নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
"মেয়ে মানুষ মেঘের মত, এদের ভেসে যেতে দিতে হয়।তবেই না দুনিয়া শস্য-শ্যামলা হবে!" লেখক কি বুঝাতে চেয়েছেন?মুহিব ভেবে পেল না।কেয়া নিশ্চয় জানবে, ও ফিলোসোফির ছাত্রী।
:হ্যালো,কে?
:জ্বী,আমি মুহিব!
:ওহ,কেয়া বাসায় নাই।ভার্সিটি গেছে,আজ কি জানি পরিক্ষা।
বলেই খট করে টেলিফোন রেখে দিলেন।মুহিব কেয়ার কথা জিজ্ঞেস করেনি, ভদ্রমহিলা বুঝলেন কি করে? আর পিতপিত শব্দ হচ্ছিল।মুহিব কানে ফোন ধরেই রাখল।এই শব্দ তার ভালো লাগে।এখন কাজ হল,ওতপেতে বসে থাকা।কারণ কেয়া বাসায়।সে বাসার বাইরে থাকলে তার মা এত কথা বলেন না।সুতরাং ৫ মিনিটের মধ্যে তার কল আসার কথা।
কিন্তু ২ ঘন্টা বসে থাকার পরও কল এল না।প্রকৃতি মাঝেমাঝে এমন অনিয়ম করে।এখন কি করা যায়!বড় ফুপুর বাসায় যাওয়া যায় পরে কেয়াদের বাসায় যাওয়া যায়!
মুহিব রিকশায় ঊঠে বসলো।কম বয়সী ছেলে দেখেই বুঝা যাচ্ছে খুব ক্লান্ত।রিকশাওয়ালাদের তুই করে বলতে হয়,নয়তো তারা দাম দেয় না।মনে করে গরীব।
:শোনো আমার কাছে টাকা নাই।
:ট্যাহা নাই,গাড়িত চড়ছেন ক্যান?মাংনা কষ্ট,নাইমা যান।
:আরে চল,খালি টাকা কামাইলে হবে।মানুষের উপকারও কর। বেহেশতে যেতে হবে না!
রিকশাওয়ালা নেমে যেতে বললেও রিকশা থামায়নি।
রিকশা যখন বড় ফুপুর বাসার সামনে থামলো,মুহিব ৫০০টাকার একটা নোট দিল।
:ছার,ভাংতি কই পামু।
:পুরোটা তর।
ছেলেটা মোটেই হতবাক হয়নি।সে ধরেই নিয়েছে এই টাকাই তার প্রাপ্য। দুনিয়া থেকে দয়া-মায়ার সাথে সাথে মানুষের অবাক হবার ক্ষমতাও নষ্ট হয়ে গেছে।
কেয়াদের বাসায় যাবার রাস্তা দুইটা; একটা নদীর পাড় ঘুরে কাজাইকাটা মসজিদ-মাদ্রাসার পাশ দিয়ে আরেকটা বড়বাড়ির হয়ে বেপারি বাড়ির পাশ দিয়ে। তবে মুহিব যেদিক দিয়েই যাক, বড়ফুপু খবর পেয়েই যান।তার ফুপুর বাড়ি কাজাইকাটা বড়বাড়ি।কিছু মেয়েলোক চরম নেতৃত্ব দেয়ার ক্ষমতা নিয়ে জন্মায়, বড় ফুপু তেমনি।মুহিব ফুপুর বাড়ি চেহারা দেখিয়েই কেয়াদের বাড়ি চলে যায়। বেপারি বাড়ির রাস্তায় যে বাড়িটা ভাঙা আর পিছনে বেখাপ্পা একটা কবর রয়েছে, সে বাড়িটাই কেয়াদের।
আজও মুহিব তাই করলো। মুহিব এখন কেয়াদের বসার ঘরে। সে একাই, কেয়া একবার উঁকি দিয়ে চলে গেল।এ মেয়ে নিশ্চয় তার ধৈর্য্যর পরিক্ষা নিচ্ছে।কেয়ার মা বরাবরের মতই সিরিয়াল দেখছেন।
এবাড়ি এসে কোন কাজ নেই।বসে থাকা আর কপাল ভালো হলে কেয়ার সাথে কথা বলা।এইবা কম কি?নিশ্চয় কৃষ্ণের কথা মনে আছে, ছেলেটা রাধাকে এক নজর দেখার জন্য সারাদিন যমুনার পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকতো। সে হিসেবে মুহিবের সময় বেশ কাটে, গেলেই কেয়াকে দেখা যায়।
কাজাইকাটার ছেলেছোকরা, ফুপুর বাড়ির লোক, কেয়ার বাড়ির লোক এমনকি পথে মুহিবের মাড়িয়ে দেয়া ঘাসগুলোও জানে যে মুহিব কেয়াকে ভালোবাসে, কেবল কেয়া জানে না। জাগ্রত কেয়াকে জাগানোর সাধ্য মুহিবের নেই!
