?আপনি কি করেন?"
"আমি মুহিব, আমি পুলাপান পড়াই।"
সেদিন পিয়ার সাথে অনেক কথা হলো। মেয়েটা একটানা কথা বলে যেতে পারে।মাথা ঝিঝি করছিল, কিন্ত একটা মেয়ে এত আগ্রহ করে গল্প করছে, হুট করেতো ঊঠে যাওয়া যায় না।বিশেষ করে কোন সুন্দরী মেয়ে কথা বললে শুনতে হয়, ভালো না লাগলেও মুগ্ধ হবার অভিনয় করতে হয়।নয়তো অভিশাপ লাগে, সৌন্দর্যের দেবী হেলেনের অভিশাপ!
২য় বার পিয়ার সাথে দেখা হল রবিবার, সেদিন আমি ৫ নম্বর সেক্টরে জারিফকে পড়াতে যাচ্ছি।পেছন থেকে সে আমাকে ডাকছিল।
"মুহিব, এই মুহিব!কোথায় যাচ্ছেন?"
মেয়েটা এমন কেন, এমনভাবে ডাকছে যেন আমি তার কত পরিচিত। সারারাত জেগে কথা বলি, আমি বাদাম ছিলি সে কুটকুট করে খায়, আমরা হাত ধরে দিয়াবাড়ি লেকের পাড়ে বসে থাকি!
"হা করে তাকিয়ে আছেন কেন?রিকশায় উঠুন। কোথায় যাবেন, নামিয়ে দিব।সারাদিনের জন্য রিকশা ভাড়া করেছি।ঘুরে ঘুরে বৃষ্টি দেখবো।"
আমি সত্যিই হা করে তাকিয়ে রইলাম, পাগল নাকি মেয়েটা!
"কই, উঠুন।দেখুন, আমার গায়ে কুষ্ঠ হয়নি যে আপনি আমার পাশে বসতে পারবেন না।"
ঝুম বৃষ্টি শুরু হল।আমার খুব ইচ্ছে করছিল পিয়ার কাধে হাত রাখি, অনেকটা প্রেমিক রিকশার হুড তুলে যেমনভাবে প্রেমিকার কাধে-কোমড়ে হাত রাখে তেমনভাবে।আমার সাহস হয়নি, অথচ ঝাকি লাগলে পিয়া কত সহজভাবে আমার হাটুতে হাত রাখছিল।একটুও ইতস্তত নেই।
আজ শুক্রবার, আমি পিয়াদের বাসার গেটে।আজকে দোতলা বাড়িটা মরিচ বাতি দিয়ে সাজানো, লাল-নীল-সবুজ বাতি জ্বলছে আর নিভছে।বিশাল বোর্ডে গাদা-গোলাপ দিয়ে লিখা Milon weds Piya!
আজ পিয়ার বিয়ে, এর মাঝে সে নিশ্চয় আমার জন্য কাচ্চি রান্না করবে না।আমি মেসের দিকে হাটা শুরু করেছি।দাওয়াত ছাড়া বিয়েতে যাওয়ার কোন মানে হয় না। অনেকদিন বিয়ে খাই না, গেলেও খারাপ হয় না।কিন্তু দেখা গেল, পিয়া আমাকে চিনতেই পারছে না।খুব অসম্মানের হবে।
"বাইজান, ও বাইজান!"
পিয়াদের কাজের লোক।বলছে, পিয়া আমার জন্য অপেক্ষা করছে।
এটা মনে হয় পিয়ার ঘর।সারা ঘরে বিয়ের শাড়ি, কনে সাজানোর জিনিস আর গয়নার বাক্স। পিয়া একটা প্লেট নিয়ে রুমে ঢুকছে।তার আগেই হনহন করে একজন মহিলা এলেন,অনেকটা ডলি জহুরের মত। রিনা খানের মত কর্কশ বলছেন,"দেখ ছেলে,তুমি এই মুহূর্তে বাড়ি থেকে চলে যাবে।আর জীবনেও এই দিকে আসবে না।"আমার প্রতি এত রাগের কারণ কি?আমিতো শার্ট নিতে এসেছি,দিলেই চলে যাবো। আবার আসবো কেন?
পিয়া শান্তভাবে বলল,"মা, আজকের এই কিছুটা সময় আমাকে দাও।কাল আমিতো লন্ডন চলেই যাচ্ছি।তোমার সব কথা রেখেছি,আমার এই কথাটা রাখো।"
ভদ্রমহিলা চলে গেলেন না।পাশে দাঁড়িয়ে রইলেন। পিয়াকে বসার ঘরে টানানো তেলচিত্রের রাধার মত লাগছে। একটাই তফাৎ, সিঁথিতে সিঁদুর নেই।পিয়া মুখ হাসি হাসি রাখার চেষ্টা করছে, কিন্তু তার চোখ বিষন্ন।
পিয়া আমার সামনে সাত রঙের সাতটি শার্ট রেখে বললো,"এগুলো আপনার। না করবেন না। আজ আমার বিয়ে, বিয়ের দিন কনে'কে কষ্ট দিতে নেই।"
আমি চুপ করে রইলাম।পিয়া খাবার প্লেট আমার সামনে দিয়ে বললো,"আমি কাচ্চি রান্না শিখতে পারিনি। তবে ভাত আর ডিমভাজি করেছি।ভাত একটু জাউয়ের মত হয়ে গেছে।প্রথমবার তো!"