কাজের ছেলে সামিউল এসে বলল,"ভাইজান, আপনে ভিতরের ঘরে এসে বসেন।আজকে আফামনিরে দেখতে আইবো। জামাই ডাক্তর, পছন্দ হইলে আইজকাই বিয়া। আফায় কইছে আপনে মিষ্টি না খাইয়া যাইবেন না।" নিতান্ত অনিচ্ছা সত্বেও মুহিব ভেতরের ঘরে বসলো।
এঘরে অবশ্য দুটি ছেলে_ শয়ন আর অনন খেলছে।কিন্তু মুহিবকে পাত্তা দিল না।আসলে এ বাড়িতে কেয়া আর দিয়া ছাড়া মুহিবকে কেউ পাত্তাই দেয় না।দিয়া আপুর কিছুদিন আগেই বিয়ে হয়েগেছে।
কেয়া মুহিবের সামনে এসে একমুহূর্ত দাঁড়িয়েই চলে গেল।কেয়া মুহিবের দেয়া সোনালী চুমকি দেয়া পাড়ের সাদা আনারকলিটা আজ পরেছে। চিকন উজ্জ্বল শ্যামলা কেয়াকে বেশ মানিয়েছে।কেয়া হয়তো একটু সেজেছে,মাথার বামপাশ থেকে বেণি শুরু করে সামনে দিয়ে এনে ডানপাশে মিলিয়েছে।কপালের টিপ ঠিক জায়গায় না হলেও বেশ লাগছে।বরপক্ষের পছন্দ না হয়ে উপায় নেই। সে ওড়নাও পরেনি, নিশ্চয় বর প্রথমে ঐ দিকেই তাকাবে। তবে বরের অপছন্দ করার সাধ্যই নেই।
কেয়া কিন্তু খেয়াল করেনি, মুহিব তারই দেয়া গাঢ় নীল রঙের শার্ট পরে আছে।
কেয়া অনেক কিছুই খেয়াল করে না। ছোটবেলায় স্কুলে যাবার সময়ে কেয়ার বকবকানি মুহিব হা করে শুনতো, সেটা কেয়া খেয়াল করেনি।মুহিব যে কেয়া থাকলেই কেবল বাসায় আসে অথবা অনেকক্ষণ কেয়ার জন্য অপেক্ষা করার পর পুতিয়ে যাওয়া চানাচুর, ঠান্ডা চা মুহিব আগ্রহ করে খায়, সেটাও কেয়া খেয়াল করেনি। সবচেয়ে বড় কথা, মুহিবের চোখে কেয়ার জন্য ভালোবাসাটাও সে খেয়াল করেনি।
এজন্য কেয়াকে দোষ দিয়ে লাভ নেই।সব মেয়েরা রবীবাবু বা হুমায়ুনের উপন্যাসের নায়িকার মত সব বুঝতে পারে না।কিছু মেয়ে শরৎবাবুর উপন্যাসের নায়িকার মত বোকাও হয়, ভালোবাসাটা বুঝতে পারে না।
পাত্র কেয়াকে পছন্দ করেছে। আজই বিয়ে, কাজি ডাকা হয়েছে।মুহিব পাত্রীপক্ষের একজন সাক্ষী। কাবিননামায় সাক্ষী হিসেবে সাইন করার সময় মুহিব হাউমাউ করে কান্না শুরু করলো, দৌড়ে ঘর থেকে বের হয়ে গেল।পেছনে কাজি সাহেব বলছেন,"কি আশ্চর্য এই ছেলে কান্দে কেন?বড়ই আজব ঘটনা, এই ছেলে কান্দে কেন?এই ছেলে যায় কই?"
কেয়ার মা বললেন,"কিছু না, কাজি সাব।ছোটবেলার বন্ধুর বিয়ে হয়ে যাচ্ছে তাই কষ্ট পাইছে।আপনে বিয়া পড়ান।"
মুহিব মসজিদ-মাদ্রাসার পাস দিয়ে যাবার সময় যে মাঠটা পরে, সেই মাঠে বসে কাঁদছে। পিছন থেকে কেউ ডাকছে, "মুহিব, এই মুহিব দাঁড়াও।দাঁড়াও।"
মুহিব পেছনে তাকালো।হ্যা, সোনালী পাড়ের সাদা আনারকলি পরা মেয়েটাই আস্তেধীরে এগিয়ে আসছে।অন্ধকারেও তার মুখটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, চুলে বেণি করা আর কপালে কালো টিপ।হ্যা, কেয়া!কেয়াইতো!
এখন বৃষ্টি হলে ভালো হত, কেয়া চোখের জল দেখতে পেত না।
কেয়া এগিয়ে এসে মুহিবের কাঁধে হাত রেখে বললো,"আমায় বিয়ে করবে,মুহিব?"
মুহিব নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না।এতক্ষণে কেয়ার বিয়ে হয়ে যাবার কথা। কেয়া বাইরে চলে এল, আর পিছন পিছন কেউ এল না?এটা অবশ্যই মুহিবের কল্পনা, যে কল্পনায় প্রতিদিন রাতে সে কেয়ার সাথে খুনসুটি করে ঘুমিয়ে পরে এবং ভোরে কেয়ার ডাকেই জাগে!
২৬ শে জুলাই, ২০১৯ বিকাল ৪:২৭
মেহরাব হাসান খান বলেছেন: কেন জানি মনে হয়, আমার লিখা যদি একজনও পড়ে সে হবেন আপনি!
২| ২৬ শে জুলাই, ২০১৯ দুপুর ১:৪১
জুনায়েদ বি রাহমান বলেছেন: খুব সুন্দর উপস্থাপন।
(মেয়েরা আসলে বুঝেও না বুঝার ভান ধরে থাকে। সাইকোলজিকাল কারণে তারা ঘরসংসার, বিয়েশাদীর হিসেব নিকেশ ছেলেদের চাইতে বেশি বুঝে। তাই সমবয়সী বন্ধু, ক্লাসমেটদের খুব একটা পাত্তাটাত্তা দিতে চায় না।)
২৬ শে জুলাই, ২০১৯ বিকাল ৪:২৮
মেহরাব হাসান খান বলেছেন: ধন্যবাদ।
৩| ২৬ শে জুলাই, ২০১৯ দুপুর ২:৩৬
মিথী_মারজান বলেছেন: সুন্দর গল্প।
মুহিব নামটা দেখলেই কৃষ্ণপক্ষ বইটা পড়তে ইচ্ছা করে।
২৬ শে জুলাই, ২০১৯ বিকাল ৪:৩১
মেহরাব হাসান খান বলেছেন: তাই নাকি, হুমায়ুন সাহেব আগেই এই নাম ব্যবহার করে ফেলেছেন! এই ভদ্রলোক আমি যা লিখতাম, সব লিখে ফেলেছেন নিশ্চয়!
আমি এখনো পড়িনি। পড়ে ফেলবো তাহলে।
৪| ২৬ শে জুলাই, ২০১৯ বিকাল ৫:২৩
আপেক্ষিক মানুষ বলেছেন: প্রথম অংশটা হুমায়ুন আহমেদীয় লেখা। তবে শহুরে ভাব হলে পুরোপুরি মিলে যেত।
২৭ শে জুলাই, ২০১৯ দুপুর ১২:৪৬
মেহরাব হাসান খান বলেছেন: ভাই এই কথা আর বলবেন না, সেদিন শাওন ফেসবুকে লিখেছে, যারা এমন মানে হুমায়ুন হুমায়ুন লিখে তাদের থাপড়াইতে মন চায়!