মেসে প্রায় প্রতিদিন ডিম খাই।কিন্তু একটা সুন্দরী মেয়ে আগ্রহ নিয়ে প্রথমবার রান্না করেছে, তাই ভালো না লাগলেই আগ্রহের অভিনয় করে খাচ্ছি।না তাকিয়েও বুঝতে পারছি, পিয়ার চোখ দিয়ে ভালোবাসা-মমতা আর মায়ের চোখ দিয়ে আগুন ঝরে পরছে।
আমি পিয়াদের বাসা থেকে বের হয়ে মেসের দিকে হাটছি।ঝুম বৃষ্টি শুরু হল।একজন শেরওয়ানি পরা বৃদ্ধলোক আমাকে ডাকতে ডাকতে দৌড়ে এলেন।
"মুহিব, মহিব!তুমি মুহিব?কি হয়েছে বলতো, তুমি চলে আসার পর থেকেই আমার মেয়েটা কাঁদছে।"
২৭ শে জুলাই, ২০১৯ দুপুর ১২:৫২
মেহরাব হাসান খান বলেছেন: সত্যিকারের ভালোবাসা শুধু কাছেই টানে না, দুরেও ঠেলে দেয়।
২| ২৭ শে জুলাই, ২০১৯ রাত ২:৪৪
জুনায়েদ বি রাহমান বলেছেন: আজ ফেইসবুকে এক বন্ধুর স্ট্যাটাস পড়ে মন খারাপ হয়ে আছে। প্রেমিকা আকস্মিক গোপনে অন্য একটা ছেলেকে বিয়ে করে ফেলছে।
মেয়েটিও আমার ফ্রেন্ড। তাই যোগাযোগ করার চেষ্টা করলাম। কিন্তু পারলাম। মেয়েটির কাছের একটা মেয়ে ফ্রেন্ডকে কল করে জানলাম, ফ্যামিলির জন্য মেয়েটি বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছে।
বর্তমান সময়ের প্রেমের গল্পগুলোর সমাপ্তি আপনার গল্পগুলোর সমাপ্তির মতো।
উপস্থাপন ভালো লেগেছে।
(আপনার গল বলার কৌশল অনেকটা হুমায়ুন আহমেদ এর মতো।)
২৭ শে জুলাই, ২০১৯ দুপুর ১২:৫৪
মেহরাব হাসান খান বলেছেন: শেষ বাক্যটা ভয়ানক। আপনি কি আমাকে শাওনের থাপ্পড় খাওয়াইতে চান?
৩| ২৭ শে জুলাই, ২০১৯ সকাল ৮:৪২
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: শেষ হইয়াও হইলনা শেষ তারপর? কি হল?
লন্ডন যাওয়া ক্যান্সেল হলো? মুহিবকে কি নিয়ে গেল? মায়ের অগ্নি দৃষ্টি কি প্রশান্ত দৃষ্টিতে বদালালো?
কত প্রশ্ন রয়েই গেল মনের ভেতর .. উত্তর দেবে কে?
হা হা হা
ভাল লাগলো গল্প।
+++
২৭ শে জুলাই, ২০১৯ দুপুর ১২:৫৫
মেহরাব হাসান খান বলেছেন: আপনি নিজেই কল্পনা করুন কি হয়েছে, আপনার হাতেই শপে দিলাম।
৪| ২৭ শে জুলাই, ২০১৯ সকাল ৯:৩৪
রাজীব নুর বলেছেন: মেয়েদের সারা জীবনই কাঁদতে হয়।
২৭ শে জুলাই, ২০১৯ দুপুর ১২:৫৬
মেহরাব হাসান খান বলেছেন: হ্যা, হয় কাদে আর সব ছেড়ে আসলেও পরে পস্তায়।
৫| ২৭ শে জুলাই, ২০১৯ দুপুর ১:২০
স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: বাহ্। সুন্দর আপনার লেখা। অনেক ভালো লেগেছে।
২৭ শে জুলাই, ২০১৯ বিকাল ৫:২৫
মেহরাব হাসান খান বলেছেন: ধন্যবাদ।
৬| ২৭ শে জুলাই, ২০১৯ বিকাল ৩:৪৩
জুনায়েদ বি রাহমান বলেছেন: শাওন এই কারণে কাউকে থাপ্পড় মেরেছে বলে আমার জানা নেই। শাওন চড়াও হয়েছিলেন তথ্য, গল্প বিকৃত করে উপস্থাপন কারীদের বিরুদ্ধে।
২৭ শে জুলাই, ২০১৯ বিকাল ৫:২৬
মেহরাব হাসান খান বলেছেন: থাপড়ায়নি, টাইমলাইনে লিখে রাখছে, তার থাপড়াইতে মন চায়।
৭| ২৭ শে জুলাই, ২০১৯ বিকাল ৪:২৯
রাজীব নুর বলেছেন: লেখক বলেছেন: হ্যা, হয় কাদে আর সব ছেড়ে আসলেও পরে পস্তায়।
পস্তায় খুব কম মেয়ে।
২৭ শে জুলাই, ২০১৯ বিকাল ৫:২৯
মেহরাব হাসান খান বলেছেন: আমি এই কম মেয়েদের মাঝেই একজনের বার্তাবাহক ছিলাম!
৮| ২৮ শে জুলাই, ২০১৯ সকাল ৯:৪৩
নীল আকাশ বলেছেন: লেখা ভাল লেগেছে।
লিখতে থাকুন।
২৮ শে জুলাই, ২০১৯ সকাল ১১:৪৭
মেহরাব হাসান খান বলেছেন: সত্যি ভালো লাগলে, ভালো লাগে।
©somewhere in net ltd.
১| ২৭ শে জুলাই, ২০১৯ রাত ২:০৮
অনেক কথা বলতে চাই বলেছেন: ভাই, এইভাবে শেষ করলেন কেন? "হু হু" লাগে তো!