৫| ২৬ শে জুলাই, ২০১৯ রাত ১০:৩৩
আর্কিওপটেরিক্স বলেছেন: সুন্দর লেখা
২৭ শে জুলাই, ২০১৯ দুপুর ১২:৪৭
মেহরাব হাসান খান বলেছেন: ধন্যবাদ
৬| ২৬ শে জুলাই, ২০১৯ রাত ১১:৪৩
চেংকু প্যাঁক বলেছেন: হ
২৭ শে জুলাই, ২০১৯ দুপুর ১২:৪৭
মেহরাব হাসান খান বলেছেন: কি হু?
৭| ২৬ শে জুলাই, ২০১৯ রাত ১১:৪৭
মা.হাসান বলেছেন: সুন্দর লিখছেন, চলতে থাকুক। রাজীব ভাইয়ের বিষয়ে সত্য বলেছেন। তিনি চেষ্টা করেন সব পোস্ট পড়তে এবং পারলে কমেন্ট করতে । ২ নম্বর মন্তব্যে জুনায়েদ ভাই যা বলেছেন তার সঙ্গে সহমত ।
২৭ শে জুলাই, ২০১৯ দুপুর ১২:৪৮
মেহরাব হাসান খান বলেছেন: আমিও তারসাথে আংশিক সহমত।
আপনাকে ধন্যবাদ
৮| ২৭ শে জুলাই, ২০১৯ ভোর ৬:৫০
জগতারন বলেছেন:
জুনায়েদ বি রাহমান-এর সাথে সহমত!!
২৭ শে জুলাই, ২০১৯ দুপুর ১২:৫০
মেহরাব হাসান খান বলেছেন: আসলে কি তাই হয়, অনেকেতো বুং বাং ভাব নিয়েও থাকে। যে কোন ছেলে আগ্রহ দেখালেই গলে যায়।
৯| ২৭ শে জুলাই, ২০১৯ সকাল ৯:৫৯
রাজীব নুর বলেছেন: লেখক বলেছেন: কেন জানি মনে হয়, আমার লিখা যদি একজনও পড়ে সে হবেন আপনি!
অবশ্যই।
২৭ শে জুলাই, ২০১৯ দুপুর ১২:৫১
মেহরাব হাসান খান বলেছেন: ধন্যবাদ, এজন্য একটু মানসিক শান্তি পাওয়া যায়।
১০| ২৭ শে জুলাই, ২০১৯ দুপুর ২:১৬
জগতারন বলেছেন:
আমার মন্তব্যের উত্তর দেওয়ার জন্য
প্রিয় ব্লগার মেহরাব হাসান খান-এর প্রতি সুভেচ্ছা জানাই।
সাথে আছি, আরো লিখুন, পড়বো।
২৭ শে জুলাই, ২০১৯ বিকাল ৫:৩২
মেহরাব হাসান খান বলেছেন: হা হা! আগে উত্তর দেয়নি?
লিখবো, ২০২০ পর্যন্ত এই কাজেই ব্যয় করবো। ১০০ আউল-ফাউল ছোট গল্প লিখে দিবো।
১১| ২৮ শে জুলাই, ২০১৯ সকাল ৯:৪২
নীল আকাশ বলেছেন: ২ নম্বর মন্তব্যে জুনায়েদ ভাই যা বলেছেন তার সঙ্গে সহমত।
শেষ প্যারাটা আরেকটু সুন্দর করে লিখতে পারতেন।
লেখা ভাল লেগেছে। আরও লিখুন!
২৮ শে জুলাই, ২০১৯ সকাল ১১:৪৫
মেহরাব হাসান খান বলেছেন: ধন্যবাদ! ভালো থাকবেন আপনারা।
©somewhere in net ltd.
১| ২৬ শে জুলাই, ২০১৯ দুপুর ১২:৩৮
রাজীব নুর বলেছেন: কেয়া আর মুহিব এর গল্প পড়লাম।